বসিয়া নদীকূলে এলোচুলে কে উদাসিনী
কালাংড়া — কাওয়ালি
বসিয়া নদীকূলে এলোচুলে
কে উদাসিনী।
কে এলে পথ ভুলে
এ অকূলে বন-হরিণী॥
কলসে জল ভরিয়া চায়
করুণায় কুলবধূরা
কেঁদে যায় ফুলে ফুলে
পদমূলে সাঁঝ-তটিনী॥
নিশিদিন চাহি তোমারে
ওপারে বাজিছে বাঁশি,
এপারে বাজে বধূর মল-
নূপুর মধু-ভাষিণী॥
আকাশে মেলিয়া আঁখি
লেখা কি পড়িছ পিয়ার,
কে গো সে রূপ-কুমার
তুমি গো যার অনুরাগিণী॥
দলিয়া কত ভাঙা মন
ও চরণ করেছ রাঙা,
কাঁদায়ে কত না দিল্
এলে নিখিল-মনোমোহিনী॥
হারালি গোধূলি-লগন
কবি, কোন্ নদী-কিনারে,
এ কি সেই স্বপন-চাঁদ
পেতেছে ফাঁদ প্রিয়ার সতিনি॥
বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুলশাখাতে দিসনে আজি দোল
বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুলশাখাতে
দিসনে আজি দোল।
আজো তার ফুল কলিদের ঘুম টুটেনি
তন্দ্রাতে বিলোল।।
আজো হায় রিক্ত শাখায় উত্তরী বায়
ঝুরছে নিশিদিন,
আসেনি দখনে হাওয়া গজল গাওয়া
মৌমাছি বিভোল।।
কবে সে ফুল কুমারী ঘোমটা চিরি
আসবে বাহিরে,
শিশিরের স্পর্শ-সুখে ভাঙবে রে ঘুম
রাঙবে রে কপোল।
ফাগুনের মুকুল-জাগা দু’কূল ভাঙা
আসবে ফুলেল বান
কুঁড়িদের ওষ্ঠ পুটে লুটবে হাসি
ফুটবে গালে টোল।।
কবি তুই গন্ধে ভুলে ‘ ডুবলি জলে
কূল পেলিনে আর
ফুলে তোর বুক ভ’রেছিস আজকে জলে
ভররে আঁখির কোল।।
রাগঃ ভৈরবী
তালঃ কাহার্বা
ভুলি কেমনে আজো যে মনে বেদনা-সনে রহিল আঁকা
ভুলি কেমনে আজো যে মনে
বেদনা-সনে রহিল আঁকা
আজো সজনী দিন রজনী
সে বিনে গনি সকলি ফাঁকা।।
আগে মন করলে চুরি
মর্ম্মে শেষে হানলে ছুরি,
এত শঠতা এত যে ব্যথা
তবু যেন তা মধুতে মাখা।।
চকোরী দেখলে চাঁদে
দূর হ’তে সই আজো কাঁদে,
আজো বাদলে ঝুলন ঝোলে
তেমনি জলে চলে বলাকা।।
বকুলের তলায় দোদুল
কাজলা মেয়ে কুড়োয় লো ফুল,
চলে নাগরী কাঁখে গাগ্রী
চরণ ভারি কোমর বাঁকা।।
তরুরা রিক্ত-পাতা
আসল লো তাই ফুল-বারতা,
ফুলেরা গ’লে ঝরেছে ব’লে
ভরেছে ফলে বিটপি-শাখা।।
ডালে তোর হানলে আঘাত
দিস রে কবি ফুল-সওগাত,
ব্যথা-মুকুলে অলি না ছুঁলে
বনে কি দুলে ফুল-পতাকা।।
(পিলু – কাহারবা –দাদরা)
মুসাফির মোছ এ আঁখি জল
বারোয়াঁ — কাহারবা
মুসাফির! মোছ এ আঁখি জল
ফিরে ছল আপনারে নিয়া।
আপনি ফুটেছিল ফুল
গিয়াছে আপনি ঝরিয়া॥
রে পাগল! এ কী দুরাশা,
জলে তুই বাঁধিবি বাসা!
মেটে না হেথায় পিয়াসা
হেথা নাই তৃষ্ণা-দরিয়া॥
বরষায় ফুটল না বকুল
পউষে ফুটবে কি সে ফুল,
এ দেশে ঝরে শুধু ভুল
নিরাশার কানন ভরিয়া॥
রে কবি, কতই দেয়ালি,
জ্বালিলি তোর আলো জ্বালি,
এল না তোর বনমালি
আঁধার আজ তোরই দুনিয়া॥
মৃদুল বায়ে বকুল ছায়ে
মৃদুল বায়ে বকুল ছায়ে
সিন্ধু-ভৈরবী — কাহারবা
মৃদুল বায়ে বকুল ছায়ে
গোপন পায়ে কে ওই আসে।
আকাশ-ছাওয়া চোখের চাওয়া
উতল হাওয়া কেশের বাসে॥
উষার রাগে সাঁঝের ফাগে
যুগল তাহার কপোল রাঙে,
কমল দুলে সূরয শশী
নিশীথ-চুলে আঁধার-রাশে॥
চরণ-ছোঁয়ায় পাতার ঠোঁটে
মুকুল কাঁপে কুসুম ফোটে,
আঁখির পলক- পতন-ছাঁদে
নিশীথ কাঁদে দিবস হাসে॥
গ্রহের মালা অলখ-খোঁপায়,
কপোল শোভে তারার টোপায়,
কুসুম-কাঁটায় আঁচল বাধে
রুমাল লুটায় সবুজ ঘাসে॥
সাঁঝের শাখায় কানন মাঝে
বালার বিহগ- কাঁকন বাজে,
জীবন তাহার সোনার স্বপন
দোলায় ঘুমায় শিশুর পাশে॥
তোমার লীলা- কমল করে
নিখিল-রানি! দুলাও মোরে।
ঢুলাও আমার সুবাসখানি
তোমার মুখের মদির-শ্বাসে॥
রুমুঝুমু রুমুঝুম্ কে এল নূপুর-পায়
পিলু — দাদরা
রুমুঝুমু রুমুঝুম্
কে এল নূপুর-পায়।
ফুটিল শাখে মুকুল
ও রাঙা চরণ-ঘায়॥
সে নাচে তটিনী-জল
টলমল টলমল,
বনের বেণি উতল
ফুলদল মুরছায়॥
বিজরি জরির আঁচল
ঝলমল ঝলমল,
নামিল নভে বাদল
ছলছল বেদনায়॥
দুলিছে মেখলা-হার
শ্যামলী মেঘমালায়,
উড়িছে অলক কার
অলকার ঝরোকায়॥
তালীবন থই তাথই
করতালি হানে ওই
কবি, তোর তমালী কই —
শ্বসিছে পুবালি-বায়॥
শুকাল মিলন-মালা আমি তবে যাই
কালাংড়া-ভৈরোঁ — আদ্ধা কাওয়ালি
শুকাল মিলন-মালা আমি তবে যাই।
কী যেন এ নদী-কূলে খুঁজিনু বৃথাই॥
রহিল আমার ব্যথা
দলিত কুসুমে গাঁথা,
ঝুরে বলে ঝরা পাতা —
নাই কেহ নাই॥
যে-বিরহে গ্রহতারা সৃজিল আলোক,
সে-বিরহে এ-জীবন জ্বলি পুণ্য হোক।
চক্রবাক চক্রবাকী
করে যেমন ডাকাডাকি,
তেমনই এ-কূলে থাকি
ও-কূলে তাকাই॥
সখী জাগো, রজনি পোহায়
ভৈরবী — যৎ
সখী জাগো, রজনি পোহায়।
মলিন কামিনী-ফুল যামিনী-গলায়॥
চলিছে বধূ সিনানে
বসন না বশ মানে,
শিথিল আঁচল টানে
পথের কাঁটায়॥
সখী, বোলো-বঁধূয়ারে নিরজনে
বিহারী খাম্বাজ মিশ্র — দাদরা
সখী, বোলো-বঁধূয়ারে নিরজনে
দেখা হলে রাতে ফুলবনে॥
কে করে ফুল চুরি জেনেছে ফুলমালি,
কে দেয় গহিন রাতে ফুলের কুলে কালি
জেনেছে ফুলমালি গোপনে॥
কাঁটার আড়ালে গোলাবের বাগে
ফুটায়েছে কুসুম কপট সোহাগে,
সে কুসুম-ঘেরা মেহেদির বেড়া,
প্রহরী ভোমোরা সে কাননে॥
ও পথে চোর-কাঁটা, সখী, তায় বলে দিয়ো,
বেঁধে না বেঁধে না লো যেন তার উত্তরীয়!
এ বনফুল লাগি না আসে কাঁটা দলি,
আপনি যাব আমি বঁধুয়ার কুঞ্জ-গলি!
বিকাব বিনিমূলে ও-চরণে॥