ভিয়েতনামের ওপর কবিতা
আমি অনেক ভেবে দেখেছি।
আজকে—এই সভায়
ভিয়েতনাম নিয়ে একটা কবিতা
আমার পক্ষে পড়া সম্ভব নয়
কারণ ব্যাপারটা অসম্ভব কঠিন
কীরকম দেখতে সেই কবিতা
তার হাতে কী থাকবে
সে অন্ধকারে দেখতে পায় কিনা
কতদিন তাকে জেলে থাকতে হয়েছে
আমি তার কিছুই
হদিশ করতে পারছি না
শব্দগুলো ভীষণ রক্তাক্ত, অসম্ভব বেপরোয়া
তার ওপরে অনেক শব্দ ঝলসে গেছে নাপামে
কিছু কিছু শব্দ উন্মাদ ও কালা হয়ে গেছে
কোনো কোনো শব্দকে হাত বেঁধে
হেলিকপ্টার থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে
অথচ এই শব্দগুলোকে সাজাতে না পারলে
ভিয়েতনামের কবিতা হবে না
শব্দ আমার কাছে চুইংগাম
মৃত বুদ্ধিজীবীর টেলিফোন নম্বর
মনোপলি দৈনিকের অশিক্ষিত
সম্পাদককে খুশি করার পাসপোর্ট বা প্রসাধন নয়
শব্দগুলোকে আমি গ্রেনেডের মতো
সাম্রাজ্যবাদী ক্যাবারের মধ্যে ছুড়ে দিতে চাই
শব্দগুলোকে আমি
রাস্তার বাচ্চাদের মধ্যে
আপেল আর বিস্কুটের মতো বিলিয়ে দিতে পারি
কিন্তু শব্দগুলো আমার হাতে চেটোর মধ্যে ফেটে যাচ্ছে
আমি লিখতে পারছি না
একটা জিনিস আমি বুঝেছি
একটা মিথ্যে কবিতা যত মিথ্যে কথা বলতে পারে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও তা পারে না
কিন্তু একটা সত্যি কবিতা
ঘুমন্ত শিশুদের সারারাত বিমান আক্রমণ
থেকে আড়াল করে
ভিয়েতনাম নিয়ে কবিতা
সারা পৃথিবী জুড়ে লেখা হতে পারে
সেই আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায়
আমি অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত
সেই কবিতা লেখায়
ব্লাস্ট ফার্নেস, রকেট, ট্র্যাক্টর আর
পিয়ানো ব্যবহার করা হবে
বেশ, তবে সেই কবিতা লেখা হোক
আপনারা আসুন
(আমি কোনো শ্রমিক বা কৃষককে কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না)
এখানে যারা নেই তারাও আসুক
থেকে সেই আশ্চর্য কবিতা লেখা যায়
আমি সেই কবিতার কথা একটু
ভাবতে পারি মাত্র
কবিতার শব্দগুলো দাউ দাউ করে জ্বলছে
ঝোড়ো হাওয়ায় ঝাণ্ডার মতো উড়ছে কবিতা আমার
আর ছাই হয়ে যাচ্ছে পেণ্টাগন
ফাসিস্তদের কুৎসিত মুখ
চেজ ম্যানহাটান ব্যাঙ্ক
চিলি, রোডেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার
কারাগার
আর সেই আশ্চর্য আলোর মধ্যে
অসংখ্য মানুষের উৎসবে
পৃথিবীর সমস্ত সাইগন
হো চি মিন নগর হয়ে উঠছে
সেই মুক্ত শহরে
প্রথম যে জিপটা ঢুকছে
তার মধ্যে কতগুলো বাচ্চাছেলে বসে
তারা আঁকা একটা ফ্ল্যাগ উড়ছে
—তাদের হাতে সাবমেশিনগান
দেখতে অনেকটা এরকম
ভিয়েতনামের ওপরে লেখা
আমাদের সেই আশ্চর্য কবিতা।
মাংসনগরে, পণ্যের বাজারে
আপনার ত্বকের সুরক্ষার জন্য সত্যিই কার্যকরী ক্রীম নাপাম
কিনুন দুরন্ত ধার দেওয়া রেজর ব্লেড, হাতের শিরা কাটুন,
কাগজের কার্টুন জমান
কিনুন পেসমেকার, আপনার অজান্তেই ব্যাটারি ফুরিয়ে যায়
শিশুদের জন্যে কিনুন মেশিনপিস্তল, শটগান, ইদুর মারার ললিপপ
কিনুন আত্মাকে ধরার বেলুন, ঘুমপাড়ানি বুলেট, রক্ত দূষিত করার
টনিক
স্বল্পমূল্যে যোগ দিন স্তম্ভিত ব্রয়লারের দলে, ডিনার পার্টিতে, ভোটার
লিস্টে
কিনুন বিপ্লবী বুফিল্ম, সোনাগাছির ভিডিও, বিল্লা ও রঙ্গার সমগ্র
রচনাবলী
কিনুন ছোট্ট লাইটার যা স্টুপিড মেয়েদের পুড়িয়ে মারতে দারুণ
উপযোগী
কিনুন মানুষের চামড়ার স্ট্রেচলন, জিভের রবার, শিশুর হাড়ের ডটপেন
খুচরো পাপ ও ধর্ষণের নোট স্থায়ী আমানতে রাখুন যাতে
মেয়াদ ফুরোলে গণহত্যা ও শিশুমেধ পাওয়া যায়
কিনে ফেলুন নিউক্লিয়র ছাতা, হিরোশিমার বিস্কুট, লেবাননের
কমলালেবু যার খোসার থেকে সলতে বেরিয়ে
কিনুন নিকারাগুয়া, ইরান-ইরাক, এল সালভাদর, আরোয়ালের ফটো-অ্যালবাম নিজেকে কিনে ফেলুন বৌ-বাচ্চাসমেত
সঙ্গে ফাউ মর্গ, হোপ-৮৬, রেফ্রিজারেটর, রাজ্যসভা, ইনভার্টার, কমোড,
ক্রিমেটোরিয়াম
কিনুন আমার এই ক্রুদ্ধ মেজাজের সিগারেট বা কবিতা
ঘৃণার ফিন্টার লাগানো।
মৃত্যুর একটি গান
আমি তো করিনি ভুল
সে এনেছে ফুল
ফুলের সঙ্গে ছিল কিছু ছেঁড়া পাতা
ফুলওলা বসেছিল তালিমারা ছাতা
কান্নায় ভিজে গেল একমাথা চুল
আমি তো করিনি ভুল
সে এনেছে ফুল
ফুল এল গাড়ি চড়ে ফুল এল রিক্সায়
ফুল এল মুখ বুজে ফুলে ফুল মিশ খায়
ফুল এল মরে মরে ফুলের আঁচল ধরে
ফুল এসে ঢেকে দিল মোমের পুতুল
আমি তো করিনি ভুল
সে এনেছে ফুল
পাপড়ি জড়ানো ছিল আগুনের হলকায়
সুগন্ধ মিশে ছিল তাঁত-বোনা কলকায়
আগুনের লতাপাতা আগুনের আকুলতা
যেই ছুঁল গলে গেল মোমের পুতুল
আমি তো করিনি ভুল
সে এনেছে ফুল
ম্যাচবাক্সের মানুষ
বারুদ মাখানো তাদের ঘরের দেওয়াল
হালকা কাঠের খটখটে নিচু ছাদ
ফ্যাকাশে অনেক মানুষ এখানে থাকে
অর্থহীন ও নিতান্ত বরবাদ।
তাদের শরীরে রক্ত আছে কি নেই
ভাববার মতো সেটা একখানা কথা
বদরাগী এরা মিশকালো সেই রাগ
জমাট আঁকড়ে রয়েছে তাদের মাথা।
কী জানি কী এক হতাশাজনিত ক্রোধে
থতমত খেয়ে ঘরের বাইরে আসে
হালকা কাঠের খটখটে নিচু ছাদে
মাথা ঠেকে গেলে ফ্যাঁশ ফ্যাঁশ করে হাসে।
বারুদ মাখানো তাদের ঘরের দেওয়াল
সেই দেওয়ালেতে মাথা ঠুকে কী যে চায়
অর্থহীন ও নিতান্ত বরবাদ
ফ্যাকাশে আগুনে নিজেরাই জ্বলে যায়।