পটভূমি—১৩৮৮
কোনো এক কুঠুরিতে লণ্ঠনের নিভে আসা আঁচে
দেখা যায় একটি মেয়ে নিজের কাপড়ে গলা বেঁধে
একলাই ঝুলে আছে
ঘরের কোণেতে শুধু খচ্ খচ্ শব্দ ইঁদুরের
পোকাধরা বাসি চাল চুরি করে গর্ততে লুকোয়
মেয়েটি যে অন্তঃসত্তা—সেই সত্তাটিও ক্রমে মরে
তুমি কি লজ্জা পাও নিজের সত্তার কন্দরে?
তুমি কি সরব হও বেশ্যাবাহী শহরে বন্দরে ?
এরকম মুহুর্তে ঐ ঝুলন্ত চিত্রটির পাশে
সহসা যদি রেডিওতে বেজে ওঠে মুগ্ধমতি জাতীয় সংগীত
তাহলে বুঝতে হবে শূন্যে দু পা রেখে ঐ মেয়ে
রাষ্ট্রকে জানাচ্ছে তার পাওনা সম্মান
যেরকম বলা হয় নগ্নপদ স্কুলের শিশুদের
দুর্লভ পুণ্য আনে দূষিত নালার জলে স্নান
ইতিমধ্যে রোঁয়াওঠা বৃদ্ধ কিছু ইঁদুরের দল
স্ফীতোদর বিড়ালের সঙ্গে করে সম্ভোগ,
লালসার খেলা
এভাবেই কেটে যায় বেলা ও অবেলা, কালবেলা
মৃতা যুবতীটি ঝোলে, লন্ঠনের কাচে জমে কালো
এর চেয়ে দেশদ্রোহী নাম নিয়ে জুলে ওঠা
লক্ষগুণে ভালো
তুমি কি ক্রুদ্ধ হও নিজের সত্তার কন্দরে ?
তুমি কি যুদ্ধ চাও শহরে ও গ্রামে, বন্দরে ?
পুলিশ করে মানুষ শিকার
বনবিবি না দক্ষিণরায়
কোন থানেতে মানত রাখতে
যাচ্ছে থানার বড়বাবু
হাতে বন্দুক, পায়ে জুতোবুট
চা সিগারেট চাখতে চাখতে
কোন থানেতে মানত রাখতে
যাচ্ছে নোনা সোঁদা হাওয়ায়
বনবিবি না দক্ষিণরায়
মানুষ করে মানুষ শিকার
মানুষ শিকার করে মানুষ
দলের মানুষ কলের মানুষ
কত ছলাকলার মানুষ
কুমিরও নয় কামটও নয়
বড় শেয়াল, চৌসাপা নয়
বল্লমে চোখ উপড়ে নিয়ে
কোপ মারে দা, কাতান দিয়ে
তাদের ধরতে যাচ্ছ নাকি
নোনা ফেনা সোঁদা হাওয়ায়
কোন মানত পড়ল ফাঁকি
বনবিবি না দক্ষিণরায়
স্টিমার ঘাটে ভিড় করে ভয়
মানত করে ফেরার সময়
বাঁশের সঙ্গে হাত-পা বাঁধা
রক্তে মুখে জেবড়ে কাদা
আনছ কাকে ঝুলিয়ে নিয়ে
বুলেটে চোখ উপড়ে দিয়ে
মানত রাখা হল কোথায়
বনবিবি না দক্ষিণরায়
পুলিশ করে মানুষ শিকার
মানুষ শিকার করে পুলিশ
দলের পুলিশ কলের পুলিশ
কত ছলাকলার পুলিশ
যাচ্ছে নোনা সোঁদা হাওয়ায়
চা সিগারেট চাখতে চাখতে
কোন থানেতে মানত রাখতে
বনবিবি না দক্ষিণরায়।
পেট্রল আর আগুনের কবিতা
এক শালার সঙ্গে দেখা হল
সে কাশছে
তাকে বললাম—গুরু, চলবে?
সে বললে—না
লাস্ট টিপ মারিয়ে গ্যারেজে ফিরছি
দম নেই
এই বলে সে চলে গেল কাশতে কাশতে
সে একটা দোতলা বাস।
তারপর দেখলাম
দশতলা একটা বাড়ি
হাতে রাবারের দস্তানা পরে
বাচ্চা একটা রাস্তার
গলা টিপে ধরেছে
আর ল্যাম্পপোস্টগুলো
ঝটপট করে পালাতে চেষ্টা করছে।
ধারালো চাঁদ ঝলসায় রাতের গলায়
প্ল্যানেটেরিয়ামের ইলেকট্রনিক ঘড়িতে
তখন দারুণ জ্বর
অন্ধকার ফাঁকা ময়দানে
একটা ট্রাম টাল খায়
আচমকা চলে গেল পুলিশভ্যান
ঘুমন্ত কুকুরগুলোকে চমকে দিয়ে
রোজ চমকে দেয়।
আমি জানি
খুব ভালো লিখলেও
একটাও ফাঁসি
থামানো যাবে না
আমি জানি
গরিবদের ভয় দেখানোর জন্য
এই সব কিছু—
লাস্ট টিপ, কাশি, ভয় পাওয়া
ঝটপট করা, হল্লাগাড়ির ধমকে
চমকে ওঠা, টাল খেয়ে খেয়ে
মরা, জ্বরে ছাই হয়ে যাওয়া
এর একটাও
কবিতা লিখে থামানো যাবে না
ধুলোর ঝড়ের মধ্যে
চোখ বন্ধ করে
আমি হাঁটতে শিখিনি
একদিন পেট্রল দিয়ে
সব আগুন আমি নিভিয়ে দেব
সব আগুন আমি নিভিয়ে দেব
পেট্রল দিয়ে।
পোস্টার
ছোট্ট এক হাত মুঠোকরা ন্যাড়ামাথা পোস্টার
সে বলছে
অন্ধ আকাশে লক্ষ বিদ্যুৎ
লক লক করে উঠলেও
ছোট ও নিরীহ গাছেরা ভয় পায় না।
প্রতি কর্তৃপক্ষকে
বিধিসম্মত সতর্কীকরণ পড়ি
পড়ে আসছি
জন্মে, নিরবধি।
পড়ে আসছি সেই জন্মান্ধতা থেকে
দৃষ্টিহীনতায়, অন্ধকারে, চক্ষুহীন উৎসবে
বিধিসম্মত সতর্কীকরণ।
একবর্ণও বিশ্বাস করি না
যা কিছু নিষিদ্ধ তাতে আছে আমার বিধান।
বরফ আর আগুন
আমি একটা ছোট্ট শহরে চলে গিয়ে
রেকর্ড বা পেরাম্বুলেটর বিক্রি করতে পারি
মুখে কান্নার রুমাল বেঁধে আমি বাচ্চাদের
খেলনার রেলে ডাকাতি করতে পারি আমি
প্ল্যাটফর্মের ওপর চক দিয়ে লিখতে পারি
পায়ে পায়ে মুছে যাওয়ার কবিতা
কিন্তু দুজন মেয়েকে ভালোবেসে
আমি যে কষ্ট পেয়েছিলাম
সেকথা কখনও ভুলতে পারব না।
আমি নিজের বুকের মধ্যে শব্দের ছুরি
বসিয়ে দিতে পারি
আমি অসম্ভব উঁচু চিমনির গা বেয়ে ওপরে উঠে
নিচে বয়লারের আগুনে লাফ দিতে পারি
আমি সমুদ্রে জামা ধুয়ে নিয়ে এসে
পাহাড়ের হাওয়ায় শুকিয়ে নিতে পারি
কিন্তু দুজন মেয়েকে কষ্ট দিয়ে
আমি এত ভালোবেসে ছিলাম
সে কথা কখনও ভুলতে পারব না।
আমি রেগে গেলে সাংঘাতিক সশস্ত্র
রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে পারি
ঠাণ্ডা মাথার শির ছিঁড়ে তার-কাটা
ট্রামের মতো থমকে থাকতে পারি
জুতোর মতো মুখটাকে চকচকে করে তুলতে পারি
কিন্তু দুজন মেয়েকে ভালোবেসে
আমার রক্ত বরফ আর আগুন হয়েছিল
সে কথা কখনও ভুলতে পারব না।
বিপ্লবের চিত্রকল্প
বেশ কয়েকজন কবি বিনাপয়সায় ডাক্তারি করছে
চাঁদের মধ্যে লাফিয়ে পড়ার আগেই প্রেমিক গ্রেফতার
পুলিশ-ভ্যানগুলোকে চবিবশ ঘণ্টার মধ্যে ইস্কুলের বাস করে
ফেলা হবে
মধ্যরাত্রে বিভিন্ন জনবিরোধী পার্টির লাইন উপড়ে ফেলা হচ্ছে
চিঠি ফেলার বাক্সের মধ্যে চড়ুই পাখিরা বাসা করেছে বলে
কাজ আচল
জনৈক তাত্ত্বিক একোয়ারিয়ামের মধ্যে বেড়াল পুষেছেন
রেডিও কেউ খুলছে না কারণ নেতাদের বক্তৃতা শুনতে
ভালো লাগছে না
আলোচনা চলছে গাছ ও মাছের চারার ওপর বিষগ্ন সংগীতের
প্রভাব নিয়ে
এখন থেকে চোখের জলেই মোটরগাড়ি চলবে
কে বলবে আমাদের এই নতুন সমাজ-ব্যবস্থায় সমস্যা নেই
খবরগুলো শুনে কি তাই মনে হচ্ছে?