কেউ কেউ
এই মরুভুমি মধ্যে দুই একজন মানুষ আছেন
স্নিদ্ধ ছায়াময়-
তাদের নিকটে গেলে মনে ছয়
এই গাছের ছায়ায় আরো কিছুক্ষণ বসি।
দুই একজন মানুষ আছেন এই রুক্ষ মরুর মধ্যেও
স্বচ্ছ জলাশয়,
তাদের নিকটে গেলে সাধ হয়
এই নদীর সান্নিধ্যে জীবন কাটাই।
এই মরুভুমিতেও আছেন এমন মানুষ কেউ কেউ
স্মিত হাস্যময়-
তাদের নিকটে গেলে মনে হয়
এই মনীষার আলোয় উদ্ভাসিত হই।
কোথাও যাইনি আমি
হয়তো পেরুনো যাবে
এই সাতটি সমুদ্র আর সাত শত নদী,
কিছু কীভাবে পেরুবো
এই দূর্বাঘাসে ভোরের শিশির
কীভাবে পেরুবো এই নিকোনো উঠোন,
লাউ-কুমড়োর মাচা!
হাজার হাজার মাইল সুদীর্ঘ পথ সহজেই
পার হওয়া যাবে,
কিন্তু তার আগে কীভাবে পার হবো এই
সবুজ ক্ষেতের আল-
ছোট্র বাঁশের সাকো, পার হবো
ঝরে পড়া শিউলি-বকুল!
পাহাড়-পর্বত, বন পার হওয়া হয়তো
তেমন দুঃসাধ্য নয়
কিন্তু কীভাবে পার হবো এই বৃষ্টির ফোঁটা,
একটি শাপলা ফুল,
কীভাবে সত্যই আমি পার হবো এইটুকু
সরু গলিপথ,
কীভাবে পার হবো বহুদিন দেখা এই খেয়াঘাট।
হয়তো পেরুনো যেতো অসংখ্যা পথের বাধা
মরুভুমি সমুদ্র পর্বত,
আমি পেরুতে পারবো না শিশির-ভেজা
তোমার উঠোন;
তাই কোথাও যাইনি আমি, এখানেই রয়ে গেছি
তোমাকে জড়িয়ে।
চাই পাখির স্বদেশ
আকাশের বান্ধাব পাখিরা, মেঘলোকে
রহস্যের সতত সন্ধানপ্রার্থী; কখনো
বেড়াও উড়ে সকৌতুকে
সমুদ্রের নীল জলরাশির ওপর;
তোমাদের বিশাল ডানার ছায়া পড়ে
হ্রদে আমার হৃদয়ে, উড়বার সাধ
নেই, তবু তোমাকে আমার বড়ো ভালো
লাগে পাখি, আমি চিরদিন একটি
স্বপ্নের পাখি পুষে রাখি বুকের ভিতর।
খুব ছোটবেলা থেকে আমি পাখিদের
প্রতি বড়ো মনোযোগী, যদিও কখনো আমি
ডানায় করিনি ভর, পাখিদেরই ডেকেছি
মাটির কাছাকাছি, আকাশকে সবুজ উঠোনে;
পাখিদের প্রতি এই পক্ষপাত থেকে আমি
কখনো নিইনি হাতে শিকারীর তীর,
কখনো শিখিনি তীর ছোঁড়া, কোথাও
দেখলে তীর, গুলি, কেমন আঁতকে ওঠে
বুক, এই বুঝি বিদ্ধ হলো প্রকৃতির শুদ্ধ
সন্তানেরা; আকাশে তোমার ওড়া দেখে
আমি স্বচ্ছেন্দে বেড়াই ভেসে স্বপ্নপুরীতে
দূর দেশে যেখানে প্রত্যহ মায়াবী পাখিরা
দিব্য সরোবরে মনোরম জলক্রীড়া করে;
এই পাখির পৃথিবী কেন কিরাতের
তীরে ভরে গেলো, আমি
পাখিদের নিরাপদ অবাধ আকাশ চাই,
চাই পাখিদের স্বাধীন স্বদেশ।
জীবনের পাঠ
শুধাই বৃক্ষের কাছে, ‘বলো বৃক্ষ, কীভাবে
চলতে হয় কঠিন সংসারে? তুমি তো দেখেছো
এই পৃথিবীতে অনেক জীবন;
বৃক্ষ বলে, শোনো, এই সহিষ্ণুতাই জীবন’।
বলি আমি উদ্দাম নদীকে, বলো, পুণ্যতোয়া নদী,
কেমন দেখেছো তুমি মানুষের জীবনযাপন?
তুমি তো দেখেছো বহু সমাজ সভ্যতা’;
মৃদু হেসে নদী বলে,
দুঃখের অপর নাম জীবনযাপন’।
যাই আমি কোনো দূর পাহাড়ের কাছে
বলি, শোনো, হে মৌন পাহাড়,
তুমি তো কালের সাক্ষী, বলো না
বাঁচতে হলে কীভাবে ফেলতে হয় এখানে চরণ’?
কেবল দেখায় তার নিজের জীবন।
অবশেষে একটি শিশুকে আমি বুকে নিয়ে বলি,
‘তুমি এই জীবনের কতেটুকু জানো,
কোথায় নিয়েছো তুমি জীবনের পাঠ’?
কেবল শিশুটি বলে, ‘এসো খেলা করি আমরা দুজনে’।
দেখতে চাই
আমাকে দেখাও তুমি দূরের আকাশ, ওই
দূরের পৃথিবী
আমি তো দেখতে চাই কাছের জীবন;
তুমি আমাকে দেখাতে চাও দূর নীহারিকা
সমুদ্র-সৈকত
বিসতৃত দিগন্তরেখা, দূরের পাহাড়
তুমি চাও আরো দূরে, দূর দেশে
আমাকে দেখাতে কোনো রম্য দ্বীপ, স্নিগ্ধ জলাশয়
আমি চাই কেবল দেখতে এই চেনা সরোবর,
কাছের নদীটি।
আমাকে দেখাতে চাও বিশাল জগৎ, নিয়ে যেতে
চাও অনন্তের কাছে
আমার দৃষ্টি খুবই সীমাবদ্ধ-
অতো দূরে যায় না আমার চোখ;
কেবল দেখতে চাই জীবনের কাছাকাছি
যেসব অঞ্চল-
দূরের নক্ষত্র থাক তুমি এই নিকটের মানচিত্র
আমাকে দেখাও;
দেখাও নদীর কুল, চালের কুমড়োলতা,
বাড়ির উঠোন্ত
দূরের রহস্য নয়, কেবল বুঝতে চাই
তোমার হৃদয়।
মেঘের জামা
পাহাড় যেন ট্রাফিক পুলিশ
গায়ে মেঘের জামা
জেলগেটে ওই ঘন্টা বাজে
পড়ায় শপথনামা;
ঝড়জলে তাই
ঘুমিয়ে যাই-
আলস্যে এই মেঘনাঘাটে
হয় না দেখি নামা,
আকাশ যেন বিরহী এক
গায়ে মেঘের জামা।
আকাশ বুঝি বলিভিয়ার
গভীর ঘন ঘন
জেলগেটে ট্রাফিক পুলিশ
দাঁড়ানো একজন ।
কে সে প্রিয়ংবদা
তিস্তা কি নর্মদা;
তার কাছে কে পৌছে দেবে
সোনার সিংহাসন,
মেঘের জামা পরেছে ওই
বলিভিয়ার বন।