সংবাদ মূলত কবিতা
অন্ধকারে একের পর এক জিপ
হেডলাইটের জাল পরানো আলো
সারা আকাশ স্তব্ধ নিষ্প্রদীপ
থামল এসে একের পর এক জিপ
কবে ? কখন ? কোথায় ঘটেছিল ?
বুটের তলায় চমকে ওঠা মাটি
ঘুমের থেকে লাফিয়ে ওঠা ঘাস
গলার মধ্যে থমকে থাকা ভয়
কোথায় লাগে লণ্ঠন আর লাঠি
তখন কাকে কে দেবে আশ্বাস
বাঘের জবাব শিশুর হাসি নয়
অন্ধ গ্রামে হাজার আতসবাজি
মেশিনগানের জ্বলন্ত তোতলামি
উঁচু জাতের আজব এ কারসাজি
জমাট সীসের গলন্ত মাতলামি।
সকাল হলে প্রখর সূর্যালোকে
অনেকগুলো নিচু জাতের লাশ
মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে থাকে
চোখের ওপর, প্রখর সূর্যালোকে।
কবে ? কোথায়? কখন ঘটেছিল ?
চোখের ভুলে খবর রটেছিল ?
বুদ্ধিজীবী এসব প্রশ্নে কালা
এসব দৃশ্যে বুদ্ধিজীবী কানা
এত কিছুর পরেও পাবে শোভা
বুদ্ধি ভরাট নধর মুণ্ডুখানা?
সমাজবিরোধিতার কথা
একটি সজীব মৃতদেহ যখন অপরাপর পুষ্ট
মৃতদেহকে উৎসাহ দেয়
লুকিয়ে মানুষকে ফাঁসি দেওয়ার জন্যে সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্র
যখন বেশ্যার মতো সজাগ
একটা কুকুর যখন বাস চাপা পড়ার পরে
রাস্তায় চাদের আলোয় রক্তে ভিজে শুয়ে থাকে
আর তার শেষ চিৎকার টেপ রেকর্ড করে
যখন কবি ও লেখকবৃন্দ পোকা ধরার জন্যে
বড় বড় আলোর পাশে ওঁৎ পেতে থাকে
যখন একটা লোকের সাতশোটা লরি ভাড়া খাটে
আর একটা লোক ক্রাচ নিয়ে রাস্তা পার হয়
তেখন আমৃত্যু লিখে যাব প্রতিবাদ
উন্মত্ত হিংস্র ও ক্রুদ্ধ নিরবধি
এ যদি সমাজ হয়
তবে আমি সমাজবিরোধী
সাত যুবক
অন্ধকার, অবৈদ্যুতিক, দাঁতউঁচু শহর
তার মধ্যে একফালি কানামাঠ
সেখানে সাতটি যুবক বসে
সিগারেট খাচ্ছিলো
সিগারেটের ফুঁসে ওঠা আগুনে
তাদের আলোচনা লাল বলে মনে হোল খোঁচোড়ের
বেলুনের মত ডবকা মেয়েদের
এরা দেখছে না
বিস্ফোরক কোনো আলোচনা করছে ওরা
ওরা কি শহরটা উড়িয়ে দেবে
ওরা কি ওলট পালট করে দিতে চায়
ওরা কী চায়
ঐ আলোচনারত যুবকেরা
লেজ নড়ে উঠল সাঁজোয়া ভবনের
রোবট বাহিনী ছুটে এল লোহার হোটেল থেকে
মাঠটাকে চারদিক থেকে ঘিরে এল
সন্দেহের বোতল, ফ্ল্যাশগান, কর্কশ জেনারেটর
বন্দুক, বিষাক্ত ঠোঁট, ভয়, সঙ্গমরত পশু
পারমাণবিক জিভ, ধাতব খবরের কাগজ
টিন, দাঁত, বুট, বেতাল
কিছুই নেই
সচল সাহসী কুয়াশা এক জায়গায়
জড়ো হয়েছে
তার মধ্যে জোনাকিরা জ্বলছে
অন্ধকারে সাত যুবককে ভুল দেখা গেছে
আপাতত সবকিছু ঠিক থাকছে
সামন্তর বন্দুক উধাও
আশ্চর্য গোলক চাঁদের ছদ্মবেশে
মায়াবী মাটি ও তৃণ, ঘাসের মণ্ডলে এসে
হিমমাখা পাখির ঠোঁটে কুয়াশার স্পর্শ দিল
যাও, এই খড়কুটো নিয়ে ত্বরা যাও
পোটোপাড়া ঘুমে অচেতন
সামন্তর বন্দুক উধাও
কাদামাখা নদী তার বুকধোয়া কাদাজল নিয়ে
শামুক ও কামটের ধারালো নদীর কাছে গিয়ে
গল্পটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে
অপার সমুদ্র করে দিল
হে সমুদ্র সমুদ্র আকাশ
তোমার কি মনে হয় ঐ সব কাশগুলি
মাটিতে বিধিয়ে ফলা
অসংখ্য লক্ষ্যভ্রষ্ট তীর
কী শান্ত ভীত রাত ঘুমন্ত পাখির
এইসব অন্ধকারে স্তনবৃন্তে দুধ আসে
মাঠের মধ্য দিয়ে আলো বয়ে নিয়ে আসে ট্রেন
শিশুর ঘুমের মধ্যে ট্রেনের অযুত শব্দ চলে গেলে দূরে
দূরপাল্লার তারা ঘুরপাক খেয়ে খসে পড়ে
কী দাহ্য তার ঠোঁট
বারুদ রেখেছে কেউ ঘরে
ঐ জাগে
চাঁদের ছদ্মবেশে আশ্চর্য গোলক
উপবাস অন্তে তুমি অন্নের পিণ্ড হতে চাও
জ্যোৎস্নায় কখনও কি তেজস্ক্রিয়া থাকে
সামন্তর বন্দুক উধাও
সার্কাসের অসুখ
ডাক্তার, অসম্ভব আনন্দ হচ্ছে
সম্পূর্ণ সুস্থ আপাতত
গত দুবছর আগে সম্ভবত শীতে
শহরে সার্কাস হয়েছিল
এবারে বুকের মধ্যে সার্কাসের শুরু
থ্যাতলানো ঠোঁটের মধ্যে রক্তের নুন
ক্লাউন! ক্লাউন!
অসম্ভব আনন্দ হচ্ছে ডাক্তার
রক্তের মধ্যে কোথাও তার ছিঁড়ে গেলে
শ্বাসরুদ্ধ থেমে থাকে ট্রাম
তার তিনচোখ নিভে যায় চিৎকার করে
মাথার মধ্যে কোথাও স্নায়ু ছিঁড়ে
ওজনহীন ঘিলুর মধ্যে বাল্বের ছেঁড়া
ফিলামেণ্ট তারের মতো কাঁপে
ধরা যাক ভাগ্যবান মানুষটি তখন
ট্রাপিজে উড়ছে
তারপর ?
সম্পূর্ণ সুস্থ আপাতত।
আপনার চারপাশে, ডাক্তার
পড়ে থাকে ইতস্তত
শিশুদের হাসপাতালে বোমাবর্ষণের পর
রক্তমাখা নিকারবোকার
মূক ও বধিরদের ইস্কুলের মতো নিস্তব্ধতায়
নিজের বেঁচে থাকাটা কম্যাণ্ডো তৎপরতা
বলে মনে হয়েছিল
আর মনে হবে না কখনও
সম্পূর্ণ সুস্থ আপাতত।
ইতিমধ্যে রক্ত জমে পথ আটকায়
কার্ডিয়োগ্রামের মতো রেখাঙ্কিত চেতনার স্রোতে
ডাক্তার, সে এক দুর্ধর্ষ আবেশ
নিজের পাঠানো এস. ও. এস.
আয়নায় ধাক্কা খেয়ে নিজের শরীরে
ফিরে আসে
ডাক্তার, ভীষণ মজা শীতের সার্কাসে।
মর্গের টেবিল জুড়ে ছড়ানো জমাট রক্তে
আটকে থাকা মাছির মতো নিভন্ত আরামে
আমার অসংখ্য ঠোঁট নিয়নের জ্বরে পোড়া
শহরের কপালের দিকে নামে
হল্ট ! হঠাৎ ব্রেক বা ভয়ে থেমে যায় ট্রাম
নিহত ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়াবার ড্রাম
ডাক্তার ? সম্পূর্ণ সুস্থ আপাতত
থ্যাতলানো ঠোঁটের মধ্যে রক্তের নুন
ক্লাউন! ক্লাউন !
সম্পূর্ণ সুস্থ আপাতত
গত দুবছর আগে সম্ভবত শীতে
শহরে সার্কাস হয়েছিল
এবারে বুকের মধ্যে সার্কাসের শুরু।