তুমি
তোমাকেই আজো মনে মনে করি উপাসনা ভাবি স্মরণযোগ্য
বহু বেদনায় বহু ব্যবধানে তোমাকেই আজো অসময়ে খুঁজি,
তুমি ছাড়া কোনো স্মরণযোগ্য নারী নেই আর নাম নেই আর
তোমার প্রতিভা এই শতাব্দী তারও বেশিকাল পাবে প্রাধান্য
আমাদের ঢের বয়সের বেশি তবু আমাদের বয়সের চেয়ে তারুণ্যময়
তোমারই রূপের দুরন্ত খ্যাতি এ শহরে আজো প্রবাদতূল্য!
আমাদের যুগে তুমিই মাত্র স্মরণযোগ্য রমনীর নাম তুমিই মাত্র গূঢ় স্মরণীয়
তুমিই মাত্র বান্ধবী নারী অসামান্য আর সকলেই বধূ বা কন্যা এভাবে ধন্য
তোমাকেই আজো মনে মনে করি উপাসনা ভাবি স্মরণযোগ্য
এই শহরের বিরুদ্ধ পথ একাকী যখন পাড়ি দিই বড়ো প্রবাসীর মতো
অতি সাবধান হাত রাখি কোনো গোলাপের গায়ে গাঢ় প্রেরণায়
তোমাকেই করি উপাসনা করি বহু প্রশস্তি আপনার প্রিয় প্রাচীন ভাষায়,
ফুল তুলি আর ফসলের কোনো ঋতুতে যখন আমি উৎসাহী
স্বপ্ন জাগাই, সেই উৎসবে মনে মনে ভাবি তোমাকেই শুধু স্মরণযোগ্য
বহু বেদনার বিসতৃত পথ পাড়ি দিই একা বিক্ষত পায়ে, কখনো একাকী
এইখানে এই সামান্য ছায়া তার নিচে বসে দীর্ঘজীবন দৃঢ় অবসান
তবু তোমাকেই মনে মনে করি স্ততি-বন্দনা তোমাকেই ভাবি স্মরণযোগ্য
আমাদের যুগে তুমিই মাত্র স্মরণীয় নারী স্মরণীয় নাম
তোমারই রূপের খ্যাতি ও প্রতিভা এ শহরে আজো প্রবাদতূল্য!
তোমরা কেমন আছো
তোমরা কেমন আছো হে আমার গভীর রাতের আহত করিয়া
তোমরা কেমন আছো
কেমন আছো আমার ফেলে আসা কবিতা তুমি কেমন আছো, কেমন
আছো তোমরা সুখ দুঃখ, তোমরা তোমরা?
আমি বহুদিন তোমাদের ফেলে এসেছি, মধ্যরাতের চাঁদ তোমাদের
তোমরা কেমন আছো, সবাই কেমন আছো, তোমরা সব্বাই?
আমি বেশ কিছুকাল তোমাদের সঙ্গছাড়া, বেশ কিছুকাল
অলস নিদ্রায়, অসুখে, আচ্ছন্নতায় শুয়ে আছি, শুয়ে আছি
তোমাদের সকলের স্নান, সন্ধ্যালাপ, প্রত্যুষের উপাসনা মন্ত্র
আমার মনে পড়ে, হে পাখি, বসন্তরাত্রির একলা কোকিল
তোমাদের
শহরের সব নার্সারীর প্রত্যহ দর্শক তোমরা, পানশালার
নিমগ্ন প্রেমিক
ভবঘুরে, ছন্নছাড়া, ভাই, তোমরা কেমন আছো
নারী তুমি কেমন আছো, বৃক্ষ তুমি কেমন আছো, কেমন,
শস্য তুমি আছো, নদী তুমি আছা,
তোমাদের নিজস্ব স্বাভাবে আজো তোমরা কবি।
তবু একবার বলো, তুমি বলো, তোমরা বলো, বলো
নারী তোমরা কেমন আছো, বৃক্ষ তোমরা কেমন আছো,
তোমরা কেমন আছো, মানুষ?
পা কাঁপে আমি দ্বিধাগ্রস্ত
হয়তো কোথাও কোনোভাবে এখন বাঁধা পড়ে গেছি, বাঁধা পড়ে গেছি
তাই পা কাঁপে তাই দ্বিধাগ্রস্ত এমন সহজে পারি না।
তিন ফুট বাই দেড় ফুট একটা ছোট্ট মশারির ভিতর
আমার এখন সামান্য দুর্বলতা, আমি বুঝতে পারি
খুব দূর থেকেও সেদিকে তাকিয়ে থাকি। এমন মাইল-
মাইল ব্যবধান, এমন দুরত্ব সেই ছোট্ট হাল্কা হলুদ একটা
মশারির ভিতর
আমার এই চোখ আমার এই ইন্দ্রিয় বড়ো আবদ্ধ রয়েছে
হয়াে আমি এখন কিছুটা স্নেহপ্রবল, কিছুটা পিতৃতূল্য
এতোদিন বুঝতে পারিনি একটা হাল্কা হলুদ
এতোটুকু মশারির ভিতর এতোটা রহস্য ছিলো আমার জন্য
এই সামান্য বুকের ভিতর কোথায় ছিলো এই পিতৃত্ব,
কোথায় ছিলো এই জলগড়ানো কান্না, এই ব্যাপ্তি, বুঝতে পারিনি
মাত্র একটা মশারির জন্য এখন আমি অনেক বেশি ক্ষমাপ্রবণ,
অনেক স্নেহকাতর
এমনটি কাঁটার ভয়ে ফুল তুলতে পারি না
আঙুল কেমন গুটিয়ে আসে
কোথাও আমার তেমন কিচুই নেই, এই তিন ফুট বাই দেড় ফুট একটা
মশারির ভিতর
একটা পাখির বাসা হচ্ছে, ফুল ফুটছে, পাথর ভেঙে একটা নদী হচ্ছে
তার ঘ্রাণ, তার শব্দ, আমি আভাস পাচ্ছি
এইখানে এই লোহার শিকের অস্থায়ী একটা মশারির ভিতর
আমি বাঁধা পড়েছি
যাকে কোনো মায়া, কোনো মৃত্যু কোনোদিন
স্পর্শ করেনি, স্পর্শ করেনি
সেই হাওয়ার মতো স্বাধীন
আমি হয়তো কোথাও কোনোভাবে
এখন বাঁধা পড়ে গেছি, বাঁধা পড়ে গেছি
তাই পা কাঁপে তাই দ্বিধাগ্রস্ত, সহজে পারি না
এতোটা আসক্তি ছিলো, এতোটা পিতৃত্ব ছিলো
বুঝতে পারিনি, এতোটা বন্ধন ছিলো এই বুকে!
যাও সঙ্গমে সৎকারে, প্রেমে
সঙ্গমে সৎকারে নেমে মানুষের দূরে আরো এক অতিদূরে
চলে যেতে হয়
আরো এক বিশুদ্ধ জল তুলে নিয়ে আপাদমস্তক সিক্ত
করে নিতে হয়। অতৃপ্ত তৃষ্ণা ক্লান্ত, সুখী, শোকমগ্ন
কিংবা শিহরনস্নাত মুখ শিশুদের মতন নিরীহ
তোমরা মানুষ, এই মায়া তোমাকে সম্ভব। এই প্রেমে, এই তৃষ্ণা, এই
সফলতা, এইভাবে একে একে সংজ্ঞাহীন অবগাহনে গমন।
কোনো একদিন এই মায়াময় পথের সীমায় হবে দুজনের মুখোমুখি দেখা
কেউ কাকে শুধাবে না, তবু সেখানে জন্মাবে আবার এই আত্মঘাতী
মানুষের মেধা, মনুষ্যতা
না হলে তোমরা নারী শুধু ঊরুসর্বস্ব অশ্লীল মেয়ে, শুধু স্থূল
সঙ্গমের স্পৃহা
জন্মহনি জন্ম দিয়ে যাবে। মনে হয় তোমাদের একদিন ক্রমান্বয়ে
নেমে যেতে হবে
দূরে, আরো অদি দূরে যেতে যেতে সঙ্গমে সৎকারে নেমে
আরো এক বিশুদ্ধ মাটির মর্ম জেনে নিতে হবে। কী সে প্রতিমা
কী সে প্রতীক, তোমরা তাহারও বেশি উদ্দামতা পাবে।
না হলে এ নারী হবে ঊরুর অশ্লীল, কোনো মর্মগ্রাহী নয়
মাত্র গ্রীসের গণিকা, মেয়ে অধর্ম অশ্লীল!
কোনো একদিন, একদিন সঙ্গমে সৎকারে নেমে মানুষের আরো
দূরে, আরো অতি দূরে চলে যেতে হয়।
আরো এক শস্যের সম্মুখে এসে ক্লান্ত করতল মেলে ধরো
আরো এক শস্যের সম্মুখে এসে নতজানু হও আরো এক শস্যের
সম্মুখে এসে
নগ্ন হও তোমরা এখন
তোমরা প্রার্থনা করো হে মানুষ, নগ্ন নতজানু সঙ্গমের সহিষ্ণু মানুষ
সৎকারের সন্তপ্ত মানুষ, তোমরা প্রার্থনা করো
আসন্ন মানুষ যারা তোমাদের সঙ্গমে সৎকারে জন্ম নেবে
তারা যেন জয়ী হয়, তারা যেন না হয় এমন আর বারবার
তোমাদের মতো ব্যর্থ পরাজিত, ব্যর্থ পরাজয়ে নত।
যতোদূর যেতে পারে
নেমে যাও সঙ্গমে সৎকারে প্রেমে সহিষ্ণু মানুষ
সেই এক জলোদ্ভব হোক, শুদ্ধ সনাতন মাটি সেই
মহিমামন্ডিত মর্তোদ্ধার। ক্ষেতময় অপেক্ষায় আছে
তোমাদের শুষ্ক পক্ব পরিণত ধান
নেমে যাও সঙ্গমে-সৎকারে-প্রেমে সহিষ্ণু মানুষ
দূরে, আরো এক অতিদূরে, কাছে।