আমি ভুলে গিয়েছিলাম রাজনীতি একটি কালো হরিণের নাম!
আমি ভুলে গিয়েছিলাম সব কুমারীর কৌমার্য্য থাকে না, যেমন
সব করাতকলের কাছে কাঠমিস্ত্রির বাড়ি, সব বনভূমিতে
বিদ্যুৎবেগবতী বাঘিণী!
যেমন সব মানুষের ভিতরে এক টুকরো নীল রঙ্গা অসীম মানুষ!
আমি ভুলে গিয়েছিলাম বজ্রপাতের দিনে বৃক্ষদের আরো বেশী
বৃক্ষ স্বভাব!
যেমন আমি ভুলে গিয়েছিলাম সব যুদ্ধই আসলে অন্তহীন
জীবনের বীজকম্প্র, যৌবনের প্রতীক।
এইভাবে ভ্রমণে যাওয়া ঠিক হয়নি আমার হৃদয়ে হয়তো কিছু
ভুলভ্রান্তি ছিল,
আমি পুষ্পের বদলে হাতে তুলে নিয়েছিলাম পাথর!
আমি ঢুকে পড়েছিলাম একটি আলোর ভিতরে, সারাদিন আর
ফিরিনি!
অন্ধকারে আমি আলোর বদলে খুঁজেছিলাম আকাশের উদাসীনতা!
মধু-র বদলে আমি মানুষের জন্য কিনতে চেয়েছিলাম মৌমাছির
সংগঠনক্ষমতা!
পথের কাছে পাখিকে দেখে মনে পড়েছিল আমার হারানো কৈশোর!
পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল আমি আসলেই পথ হাঁটছি,
পথিক!
তবু ভ্রমণে আবার আমি ফিরে যাবো, আমি ঠিকই পথ চিনে নেবো!
অনন্তের পথিকের মতো ফের টের পাবো
কে আসলে সত্যিই কুমারী, কে হরিণ কে রমণী কেবা স্ত্রীলোক!
আর ঐ যে করাতকল, ওরা কেন সারারাত কাঠচেরাই করে!
আর ঐ যে অমৃত ঝর্ণা, ওকে কারা বুকে এনে অতটা স্বর্গীয় শব্দে
স্রোতস্বিনী ডাকে!
*
অসহ্য সুন্দর
যখোন একটি মৃত সুন্দরীকে গোর দেওয়া হলো
হায় ভগবান, যখন সুন্দরী মৃত!
একটি একাকী চুল দেখলাম মুখে এসে নিয়েছে আশ্রয়
ক্লান্ত ভুরু, কাঁধের দুদিকে হাত যেনো দুটি দুঃখের প্রতীক!
কপালের সমস্তটা যেনো দুঃখ, চিবুকের সমস্তটা যেনো দুঃখ!
যখোন একটি মৃত সুন্দরীকে গোর দেওয়া হলো
হায় ভগবান, যখোন সুন্দরী মৃত!
তখোন মৃত্যুকে কী যে কোমল সুন্দর লাগছিলো!
মুখের সমস্তটা মুখ জুড়ে তার তখন করুণ এক মায়ার রহস্য আর
শরীরের সবদিকে শেষ সুন্দরের অকস্মাৎ থমকে যাওয়া আভা!
আর ঠোঁটের ও বিষণ্ণ তিলটি কী বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল, কী বিষণ্ণ
দেখাচ্ছিল আহা
যখোন সুন্দরী মৃত যখোন সুন্দরী!
কিন্তু হায় একটি অসহ্য দৃশ্য ঘটে গেল হঠাৎ তখোনই
যখন জানলাম আমি গর্ভে তার অসমাপ্ত একটি ভ্রূণ শিশু হতে পারল না।
একটি সুন্দর ভ্রূণ!
*
একটি মহিলা আর একটি যুবতী
জানেনা কখন ওরা পাশাপাশি এসে শুয়ে থাকে!
একটি মহিলা আর একটি যুবতী বহুব্রাত এইভাবে
শুয়ে শুয়ে দেখেছে আলোর পাশে নির্জনতা কত বেমানান!
ফলে এক দিন-ভাঙ্গা-দিনান্তের আলো দুই দেহের ভিতরে নিয়ে
দেখেছে আঁধার আজো কেন উষ্ণ, কেন এত তীব্র গন্ধময়!
দেখেছে খোঁপায় কালো ভাঙ্গনের বিলাসিতা কেমন মানায় সেই তমসায়
কেমন কালোর বর্ণ ধরে রাখে দুজনের দুটি কালো চোখ।
একটি মহিলা আর একটি যুবতী এইভাবে বহুরাত
আধখানি চোখে চায়- আধখানি ইশারায় কী যে কী সব বলে!
তারপর মহিলা যুবতী মিলে, যুবতী ও মহিলায় একটি উত্তপ্ত কণ্ঠ
কামুক রমণী হয়ে যায়!
আর সেই রমণীকে দেখে ফেলে একটি আদিম কালো রাত!
আর সেই রমণীকে দেখে ফেলে নগ্ন মহিলা আর নগ্ন যুবতী!
আর সেই রমণীকে দাঁতে দাঁতে দীর্ঘতর করে তোলে তীব্র দংশন!
আর সেই রমণীকে ঘৃণা করে মহিলা ও যুবতী আবার!
আর সেই রমণীটি মহিলা ও যুবতীতে পুনরায় পর্যবসিত হতে হতে
পুনরায় তারা ফের ঘৃণা ও ঘুমের মধ্যে হয় অন্তর্হিত!
*
অনুতাপ
আমাকে যে অনুতপ্ত হতে বলল, কার জন্যে অনুতপ্ত হবো আমি?
কার জন্য অনুশোচনার জ্বলন্ত অঙ্গারে আমি ছোঁয়াবো আমার ঠোঁট?
দিন দিন আমার অধঃপতন পাহাড় কেবলি উঁচু হচ্ছে,
এত দাহ এত পাপ!
আমার পায়ের নখ থেকে মাথার প্রতিটি চুলে এত অপরাধ!
হাঁটু ভেঙ্গে একদিন আমার বুকের মধ্যে এসে পড়বে
কুয়াশা অস্থির শিলা রক্তের আগুন।
হাত তুলে আর আমি কাউকে ডাকবো না কোনোদিন!
সেই দুঃসহ দিনের কথা ভেবে অনুতপ্ত হবো আমি?
কিন্তু কেন, কার জন্যে অনুশোচনার জ্বলন্ত অঙ্গারে আমি
ছোঁয়াবো আমার ঠোঁট?
অনুতপ্ত হবো আমি বিশেষ নারীর জন্যে?
সেই আমার প্রত্যাখাত প্রথম পুষ্পের জন্যে ফের অনুতাপ?
কিশোর বয়সে একদিন আমার শরীর জুড়ে
গোলমরিচের ঝা ঝা গুড়োর মতোন তীক্ষ্ণ জ্বর নেমেছিল,
মনে আছে সেই জ্বরের রাত্রিতে জেগে জেগে জানিনা কখন
আমি মায়ের পাশেই…?
হঠাৎ নিদ্রা ভেঙ্গে যেতে দেখি মধুর চাকের মতো অন্ধকার!
মনে আছে ভল্লুকের মতো বাবা নুয়ে এসে সে আঁধারে কার
টেনে টেনে ছিঁড়েছিল জটিল যৌবন?
সে রাতে আমার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছিল,
মনে আছে অন্তলীন আমার চীৎকার?
শুকনো পাতার মতো আমার চীৎকার থেকে ঝরে পড়া মা’র সেই হাত,
সেই রুগ্ন বিষণ্ণ আঙ্গুল-মার মানসিক অনিন্দ্র দহন!
তারও শেষ বিষণ প্লাবন যদি সময়ের তোড়ে গেল
তবে আর কার জন্যে অনুতপ্ত হবো আমি?
কার কাছে বয়ে নিয়ে যাবো এই কুয়াশা অস্তির শিলা রক্তের আগুন?
*
আড়ালে ও অন্তরালে
কয়েকটি দালান কোঠা, বৃক্ষরাজি কয়েকটি সবুজ মাঠ
থাকলেই যে ছোটখাটো বিশিষ্ট শহর হবে এলাকাটা
এ রকম কোনো কথা নেই!
ছুটির দিনের পিকনিকে গেলেই কি সেই সব লোক
ভালোবাসে বনভূমির গভীর মৌনতা? তার মর্মর সঙ্গীত
অথবা যে পাখির বিষয় নিয়ে পত্রিকায় ছড়া লেখে
শিশুদের সচিত্র মাসিক যার লেখা ছাপা হয়
সেই-ই শুধু পাখি আর শিশুর প্রেমিক?