তুমি আমার সকাল বেলার সুর
তুমি আমার সকাল বেলার সুর
হৃদয় অলস-উদাস-করা অশ্রু-ভারাতুর॥
ভোরের তারার মতো তোমার সজল চাওয়ায়
ভালোবাসার চেয়ে সে যে কান্না পাওয়ায়
রাত্রি-শেষের চাঁদ তুমি গো
বিদায়-বিধুর॥
তুমি আমার ভোরের ঝরাফুল
শিশির-নাওয়া শুভ্র শুচি
পূজারিনির তুল।
অরুণ তুমি, তরুণ তুমি, করুণ তারও চেয়ে,
হাসির দেশে তুমি যেন বিষাদ-লোকের মেয়ে,
তুমি ইন্দ্র-সভায় মৌনবীণা, নীরব নূপুর॥
তুমি প্রভাতের সকরুণ ভৈরবী
তুমি প্রভাতের সকরুণ ভৈরবী,
শিশির-সজল ভোরের আকাশে ভাসে
তোমারই উদাস ছবি॥
বিষাদ গভীর কার কল্পনা
রূপ ধরে তুমি ফের আনমনা।
তোমারই মুরতি ধেয়ায় স্বপনে
বিরহী সুরের কবি
তুমি ধরা দিতে যেন আস নাই ধরণিতে
একা-একা খেলা খেল সারাবেলা
সাথিহীন তরণিতে।
আঘাত হানিয়া সে কোন নিঠুর
জাগাবে তোমাতে আশাবরি সুর
পাষাণ টুটিয়া গলিয়া পড়িবে অশ্রুর জাহ্নবী॥
তুমি শুনিতে চেয়ো না আমার মনের কথা
(তুমি) শুনিতে চেয়ো না আমার মনের কথা।
দখিনা বাতাস ইঙ্গিতে বোঝে –
কহে যাহা বনলতা॥
চুপ করে চাঁদ সুদূর গগনে
মহাসাগরের ক্রন্দন শোনে
ভ্রমর কাঁদিয়া ভাঙিতে পারে না
কুসুমের নীরবতা॥
মনের কথা কি মুখে সব বলা যায়?
রাতের আঁধারে যত তারা ফোটে
আঁখি কি দেখিতে পায়?
পাখায় পাখায় বাঁধা যবে রয়
বিহগ-মিথুন কথা নাহি কয়
মধুকর যবে ফুলে মধু পায়
রহে না চঞ্চলতা॥
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ
তুমি সুন্দর, তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ?
চাঁদের হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী, বলে না তো কিছু চাঁদ॥
চেয়ে চেয়ে দেখি ফোটে যবে ফুল
ফুল বলে না তো সে আমার ভুল
মেঘ হেরি ঝুরে চাতকিনি, মেঘ করে না তো প্রতিবাদ॥
জানে সূর্যেরে পাবে না, তবুও অবুঝ সূর্যমুখী
চেয়ে চেয়ে দেখে তার দেবতাকে, দেখিয়াই সে যে সুখী॥
হেরিতে তোমার রূপ মনোহর
পেয়েছি এ আঁখি, ওগো সুন্দর
মিটিতে দাও হে প্রিয়তম মোর
নয়নের সেই সাধ॥
তেমনই চাহিয়া আছে নিশীথের তারাগুলি
তেমনই চাহিয়া আছে নিশীথের তারাগুলি,
লতা-নিকুঞ্জে কাঁদে আজও বন-বুলবুলি।
ফিরে এসো, ফিরে এসো প্রিয়তম॥
ঘুমায়ে পড়েছে সবে মোর ঘুম নাহি আসে
তুমি যে ঘুমায়েছিলে সেদিনও আমার পাশে
সাজানো সে গৃহ তব ঢেকেছে পথের ধূলি।
ফিরে এসো, ফিরে এসো প্রিয়তম॥
আমার চোখের জলে মুছে যায় পথ-রেখা
রোহিণী গিয়াছে চলি চাঁদ কাঁদে একা একা
কোন দূর তারালোকে কেমনে রয়েছ ভুলি।
ফিরে এসো, ফিরে এসো প্রিয়তম॥
দোলন-চাঁপা বনে দোলে দোল-পূর্ণিমা রাতে
(দোলন-চম্পা)
দোলন-চাঁপা বনে দোলে, দোল-পূর্ণিমা রাতে
চাঁদের সাথে।
(শ্যাম) পল্লব-কোলে যেন দোলে রাধা
লতার দোলনাতে॥
(যেন) দেব-কুমারীর শুভ্র হাসি
ফুল হয়ে দোলে ধরায় আসি,
আরতির মৃদুজ্যোতি প্রদীপ-কলি–
দোলে যেন দেউল আঙিনাতে॥
বন-দেবীর ও কি রুপালি ঝুমকা চৈতি সমীরণে দোলে।
রাতের সলাজ আঁখি-তারা যেন তিমির আঁচলে।
ও যেন মুঠি-ভরা চন্দন-গন্ধ
দোলে রে গোপিনীর গোপন আনন্দ,
ও কি রে চুরি-করা শ্যামের নূপুর
চন্দ্রা-যামিনীর মোহন হাতে॥
ধর্মের পথে শহিদ যাঁহারা আমরা সেই সে জাতি
ধর্মের পথে শহিদ যাঁহারা আমরা সেই সে জাতি
সাম্য মৈত্রী এনেছি আমরা বিশ্বে করেছি জ্ঞাতি
আমরা সেই সে জাতি॥
পাপবিদগ্ধ তৃষিত ধরার লাগিয়া আনিল যাঁরা
মরুর তপ্ত বক্ষ নিঙাড়ি শীতল শান্তিধারা
উচ্চ-নীচের ভেদ ভাঙি দিল সবারে বক্ষ পাতি।
আমরা সেই সে জাতি॥
কেবল মুসলমানের লাগিয়া আসেনিকো ইসলাম
সত্যে যে চায় আল্লায় মানে মুসলিম তারই নাম।
আমির-ফকিরে ভেদ নাই সবে ভাই সব এক সাথি
আমরা সেই সে জাতি॥
নারীরে প্রথম দিয়াছি মুক্তি নরসম অধিকার
মানুষের গড়া প্রাচীর ভাঙিয়া করিয়াছি একাকার
আঁধার রাতির বোরখা উতারি এনেছি আবার ভাতি
আমরা সেই সে জাতি॥
নদীর স্রোতে মালার কুসুম
নদীর স্রোতে মালার কুসুম
ভাসিয়ে দিলাম প্রিয়
আমায় তুমি নিলে না,
মোর ফুলের পূজা নিয়ো।
পথ-চাওয়া মোর দিনগুলিরে
রেখে গেলাম নদীর তীরে,
আবার যদি আস ফিরে–
তুলে গলায় দিয়ো॥
নিভে এল পরান-প্রদীপ
পাষাণ-বেদির তলে
জ্বালিয়ে তারে রাখব কত
শুধু চোখের জলে।
তারা হয়ে দূর আকাশে
রইব জেগে তোমার আশে,
চাঁদের পানে চেয়ে চেয়ে
আমারে স্মরিয়ো॥
নন্দন বন হতে কে গো ডাক
নন্দন বন হতে কে গো ডাক মোরে আধো-নিশীথে,
ক্ষণে ক্ষণে ঘুম হারা পাখি কেঁদে ওঠে করুণ গীতে॥
ভেঙে যায় ঘুম চেয়ে থাকি,
চাহে চাঁদ ছলছল আঁখি,
ঝরা চম্পার ফুল যেন কে
ফেলে চলে যায় চকিতে॥
সহিতে না তিলেক বিরহ ছিলে যবে জীবনের সাথি
বলে যাও আজ কোন অমরায় কেমনে কাটাও দিবারাতি।
জীবনে ভুলিলে তুমি যারে
(তারে) ভুলে যাও মরণের ওপারে
আঁধার ভুবনে মোরে একাকী
দাও ওগো দাও ঝুরিতে॥
নিরজন ফুলবন এসো পিয়া
নিরজন ফুলবন, এসো পিয়া
রহি রহি বোলে কোয়েলিয়া।
পথ পানে চাহি
নাহি নিঁদ নাহি,
ঝরা ফুল জড়ায়ে ঝুরে হিয়া॥
নিশি পবন নিশি পবন ফুলের দেশে যাও
নিশি পবন! নিশি পবন! ফুলের দেশে যাও
ফুলের বনে ঘুমায় কন্যা তাহারে জাগাও॥
মউ টুসটুস মুখখানি তার
ঢেউ খেলানো চুল
ভোমরার ঝাঁক ঘেরা যেন ভোরের পদ্ম ফুল।
হাসিতে যার মাঠের সরল বাঁশির আভাস পাও॥
চাঁপা ফুলের পুতলি-ঘেরা চাঁপা রঙের শাড়ি,
তারেই দেখতে আকাশ গাঙে চাঁদ দেয় রে পাড়ি।
(তার) একটু খানি চোখের আদল বাদল-মেঘে পাও।
ধীরে ধীরে জাগাইয়ো তায়
ঝরা কুসুম ফেলিয়া গায়
জাগলে কন্যা যেন রে মোর পত্রখানি দাও॥