টেলিভিশন
চৌকো একটি আয়তন
একপাশে পর্দা
একটি প্রাত্যহিক কফিন
কফিনের ভেতরে
যারা হাসে, খবর বলে, খবর হয়
তাদের বিচিত্র কেরামতি
জীবন্মৃত মানুষের খুবই প্রিয়
একটি ঠাণ্ডা স্টুডিওর থেকে
মৃতা চিত্ৰতারকার প্রেম
অন্ধকার টাওয়ার থেকে
পাঠানো হয়
তাই দেখে শিশু ও শিশুর মা
আনন্দ পায়
মৃতের দূরদৃষ্টি
প্রাত্যহিক কফিনের পর্দায়
মৃত ডলফিনের খেলা
রোজ চৌকো কফিনের পর্দায়
মৃত্যুর কী দূরদৃষ্টি
ঐ চৌকো বাক্সটির মধ্যে
মৃতা চিত্ৰতারকার মাংসের খোঁজে
কয়েকটি আরশোলা ও একটি ইঁদুর
কফিনে ঢুকে দেখে
তার ও ট্রানজিস্টরের
এক জটিল সমাজ-ব্যবস্থা।
তোমার, আমার, আমাদের
তুমি হাতজোড় করে মাফ চাইতে পারো
পায়ের ওপর মাথা ঠুকতে পারো কাঁদতে কাঁদতে
মুচলেকা দিতে পারো যে কখনও সাহস দেখাবে না
অথবা বেছে নিতে পারো হাসপাতালের রোগশয্যা
বা মধ্যদুপুরে রক্তবমি
যা তোমার পছন্দ
কিন্তু একটা ব্যবস্থা দেগে দিয়েছে তোমাকে
তোমার পিঠের ওপর গরম লোহা দিয়ে
আমার পিঠের ওপরেও মৃত্যুর নম্বর লেখা
আমাদের বন্দী শিবিরের মানুষের মতো দেখতে
যদিও খোলাচোখে কাঁটাতার দেখা যাচ্ছে না
নম্বর কেউ পড়েই চলেছে যদিও শোনা যাচ্ছে না
কী করার আছে দরকার ভাববার সকলের
গাছের ডালের ছায়া ক্রুশের মতো দেখতে
ক্রুশ যখন রয়েছে তখন আছে তাতে
ওঠার মানুষ, ওঠাবার মানুষ
মানুষের হাতে পায়ে পেরেক মারার মানুষ
তাই সবটাই যখন অবশ্যম্ভাবী পূর্বনির্ধারিত, অমােঘ
তখন কেন একবার চিৎকার করে উঠব না
একবার চেষ্টা করব না স্বাধীন, মুক্ত, অবাধ হবার
আর কী করার আছে তোমার, আমার, আমাদের
দেশবাসীর?
দুটি প্রাথমিক প্রশ্ন
অনেক গ্রামবাসী
তাদের চারজন কমরেডের মৃতদেহর জন্যে
শহরতালুকের মর্গের বাইরে
সকাল থেকে বসে আছে।
একজন শ্রমিক
হায় কি দুর্বল তার ইউনিয়ন
রেললাইনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে
আত্মহত্যা করলে কি বাঁচা যাবে?
অনেকগুলো বাচ্চা
পোস্টারের কাগজ আর প্যাকিংবাক্সের ঘরে
খেলে খেলে একসময় ঘুমিয়ে পড়েছে
ওদের মা ফিরলে তবে খেতে দেবে।
এখন কি আমার শিল্পচর্চা করা মানায়?
বুড়ো পাহাড়ের পিঠে গাছগুলো ঝড় মাখছে
আকাশের চোখ অন্ধ করে দিচ্ছে ধুলো
গতকালের কালো মেঘগুলো আজকে লাল।
এখন কি আমার নিজের কষ্ট নিয়ে ভাবার সময়?
নির্গুণের গান
হাঁটুর ওপরে যারা হেঁটে যান
আমরা সেই নির্গুণের জয়গান গাই
আমরা শব্দগুলো ঠিক ঠিক উচ্চারণ করতে পারি না
এটা বিরাট দোষের ব্যাপার নয়
আমরা এখন বিভিন্ন শস্যের খোসা চিবোচ্ছি
অতএব বিভিন্ন স্বর বেরোচ্ছে আমাদের কষ্ঠ থেকে
হাঁটুর ওপরে যারা হেঁটে যান
আমরা সেই নির্গুণের জয়গান গাই
অকারণে প্রশ্ন তুলে লোকসান দিতে আমরা রাজি নই
প্রশ্নের উত্তরও প্রশ্ন—আমরা শুধু এইমাত্র বুঝি
যত্রতত্র ও সর্বত্র তাই বেজে ওঠে আমাদের শিঙা,
পিলে চমকানো খোল ও বগল
হেই বাবা, দেই বাবা, এটা পয়সা দে যাবেন বাবা
চোপরদিন অনাহারে আছি বাবা
গ্রহণ হোক বা না হোক আমরা দান গ্রহণ করে থাকি
হাঁটুর ওপরে যারা হেঁটে যান
আমরা সেই নির্গুণের জয়গান গাই
শাস্ত্রীয় স্বরগ্রাম বা ভদ্র রসিকতা আমরা জানি না
আমাদের তাতে বিন্দুমাত্র লজ্জাও নেই
মজ্জার ভেতরে যাদের ইয়ার লুকিয়ে আছে
তাদের মজা পেতে পয়সা খরচ হয় না
হাঁটুর ওপরে যারা হেঁটে যান
আমরা সেই নির্গুণের জয়গান গাই
হাঁটুর ওপরে নির্গুণেরা হেঁটে যান
যেমন তাঁদের ছাঁদ তেমনই রগুড়ে চলন
স্রেফ ক্ষুধা আর নেশা তাঁরা সঙ্গে করে এনেছেন
কিন্তু ভোজ্যবস্তু বা বোতল কোনোটারই ব্যবস্থা করেননি
হাঁটুর ওপরে যারা হেঁটে যান
আমরা সেই নির্গুণের জয়গান গাই
গর্ভপাতকীর পুরস্কার তাঁদের প্রলুব্ধ করে না
তারা মুহুর্মুহু দেহক্রীড়ায় মত্ত হয়ে ওঠেন
এই প্রচণ্ড শক্তি তারা কোথায় সঞ্চয় করেছেন
হাড় বার করা চতুর্মুখ দেখে বোঝবার জো-টি নেই
হাঁটুর ওপরে যারা হেটে যান
আমরা সেই নির্গুণের জয়গান গাই
তাঁরাই মনুষ্যরূপে প্রবৃত্তি
প্রবৃত্তি সেই বস্তু যা জয় করা
অকারণে মানুষ মারারই সামিল
তাই বুট ও বুলেটে যারা ছত্ৰখান
যাঁরা চরম আহাম্মক, ফেরার বা লোপাট
আমরা সেই নির্গুণের জয়গান গাই
হাঁটুর ওপরে যারা হেঁটে যান
আমরা সেই নির্গুণের জয়গান গাই
নীল
আমি তোর অকৃত্রিম শুভাকাঙক্ষী, নীল
শকুনের ঠোঁট নখ ছিড়েছিল যাকে
প্রতিহিংসার ফুল ফুসফুস জুড়ে ফুটে থাকে
রক্ত ও স্মৃতির মধ্যে আমি ঠিক খুঁজে নেব মিল
আমি তোর অকৃত্রিম শুভাকাঙক্ষী, নীল।
আমার দেশের রাত্রি বারুদের মতো ছোঁয়া যায়
নীল সেই আশ্চর্য রাত দেখেছিল
ছুঁয়েছিল ফাটা ছেঁড়া মানুষের অসংখ্য চোখ
অশ্রুমতীর ঢেউ তার শব বুকে রেখেছিল
বর্শার ফলার মতো ধারালো হাওয়ায়
নীল, তোকে ফের ছোয়া যায়।
নীল, আমি ছুঁয়ে আছি শিরছিন্ন কবন্ধ স্বদেশ
ছুঁয়ে আছি ধান, মৃত্যু, জন্ম, ক্রোধ, ঋণ
নীল আমি ছুঁয়ে আছি আদিবাসী ধনুকের ছিলা
নীল, তোর স্পর্শে আমি রক্তমুখী নীলা।
শৃগালের দাঁত নখ ছিঁড়েছিল তাকে
প্রতিহিংসার ফুল ফুসফুস জুড়ে ফুটে থাকে
রক্ত ও স্মৃতির মধ্যে আমি ঠিক খুঁজে নেব মিল
আমি তোর অকৃত্রিম শুভাকাঙক্ষী, নীল।