হাত
যায় না সে ভিড়ের ভেতর। সারাক্ষণ নির্জনতা
করে আহরণ।
কখনো সে-হাত টেলিফোনে চকরঙ নম্বরের
উদ্দেশ্যে ব্যাকুল হয়, কখনো দেয়ালে ঝুলে থাকে
বিবর্ণ ছবির গায়। কখনো-বা মগজের রঙিন পুকুরে
বিলাসী সাঁতার কাটে, কেমন তন্ময় ছোঁয় গুল্মলতা।
ঘরের চালায় প’ড়ে থাকে অলস্যে কখনো
যেন বোহেমীয়ান সে একজন, ক্ষিপ্ত,
ধারে না কারুর ধার। অবহেলে রাখে ধরে রৌদ্র ছায়া আর
বৃষ্টির ধবল দাঁত কামড়ালে নাচে, বেজে ওঠে
দমকা হাওয়ায়।
সে হাত পায়রা হয়ে কোলে আসে কিংবা দোলে খুব
শূন্য দোলনায়, কবেকার আবছায়া জলছবি কতিপয়
কুড়িয়ে আনে সে রেডিওর কাছে এসে শব্দহীন
নিবিড় ঘুমিয়ে থাকে বেড়ালের মতো।
সে হাত চকিতে
বেদের ঝাঁপির মধ্যে শঙ্খনীর সঙ্গে
অন্তরঙ্গতায়
মোহন সুনীল হয়, জেলেদের আমিষ পাড়ায়
রৌদ্রে মেলে দেয়া জালে বাঁধা পড়ে স্বেচ্ছায় কখনো।
রুপালি মাছির মতো নক্ষত্র নিকুঞ্জ,
শহরের দূরতম এলাকার নিভৃত বল্মীক,
নানাবিধ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির দোরগোড়া থেকে
ফিরে এসে এখানেই সে-হাত লুটায় কাটা ঘুড়ির মতন।
বাঁশি তাকে ডাকে,
ডাকে সাত রঙ,
শোনে সে আহ্বান পাথরের।
ভোরে কাঁচা কবরের ওপর ঘুমিয়ে কখন কী স্বপ্ন দ্যাখে,
সে-হাতের মৃত্যুভয় নেই।
হৃদয়ের গল্প
প্রেমিক শয্যায় তার কাতর মৃত্যুর প্রতীক্ষায়,
প্রাণের প্রতিটি তন্তু উন্মুখর রৌদ্রের ভিক্ষায়
সর্বক্ষণ; বীজাণুর দামাল গেরিলাগুলি নিবিড় দঙ্গলে
রয়েছে গা ঢাকা দিয়ে শিরা উপশিরার জঙ্গলে।
কখনো ওড়ায় পুল অতর্কিতে, কখনো টাওয়ার গুঁড়ো হয়
এক লহমায়। ভয়, সারা ঘরে ভয়।
ভাবে সে শয্যায় মিশে, ওষুধের ঘ্রাণে ডুবে ভাবে
কেবল সেসব পল অনুপল, যাদের অভাবে
জীবনের চিলে-কুঠুরিতে অধিক জমত আরও ঊর্ণাজাল,
ধুলোর পোকামাকড়ের শব। উন্মাতাল
অতীতের কথা ভাবে পার্কের বেঞ্চিতে
কখনো বসত গিয়ে নিবিড় দু’জন কখনোবা খুব শীতে
রাস্তায় হাঁটত ওরা। রেস্তোরাঁর দরজার আলো
প্রেমিকের চোখে ভাসে, যদিও ঘিরেছে তাকে মরণের কালো।
এখন প্রিমিকা তার রেস্তোরাঁয় তিনটি যুবার সাথে রাষ্ট্র
করে হৃদয়ের গল্প রাঙা ঠোঁটে মিহি নড়ে কোকাকোলা রাষ্ট্র।