রাতচরা লোক
সাঁওতালদি ব্যাণ্ডেল একে একে নিভে গেলে
নিরীহ মানুষটি অন্ধকারে পা ফেলে
হেঁটে যায় মাঠ গাছ নদী
সারারাত ধরে তারা খসে
মানুষটি দাঁড়িয়ে থাকে সেই স্বচ্ছ আঁধারের বশে
মোহানায় সাঁতারের নুন মাখে বাঘ ডোরাকাটা
ডাঙায় হাঁ করে থাকে কুমির বিশাল
মানুষটি হাই তোলে ঘুমচোখে
সাদা খোঁচা খোঁচা দাড়ি, তোবড়ানো রোগা তার গাল
অবাক দাঁড়িয়ে দেখে তারা ঝরে কত
ওরাও কি ঝাঁপ খায় নেশা করা মানুষের মতো
এই কথা ভর করে তাকে
যেখানে সূর্য ডোবে সেই ঘাট থেকে
এই ভবসাগরের শুরু
আকাশে কাঠের ধোঁয়া ফাটা চাঁদ শাখা নোয়া
বাতাসে অগুরু
শামুকের ভাঙা খোলা নিঃসাড়ে চিরে দেয় পা
কাদায় রক্ত টানে তবু সে শব্দ করে না
মানুষটি হেঁটে চলে আর তাকে ঘিরে
সারারাত খসে পড়ে তারা
আসল যুক্তি হল নিজেকে তেমন তুলে ধরা
কখনও প্রদীপ হয়ে কখনও বা মানতের সরা
এত কিছু জানে ঐ লোক
জানে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে পা ফেলতে হয়
আর পা ফেললে হয় দেশ দেখা
ওর কাছে কষ্ট নিয়ে আমি যেন হতে পারি ওর মতো একা
সাঁওতালদি ব্যাণ্ডেল একে একে নিভে গেলে
নিরীহ মানুষটি অন্ধকারে পা ফেলে
রেস্তরাঁর খাদ্য তালিকা
নিরামিষ :
মারাত্মক ডিডিটি শাক, ভাগাড়ের সবজি,
উপড়ে তোলা স্তম্ভিত পেঁয়াজ, তেজস্ক্রিয় আলু
বিনের মধ্যে বিস্ফোরক দানা, বিশাল বেঢপ
স্প্যাস্টিক লাউ, চলন্ত ল্যাজওলা বেগুন,
হিংস্ৰ অকটোপাস লতা, পশুর রক্ত-ভরা
টমেটো
আমিষ :
শিশুদের টাটকা চোখ, আঙুল, নিহত
হরিজনের ঝলসানো মাংস, ভূপাল থেকে
আনা নীলাভ বাছুর, ফলিডলে মারা মাছ,
রাস্তায় সংগৃহীত চাপ চাপ রক্ত, প্রত্যন্ত
অঞ্চলে পাওয়া হাড়, অর্ধদগ্ধ করোটি
অ্যাকসিডেণ্টের ঘিলু, তরুন চর্বি, আস্ত বনসাই মানুষ
মিষ্টান্ন :
বিষুব অরণ্যের কান্নাভরা ক্লান্ত অধঃপতিত আঙুর
মৃত প্রেম যা মিষ্টি চিউইংগামের মতো খাওয়া যায়
নরম ক্যাসেট বা রেকর্ড, যে সুন্দরীরা খবর পড়েন,
চিত্রতারকা, মিছরি মেশানো মদ, ধুরন্ধর বিপ্লবী
নেতার তৈরি সন্দেশ, এইডস চুম্বন
তৎসহ :
একটানা আরোয়াল কানসারার ভিডিও
এছাড়াও রয়েছে মুখ মোছার জন্যে খবরের কাগজ
ছাই ফেলার জন্যে হাঁ-করে থাকা বুদ্ধিজীবী, কবি এবং
উনুন হিসেবে সদাপ্রস্তুত বৈদ্যুতিক চুল্লি।
লাল কার্ড হাতে ছোট ছোট ফুটবল দলের গান
আমরা ছোট ছোট দল ঠিকই
কিন্তু এক হতে পারলে আমরা
মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলকেও হারিয়ে দিতে পারি
মাঝে মাঝে তো হারিয়ে দিই
তখন আমাদের মার খেতে হয়
সেই কবে থেকে আমরা মার খেয়েই আসছি
আমাদের মার খাওয়াটাই তো ইতিহাস
আর আমাদের মারাটাই যেন নিয়ম
আপনি ভাবছেন কী ক’রে চিনবেন আমাদের
আমাদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে লাল কার্ড
বড় বড় দলের প্লেয়াররা আমাদের মারে
সেটা দেখে রেফারি চোখে প’রে ফেলে ঠুলি
ওদের বোকা সাপোর্টাররা আমাদের ইট মারে
ওরা জানেনা কী করছে
ফাটা মাথা আর অবিচার বহন ক’রে আমরা খেলে যাই
হতে পারি আমরা ছোট ছোট দল
কিন্তু একজোট হলে আমরা
ওদের চোয়াল ভেঙে দিতে পারি
আমাদের রোগা রোগ কোচ, মুষ্টিমেয় সমর্থক
ছেঁড়া বুট, নড়বড়ে তাঁবু, ভেজা বল
হাঁটুর তলায় কালশিটে, কপালে ফেট্টিবাঁধা
কিন্তু ভাবুন তো একবার
কতদিন ধরে কী লড়াইটাই না আমরা চালিয়ে যাচ্ছি
সবাই এক হলে লড়াই-এর চেহারাটাই তো পাল্টে যাবে
সত্যি কথা লুকিয়ে রাখতে আমরা ঘৃণা বোধ করি
তাই স্পষ্ট গলায় জানিয়ে দিচ্ছি
যারা লাথি মারে ইতিহাস তাদের মুছে ফেলে
যারা লাথি খায় তারাই হাতমুঠো ক’রে উঠে দাঁড়ায়
মনে রাখবেন হাড়জিরজিরে খালি-পা রুশ যুদ্ধবন্দীদের
এগারো জন
সাঁজোয়া জার্মান দলকে পুঁতে ফেলেছিল
খেলার শেষে এগারো রুশকে গুলি ক’রে মারা হয়েছিল
মনে রাখবেন ফেরেঙ্ক্ পুসকাস
ছেঁড়া ন্যাকড়ার দলা পাকিয়ে খেলতে শিখেছিলেন
তেরেস কোরাকোয়েস–সেই শহরের গরীব ছেলে ‘দিকো’
সাত বছর বয়সে যে করতো জুতো পালিশ
দুনিয়ার ফুটবল পাল্টে দিয়ে হলো ‘পেলে’
ইউরোপের সেরা ফুটবলারের ট্রফি লম্বা চুল ছেলে
রুড গুলিট উৎসর্গ করেছে নেলসন ম্যাণ্ডেলার নামে
এগুলো আপনারা মনে রাখবেন
যে সব ব্যবসাদার, ফড়ে, মহাজন, স্মাগলার, ডাক্তার, মন্ত্রী
আপনারা, যাঁরা বড় বড় ক্লাবের পাণ্ডা, ময়দানের মা বাপ
আপনি ভাবছেন কী ক’রে চিনবেন আমাদের
আমাদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে লাল কার্ড
আমাদের ছোট ছোট ক্লাবের টুকরো টুকরো মেঘ মেঘ পতাকা
একসঙ্গে হলে আকাশ মাপের একটা নিশান তৈরি হবে
আমাদের জার্সির ফালিগুলো জুড়লে
দেখা যাবে ক্ষ্যাপা বাউলের সেই আশ্চর্য জোববা
আমাদের বুদ্ধি, মেহনত ও অঙ্গীকার এক হলে
সমুদ্রও তাজ্জব হয়ে যাবে উপযুক্ত প্রতিপক্ষ দেখে
হারাবার জন্যে আছে হীনমন্যতা, আমিত্ব, নিজেকে না চিনতে
পারা
অথচ আমরা পারি, আমরাই পারি
ফুটবলের ইতিহাসটা ঢেলে সাজাতে
প্রত্যেকটা স্টেডিয়ামের ভি আই পি গ্যালারিতে
কাদামাখা রাগী বল ছুঁড়ে দিয়ে
জাল ছিঁড়ে, বার কাঁপিয়ে
লীগ, শীল্ড, ডুরাণ্ড, রোভার্স— সর্বত্র অঘটন ঘটিয়ে
ওদের হিসেব, কেতাব, খাতা— তোলপাড় ক’রে দিতে পারি
আবার একবার, এবার আরো জোর গলায় জানিয়ে দিচ্ছি
যারা লাথি মারে ইতিহাস তাদের মুছে ফেলে
যারা লাথি খায় তারাই হাতমুঠো ক’রে উঠে দাঁড়ায়