সবার কথা কইলে কবি, নিজের কথা কহো
সবার কথা কইলে কবি, নিজের কথা কহো।
(কেন) নিখিল ভুবন অভিমানের আগুন দিয়ে দহ।
নিজের কথা কহো॥
কে তোমারে হানল হেলা, কবি?
সুরে সুরে আঁক কি গো সেই বেদনার ছবি
কার বিরহ রক্ত ঝরায় বক্ষে অহরহ–
নিজের কথা কহো॥
(কোন) ছন্দোময়ীর ছন্দ দোলে তোমার গানে গানে
তোমার সুরের স্রোত বয়ে যায় কাহার প্রেমের টানে গো
কাহার চরণ পানে?
কাহার গলায় ঠাঁই পেল না বলে
(তব) কথার মালা ব্যথার মতো প্রতি হিয়ায় দোলে।
(তোমার) হাসিতে যে বাঁশি বাজে, সে তো তুমি নহ
নিজের কথা কহো॥
সাপুড়িয়া রে বাজাও বাজাও
সাপুড়িয়া রে ! বাজাও বাজাও
সাপ খেলানোর বাঁশি
কালিদহে ঘোর উঠিল তরঙ্গ
কালনাগিনি নাচে বাহিরে আসি॥
ফণি-মনসার কাঁটা কুঞ্জতলে,
গোখরো কেউটে এল দলে দলে রে,
সুর শুনে ছুটে এল পাতাল-তলের
বিষধর, বিষধরী রাশি রাশি॥
শন শন শন শন পূব হাওয়াতে
তোমার বাঁশি বাজে বাদলা রাতে,
মেঘের ডমরু বাজাও গুরু গুরু বাঁশির সাথে।
অঙ্গ জরজর বিষে,
বাঁচাও বিষহরি এসে,
একী বাঁশি বাজালে কালা
সর্বনাশী॥
সেই মিঠে সুরে মাঠের বাঁশরি বাজে
সেই মিঠে সুরে মাঠের বাঁশরি বাজে।
নিঝুম নিশীথে ব্যথিত বুকের মাঝে॥
মনে পড়ে যায় সহসা কখন
জল-ভরা দুটি ডাগর নয়ন
পিঠ-ভরা চুল সেই চাঁপা ফুল
ফেলে ছুটে যাওয়া লাজে॥
হারানো সে দিন পাব না গো আর ফিরে
দেখিতে পাব না আর সেই কিশোরীরে।
তবু মাঝে মাঝে আশা জাগে কেন
আমি ভুলিয়াছি ভোলেনি সে যেন,
গোমতীর তীরে পাতার কুটিরে
আজও পথ চাহে সাঁঝে।
(সে) আজও পথ চাহে সাঁঝে॥
সেদিন ছিল কি গোধূলি-লগন
সেদিন ছিল কি গোধূলি-লগন
শুভদৃষ্টির ক্ষণ?
চেয়েছিল মোর নয়নের পানে যেদিন তব নয়ন॥
সেদিন বকুল শাখে কি গো আঙিনাতে
ডেকে উঠেছিল কুহু-কেকা এক সাথে,
অধীর নেশায় দুলে উঠেছিল মনের মহুয়া বন॥
হে প্রিয়, সেদিন আকাশ হতে কি তারা পড়েছিল ঝরে,
যেদিন প্রথম ডেকেছিলে তুমি মোর ডাকনাম ধরে?
(প্রিয়) যেদিন প্রথম ছুঁয়েছিলে ভালোবেসে
আকাশে কি বাঁকা চাঁদ উঠেছিল হেসে?
শঙ্খ সেদিন বাজায়েছিল কি পাষাণের নারায়ণ॥
স্বপ্নে দেখি একটি নতুন ঘর
স্বপ্নে দেখি একটি নতুন ঘর!
তুমি আমি দু-জন প্রিয়, তুমি আমি দু-জন।
বাহিরে বকুল-বনে কুহু পাপিয়ায়
করে কুজন।
আবেশে ঢুলি ফুল-শয্যায় শুই
মুখ টিপে হাসে মল্লিকা জুঁই,
কানে কানে গানে গানে কহে, ‘চিনেছি উতল সমীরণ॥’
পূর্ণিমা চাঁদ কয়, গান আর সুর চঞ্চল, ওরা দুজন!
প্রেম জ্যোতি আনন্দ অবিরল ছলছল ওরা দুজন!
মৌমাছি কয় গুনগুন গান গাই
মুখোমুখি দুজনে সেইখানে যাই,
শারদীয়া শেফালি গায়ে পড়ে কয়–
‘ব্রজের মধুবন এই তো ব্রজের মধুবন।’
হে অশান্তি মোর এসো এসো
হে অশান্তি মোর এসো এসো!
(তব) প্রবল প্রেমের লাগি ভবন হতে, বৈরাগিনী বেশে
এসেছি বাহির পথে।
কুণ্ঠা ভুলায়ে দাও, খোলো গুন্ঠন,
দস্যু-সম মোরে করো লুন্ঠন,
তৃণ-সম মোরে ভাসাইয়া লয়ে যাও
কূল-ভাঙা বিপুল বন্যা-স্রোতে॥
নদী যেমন করে টানে পারাবার,
তেমনি মরণ-টানে আমারে টানো, হে বন্ধু আমার!
প্রলয়-মেঘের বুকে বিজলি-সম
তোমারে জড়ায়ে রব হে প্রিয়তম!
হবে শুভদৃষ্টি তোমায় আমায়
মরণ-হানা অশনির-আলোতে॥