আমি যখন বলি ভালোবাসি
আমি যখন বলি ভালোবাসি তখন শুদ্ধ হয় জীবন
তখন ভাঙা ঘর আবার জোড়া লাগে,
শিশুদের কচি মুখের ঘ্রাণে বাতাস ভরে যায়
হলুদ চোখ সব সবুজ দেখতে শুরু করে
নদী তীরে জেগে ওঠে নতুন চর;
খরা মেষে বৃষ্টি নামে, আমি যখন বলি ভালোবাসি।
আমি যখন বলি ভালোবাসি তখন শান্তি-আন্দোলন শুরু হয়
জাতিসঙ্ঘের প্রাসাদচূড়ায় গলতে থাকে বরফ,
লেবাননে বোমা বর্ষণ বন্ধ হয়, প্যালেস্টাইনে ওঠে উল্লাসধ্বনি
রুশ-মার্কিন দীর্ঘ বৈঠকে গৃহীত হয় ক্ষেপণাস্ত্র হ্রাসের সিদ্ধান্ত
তখনই সবচেয়ে নিরাপদ হয়ে ওঠে মানুষের ভবিষ্যৎ;
বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা কমে আসে, আমি যখন বলি ভালোবাসি।
আমি যখন বলি ভালোবাসি তখন শীতের দেশে আসে বসন্ত
তখন মরা গাঙে ডাকে জোয়ার, চৈত্রের মাঠে শস্যের হাতছানি,
তখন দুকূল-ছাপানো-বর্ষার চলে পাল তোলা নৌকো
অনেকদিন পর ব্ল্যাক আউটের নিষিদ্ধ শহরে আসে পূর্নিমা
সব কাঁটাতারের বেড়া হয়ে ওঠে মাধবলিতার বন;
ঘাতকের হাত থেকে ছিটকে পড়ে অস্ত্র, আমি যখন বলি ভালোবাসি।
আমি যখন বলি ভালোবাসি তখন পৃথিবীতে সব যুদ্ধ থেমে যায়
দুর্ঘটনায় পতিত বিমানের যাত্রীরা নিরাপদে ফিরে আসে,
বড়ো বড়ো শহরগুলোর সবচেয়ে কন্টকিত যানজট মুহুর্তে খুলে যায়
বিবাহ-বিচ্ছেদের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে নেয় সব দম্পতি
মা শিশুর গালে চুমু খায়, ব্যর্থ প্রেমিক-প্রেমিকারা আবার ঘর বাঁধে;
নবজাতকের কান্নায় ভরে ওঠে পৃথিবী, আমি যখন বলি ভালোবাসি।
এই চৈত্রে
এমন চৈত্রের রাতে আমি লিখি শ্রাবনের গান
বর্ষণ থামেনি আজো দুই চোখ জলে ভাসমান,
সবাই উল্লাসে মাতে, চৈত্রনিশি করে উদ্যাপন
আমর ফাল্গুন নেই চৈত্রে নামে অঝোর শ্রাবণ।
এই চৈত্রে আমি বড়ো ভয়ানক মনঃকষ্টে আছি
এতো যে ফুটেছে ফুল আমি তবু দুঃখ পেয়ে বাঁচি,
সকলেই চৈত্রে সব দেখে-শোনে, আয়োজন করে
আমি এই চৈত্রে আরো মরে যাই বাহিরে-ভিতরে।
সবাই এনেছে ফুল, সকরেই শুনেছে আহ্বান
আমাকে ডাকেনি কেউ আমি কারো শুনি নাই গান,
এমন চৈত্রের রাতে দুঃখ পাই, কাঁদে বড়ো মন
সবার ফুলের মাস এই চৈত্রে আমার শ্রাবণ।
একটি বিষণ্ন চিঠি, মাকে
তোমাকে ডাকার মাগো বড়ো ইচ্ছা করে
বড়ো সাধ জাগে আজ মা তোমাকে একবার ডেকে কথা বলি
কিন্তু কেন উত্তর মেলে না, নৈঃশব্দ্য আমাকে বিদ্ধ করে?
আমি তো করিনি কোনো দোষ, না বলে যাইনি কোনোখানে
তোমার অবাধ্য হয়ে একাকী নদীতে নেমে কাটিনি সাঁতার,
তবু কেন অযথা এমন ক্ষমাহীন ক্রোধে তুমি ফিরিয়েছো মুখ?
এমন তো হয়নি কখনো ঘরে ফিরে
তোমাকে ডেকেও আমি পাই নাই সাড়া,
বাড়ির উঠোনে আমি পা দিয়েই যতোবার তোমাকে ডেকেছি
যেখানেই থাকো তুমি আমার একটি ডাকে
ঝরেছে তোমার কন্ঠে অপার করুণাধারা যেন
সেই তুমি আজ কেন পাষাণের স্তব্ধতা এমন?
মন চায় আজ শুধু তোমাকেই প্রাণ ভরে ডাকি
কিন্তু দেখো মানুষের এতোই সময় কম, মাকেও ডাকার তার
সময় মেলে না
তোমাকে ডাকার পালা শে হয়ে গেলো,
আর আজো আমি ভালো করে কথাই শিখিনি।
তুমি কি ভেবেছো আমি বড়োসড় হয়ে গেছি খুবই,
তোমাকে এখন আর ব্যাকুল শিশুর মতো ডাকবো না আমি?
কিন্তু মা এখনো আমি তোমার কোলের সেই শিশু রয়ে গেছি।
আজো তো তেমনি মাগো বয় পায়, ক্ষুধা তৃষ্ণা পায়
কেউ একবিন্দু জলও দেয় না;
তুমি তো জানোই মাগো একলা আঁধার ঘরে
কী ভীষণ ভয়ে জড়সড় তোমারই বুকে লুকাতাম মুখ
আজ আঁধারের চেয়েও আঁধার চারদিকে
সামান্য মেঘের ডাকে যার ঘুম ভেঙে যেতো
আজ তরই মাথায় মাগো ভেঙে পড়ে বাজ,
তবু কারো এতোটুকু সরে না আঙুল;
ইঁদুরের শব্দে পাশে ভয় পাই তাই ঘুম পাড়িয়েছো তোমার কোলেই
আজ শ্বাপদসঙ্কুল এই অরন্যে বাস করি;
মাগো, তুমি নেই, তাই কেউ নেই
ভয়ার্ত শিশুর মতো আজো আমি সবটুকু শক্তি দিয়ে
যতোই তোমাকে শুধু ডাকি,
দেখি এই শব্দময় পৃথিবীতে বিশাল মৌনতা এসে গ্রাস করে
কেবল আমাকে।
ঘৃণার উত্তরে চাই ক্ষমা
হে মানুষ, তোমাদের ঘৃণার বদলে আমি
ভালোবাসার গোলাপ ছড়াবো,
তোমাদের উপেক্ষার মাটি ভেদ করে তুলবো সবুজ চারাগাছ
তোমাদের আলপিন-আঁটা বুটের তুলায় এই নগ্ন বুক পেতে দেবো
হে মানুষ, তোমাদের ঘৃণায় ফিরিয়ে-নেয়া কঠিন মুখের দিকে চেয়ে
আমি একাকী উড়াবো এই স্মৃতির রুমাল;
হায়রে মানুষ, তোমাদের ঘৃণার বল্লম আর হিংসার কুঠারে
ভীষণ রক্তাক্ত এই বুক,
তবু এই হিংসার বদলে চাই কেবল বিছিয়ে দিতে
হৃদয়ের গভীর আবেগ
তোমাদের বিদ্রূপের ঝাঁঝালো হাসির মুখে
এখনো ছড়াতে চাই প্রীতির কুসুম,
হে মানুষ, দাম্ভিক মানুষ তোমাদের তাচ্ছিল্য দেখেও আমি
এখনো আগের মতো বন্ধত্বের উষ্ণ হাত
তেমনি বাড়িয়ে দিতে চাই,
তেমনি ছড়িয়ে দিতে চাই তোমাদের পথে পথে জুঁই, চাঁপা,
শিউলি বকুল
তোমাদের নির্দয় কটাক্ষ ভুলে আমি দিতে চাই গাড় আলিঙ্গন;
হে মানুষ, তোমাদের কপটতা দেখে যদিও বা মর্মে মরে গেছি
তবু তোমাদের কুটিলতা ভুলে আমি সারল্যের সুকুমার পাপড়ি
ছড়াবো।
তোমরা ঘৃণায় যারা নিয়েছো ফিরিয়ে আজ মুক
সম্পূর্ণ করেছো প্রত্যাখ্যান,
আমার নামের ঠিক উপরে দিয়েছো ঢেলে কালিভরা একটি দোয়াত
তোমরা হিংসায় যারা বিছিয়েছো আমার পথের মাঝে
তীক্ষ্ণ তারকাঁটা,
যারা চাও আমাদের মাঝখানে বয়ে যাক শুধু হিমঝড়-
তোমাদের সকলের ঘৃণার বদলে আর উপেক্ষার বিনিময়ে আমি
হে মানুষ, ব্যথিত-ব্যাকুল এই ভালোবাসা আর দুই চোখভরা
এই আলুথালু অশ্রুজল ছাড়া কিছুই আনিনি;
হে মানুষ, দুর্পিত মানুষ, তোমাদের কুৎসা আর ঘৃণার বদলে
আমি সহিষ্ণু বৃক্ষের মতো দেখো বুক চিরে এখনো ফোটাই ফুল,
আজো আরক্তিম ভালোবাসা তোমাদেরই সমর্পণ করি
তোমাদের ঘৃণার উত্তরে বলি প্রিয়, হাত জোড় করে চাই ক্ষমা।