- বইয়ের নামঃ তোমার পায়ের শব্দ
- লেখকের নামঃ মহাদেব সাহা
- প্রকাশনাঃ মুক্তধারা
- বিভাগসমূহঃ কবিতা
আমার সোনার বাংলা
আমি যে দেশকে দেখি সে কি এই স্বপ্নভূমি থেকে জেগে ওঠা
বহুদূরব্যাপী কল্লোলিত, সে কি রূপসনাতন
সে কি আমার সোনার বাংলা, কোনো রূপকথা নয়!
তার চক্ষুদ্বয় তবে এমন কোটরাগত কেন, মুখ জুড়ে সূর্যাস্তের
কালোছায়া,
কেন তার সবুজ গাছের দিকে সহসা তাকালে দেখি
ধূসর পিঙ্গল বর্ণ, নেমেছে তুষার আর মাছে সারি সারি
কুয়াশার তাঁবু
লোকশ্রুত এই কি সোনার বাংলা শোনা যায় শুধু শোকগাথা!
কেউ কেউ দেশের বদলে তাই মানচিত্র দেখায় কেবল
বলে, এখানে গোলাপ চাষ হয়, এখানে অধিক খাদ্য ফলে
গান শোনে টেপরেকর্ডার বাংলার চিরন্তন মুগ্ধ ভাটিয়ালি
আর বারোমাস পাখির কূজন
তারও কিছু সামান্য নমুনা এই পেটে
যেন মেপে মেপে দেশের মডেল একখানি
অপরূপ কাসকেটে তুলে রাখা আছে!
মৃদু টেপে এখানে পাখিরও গান শোনা যায়, ম্যাপের রেখায় মূত্য
স্নিগ্ধ নদী, শেস্যক্ষেত, সবুজলালিত ঘন পার্ক
সুচারু ফোয়ারা থেকে ঝরে জল পান করে পাথরের
পীতাভ হরিণ
চেয়ে আছে স্বপ্নময় বাংলাদেশ ট্যুরিস্টের মনোরম ম্যাপের পাতায়।
আমি যে দেশকে দেখি সে যে এই স্বপ্নভূমি থেকে উঠে আসা
আপাদমস্তক ভিন্নভিন্ন
সে যে আজো জয়নুলের দূর্ভিক্ষের ছিন্নভিন্ন
সে যে আজো জয়নুলের দুর্ভিক্ষের কাক
আজো বায়ান্নর বিক্ষুব্ধ মিছিল
আজো আলুথালু, আজো দুঃখী,
আজো ক্ষুন্ন পদাবলী!
তার কনকচাঁপার সব ঝাড় কেটে আজ সেখানেই বারুদ
শুকানো হয় রোদে
আর চন্দ্রমল্লিকার বনে আততায়ীদের কী জমাট আড্ডা বসে গেছে,
নিষ্পত্র নিথর লেকালয় দুঃখ-অধ্যুষিত
সেই পিকাসোর বেয়াড়া ষাঁড়টি যেন তছনছ করে এই নিকানো
উঠোন ঘরবাড়ি
লোকশ্রুত এই কি সোনার বাংলা, এই কি সোনার বাংলা!
আমি কি বলতে পেরেছিলাম
আমার টেবিলের সামনে দেয়ালে শেখ মুজিবের
একটি ছবি টাঙানো আছে
কোনো তেলরঙ কিংবা বিখ্যাত স্কেচ জাতীয় কিছু নয়
এই সাধারণ ছবিখানা ১৭ই মার্চ এ-বছর শেখ মুজিবের
জন্মদিনে একজন মুজিবপ্রেমিক আমাকে উপহার দিয়েছিলো
কিন্তু কে জানতো এই ছবিখানি হঠাৎ দেয়াল ব্যেপে
একগুচ্ছ পত্রপুষ্পের মতো আমাদের ঘরময়
প্রস্ফুটিত হয়ে উঠবে সেদিন রাত্রিবেলা!
আমি তখন টেবিলের সামনে বসেছিলাম আমার স্ত্রী ও সন্তান
পাশেই নিদ্রামগ্ন
সহসা দেখি আমার ছোট্ট ঘরখানির দীর্ঘ দেয়াল জুড়ে
দাঁড়িয়ে আছেন শেখ মুজিব;
গায়ে বাংলাদেশের মাটির ছোপ লাগানো পাঞ্জাবি
হাতে সেই অভ্যস্ত পুরনো পাই
চোষে বাংলার জন্য সজল ব্যাকুলতা
এমনকি আকাশকেও আমি কখনো এমন গভীর ও জলভারানত
দেখিনি।
তার পায়ের কাছে বয়ে যাচ্ছে বিশাল বঙ্গোপসাগর
আর তার আলুথালু চুলগুলির দিকে তাকিয়ে
আমার মনে হচ্ছিলো
এই তো বাংলার ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁপা দামাল নিসর্গ
চিরকাল তার চুলগুলির মতোই অনিশ্চিত ও কম্পিত
এই বাংলার ভবিষ্যৎ!
তিনি তখনো নীরবে তাকিয়ে আছেন, চোখ দুটি স্থির অবিচল
জানি না কী বলতে চান তিনি,
হঠাৎ সারা দেয়াল ও ঘর একবার কেঁপে উঠতেই দেখি
আমাদের সঙ্কীর্ণ ঘরের ছাদ ভেদ করে তার একখানি হাত
আকাশে দিকে উঠে যাচ্ছে-
যেমন তাকে একবার দেখেছিলাম ৬৯-এর গণআন্দোলনে
তিনি তখন সদ্য ষড়যন্ত্র মামলঅ থেকে বেরিয়ে এসেছেন
কিংবা ৭০-এর পল্পনে আর একবার ৭১-এর ৭ই মার্চের
বিশাল জনসভায়;
দেখলাম তিনি ক্রমে উষ্ণ, অধীর ও উত্তেজিত হয়ে উঠছেন
একসময় তার ঠোঁট দুটি ঈষৎ কেঁপে উঠলো
বুঝলাম এক্ষুনি হয়তো গর্জন করে উঠবে বাংরার আকাশ,
আমি ভয়ে লজ্জায় ও সঙ্কোচে নিঃশব্দে মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম।
আমার মনে হেলা আমি যেন
মুখে হাত দিয়ে অবনত হয়ে আছি
বাংলাদেশের চিরন্তন প্রকুতির কাছে,
একটি টলোমলো শাপলা ও দিঘির কাছে,
শ্রাবণের ভরা নদী কিংবা অফুরন্ত রবীন্দ্রসঙ্গীতের কাছে
কিন্তু তার মুখ থেকে কোনো অভিযোগ নিঃসরিত হলো না;
তবু আমি সেই নীরবতার ভাষা বুঝতে চেষ্টা করলাম
তখন কী তিনি বলতে চেয়েছিলেন, কী ছিলো তার ব্যাকুল প্রশ্ন
ব্যথিত দুটি চোখে কী জানার আগ্রহ তখন ফুটে উঠেছিলো!
সে তো আর কিছুই নয় এই বাংলাদেশের ব্যগ্র কুশলজিজ্ঞাসা
কেমন আছে আট কোটি বাঙালী আর এই বাংলা বাংলাদেশ!
কী বলবো আমি মাথা নিচু করে ক্রমে মাটির সাথে মিশে
যাচ্ছিলাম-
তবু তাকে বলতে পারিনি বাংরার প্রিয় শেখ মুজিব
তোমার রক্ত নিয়েও বাংলায় চালের দাম কমেনি
তোমার বুকে গুলি চালিয়েও কাপড় সস্তা হয়নি এখানে,
দুধের শিশু এখনো না খেয়ে মরছে কেউ থামাতে পারি না
বলতে পারিনি তাহলে রাসেলের মাথার খুলি মেশিনগানের
গুলিতে উড়ে গেল কেন?
তোমাকে কিভাবে বলবো তোমার নিষ্ঠুর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে
প্রথমে জয়বাংলা, তারপরে একে একে ধর্মনিরপেক্ষতা
একুশে ফেব্রুয়ারী ও বাংলাভাষাকে হত্যা করতে উদ্রত
হলো তারা,
এমনকি একটি বাঙালী ও বাংলাভাষাকে হত্যা করতে উদ্যত
হলো তারা,
এমনকি একটি বাঙালী ফুল ও একটি বাঙালী পাখিও রক্ষা পেলো না।
এর বেশি আর কিছুই তুমি জানতে চাওনি বাংলার প্রিয়
সন্তান শেখমুজিব!
কিন্তু আমি তো জানি ১৫ই আগষ্টের সেই ভোরবেলা
প্রথমে এই বাংলার কাক, শালিক ও খঞ্জনাই
আকাশে উড়েছিলো
তার আগে বিমানবাহিনীর একটি বিমানও ওড়েনি,
তোমার সপক্ষে একটি গুলিও বের হয়নি কোনো কামান থেকে
বরং পদ্মা-মেঘনাসহ সেদিন বাংরার প্রকৃতিই একযোগে
কলরোল করে উঠেছিলো।
আমি তো জানি তোমাকে একগুচ্ছ গোলাপ ও স্বণৃচাঁপা
দিয়েই কী অনায়াসে হত্যা করতে পারতো,
তবু তোমার বুকেই গুলির পর গুলি চালালো ওরা
তুমি কি তাই টলতে টলতে টলতে টলতে বাংলার ভবিষ্যৎকে
বুকে জড়িয়ে সিঁড়ির উপর পড়ে গিয়েছিলে?
শেখ মুজিব সেই ছবির ভিতর এতোক্ষণ স্থির তাকিলে থেকে
মনে হলো এবার ঘুমিয়ে পড়েত চান
আর কিছুই জানতে চান না তিনি;
তবু শেষবার ঘুমিয়ে পড়ার আগে তাকে আমার বলতে
ইচ্ছে করছিলো
সারা বাংলায় তোমার সমান উচ্চতার আর কোনো
লোক দেখিনি আমি।
তাই আমার কাছে বার্লিনে যখন একজন ভায়োলিন্তবাদক
বাংলাদেশ সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিলো
আমি আমার বুক-পকেট থেকে ভাঁজ-করা একখানি দশ
টাকার নোট বের করে শেখ মুজিবের ছবি দেখিয়েছিলাম
বলেছিলাম, দেখো এই বাংলাদেশ;
এর বেশি বাংলাদেশ সম্পর্কে আমি আর কিছুই জানি না!
আমি কি বলতে পেরেছিলাম, তার শেষবার ঘুমিয়ে পড়ার
আগে আমি কি বলতে পেরেছিলাম?
একুশের কবিতা
ভিতরমহলে খুব চুনকাম, কৃষ্ণচূড়া
এই তো ফোটার আয়োজন
বাড়িঘর কী রকম যেন তাকে হলুদ অভ্যাসবশে চিনি,
হাওয়া একে তোলপাড় করে বলে, একুশের ঋতু!
ধীরে ধীরে সন্ধ্যার সময় সমস্ত রঙ মনে পড়ে, সূর্যাস্তের
ন্নি সরলতা
হঠাৎ আমারই জামা সূর্যাস্তের রঙে ছেয়ে যায়,
আর আমার অজ্ঞাতে কারা আর্তনাদ করে ওঠে রক্তাক্ত রক্তিম
বলে তাকে!
আমি পুনরায় আকাশখানিরে চেয়ে দেখি
নক্ষত্রপুঞ্জের মৌনমেলা,
মনে হয় এঁকেবেঁকে উঠে যাবে আমাদের
ছিন্নভিন্ন পরাস্ত জীবন,
অবশেষে বহুদূরে দিগন্তের দিকচিহ্ন মুছে দিয়ে
ডাক দেবে আমরাই জয়ী!
তোমরা কি জানো
তোমরা কি জানো এ শহর কেন হঠাৎ এমন
মৌনমিছিলে হয়ে ওঠে ভারী, অশ্রুসিক্ত? কেন
বয়ে যায় শোকার্ত মেঘ আর থোকা থোকা শিশিরবিন্দু
পথে কেন এতো কৃষ্ণচূড়ার গাঢ় সমাবেশ; আমি জানি এতো
মেঘ নয়, নয় শীতের শিশির; প্রিয়হারা এ যে
একুশে রাজপথ জুড়ে এতো রঙিন আল্পনা আঁকা
তোমরা কি জানো সে তো নয় কোনো রঙ ও তুলির ব্যঞ্জনা কিছু
এই আল্পনা, পথের শিল্প শহীদেরই তাজা রক্তের রঙ মাখা!
তোমার জন্য
তোমার জন্য জয় করেছি একটি যুদ্ধ
একটি দেশের স্বাধীনতা,
তোমার হাসি, তোমার মুখের শব্দগুলি
সেই নিরালা দূর বিদেশে আমার ছিলো
সঙ্গী এমন,
অস্ত্র কিংবা যুদ্ধজাহাজ ছিলো না তো সেসব কিছুই
ছিলো তোমার ভালোবাসার রাঙা গোলাপ
আমার হাতে
ছিলো তোমার খোঁপা থেকে মধ্যরাতে খুলে নেয়া
ভালোবাসার সবুজ গ্রেনেড, গুপ্ত মাইন
স্বর্ণচাপা কিংবা ছিলো বক্ষ থেকে তুলে নেয়া
তোমার ভালোবাসার দেশে আমি স্বাধীন
পরাক্রান্ত।
আমার কাছে ছিলো তোমার ভালোবাসার নীল অবরোধ
তোমার জন্য জয় করেছি একটি যুদ্ধ
একটি দেশের স্বাধীনতা!
তোমার বাড়ি
এই বাড়িটি একলা বাড়ি কাঁপছে এখন চোখের জলে
ভালোবাসার এই বাড়িতে তুমিও নেই, তারাও নেই!
এই বাড়িটি সন্ধ্যা-সকাল তাকিয়ে আছে নগ্ন দুচোখ
একলা বাড়ি ধূসর বাড়ি তোমার স্মৃতি জড়িয়ে বুকে
অনাগত ভবিষ্যতের দিকেই কেবল তাকিয়ে থাকে,
কেউ জানে না এই বাড়িটি ঘুমায় কখন, কখন জাগে
স্তব্ধ লেকের কান্নাভেজা এই বাড়িটি রক্তমাখা!
এই বাড়িতে সময় এসে হঠাৎ কেমন থমকে আছে
এই বাড়িটি বাংলাদেশের প্রাণের ভিতরমর্মরিত,
এই বাড়িতে শহীদমিনার, এই বাড়িতে ফেব্রুয়ারি
এই বাড়িটি স্বাধীনতা, এই বাড়িটি বাংলাদেশ
এই বাড়িটি ধলেশ্বরী, এই বাড়িটি পদ্মাতীর
এই বাড়িটি শেখ মুজিবের, এই বাড়িটি বাঙালীর!
নববর্ষের চিঠি
এবারও তেমনি শেষ চৈত্রের খর নিঃশ্বাসে
নতুন বছর আসবে হয়তো; কিন্তু তুমি কি জানো
এদেশে কখন আসবে নতুন দিন? কখন উদ্দীপনা
অবসাদ আর ব্যর্থতাকেই দেবে নিদারুণ হানা
ছড়াবে হৃদয়ে আগামীর গাঢ় রঙ, ভাসাবে
মেঘের দূর নীলিমায় স্বপ্নের সাম্পান?
বলো না কখন এই ক্ষীণ হাতে ঘুরবে যুগের চাকা
কখন সত্যি নতুন বছরে আসবে নতুন দিন,
তুলবে তাদের গর্বিত মাথা আজ যারা নতজানু
এই প্রাসাদে ও অট্টালিকায় উড়বে তাদেরই নাম?
বলো না কখন ফুটবে গোলাপ গোলাপের চেয়ে বড়ো
কখন মানুষ পাবে এই দেশে শস্যের অধিকার
নতুন বছরে সেই অনাগত নতুনের প্রত্যাশা
বন্ধু, তোমাকে নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ!
ফিরে আসা গ্রাম
এই গ্রাম প্রতিরাতে হাতছানি দিয়ে ডাকতো আমাকে
উৎকন্ঠিতা প্রেমিকার মতো
কানে কানে শোনাতো কাহিনী,
যুদ্ধক্ষেত্রে মধ্যরাতে কখনো হঠাৎ
স্বদেশ-স্বজনহারা কান্নায় ভরে যেতো বুক
আমার দুঃখিনী গ্রাম কিছুতেই তোমাকে পারিনি ভুলে যেতে;
এই গ্রাম, লতাগুল্ম-আচ্ছাদিত শৈশবের স্মৃতি
অকস্মাৎ মধ্যরাতে ডাকতো আমাকে মৌনস্বরে,
হয়তো তখন আমি শত্রুর সতর্ক গতিবিধি লক্ষ্য করে
ছুঁড়ছি গ্রেনেড, পাতছি মাইন ব্রিজে, কালভার্ট করছি বিলোপ,
কিংবা রয়েছি লুকিয়ে আমি পার্শ্ববর্তী ঝোপে
ওদিকে দাগছে কামান শত্রুসেনা
ক্রলিংরত আমরা তখন তবু ভাবছি তোমারই কথা-
মাথার ওপর শত্রুর বিমান ক্রমাগত দিচ্ছে চকাকর
সেই মধ্যরাতে, এই গ্রাম ডাকতো আমাকে ফিরে যেতে,
রাত্রির নির্জন চাঁদ ভেঙে যেতো জঙ্গীবিমানের শব্দে
সেই অন্ধকারে বসে শুনতাম গ্রামের লিরিক
যেন ভাসতাম স্নেহময়ী জননীর কোলে,
মৃত দিদিমার সান্ধ্য গল্পের আসরে।
কোথায় সে গ্রাম, সবুজচিত্রিত গাছপালা
মাটির নির্মিত বাড়ি, কাঁসার বাসন,
চাল-ডাল-নুন-মরিচের হাটখোলা?
এই কি আমার গ্রাম, মধ্যরাতে যে আমাকে
করতো উন্মন, গাঢ়স্বরে ডাকতো আমার নাম ধরে?
এই কি আমার গ্রাম নরকঙ্কালের অস্থিমালা পরিহিত মাটি,
আমার গ্রাম কি এই ধ্বংসের স্বাক্ষর
বয়ে খাঁটি বধ্যভূমি?
স্বপ্নপ্রোথিত সত্তা
আমার স্বপ্নকে কারা রাত্রিদিন এমন পাহারা দিয়ে ফেরে
মনে হচ্ছে এই একগুচ্ছ স্বপ্নকে নিয়ে তারা অধিক চিন্তিত
শলা-পরামর্শে ব্যস্ত, গেরিলারও চেয়ে বেশি ভীত
আমার স্বপ্নকে নিয়ে তারা;
মাইনেরও চেয়ে বেশি ক্ষতিকর একগুচ্ছ সোনালি স্বপ্নের ডালপালা
তাই তারা সর্বদা শঙ্কিত এই বক্ষলগ্ন স্বর্ণচাঁপাগুলিকে নিয়েই।
তারাও কি জানে এই স্বপ্নগুচ্ছ হয়তো একদা নকশীকাঁথার মতো
দেশজুড়ে আঁকবে একটি নাম, তৃণগুল্ম ধীরে ধীরে হবে সেই
স্বপ্নের আহার
মেঘে মেঘে নবীন মল্লার বুনে দিয়ে আসবে গোপনে
নক্ষত্রপুঞ্জের খোলা বিশাল তোরণ অনায়াসে করবে রচনা,
আমার স্বপ্নকে তাই রাত্রিদিন এমন করছে কেউ তাড়া
মাঝে মাঝে হঠাৎ চড়াও হয়ে করছে প্রবল আক্রমণ
আমার স্বপ্নকে নিয়ে মনে হয় ওরা আজ সর্বাধিক ভীত।
ওরাও কি জানে এই স্বপ্নের ভিতর রাবণের মৃত্যুবরণ লুক্কায়িত
আছে
এই শাদামাঠা স্বপ্নের ভিতরে জ্যোতিমৃয় ভবিষ্যৎ
আছে মুখ গুঁজে
কি রঙমহল, মিনার, গম্বুজ, পাথরের প্রাণবন্ত পাখি
প্রজ্বলিত প্রকোষ্ঠে কোথাও দাউ দাউ দরুণ আগুন
এই স্বপ্নের ভিতরে কী যে রৌদ্রকরোজ্জ্বল সবুজাভ দিন
আর কি জেনেছে তাও? তাই আমার স্বপ্নের পিছে
লেলিয়ে দিয়েছে এতো সশস্ত্র প্রহরী
বুটের আওয়াজ ঘন ঘন কানে এলে যাতে এই
স্বপ্ন অন্তর্হিত হয়;
কিন্তু ওরা তো জানে না এই স্বপ্নকে আমি কতোদিন
শত্রু ছাউনির পাশে রেখে
কতোদিন সশব্দ কামানের মুখে ফেলে
কতোদিন যুদ্ধের মহড়া দিয়ে তাকে করেছি প্রস্তত এতোখানি।
আমার স্বপ্ন তো আজ নিজেই সইতে পারে
সব শোকাবহ ঘটনার বেগ, বিদ্যুৎ কি অগ্নির ছোবল
আমার স্বপ্নের মধ্যে কখন ঢুকেছে এই
বিশাল বেদনা
তাই তাকে দিয়েছে ব্যঞ্জনা সেই একটি নামের
স্বপ্নেরও অধিক সেই স্বপ্নভেদী নাম,
স্বপ্ন ভেদ করে আমার হৃদয়ও ভেদ করে সেই মৌন মগ্ন এপিটাফ!