জ্যাকুলিনের দ্বিতীয় বিবাহের পর
তুমি বড়ো জীবনকে ভালোবাসতে, জ্যাকুলিন
সুখ কোথায় থাকে, ভালোবাসা কোথায় তার
ক্যাম্পখাট বিছিয়ে ঘুমায়
তোমার চেখের নিচে ভালোবাসার সবুজ ঠিকানা
তোমার গুপ্ত বুকে দক্ষিণ আমেরিকার সমস্ত সোনার খনি
ঐশ্বর্যে তোমার বড়ো সাধ
তুমি চাও জুয়েলারী, টয়লেট,
ছিমছাম সোনালি মোজেক ;
দুঃখকে তোমার বড়ো ভয় জ্যাকুলিন,
দুঃখকে তোমার বড়ো ভয়
দুঃখ কি দেখেছো খুলে তার কালো বাক্স থেকে দেখতে কেমন
তার সারা মুখে ব্রণের দাগ, নিগ্রোদের মতো ভাঙা গলার স্বর
দুঃখ বড়ো ভয়ঙ্কর, দুঃখকে পাশে নিয়ে তুমি কিছুতেই ঘুমোতে
পারবে না
বড়ো শকাত দুঃখের সাথে রাত জাগা
বিশেষত তোমার অভ্যাস নেই,
জ্যাকুলিন, তোমার চাই ভালোবাসার বাসস্থান,
সম্পদ, দম্পতির সুখভোগ
তোমার চোখের নীল সমুদ্রে চাই ওনাসীদের সমসন্ত জাহাজের মালিকানা
জাঁকজমক, যা কিছু ইচ্ছে খরচবরাদ্দ,
তোমার যৌবনে চাই ভুলচুক, প্রকৃতির রক্তমাংস
সন্মৃতির ঝাপসা আংনায় তুমি কারো ফ্যাকাসে মুখ দেখে
এক থাকতে পারো না,
কেনেডীর মৃত্যু যতো করুণই হোক, জ্যাকি, তুমি এক
থাকতে পারো না।
জ্যাকুলিন, তুমি দেখবে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে
ব্যালকনি দেখে কেমন বাঁচতে আচ্ছে করে
যেঘ দেখতে দেখতে হায় যায় লতাপাতার মতো কাছাকাছি
তুমি কখনো পিকনিকে গেলে দেখবে নারীপুরুষের
পাশাপাশি সুখ ও ভালোবাসার অবস্থান
টকিহল, মন্ত্রীদের বসভবন কিংবা হোয়াইট হাউসের
পাশ দিয়ে যেতে যেতে
তুমি এসব দেখে অযথা দুঃখ পাবে
তোমার অনেক কিছু আচ্ছে করবে জ্যাকুলিন,
ভালোবাসা, সুখ, চুম্বন এরকম আরো কতো কি
ও তুমি সইতে পারবে না ;
তোমার চোখের নিচে ভালোবাসার ধারালো রেজার
তোমার বুকের মধ্যে সুখী দম্পতির সবুজ ভূস্বর্গ
তোমার কোনো দোষ নেই জ্যাকুলিন, তোমার কোনো দোষ নেই
তুমি তো নিজের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে
পারো না।
তার বুকে আছে
তার বুকে আছে স্বর্ণচাঁপার গাছ, আকাশের মতো বড়ো নীল
পোষ্টাপিস
সব যোগাযোগ, নিরুদ্দেশ মানুষের তারবার্তা, জরুরী খবর
বৃষ্টির কালো জামা পরে সেখানে লুকিয়ে থাকে তাড়িত ফেরারী
তার বুকে ট্যুরিষ্টের নিশ্চিত শেল্টার আছে, অসুখী লোকের
আছে সবুজ শুশ্রূষা
বনের চোখের নিচে যারা পাখির পারক খোঁজে, আসে
বনবিভাগের লোকজন জেনে নিতে গাছের বয়স, উদ্ভদ কীভাবে বাড়ে-
অথচ সবাই তারা ফির যায় প্রকৃতির জড় ব্যবহার দেখে
এইসব হন্যে মানুষ এসে তার বুকে খুঁজে পায় সমস্ত পাখির বাসা,
নিসর্গের নীল টেলিফোন শোনে
দেখে উদ্ভিদের নিজস্ব হস্তাক্ষরে লেখা চিঠি, পাখির পালক দিয়ে
নির্মিত গার্মেন্ট
তার বুকে আছে
অরণ্যের চিত্রকলা, গোপন স্টুডিও ;
তার বুকে আছে দেরি করে ঘরে ফিরে ডাক দিলে যে দেয়
দুয়ার খুলে
সেই ভালোবাসা,
যে এসে ভীষণ জ্বরে মাথায় কোমল হাত রাখে সেই দুঃখবোধ
তার বুকের মধ্যে বাস করে রাজদম্পতির সুখ, দুঃখী
বালকের কান্নার সঙ্গী
যখন শহরে বাধে গোলযোগ, ধর্মঘট হরতাল চলে
যানবাহন বন্ধ থাকে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়
ঝাঁপ-ফেলা দোকানপাট দেখে মনে হয় সমস্ত শহর যেন
মৃত রবিবার
তখনো দাঁড়িয়ে দেখি তার বুকে খোলা জুয়েলারী শপ,
ফুলের দোকান,
আকশের মতো সেই বড়ো নীল পোস্টাপিস,
তার বুকে আছে
গোপনীয় খাম হাতে সোনালি পিয়ন।
তোমাকে ছাড়া
তুমি যখন আমার কাছে ছিলে
তখন গাছের কাছে গেলে আমার ভীষণ আনন্দ বোধ হতো
লতাপাতার উৎসাহ দেখে আমি সারাদিন তার কাছে ঘুরে বেড়াতাম
কোনো কোনো দেন পাখিদের
বাষভূমিতে আমার অনেক উপাখ্যান শোনা হতো
তুমি যখন আমার কাছে ছিলে
তখন প্রত্যহ সূর্যোদয় দেখতে যেতাম তোমাদের বাড়ির পুরনো ছাদে
তোমার সেই যে দজ্জাল ভাই সারারাত তাস খেলে এসে
পড়ে পড়ে তখনো ঘুমাতো,
তুমি যখন আমার কাছে ছিলে
তখন আমার রোজ ভোরবেলা ঘুম ভাঙতো, যেতাম
প্রকৃতির কাছে মানবিক অনুভূতি নিয়ে
মানুষের দুঃখ দেখে আমার তখন ভীষণ কান্না পেতো
এখন আমার আর সেই অনুভব ক্ষমতা নেই
মানুষের নিষ্ঠুরতা ও পাপ দেখেও আমি দিব্যি চায়ের দোকানে
বসে হাসতে হাসতে চা খাই
সেলূনে চুল কাটার সময় পাশেই অবৈধ কতো কী ঘটে যায়
তুমি কাছে না থাকলে আমি দিন দিন অমানুষ হয়ে উঠি
আশেপাশে সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করি
মানুষ ও প্রকৃতির দিকে চেয়ে আমার হিংসা বোধ হয়
তুমি না থাকলে মেয়েদের রূপ কিংবা ফাহমিদা খাতুনের
রবীন্দ্রসঙ্গীত কিছুই আমাকে আকর্ষণ করে না
শিশুদের প্রতি মমত্ববোধ জাগে না আমার
একে একে সকাল দুপুর সারাদিন নষ্ট হয়
কোনোকিছুই করতে পারিনে আমি
তুমি না থাকলে বড়ো দুঃসময় যায়, সর্বত্র বন্ধুবিহীনভাবে
বাস করি
এই ঢাকা শহর ভীষণ রুক্ষ মনে হয়
কাউকি ডাকলে সাড়া দেয় না, সবাই আমার বিরুদ্ধাচরণ করে
তুমি না থাকলে এই বাড়িঘর শহরের লোকজন
সম্পূর্ণ আমার অপরিচিত মনে হয়
নিজেকেই নিজের অচেনা লাগে
মনে হয় দীর্ঘ দিন থেকে আমি যেন কোনো অজ্ঞাত অসুখে ভুগছি
তুমি না থাকলে বাস্তবিক আমি বড়ো কষ্টে পড়ি
বড়োই কষ্ট হয়।
দুঃখ আছে কতো রকম
হায় আমাদের দুঃখ আছে কতো রকম
বুকের ক্ষত, মনের বারো গাঢ় জখম
মা যেমন দুঃখ করেন হলো না তার ঘটিবাটি সোনার বাসন
ন্যায্য আসন
ছেলেরা তার দিলো না কেউ
রইলো পড়ে বাইরে যেমন উড়োনচন্ডী
জোয়ারে ঢেউ ;
ঘর হলো না, নিজের কোনো ঠাঁই হলো না পায়ে দাঁড়াবার
হত বাড়াবার
বিপদ আপদ কতোই আছে
মা রাখলেন মনেই চেপে মনের দুঃখ
মনের কাছে,
আমি যেমন দুঃখ করি
দুঃখ করি
অনেক কিছু
ঠিক য়ে আমি চুটলি কখন কিসের পিছু
তাই জানি না
শীতের দিনে হাত বাড়িয়েও ঘরে একটু রোদ আনি না
কেন যে ঠিক দুঃখ করি তাই জানি না ;
এই তো আমি ইচ্ছে করলে খেতে পারি, ঘুমোতে পাই যখন তখন
অসুখ হলে কিনতে পারি অ্যাসপ্রো কিংবা চোখের জন্যে
দামী লোশন
বাসে চড়ে ঘুরতে পারি এখান থেকে অনেক খানি,
কিংবা যেমন কারো কারো প্রেমের জন্য প্যানপ্যানানি
প্রেম হলো না, হলো না ঠিক আলাপ কোনো মেয়ের সাথে
দিনেরাতে
বাদশাজাদীর তসবী নিয়ে নরম বিলাস
ও-সব ছাই নেই কিছুরই কোনো আভাস
আমার মধ্যে, তবু আমি দুঃখ করি
কিসের জন্যে দুঃখ করি তাই জানি না
গাই বিয়োবার আশায় ঘরে ধান ভানি না
সবাই আমরা দুঃখ করি একটা কিছুর দুঃখ করি
ঘটিবাটি, বসতবাড়ি, ফুলদানি বা সোনার বাসন
নিজের জন্য হলো না ঠিক যোগ্য আসন
হাত বাড়াবার শক্ত লাঠি
পরিপাটি সোনার জীবন
হলো না ঠিক যেমনটি চাই দুঃখ করি
সবাই আমরা একটা কিছু দুঃখ করি
কেন যে ঠিক দুঃখ করি তাই জানি না
কেবল বুঝি বুকের নিচে সুনীল জখম।