সংশয়
তোমার সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটিয়ে এসে মনে হয় তুমি
ভাবো দিনভর, রাতভর-
ঝাঁ ঝাঁ রৌদ্রজ্যোৎস্নাময় আমার হৃদয়
সেই সর্বনাশ জলাভূমি
যেখানে যায় না বাঁধা ঘর,
যেখানে পা রাখলে তলিয়ে যেতে হয়, দুঃসময়
ব্যেপে আসে চতুর্দিক থেকে,
যেখানে কস্মিনকালে জন্মে না কহল্লার
বিশ্বাসের। অস্তিত্বের ভাঁজে ভাঁজে ক্লেদ মেখে
বাজাবো ডম্বরু দূরে গিয়ে,
ভাবো তুমি। কোন্ শ্বেতচন্দনের প্রলেপে তোমার
সংশয়ের সব কালো মুছে দিতে পারি,
বলো দূরত্বের দীর্ঘ সাঁকোয় দাঁড়ানো
হে রহস্যময়ী নারী?
অসহ্য অসহ্য জানি, মনোনীতা, তোমাকে হারানো।
যদি থাকো পাশে আজীবন, তবে সাক্ষী এ চন্দনা,
অন্য কোনো নারীকে কখনো নৈঃশব্দ্যের ঘাটে নিয়ে
বসন্ত বাহার শোনাবো না।
সদ্যলেখা এই পদ্য
সদ্যলেখা এই পদ্য আমার পাবে না কল্কে কস্মিনকালেও
কবিতার নাক উঁচু সমঝদারের
কাছে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে
অধ্যাপনারত সাহিত্যের বুধমন্ডলী তামাশা
করবেন, কাটবেন টিপ্পনী বিস্তর
প্রসাধনবর্জিত পংক্তির খোলামেলা ভঙ্গি দেখে।
এ পদ্য হবে না ছাপা অভিজাত পত্রিকায়, রম্য
সাপ্তাহিকে। মাননীয় সম্পাদক বলবেন, ‘এতে
গোলাপ, চামেলী, জুঁই, মল্লিকার ঘ্রাণ
কোথায়? কোথায় মেঠো বংশীধ্বনি, নারীর চোখের
কুহক অথবা কিউবিক
বাহার? না, এই পদ্য, বুঝতেই পারছেন, সাহিত্য পত্রের যোগ্য নয়।
নিমেষে ফেরত আসে পাণ্ডুলিপি আমার মুঠোয়-
শব্দ্যাবলী ব্যাপক ছড়ায়
শ্রমিকের ঘেমো গন্ধ, পুষ্টিহীনতায়
জীর্ণ বালকের
চোখের ক্ষুধার্ত নিভু নিভু আলো আর জ্যোৎস্নাপ্লুত
ধর্মঘঢী মানুষের লাশের ওপর খুব ঝুঁকে-থাকা নারীর বিলাপ।
শব্দ্য বলে, ‘আমি পথ আর আমি সত্য ও জীবন।
সদ্যলেখা এই পদ্য আমার শহুরে
দেয়ালে দেয়ালে, গ্রাম্য হাটে পথে ঘাটে
পেলে ঠাঁই হৃদয় আমার হয়ে যাবে
রবীন্দ্রনাথের নৃত্যপর
ময়ূর এবং হেঁটে যাবো একা দিকে দিগন্তরে।
সাপ্তাহিক ‘দেশবন্ধু’ নিষিদ্ধ হবার পরে
যদি থাকতো আ মরি
বেহদ ন্যাকা পদ্য আর ছৈলছবিলা গদ্যের ছড়াছড়ি,
যদি থাকতো টপ নায়িকার দিলতড়পানো
ফিনফিনে ব্লাউজের পাহারা-টপকানো
উদ্ধত বুকের বাহার, মারদাঙ্গা ফিল্মের নায়কের কেচ্ছা আর
কখনো সখনো জেল্লাদার
কুকুর কিংবা পুষ্পপ্রদর্শনী, রোটারি ক্লাবের ধুম ভোজসভা
অথবা
ঝকমকে অনুষ্ঠানে কর্তাব্যক্তিদের ফিতে-কাটা ইত্যাদি ছবিসম্বলিত
বিলকুল রাজনীতি-বিবর্জিত
প্রতিটি পৃষ্ঠা কিংবা মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীমহোদয়দের
একতরফা তারিফের
আতরে ভুর ভুর বশম্বদ পুরো চার ফর্মা তাহলেই ছিল সব সিদ্ধ,
হতো না ‘দেশবন্ধু’ কস্মিনকালেও ক্রুশবিদ্ধ!