তোমায় কূলে তুলে বন্ধু আমি নামলাম জলে
তোমায় কূলে তুলে বন্ধু আমি নামলাম জলে
(রাধু পাগলির গান)
ভাটিয়ালি – কাহারবা
তোমায় কূলে তুলে বন্ধু আমি নামলাম জলে।
আমি কাঁটা হয়ে রই নাই বন্ধু তোমার পথের তলে॥
আমি তোমায় ফুল দিয়েছি সখা তোমার বন্ধুর লাগি,
যদি আমার শ্বাসে শুকায় সে ফুল, তাই হলাম বিবাগী॥
আমি বুকের তলায় রাখি তোমায় গো
পরে শুকাইনিকো গলে॥
ওই যে দেশ তোমার ঘর রে বন্ধু সে দেশ থেকে এসে
আমার দুখের তরি দিলাম ছেড়ে চলতেছে সে ভেসে।
এখন সে পথে নাই তুমি বন্ধু গো
তরি সেই পথে মোর চলে॥
ফণীর ফণায় জ্বলে মণি
৬
(মহুয়ার গান)
ফণীর ফণায় জ্বলে মণি
কে নিবি তাহারে আয়
মণি নিতে ডরে না কে
ফণীর বিষ-জ্বালায়॥
করেছে মেঘ উজালা
বজ্র মানিক মালা,
সে মালা নেবে কি কালা,
মরিয়া অশনি যায়॥
বউ কথা কও, বউ কথা কও
৩
(মহুয়ার গান)
ভৈরবী-পিলু-কার্ফা
বউ কথা কও, বউ কথা কও,
কও কথা অভিমানিনী।
সেধে সেধে কেঁদে কেঁদে
যাবে কত যামিনী॥
সে কাঁদন শুনি’ হের নামিল নভেল,
এল পাতার বাতায়নে যুঁই চামেলী কামিনী॥
আমার প্রাণের ভাষা শিখে
ডাকে পাখি, ‘পিউ কাহাঁ’,
খোঁজে তোমায় মেঘে মেঘে
আঁখি মোর সৌদামিনী॥
ভরিয়া পরান শুনিতেছি গান
১০
(মহুয়ার গান)
বেহাগ ও বসন্ত-একতালা
ভরিয়া পরান শুনিতেছি গান
আসিবে আজি বন্ধু মোর।
স্বপন মাখিয়া সোনার পাখায়
আকাশে উধাও চিত-চকোর।
আসিবে আজি বন্ধু মোর॥
হিজল-বিছানো বন-পথ দিয়া
রাঙায়ে চরণ আসিবে গো পিয়া।
নদীর পারে বন-কিনারে
ইঙ্গিত হানে শ্যাম কিশোর।
আসিবে আজি বন্ধু মোর॥
চন্দ্রচূড় মেঘের গায়
মরাল-মিথুন উড়িয়া যায়,
নেশা ধরে চোখে আলোছায়ায়,
বহিছে পবন গন্ধ-চোর।
আসিবে আজি বন্ধু মোর॥
মহুল গাছে ফুল ফুটেছে
৭
বেদেনীদের গান)
দরবারী কানাড়ী-কাওয়ালি
মহুল গাছে ফুল ফুটেছে
নেশার ঘোরে ঝিমায় পবন।
গুনগুনিয়ে ভ্রমর এল
ওলো
ভুল ক’রে তোর ভোলালো মন॥
আউরে গেছে মুখখানি লো
পরল বাতাস ফুলের আঁচল,
চাঁদের লোভে এলো চকোর
ও তুই মেঘের ঢাকিস্নে লো নয়ন॥
কেশের কাঁটা বিঁধে পাখায়
রাখাল বেঁধে ঝুলন শাখায়,
মউ টুসি মউ হিয়ার মিশায়
ও তুই কত যে মোর নিকট আপন॥
মোরা ছিনু একেলা, হইনু দু’জন
১২
(মহুয়ার গান)
দেশ-একতালা
মোরা ছিনু একেলা, হইনু দু’জন।
সুন্দরতর হ’ল নিখিল ভুবন॥
আজি কপোত কপোতী শ্রবণে কুহরে,
বীণা বেণু বাজে বন-মর্মরে।
নির্ঝর-ধারে সুধা চোখে মুখে ঝরে,
নতুন জগৎ মোরা করেছি সৃজন॥
মরিতে চাহিনা, পেয়ে জীবন-অমিয়া।
আসিব এ কুটিরে আবার জনমিয়া।
আরো চাই আরো চাই অশেষ জীবন।
আজি প্রদীপ-বন্দনী আলোক-কন্যা,
লক্ষ্মীর শ্রী লয়ে আসিল অরণ্যা,
মঙ্গল-ঘটে এল নদীজল বন্যা,
পার্বতী পরিয়াছে গৌরী-ভূষণ॥
০০ গ্রন্থ পরিচিত
বাংলা একাডেমী, ঢাকা থেকে প্রকাশিত নজরুল-রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ডের (নতুন সংস্করণ ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪০০/২৫ মে ১৯৯৩) ৮৮৩ পৃষ্ঠায় প্রদেয় গ্রন্থপরিয় অনুসারে নিচের পাঠটি তুলে ধরা হলো।
নজরুল-রচনাবলীর নতুন সংস্করণে মহুয়ার গান সংযোজিত হলো। ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি এ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। গ্রন্থের প্রকাশক গোপালদাস মজুমদার, ডি, এম, লাইব্রেরি, ৬১ কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট, কলিকাতা। মুদ্রাকর কৃষ্ণপ্রসাদ ঘোষ, প্রকাশ প্রেস, ৬৬ মানিক-তলা স্ট্রিট, কলিকাতা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩ এবং মূল্য দুই আনা।
মহুয়ার গান মন্মথ রায়ের মহুয়া নাটকের জন্য রচিত গানের সঙ্কলন। মহুয়া নাটক ১৯২৯ বা তার পূর্বে কোনো এক সময়ে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। নাটকটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৩৯ সালে।
গীতিগ্রন্থ মহুয়ার গানে ১৫টি গান ছিল। তার মধ্যে ১৪ সংখ্যক গান (আমার গহীন জলের নদী) এবং ১৫ সংখ্যক গান (তোমায় কূলে তুলে বন্ধু আমি নামলাম জলে) চোখের চাতক (অগ্রহায়ণ ১৩৩৬) গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এখানে পরিবর্জিত হলো। মূল গ্রন্থের ১৩ সংখ্যাক গানটিও (ও ভাই আমার এ নাও যাত্রী না লয়) চোখের চাতক গ্রন্থে মুদ্রিত হয়, কিন্তু মহুয়ার গানে পাঠভেদ থাকায় গানটি এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।