মোহাম্মদ নাম যতই জপি ততই মধুর লাগে
মোহাম্মদ নাম যতই জপি, ততই মধুর লাগে।
নামে এত মধু থাকে, কে জানিত আগে॥
ওই নামেরই মধু চাহি
মন-ভোমরা বেড়ায় গাহি
আমার ক্ষুধা তৃষ্ণা নাহি
ওই নামের অনুরাগে॥
ও নাম প্রাণের প্রিয়তম
ও নাম জপি মজনুঁ সম
ওই নামে পাপিয়া গাহে
প্রাণের গোলাব-বাগে॥
আমি ওই নামে মুসাফির রাহী
তাই চাই না তখ্ত্ শাহানশাহি
নিত্য ও নাম য়্যা ইলাহি
যেন হৃদে জাগে॥
মোহাম্মদ মোর নয়ন-মণি
মোহাম্মদ মোর নয়ন-মণি
মোহাম্মদ মোর জপ-মালা।
ওই নামে মিটাই পিপাসা
ও নাম কওসারের পিয়ালা॥
মোহাম্মদ নাম শিরে ধরি
মোহাম্মদ নাম গলায় পরি,
ওই নামেরই রওশনিতে
আঁধার এ মন রয় উজালা॥
আমার হৃদয়-মদিনাতে
শুনি ও নাম দিনে রাতে
ও নাম আমার তসবী হাতে
মন-মরুতে গুলে-লালা॥
মোহাম্মদ মোর অশ্রু চোখের
ব্যথার সাথি, শান্তি শোকের,
চাই না বেহেশ্ত, যদি ও নাম
জপতে সদাই পাই নিরালা॥
যমুনা-কূলে মধুর মধুর মুরলী সখী বাজিল
পাহাড়ি তেতালা
যমুনা-কূলে মধুর মধুর মুরলী সখী বাজিল।
মাধব নিকুঞ্জচারী শ্যাম বুঝি আসে –
কদম্ব তমাল নব-পল্লবে সাজিল॥
ময়ূর তমাল-তলে পেখম খোলে,
ব্যাকুলা গোপ-বালা শুনিয়া সে তান,
যুগ যুগ ধরি যেন শ্যাম
বাঁশরি বাজায় গো,
বাঁশিতে শ্যাম মোরে যাচিল॥
যমুনা-সিনানে চলে তন্বী মরাল-গামিনী
পিলু দাদরা
যমুনা-সিনানে চলে
তন্বী মরাল-গামিনী।
লুটায়ে লুটায়ে পড়ে
পায়ে বকুল কামিনী॥
মধু বায়ে অঞ্চল,
দোলে অতি চঞ্চল,
কালো কেশে আলো মেখে
খেলিছে মেঘ দামিনী॥
তাহারই পরশ চাহি
তটিনী চলেছে বাহি,
তনুর তীর্থে তারই
আসে দিবা ও যামিনী॥
যায় ঢুলে ঢুলে এলোচুলে
কাফি ঝাঁপতাল
যায় ঢুলে ঢুলে এলোচুলে
কে বিষাদিনী।
তার চোখে চেয়ে ম্লান হয়ে
যায় গো চাঁদিনি॥
তার সোনার অঙ্গ অনাদরে
হয়েছে কালি,
হায় ধুলায় লুটায় নবীন যৌবন
ফুলের ডালি,
কোন মদির আঁখির খেয়েছে তির
বন-হরিণী॥
তার চটুল চরণ নাচত যেন
নোটন-কপোতী,
মরুর বুকে ফুল ফোটাত
তার দোদুল গতি,
আজ ধীরে সে যায় যেন শীতের
মৃদুল তটিনী॥
রাখো এ মিনতি ত্রিভুবনপতি
ভজন
ভৈরবী কাওয়ালি
রাখো এ মিনতি ত্রিভুবনপতি
তব পদে মতি (রাখো)।
আঁখির আগে যেন সদা জাগে
তব ধ্রুব জ্যোতি॥
সংসার-মরু মাঝে তুমি মেঘমায়া,
বিষাদ-শোক-তাপে তুমি তরুছায়া,
সান্ত্বনাদাতা তুমি দুঃখত্রাতা
অগতির গতি।
দোলে কালো নিশার কোলে
আলো-উষসী,
তিমির-তলে তব তিলক জ্বলে
ওই পূর্ণশশী।
ঝঞ্ঝার মাঝে তব বিষাণ বাজে,
সহসা ঢলি পড় বনে ফুল-সাজে,
কোমলে কঠোরে হে প্রভু বিরাজে
তব মহিমা শকতি॥
রাখো রাখো রাঙা পায় হে শ্যামরায়
তিলক-কামোদ আদ্ধা কাওয়ালি
রাখো রাখো রাঙা পায় হে শ্যামরায়।
ভুলে গৃহ-স্বজন সবই সঁপেছি তোমায়॥
সংসার মরু ঘোর, নাহি তরু ছায়া,
নব নীরদ শ্যাম আনো মেঘ-মায়া,
আনন্দ-নীপবনে নন্দদুলাল এসো
বহাও উজান, হরি অশ্রুর যমুনায়॥
একা জীবন মোর গহন বন ঘোর
এসো এ বনে বনমালী গোপ-কিশোর,
কুঞ্জ রচেছি দুখশোক-তমালছায়।
প্রেম-প্রীতির গোপীচন্দন শুকায়ে যায়॥
দারা সুত প্রিয়জন, হরি হে নাহি চাই,
পদ্ম-পলাশ আঁখি যদি দেখিতে পাই,
রাখাল-রাজা এসো, এসো হে হৃষীকেশ,
গোকুলে লহো ডাকি, অকূলে ভাসি, হায়॥
রুমু রুমঝুম রুমুঝুমু বাজে নূপুর
বেহাগ খাম্বাজ
রুমু রুমঝুম
রুমুঝুমু বাজে নূপুর।
তালে তালে দোদুল দোলে
নাচের নেশায় চুর॥
চঞ্চল বায়ে আঁচল উড়ায়ে
চপল পায়ে, ও কে যায়
নটিনি কল-তটিনীর প্রায়, –
চিনি বিদেশিনো, চিনি গো তায়;
শুনি ছন্দ তারই এ হিয়া ভরপুর॥
নাচন শিখালে ময়ূর মরালে,
মরীচি-মায়া মরুতে ছড়ালে,
বন-মৃগের মন হেসে ভুলালে
ডাগর আঁখির নাছে সাগর দুলালে;
গিরি-দরি বনে গো
দোল লাগে নাচনের
শুনে তার সুর॥
রোদনে তোর বোধন বাজে
ভৈরবী একতালা
রোদনে তোর বোধন বাজে
আয় মা শ্যামা জগন্ময়ী।
আমরা যে তোর মানব-ছেলে
আমরা তো মা দানব নই॥
তোর মাথায় গেছে রক্ত চড়ে
তাই পা রেখেছিস শিবের পরে,
স্বামীকে তুই চিনতে নারিস
চিনবি ছেলেয় কেমনে কই॥
তোর বাবা যেমন অটল পাষাণ,
তেমনি অটল তোরও কি প্রাণ!
তুই সব খেয়েছিস সকল-খাগী,
এবার শুধু ভিক্ষা মাগি –
তোর আপন ছেলের মাথা খা তুই
মোরাও দুঃখ-মুক্ত হই॥
লায়লি তোমার এসেছে ফিরিয়া
লায়লি তোমার এসেছে ফিরিয়া
মজনুঁ গো আঁখি খোলো।
প্রিয়তম! এতদিনে বিরহের
নিশি বুঝি ভোর হল॥
মজনুঁ! তোমার কাঁদন শুনিয়া মরু, নদী, পর্বতে
বন্দিনী আজ পিঞ্জর ভেঙে বাহির হয়েছে পথে।
দখিনা বাতাস বহে অনুকূল,
ফুটেছে গোলাব নার্গিস ফুল,
ওগো বুলবুল, ফুটন্ত সেই গুলবাগিচায় দোলো॥
বনের হরিণ হরিণী কাঁদিয়া পথ দেখায়েছে মোরে,
হুরি ও পরিরা ঝুরিয়া ঝুরিয়া চাঁদের প্রদীপ ধরে
পথ দেখায়েছে মোরে।
আমার নয়নে নয়ন রাখিয়া
কী বলিতে চাও- হে পরান-প্রিয়া!
ডাক নাম ধরে, ডাকো মোরে স্বামী
ভোলো অভিমান ভোলো॥
লায়লি লায়লি ভাঙিয়ো না ধ্যান
লায়লি! লায়লি! ভাঙিয়ো না ধ্যান
মজনুর এ মিনতি।
লায়লি কোথায়? আমি শুধু দেখি
লা-এলার জ্যোতি॥
পাথর খুঁজিয়া ফিরিয়াছি প্রিয়া
প্রেম-দরিয়ার কূলে,
খোদার প্রেমের পরশ-মানিক
পেলাম কখন ভুলে।
সে মানিক যদি দেখ একবার
মজনুরে তুমি চাহিবে না আর,
জোহরা ইয়সুফ লাজ মানে হেরি
তাহার খুবসুরতি ॥ (লায়লি)