কুষ্ঠরোগীর কবিতা
আমার এ কুষ্ঠরোগ
সারানো কি কলকাতা শহরের কাজ
যার হাইড্রেণ্টে জল নেই।
তাই আমি অকুতোভয়ে
চেটে নিই তেজস্ক্রিয় ধুলো
জিভের ঝাড়নে
যাতে করে টেবিল
সব সময় ফিটফাট থাকে
বোঝা যায় না কিছুতে
এটা কুষ্ঠরোগীর টেবিল।
আমার সংগ্রহে আছে
অকিঞ্চিৎকর কিছু ছায়াপথ, তারা
সাইকেল-রিকশায় ছেঁড়া চেনের চাবুক
যা আমার হৃদ্পিণ্ডে রক্তাক্ত আছড়ায়
এবং বিশেষ গোপন
কিছু ন্যাপথলিনের তৈরি চাঁদ
যা আমি প্রস্রাবাগার থেকে সংগ্রহ করে
আমার মেঘের পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে
রেখে দিয়েছি।
অলৌকিক কোনো অতলস্পর্শে
আমার এ ব্যাধি সেরে গেলে
আমি গাছের আয়নায়
সবুজ ছায়া ফেলব মায়াময়
এবং সেই অরণ্যে
আমাকে চিতার মতো সুন্দর দেখাবে।
আমার এ কুষ্ঠরোগ
সারানো কি কলকাতা শহরের কাজ
যার হাইড্রেণ্টে জল নেই।
তাই আমি অকুতোভয়ে
চেটে নিই তেজস্ক্রিয় ধুলো
জিভের ঝাড়নে
যাতে করে টেবিল
সব সময় ফিটফাট থাকে
বোঝা যায় না কিছুতে
এটা কুষ্ঠরোগীর টেবিল।
আমার সংগ্রহে আছে
অকিঞ্চিৎকর কিছু ছায়াপথ, তারা
সাইকেল-রিকশায় ছেঁড়া চেনের চাবুক
যা আমার হৃদ্পিণ্ডে রক্তাক্ত আছড়ায়
এবং বিশেষ গোপন
কিছু ন্যাপথলিনের তৈরি চাঁদ
যা আমি প্রস্রাবাগার থেকে সংগ্রহ করে
আমার মেঘের পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে
রেখে দিয়েছি।
অলৌকিক কোনো অতলস্পর্শে
আমার এ ব্যাধি সেরে গেলে
আমি গাছের আয়নায়
সবুজ ছায়া ফেলব মায়াময়
এবং সেই অরণ্যে
আমাকে চিতার মতো সুন্দর দেখাবে।
কে?
সারারাত
চাঁদের সাবান দিয়ে
মেঘের ফেনায় সব ঢেকে
কার এত কাজ পড়েছে
যে আকাশটাকে কেচে দেয় ?
সারাদিন
সূর্যের ইন্ত্রি দিয়ে
বিরাট নীল চাদরটা
ঘষে ঘষে সমান করে দেয়
কার এসব খাটুনি ?
এর উত্তর জানতেন
কোপার্নিকাস
আর জানে
চারচাকা জলে ঐ
ব্রেকডাউন বাস।
খারাপ সময়
খারাপ সময় কখনও একলা আসে না
তার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আসে
তাদের বুটের রঙ কালো
খারাপ সময় এলে
রুমাল দিয়ে হাসি মুছে ফেলতে হয়
ফুসফুস গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়
জুয়ার বাজার মরা জন্তুর মতো ফুলতে থাকে
ভালোবাসার গলা কামড়ে ধরে
ঝুলতে থাকে ভয়
ল্যাম্পপোস্টের ওপর থেকে
হতভাগ্যরা গলায় দড়ি
দিয়ে ঝোলে
তাদের ছায়ায় কালোবাজারীরা
লুকোচুরি খেলে
ভি. ডি. বেশ্যার দালাল আর
জেমস বণ্ডরা রাস্তায়
কিলবিল করে
ভিড় ঠেলে সাইরেন বাজিয়ে
পুলিশভ্যান চলে যায়
তার মধ্যে পুলিশ বসে থাকে
তাদের বুটের রঙ তাদের
ঠোঁটের মতো কালো
তাদের ঘড়িতে খারাপ সময়।
গ্রহণ
চুপ
এখন গ্রহণ চলছে
তাই সব কিছু ছায়া দিয়ে ঢাকা।
দুরন্ত চীনেমাটি বাসনের দোকান
ঠাস্—কাপ না প্লেটের চিৎকার
মহেঞ্জোদড়োর সেই ছানিপড়া ষাঁড়
আচমকা ঢুকে পড়ে
নেড়ে যাচ্ছে শিঙ
সহসা নাকেতে ঘুষি
মেরে সরে গেল ছায়া
শ্যাডো বক্সিং !
চুমু!
ছায়ার তৈরি বৌ
তার হাতে ছায়া ছায়া শাঁখা
ছায়ার সিলিঙে ঘোরে
ভৌতিক ছায়াময় পাখা
ছায়াতে শিশুটি কাঁদে
তার মুখে দাতব্য স্তন
অকাতরে গুঁজে দেয়
ছায়াঢাকা বিদেশী মিশন।
বাহ
টেলিভিশনেতে ছায়া খেলা করে
উপচ্ছায়া রাতারাতি প্রচ্ছায়া হয়
ছায়ার জানলা দিয়ে হু হু করে
ছায়াচূর্ণ ঢোকে
খিল খিল করে কেউ কেঁদে ওঠে
ছায়া নামধারী কোনো প্রেমিকার শোকে!
পার্টনার!
পাটোয়ারি বুদ্ধি ভুলে এবারে ধর্মে দাও মন।
ভূমণ্ডলে আপাতত ছায়ার গ্রহণ।
ঘুমন্ত দৈত্য
শহরের খাওয়া হয়ে গেছে
শহরের এখন খিদে নেই
তাই উচ্ছিষ্ট মানুষ, মা, বাচ্চা
আজ রাতটা বেঁচে আছে ফুটপাথে।
শহরের কামনাও এখন নেই
অতএব ঘুমোতে গেছে বেশ্যারা।
শহর এখন সরগরম নয়
বরং কিছুটা ঠাণ্ডাই।
শহর এখন ঘুমোচ্ছে
শহর এখন ঘুমোচ্ছে
তার টাকা আর লোভ আগলে
শহর এখন ঘুমোচ্ছে।
মিথ্যে খবর কাগজে ছাপার শব্দ
বাদে আর সব শব্দ চুপ
এমনকী শহরের পোষা
পুলিশ ভ্যানগুলোও থানায় ঝিমোচ্ছে।
এক পশলা পেট্রল বৃষ্টি হয়ে গেছে
আগুনমাখা একটা রাগী উল্কাকে
পথ দেখিয়ে শহরে নিয়ে আসার
এটাই সময়
শহর এখন ঘুমোচ্ছে এসো,
হাতে দেশলাই রাখো।
জুয়াড়ির নৌকো
দেখেছি জুয়াড়ির নৌকো তিনজন আরোহীকে নিয়ে
অশুভ আকর্ষণে ছুটে যাচ্ছে কালো পাল তুলে
লষ্ঠনের চোরা আলো লেপে গেছে ঝুলে।
লটকে পড়েছে বিবি, উলঙ্গ নর্তকীর শেষ রাত্রি যেন
ফেনা মুখে ঠিকরোয় গ্লাস
তিনহাতে ঘুরে আসে তাস
ছৈ-এর ঘোমটায় অবসন্ন গণিকার গান
ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত, চুমু, হাসি
তিন জুয়াড়ির মুখ, লোভাতুর দুর্গন্ধ নিঃশ্বাসে
অম্ল বমির গন্ধ ভেসে গেলে জলে
জুয়াড়ির নীেকো ছুটে চলে।
দেখেছি জুয়াড়ির নৌকো অদম্য তান্ত্রিক
কী অক্লেশে প্রবেশ করে সমুদ্রের যোনির ভিতর
অনুর্বর অস্তিত্ব, সংখ্যাতীত আত্মার স্তর
ডুবে থাকা প্রেত দ্বীপ, শ্যাওলার বেড়াজাল
সাঙ্কেতিক ফোরামিনিফেরা
কোকেন ভেজানো চোখ, বেঁকা ছুরি, অদৃশ্য তস্করের ডেরা
জুয়াড়ির নৌকো ঠিক তীব্রবেগে পথ করে নেয়
সুন্দরীর নাভিকুণ্ডে তীব্র ঘূর্ণির মধ্যে
শ্বাসরুদ্ধ নোনাজল ঠেলে
জুয়াড়ির নীেকো যায় ফসফরাস আহবান জ্বেলে।
দেখেছি আকাশতলে, মৃতদেহ বিক্রয়ের হাটে
এক অঞ্জলি জলে, দর্শন-বাণিজ্যের ঘাটে
শ্মশানে ও স্নানলগ্নে, সভ্যতার ভাগাড়ে
জুয়াড়ির নৌকো ঠিক ধীর চুপিসাড়ে
কালো পাল মেলে দিয়ে বাদুড়ের ডানার আকারে
শূন্যতা তুচ্ছ করে অন্ধকার দিকে চলে যায়।
কখনও ভেবেছি আমি অসহ্য এ ভীতি দৃশ্য
আর দেখব না
নিজেকে পতিত আর মারীর শিকার বলে মনে হয়
মজ্জা, স্নায়ু, চৈতন্য কতদিন ভয়ঙ্করে নিমজ্জিত
ছুটে গেছি অত্যাচার শেষ করে দিতে
সমুদ্রজলের রাত্রে, মিনার চূড়ায় কিংবা
যোদ্ধা রেলপথে
সময় যখন প্রায় ত্যাগ করে চলে গেছে
অযুত চাকার শব্দে, অণুক্ষুদ্র শহরের পথে, বিষাক্ত নীলজলে
মৃত্যুর ফণার পরে জুয়াড়ির নৌকো
আমি দেখেছি তখনই
ক্রূরলাস্যে দ্যূতিমান দুমূর্ল্য নরকের মণি।