শ্যামা তুই বেদেনির মেয়ে
সিন্ধুকাফি যৎ
শ্যামা তুই বেদেনির মেয়ে
(তাই) মাঠে ঘাটে বেড়াস ধেয়ে।
তুই কোন দুখে এই ভেক নিলি মা
থাকতে নিখিল ছেলে-মেয়ে॥
হেম কৈলাসে তোর আগুন জ্বালি
গৌরী মেয়ে সাজলি কালী,
তুই অন্নপূর্ণা নাম ভুলিলি
ভূতনাথের সঙ্গ পেয়ে॥
ডুগডুগি ওই বাজায় মহেশ
খ্যাপা ব্যাটা গাঁজা খেয়ে,
তাই দেখে তুই চণ্ডী সেজে
খেপে গেলি হাবা মেয়ে॥
রাজার মেয়ের এ কী খেয়াল,
মেরে বেড়াস অসুর-শেয়াল,
তুই দানব ধরে বাঁদর নাচাস
কাজ নাই তোর খেয়ে-দেয়ে॥
সখী বাঁধো লো বাঁধো লো ঝুলনিয়া
কাজরি কাহারবা
সখী বাঁধো লো বাঁধো লো ঝুলনিয়া।
নামিল মেঘলা মোর বাদরিয়া॥
চলো কদম তমাল তলে গাহি কাজরিয়া
চলো লো গোরী শ্যামলিয়া॥
বাদল-পরিরা নাচে গগন-আঙিনায়,
ঝমাঝম বৃষ্টি-নূপুর পায়
শোনো ঝমঝম বৃষ্টি নূপুর পায়
এ হিয়া মেঘ হেরিয়া ওঠে মাতিয়া॥
মেঘ-বেণিতে বেঁধে বিজলি-জরিন ফিতা,
গাহিব দুলে দুলে শাওন-গীতি কবিতা,
শুনিব বঁধূর বাঁশি বন-হরিণী চকিতা,
দয়িত-বুকে হব বাদল-রাতে দয়িতা।
পরো মেঘ-নীল শাড়ি ধানি-রঙের চুনরিয়া,
কাজলে মাজি লহো আঁখিয়া॥
সন্ধ্যামালতী যবে ফুলবনে ঝুরে
সন্ধ্যামালতী
সন্ধ্যামালতী যবে ফুলবনে ঝুরে,
কে আসি বাজালে বাঁশি ভৈরবী সুরে॥
সাঁঝের পূর্ণ চাঁদে অরুণ ভাবিয়া
পাপিয়া প্রভাতি সুরে উঠিল গাহিয়া
ভোরের কমল ভেবে সাঁঝের শাপলা ফুলে
গুঞ্জরে ভ্রমর ঘুরে ঘুরে॥
বিকালের বিষাদে ঢাকা ছিল বনভূমি
সকালের মল্লিকা ফোটাইলে তুমি,
রাঙিলা উষার রঙে গোধুলি লগন
শোনালে আশার বাণী বিরহ-বিধুরে॥
সুন্দর বেশে মৃত্যু আমার
গান
সুন্দর বেশে মৃত্যু আমার
আসিলে কি এতদিনে?
বাজালে দুপুরে বিদায় পুরবি
আমার জীবন-বীণে!
ভয় নাই রানি, রেখে গেনু শুধু
চোখের জলের লেখা,
রাতের এ লেখা শুকাবে প্রভাতে;
চলে যাব আমি একা!
* * *
দিনের আলোকে ভুলিয়ো তোমার রাতের দুঃস্বপন,
ঊর্ধ্বে তোমার প্রহরী দেবতা,
মধ্যে দাঁড়ায়ে তুমি ব্যথাহতা,
পায়ের তলার দৈত্যের কথা ভুলিতে কতক্ষণ?
সেই রবিয়ল আউওলেরই চাঁদ এসেছে ফিরে (তিরোভাব)
তিরোভাব
সেই রবিয়ল আউওলেরই চাঁদ এসেছে ফিরে
ভেসে আকুল অশ্রুনীরে॥
আজ মদিনার গোলাপ-বাগে বাতাস বহে ধীরে
ভেসে আকুল অশ্রুনীরে॥
তপ্ত বুকে আজ সাহারার
উঠেছে রে ঘোর হাহাকার,
মরুর দেশে এল আঁধার-লোকের বাদল ঘিরে
আকুল অশ্রুনীরে॥
চবুতরায় বিলাপ করে কবুতরগুলি
খোঁজে নবিজিরে।
কাঁদিছে মেষশাবক, কাঁদে বনের বুলবুলি
গোরস্থান ঘিরে।
মা ফতেমা লুটিয়ে পড়ে
কাঁদে নবির বুকের পরে
আজ দুনিয়া জাহান কাঁদে কর হানি শিরে
আকুল অশ্রুনীরে॥
হলুদ গাঁদার ফুল রাঙা পলাশ ফুল
সাঁওতালি গান
হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল।
এনে দে, এনে দে, নইলে বাঁধব না বাঁধব না চুল।
কুসমি রং শাড়ি, চুড়ি বেলোয়ারি।
কিনে দে হাট থেকে, এনে দে মাঠ থেকে,
বাবলা ফুল আমের মুকুল॥
তিরকূট পাহাড়ে শালবনের ধারে
বসবে মেলা আজি বিকালবেলায়।
দলে দলে পথে চলে সকাল হতে
সাঁওতাল সাঁওতালনি নূপুর বেঁধে পায়
যেতে দে ওই পথে বাঁশি শুনে শুনে পরান বাউল
মহুয়া-কুঁড়ির মালা গেঁথেছি নিরালা তুহার তরে,
মনের আদর মেখে পিয়াল পাতা ঢেকে রেখেছি ঘরে।
পলার মালা নাই,
কী যে করি ছাই,
গাঁথব মালা রে, এনে দে, এনে দে রে শিঁয়াকুল॥
হৃদয়-সরসী দুলালে পরশি গত নিশি
ভৈরবী দাদরা
হৃদয়-সরসী দুলালে পরশি গত নিশি।
নিশিশেষে চাঁদ – পূর্ণিমা চাঁদ –
গেলে মিশি,
গত নিশি॥
নয়ন মুদি কুমুদী ওই –
কাঁদে প্রিয় কই,
পিউ কাহাঁ, পিউ কাঁহা, পিউ কাঁহা,
দশ দিশি।
গত নিশি॥
হে গোবিন্দ, ও অরবিন্দ চরণে শরণ দাও হে
বেহাগ একতালা
হে গোবিন্দ, ও অরবিন্দ চরণে শরণ দাও হে।
বিফল জনম কাটিল কাঁদিয়া, শান্তি নাহি কোথাও হে॥
জীবন-প্রভাত কাটিল খেলায়,
দুপুর ফুরাল মোহের মেলায়,
ডাকিব যে নাথ সন্ধ্যাবেলায় ডাকিতে পারিনি তাও হে॥
এসেছি দুঃখ-জীর্ণ পথিক মৃত্যু-গহন রাতে।
কিছু নাই প্রভু সম্বল, শুধু জল আছে আঁখি-পাতে॥
সন্তান তব বিপথগামী,
ফিরিয়া এসেছে হে জীবন-স্বামী,
পাপী-তাপী তবু সন্তান আমি ধুলা মুছে কোলে নাও হে॥
হে বিধাতা দুঃখ-শোক মাঝে তোমারই পরশ রাজে
ভজন
মেঘ তেতালা
হে বিধাতা!
দুঃখ-শোক মাঝে তোমারই পরশ রাজে,
কাঁদায়ে জননী-প্রায় কোলে কর পুনরায়,
শান্তিদাতা।
হে বিধাতা॥
ভুলিয়া যাই হে যবে সুখ-দিনে তোমারে
স্মরণ করায়ে দাও আঘাতের মাঝারে।
দুঃখের মাঝে তাই হে প্রভু, তোমারে পাই
দুঃখত্রাতা।
হে বিধাতা॥
দারা-সুত-পরিজন-রূপে প্রভু, অনুখন
তোমার আমার মাঝে আড়াল করে সৃজন।
তুমি যবে চাহ মোরে লও হে তাদের হরে
ছিঁড়ে দিয়ে মায়া-ডোর, ক্রোড়ে ধর আপন।
ভক্ত সে প্রহ্লাদ ডাকে যবে ‘নারায়ণ’,
নির্মম হয়ে তার পিতারও হর জীবন,
সব যবে ছেড়ে যায় দেখি তব বুকে হায়
আসন পাতা।
হে বিধাতা॥
হে মদিনার নাইয়া
হে মদিনার নাইয়া!
ভবনদীর তুফান ভারী
করো করো পার।
তোমার দয়ায় তরে গেল লাখো গুনাহ্গার
করো করো পার॥
পারের কড়ি নাই হে আমার হয়নি নামাজ রোজা
আমি কূলে এসে বসে আছি নিয়ে পাপের বোঝা
‘য়্যা রসুল আমায় পার করো’ বলে কাঁদি জারেজার॥
তোমার নাম গেয়েছি শুধু কেঁদে সুবহশাম
তরিবার মোর নাই তো পুঁজি বিনা তোমার নাম।
হাতারোবার দরিয়াতে ডুবে যদি মরি
ছাড়ব না মোর পারের আশা তোমার চরণ-তরি,
সবার শেষে পার যেন হয় এই খিদমতগার ॥