ভোলো লাজ ভোলো গ্লানি জননী
স্বদেশি গান
ভোলো লাজ ভোলো গ্লানি জননী
মুক্ত আলোকে জাগো।
কবে যে ঘুমালি মরণ-ঘুমে মা
আর জাগিলি না গো॥
চরণে কাঁদে মা তেমনই জলধি,
বক্ষ আঁকড়ি কাঁদে নদ নদী,
ত্রিশ কোটি সন্তান নিরবধি
কাঁদে আর ডাকে মা গো॥
শূন্য দেউল বন্ধ আরতি,
কাঁদিছে পূজারি; নাহি মা মুরতি,
পূজার কুসূম চন্দন যায়
আঁখিজলে – ভালিয়া মা গো॥
যে তিতিক্ষা যে শিক্ষা লয়ে,
অতীতে ছিলি মা রাজরানি হয়ে,
লয়ে সে মহিমা পুন নির্ভয়ে,
বিশ্ব-বুকে দাঁড়া গো॥
বিশ্বের এই খল কোলাহলে
তুই আয় কল্যাণ-দীপ জ্বেলে,
বিরোধের শেষে তুই শান্তি মা
মৃত্যু শেষে সুধা গো॥
মন নিয়ে আমি লুকোচুরি-খেলা খেলি প্রিয়ে
[ দ্বৈত ] গান
পুরুষ॥ মন নিয়ে আমি লুকোচুরি-খেলা খেলি প্রিয়ে।
স্ত্রী॥ ধরিতে পারি না পেতে তাই প্রেম-ফাঁদ
আমি মেঘ তুমি চাঁদ, ফের গো কাঁদিয়ে॥
পু॥ মন্দ বায় আমি গন্ধ লুটি শুধু
চাইনে আমি সে মধু,
স্ত্রী॥ চাইনে চাইনে বঁধু!
তাহে নাই সুখ নাই,
আমি পরশ যে চাই।
পু॥ স্বপন-কুমার ফিরি যে আমি
মন ভুলিয়ে।
উভয়ে॥ চলো তবে যাই মোরা স্বপ্নের দেশে
জোছনায় ভেসে
নন্দন-পারিজাত ফুল ফুটিয়ে॥
মরম-কথা গেল সই মরমে মরে
ইমনকল্যাণ কাওয়ালি
মরম-কথা গেল সই মরমে মরে।
শরম বারণ যেন করিল চরণ ধরে॥
ছল করে কত শত
সে মম রুধিত পথ,
লাজ ভয়ে পলায়েছি
সে ফিরেছে ব্যথাহত,
অনাদরে প্রেম-কুসুম গিয়াছে মরে॥
কত যুগ মোর আশে বসে ছিল পথ পাশে,
কত কথা কত গান জানায়েছে ভালোবাসে,
শেষে অভিমানে নিরাশে গিয়াছে সরে॥
মাধব বংশীধারী বনোয়ারি গোঠচারী
ভৈরবী কাহারবা
মাধব বংশীধারী বনোয়ারি গোঠচারী
গোবিন্দ কৃষ্ণ মুরারি।
গোবিন্দ কৃষ্ণ মুরারি হে,
পাপ-তাপ-দুখ-হারী॥
কালরূপ কভু দৈত্য-নিধনে,
চিকন কালা কভু বিহর বনে,
কভু, বাজাও বেণু, খেল ধেনুসনে,
কভু বামে রাধা-প্যারি,
গোপনারী মনোহারী
নিকুঞ্জ-লীলা-বিহারী॥
কুরুক্ষেত্র-রণে পাণ্ডব-মিতা,
কণ্ঠে অভয় বাণী ভগবদ্গীতা,
হে পূর্ণ ভগবান পরম পিতা,
শঙ্খ চক্র গদাধারী,
পাপ-তারী, কাণ্ডারি
ত্রিভুবন সৃজনকারী॥
মৃতের দেশে নেমে এল মাতৃনামের গঙ্গাধারা
মৃতের দেশে নেমে এল মাতৃনামের গঙ্গাধারা।
আয় রে নেয়ে শুদ্ধ হবি অনুতাপে মলিন যারা॥
আর আশাহীন ভাগ্যহত,
শক্তিবিহীন অনুন্নত,
আয় রে সবাই আয়
আয় এই অমৃতেই ডুববি এসে জীবন্মৃত সর্বহারা॥
ওরে এই শক্তির গঙ্গাস্রোতে, অনেক আগে এই সে দেশে
মৃত সগর-বংশ বেঁচে উঠেছিল এক নিমেষে।
এই গঙ্গোত্রীর পরশ লেগে
মহাভারত উঠল জেগে,
এই পুণ্য স্রোতেই ভেঙেছিল দেশ-বিদেশের লক্ষ কারা॥
মেরো না আমারে আর নয়ন-বাণে
খাম্বাজ মিশ্র কাহারবা
মেরো না আমারে আর নয়ন-বাণে।
কী জ্বালা ব্যাধের বাণে
বনের হরিণই জানে॥
একে এ পরান দহে
মদির ও-আঁখির মোহে
চাহনির জাদু মাখা তার।
জ্বলিছে আলেয়া-শিখা
নয়ন-জলের মরীচিকা
পিয়াসি পথিক ছোটে হায়
তাহারই টানে॥
তব রূপের সায়রে ও নয়ন
শাপলা সুঁদির ফুল,
তুলিতে গিয়া ডুবিল
শত যে পথিক বেভুল।
সুন্দর ফণীর শিরে
ও যেন যুগল মণি,
যে গেল সে মণির মায়ায়
তারে দংশিল অমনি।
শত সে হৃদয়-নদী
কেঁদে যায় নিরবধি,
সাগর-ডাগর ও-আঁখির পানে॥
মোর মন ছুটে যায় দ্বাপর যুগে
ভজন
মোর মন ছুটে যায় দ্বাপর যুগে
দূর দ্বারকায় বৃন্দাবনে।
মোর মন হতে চায় ব্রজের রাখাল
খেলতে রাখাল-রাজার সনে॥
রূপ ধরে না বিশ্বে যাহার
দেখতে যায় সাধ কিশোর-রূপ তার,
কেমন মানায় নরের রূপে
অনন্ত সেই নারায়ণে॥
সাজত কেমন শিখী-পাখা
বাজত কেমন নূপুর পায়ে,
থির কেমন থাকত ধরা
নাচত যখন তমাল ছায়ে।
মা যশোদা বাঁধত যখন
কাঁদত ভগবান কেমনে॥
বাজত সে বেণু যখন
উঠত না কি বিশ্ব কেঁপে,
ছড়িয়ে যেত সে সুর কোথায়
আকাশ গ্রহ তারা ছেপে।
রাধার সনে ছুটত না কি
পাগল নিখিল বাঁশির স্বনে॥
তারে সাজত কেমন বন-মালায়
বিশ্ব যাহার অর্ঘ্য সাজায়;
যোগী-ঋষি পায় না ধ্যানে
গোপবালা কেমনে পায়।
তেমনি করে কালার প্রেমে
সব খোয়াব এই জীবনে॥
মোরে সেই রূপে দেখা দাও হে হরি
কীর্তন মিশ্র
মোরে সেই রূপে দেখা দাও হে হরি।
তুমি ব্রজের বালারে রাইকিশোরীরে
ভুলাইলে যেই রূপ ধরি॥
হরি বাজায়ো বাঁশরি সেই সাথে,
যে বাঁশি শুনিয়া ধেনু গোঠে যেত
উজান বহিত যমুনাতে।
যে নূপুর শুনে ময়ূর নাচিত
এসো হে সেই নূপুর পরি॥
নন্দ-যশোদা-কোলে গোপাল
যে রূপে খেলিতে, ক্ষীর ননী খেতে,
এসো সেই রূপে ব্রজ-দুলাল॥
যে পীতবসনে কদমতলায় নাচিতে
এসো সে বাস পরি॥
কংসে বধিলে যে রূপে শ্যাম
কুরুক্ষেত্রে হইলে সারথি
এসো সেই রূপে এ ধরাধাম।
যে রূপে গাহিলে গীতা, নারায়ণ,
এসো সে বিরাট রূপ ধরি॥
মোহাম্মদ নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে
মোহাম্মদ নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে।
তাই কি রে তোর কণ্ঠের গান এমন মধুর লাগে॥
ওরে গোলাব! নিরিবিলি
বুঝি নবির কদম ছুঁয়েছিলি,
তাই তাঁর কদমের খোশবু আজও তোর আতরে জাগে।
মোর নবিরে লুকিয়ে দেখে
তাঁর পেশানীর জ্যোতি মেখে
ওরে ও চাঁদ, রাঙলি কি তুই গভীর অনুরাগে॥
ওরে ভ্রমর, তুই কি প্রথম
চুমেছিলি নবির কদম,
আজও গুনগুনিয়ে সেই খুশি জানাস রে গুলবাগে।