গুড মর্নিং বাংলাদেশ
গুড মর্নিং বাংলাদেশ, সুপ্রভাত,
হাউ ডু ইউ ডু?
সুপ্রভাত সাতরওজা, মাহুৎটুলি নবাবপুর,
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, পুরানা পল্টন;
সুপ্রভাত বাগেরহাট, মহাস্থানগড়, ময়নামতি,
সুপ্রভাত পলাশতলী, পাড়াতলী,
সুপ্রভাত আদিয়াবাদের খাল, তাল তমাল হিন্তাল,
নিতাই জেলের জাল, কাশেম মাঝির নাও,
বঁইচি ফুল, কামেলার কানের দুল,
সুপ্রভাত বরিশাল, সুনামগঞ্জ তেঁতুলিয়া, টেকনাফ,
সুপ্রভাত বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, পদ্মা, মেঘনা,
সুরমা, কর্ণফুলী।
গুড মর্নিং বাংলাদেশ, সুপ্রভাত,
তুমি কেমন আছো?
বাংলাদেশ, কখনো তুমি ডুরে শাড়ি পরে
ধান ভানো, কখনো জীন্স পরে মেতে ওঠো
ডিসকো নাচে।
কখনো তুমি কলসি কাঁখে জলকে যাও, কখনোবা
পুকুরঘাটে গল্প করো, সুন্দর একটা পাখি দেখে ভাসো
খুশির ঢেইয়ে, গ্রীষ্মের দুপুরে তালপাতার
পাখা দিয়ে বাতাস ক’রে
ঘুম পাড়াও পঞ্চম সন্তানকে; পান, সুপুরি এগিয়ে দাও
অতিথির দিকে, রাঁধো পাব্দা মাছের সালুন;
পৌষালী রাতে একা একা তৈরী করো
নক্শি কাঁথা। দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশ, যারা তোমার সংস্কৃতির পাছায়
চিমটি কাটে, ঘষে দেয় বিষলতা,
আল্লাহ তাদের হায়াত দরাজ করুন।
যারা তোমার বাজু থেকে কেয়ূর,
নাক থেকে নোলক আর নাকছাবি,
গলা থেকে হাঁসুলি,
কোমর থেকে বিছাহার খুলে নিয়ে
পাচার করে দেশান্তরে,
আল্লাহ তাদের হায়াত দরাজ করুন,
যেসব ধাপ্পাবাজ সুদিনের সপক্ষে মিথ্যার থুতু ছিটায়,
আল্লাহ তাদের হায়াত দরাজ করুন
শোনো বাংলাদেশ, স্বপ্নের ফেনা লেগে তোমার চোখ
এমন অন্ধ হয়ে যায়নি যে, তুমি
দেখতে পাচ্ছো না শকুনের ঝাঁক বড়শির মতো নখ দিয়ে
আকাশের উদর ছিঁড়ে খুঁড়ে হিঁচড়ে টেনে আনছে
মেঘের নাড়িভুঁড়ি;
দেখতে পাচ্ছো না সংসদ ভবন নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে,
রাজনীতিবিদগণ জনগণের কাছ থেকে
বিছিন্ন হয়ে বনভোজন করছেন দীর্ঘকাল;
শাসনতন্ত্র কাটা ঘুড়ির মতো ভাসমান,
উন্নয়ন বিশারদগণ পাঁচসালা পরিকল্পনাকে
কুরে কুরে খাচ্ছেন ঘুণের ধরনের।
দেখতে পাচ্ছো না বখাটে বুদ্ধিজীবীদের মাথায়
বেধড়ক উৎসাহে ক্রমাগত হাগছে প্যাঁচা আর বাদুড়,
দেখতে পাচ্ছো না, সাত ঘাট থেকে চেয়ে-চিন্তে-আনা
হে ব্যর্থ অন্নপূর্ণা,
যে, তোমার সন্তানের পাতের ভাত খায় সাত কাকে।
গুড মর্নিং বাংলাদেশ সুপ্রভাত
হাউ ডু ইউ ডু?
তুমি কি জেল্লাদার হ্যাট-কোট-পরা শাঁসালো বিদেশীকে দেখে
তোমার উরুদ্বয় ফাঁক করে দেবে নিমেষে?
আমি আমার আগুন-ওগড়ানো চোখ হ্যামলেটের মতো
এখন সরিয়ে নিচ্ছি বটে, কিন্তু হে ধর্ষিতা,
বারবার আমি আমার লড়াকু হাত-পাগুলোকে ভুলিয়ে ভালিয়ে
রাখতে পারবো কি?
ঘুম
ঘুমাতে পারোনা তুমি কত দীর্ঘকাল।
ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের একটানা
ডাক সঙ্গে নিয়ে চাঁদ ডুবে যায় ছাদের কার্নিশে
অস্ফুট প্রত্যুষ হাত রাখে,
ঘুমাতে পারোনা তুমি। চোখ দুটো খুব রাতজাগা
পাখির চোখের মতো হয়ে আসে ক্রমে,
জ্বালা করে; মাথা ধরে। মুখের ভেতর
নোনা স্বাদ আর
হৃদয়ের ভিতর মহলে
শোলা ডোবে এবং পাথর ভাসে, ভাসে বাল্যকাল।
ঘুমাতে পারোনা তুমি কত দীর্ঘকাল।
এখুনি আসবে এই বারান্দায় চড়ুইয়ের দল
নরম রুটির লোভে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে তুমি
দেখবে চাঞ্চল্য ইতস্তত,
রুটির গুঁড়োর মতো ঝরবে ওদের
কণ্ঠস্বর, শোনা যাবে। টুকরো টুকরো রুটি
ছুঁড়ে দিয়ে চলে যেও ফের বিছানায়;
এখন ঘুমাও তুমি, ঘুমাতে পারোনি দীর্ঘকাল।
চাষাবাদ
এত পথ হেঁটে এসে কেন তুমি থমকে দাঁড়ালে?
দেখছো কি নিভৃত আড়ালে
সহসা এমন কিছু যা শোণিতে ছড়ায় নিমেষে
অজস্র তুষার কণা অথবা চতুর ছদ্মবেশে
দাঁড়ায় নিকটে এসে আতঙ্ক ভয়াল?
নাকি কোনো মন্থর ময়াল
পথ রোখে রাজসিক হেলায়? যাক হোক,
ভয়ে তুমি বন্ধ করোনা দু’ চোখ।
এই তো গন্তব্য এসে গেল বলে। দূরে
রূপসীর হারের দ্যূতির মতো আলো শিহরিত, সুরে সুরে
গুঞ্জরিত দশদিকে। করোনা মন্থর
স্বাভাবিক গতি, দেখছো না ফুটে আছে কত জুঁই ও টগর-
পথপ্রান্তে, বুক ভ’রে গন্ধ নিয়ে জোরে শুরু হবে
বেনজির চাষাবাদ বিপুল বৈভবে।
চোর
শৌখিন আগ্রহে নয়, নয় খেলাচ্ছলে, এসেছিল
আলাভোলা লোকটা এখানে টিনশেডে চুপিসারে
বাঁচাতে নিজস্ব মাথা শিলাবৃষ্টি থেকে। বিপন্ন সে
এসেছিল ভয়ার্ত প্রাণীর মতো বৃষ্টির আঁচড়ে
জব্দ; বাতাসের শব্দ অসংখ্য আহত হায়েনার
ভীষণ গোঙানি যেন। মাঝে মাঝে বাইরে নজর
রেখেছিল লোকটা ঝড়ের রোখ বুঝে নিতে।
নিজেকে অভয় দিতে হয়তো গেয়েছিল গীত
এলোমেলো ভাঙা স্বরে খুব সন্তর্পণে। অকস্মাৎ
টিনশেডে এল ছুটে কতিপয় অতিশয় রাগী
লোক, তারপর চোর ভ্রমে আলাভোলা গায়কের
ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে জান্তর আক্রোশে। ঝড় জল
থেকে যায়, মিটিয়ে হাতের সুখ ফিরে যায় ওরা;
মৃত্যু তাকে নিয়ে গেল তস্করের মতো আচরণে।
ছায়াবিলাস
সিকি শতাব্দী আগের কথা, খুব সকালবেলা
ঘুম ভাঙলো আমার, দেখি
সূর্য রূপদক্ষ রঙরেজের মতো
রোদের পোঁচড়ায় রাঙিয়ে দিচ্ছে দশদিক,
আর সদ্য-হাঁটতে-শেখা আমার ছেলে মাতালের ধরনে
এগিয়ে যাচ্ছে দেওয়ালের দিকে। ওর ছোট্র ছায়া
পড়েছে দেওয়ালে আর দৃষ্টিতে
রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে সে দেখছে নিজের ছায়াটিকে।
সেই মুহূর্তে কী ভাবছিলো সেই শিশু,
আমার সন্তান? ভাবছিলো কি ওর জন্যে নতুন ধরনের
একটা খেলনা টানানো রয়েছে দেওয়ালে?
হয়তো খেলনা মনে করেই
সে তার দশটি ব্যগ্র আঙ্গুল দিয়ে
ছুঁতে চাইছিলো নিজস্ব ছায়া।
শেষ অব্দি
ছায়া খুটে বস্তুত কিছুই পাওয়া যায় না,
এই সামান্য কথাটা বোঝার জন্যে
ওকে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হয়েছে।
বর্তমানে আমার ছেলের বয়স পঁচিশ। এখন সে
অনেক কিছুর সঙ্গেই
দিব্যি বোঝাপড়া করে নিতে পারে,
শৈশবে যা ছিল ওর সাধ্যাতীত। কেউ কেউ বলে,
কোনো কোনো ব্যাপারে
আমার সঙ্গে ওর নাকি প্রচুর মিল।
ঝাঁকড়া চুল আঁচড়াবার সময়
ওর মুখে যে ভঙ্গি ফোটে
তা হুবহু আমার মুখভঙ্গি। টেলিফোনে
ওর গলা শুনে অনেকে
আমার কণ্ঠস্বর বলে ভুল করে এবং
মাঝে-মধ্যে ওর মা বলেন, ‘ও যখন কাছে আসে,
তখন আমি তোমার অস্তিত্বের ঘ্রাণ পাই।‘
সর্বোপরি আমার পুত্র
আমার মতই ভীষণ দ্বিধাগ্রস্ত
এবং কিছুটা উড়নচণ্ডী।
কী জানেন, আমাদের দু’জনের মধ্যে
অমিল ও নেহাত কম নয়। আমি বেড়াল পছন্দ করি,
সে পুষতে চায় কুকুর;
আমি একদিন অন্তর ক্লান শেভ করি আর সে
গজিয়েছে স্তালিনের মতো গোঁফ;
অবিশ্বাসের আদিগন্ত অমাবস্যায়
আমি এক বিভ্রান্ত পর্যটক,
তার আঁজলায় টলটলে জলের মতো
বিশ্বাসের আলো। আমি ছায়াবিলাসী
আর সে নিজেরই ছায়া দেখে চমকে ওঠে যখন তখন।