পাঠাও বেহেশ্ত হতে হজরত পুন সাম্যের বাণী
পাঠাও বেহেশ্ত হতে, হজরত পুন সাম্যের বাণী,
আর দেখিতে পারি না মানুষে মানুষে এই হীন হানাহানি॥
বলিয়া পাঠাও, হে হজরত
যাহারা তোমার প্রিয় উম্মত
সকল মানুষে বাসে তারা ভালো খোদার সৃষ্টি জানি।
সবারে খোদারই সৃষ্টি জানি॥
আধেক পৃথিবী আনিল ইমান যে উদারতা-গুণে
তোমার যে উদারতা-গুণে,
শিখিনি আমরা সে উদারতা, কেবলই গেলাম শুনে
কোরানে হাদিসে কেবলই গেলাম শুনে।
তোমার আদেশ অমান্য করে
লাঞ্ছিত মোরা ত্রিভুবন ভরে,
আতুর মানুষে হেলা করে বলি, ‘আমরা খোদারে মানি’॥
পানসে জোছনাতে কে চলো গো পানসি বয়ে
গজল
পিলু খাম্বাজ মিশ্র দাদরা
পানসে জোছনাতে কে চলো গো পানসি বয়ে।
ঢেউ-এর তালে তালে বাঁশিতে গজল গেয়ে॥
মেঘের ফাঁকে ফোটে বাঁকা শশীর চিকন হাসি,
উজান বেয়ে চলো তুমি কি তার চোখে চেয়ে॥
ওপারে লুকায়ে আঁধার গভীর ঘন বন-ছায়,
আকাশে হেলান দিয়ে আলসে পাহাড় ঘুমায়।
ঘুমায়ে দূরে সে কোন গ্রাম বাসরে পল্লি-বধূর প্রায়।
ওপারে ধুধু বালুচর যেন নদীর আঁচল লুটায়।
ছাড়ি এ-সুখবাস চলেছ কোথায় গো নেয়ে॥
নদীর দু-তীরে টানে বেতস-লতা উত্তরীয়,
চমকি উঠি চখি ডাকে মুহু মুহু ‘কিয়ো!’
চকোরী চাঁদে ভুলি চাহে তব মুখ পানে,
কেঁদে পাপিয়া শুধায়, ‘পিউ কাঁহা, কাঁহা পিয়ো।‘
তুমি যাও আপন-বিভোল স্বপনে নয়ন ছেয়ে॥
পাষাণের ভাঙালে ঘুম
ভীমপলশ্রী মিশ্র দাদরা
পাষাণের ভাঙালে ঘুম
কে তুমি সোনার ছোঁয়ায়।
গলিয়া সুরের তুষার
গীতি-নির্ঝর বয়ে যায়॥
উদাসী বিবাগি মন
যাচে আজ বাহুর বাঁধন,
কত জনমের কাঁদন
ও-পায়ে লুটাতে চায়॥
তোমার চরণ-ছন্দে মোর
মুঞ্জরিল গানের মুকুল,
তোমার বেণির বন্ধে গো
মরিতে চায় সুরের বকুল।
চমকে ওঠে মোর গগন
ওই হরিণ-চোখের চাওয়ায়॥
পেয়ে আমি হারিয়েছি গো
কানাড়া মিশ্র কাওয়ালি
পেয়ে আমি হারিয়েছি গো
আমার বুকের হারামণি।
গানের প্রদীপ জ্বেলে তারেই
খুঁজে ফিরি দিনরজনি॥
সে ছিল গো মধ্যমণি
আমার মনের মণি-মালায়,
রেখেছিলাম লুকিয়ে তায়
মানিক যেমন রাখে ফণী॥
স্নিগ্ধ জ্যোতি নিয়ে সে মোর
এসেছিল দগ্ধ বুকে,
অসীম আঁধার হাতড়ে ফিরি
খুঁজি তারই রূপলাবণি॥
হারিয়ে যে যায় হায় কেন সে
যায় হারিয়ে চিরতরে,
মিলন-বেলাভূমে বাজে
বিরহেরই রোদনধ্বনি॥
প্রিয় যাই যাই বোলো না
গারা মিশ্র দাদরা
প্রিয় যাই যাই বোলো না,
না না না।
আর কোরো না ছলনা,
না না না॥
আজও মুকুলিকা মোর হিয়া মাঝে
না-বলা কত কথা বাজে,
অভিমানে লাজে বলা যে হল না॥
কেন শরমে বাধিল কে জানে,
আঁখি তুলিতে নারিনু আঁখি পানে।
প্রথম প্রণয়-ভীরু কিশোরী
যত অনুরাগ তত লাজে মরি,
এত আশা সাধ চরণে দলো না॥
ফিরে আয় ভাই গোঠে কানাই
কীর্তন ভাঙা
ফিরে আয় ভাই গোঠে কানাই
আর কত কাল রবি মথুরায়।
তোর শ্যামলী ধবলী কাঁদে তৃণ ফেলি,
বারেবারে পথে ফেরে চায়॥
রাখাল-সাথিরে ফেলি কোথা আজ
রাজ্য পেয়েছ, হে রাখাল-রাজ!
তোর ফেলে-যাওয়া বাঁশি নিয়ে যারে আসি,
মোরা আঁখি-জলে ভাসি দেখে তায়॥
তুই শিখী-পাখা ফেলে মুকুট মাথায়
দিয়েছিস নাকি, শুনে হাসি পায়!
তুই পীতধড়া ছেড়ে রাজবেশে ভাই
সেজেছিস নাকি, মোদের কানাই!
তুই অসি ফেলে নেচে আয় হেলে দুলে,
নূপুর পরিয়া রাঙা পায়।
ফিরে আয় ননী-চোর ব্রজের কিশোর
মা বলে ডাক যশোদায়॥
বনে মোর ফুটেছে হেনা চামেলি
জংলা দাদরা
বনে মোর ফুটেছে হেনা চামেলি
যূথী বেলি।
এসো এসো কুসুম-সুকুমার
শীতের মায়া-কুহেলি অবহেলি॥
পরানে দেয় দোলা দেয় দোলা দেয় দোলা
উতল দখিনা হাওয়া,
কোকিল কুহরে কুহুকুহু স্বরে,
মদির স্বপন-ছাওয়া।
হাসে গীত-চঞ্চল জোছনা-উজল
মাধবী রাতি,
এসো এসো যৌবন-সাথি
ফুল-কিশোর, হে চিতচোর, দেবতা মোর!
মম লাজ-অবগুন্ঠন ঠেলি॥
বোলো না বোলো না ওলো সই
হাম্বির তেতালা
বোলো না বোলো না ওলো সই
আর সে কথা।
ভোমরা চপল-মতি
ফিরে সে যথা তথা॥
তরু কি লতার কাছে
এসে কভু প্রেম যাচে,
তরু বিনা নাহি বাঁচে
অসহায় লতা॥
ভুলিতে যার নাই তুলনা,
সখী তার কথা তুলো না,
প্রাণহীন পাষাণে গড়া
সে যে দেবতা॥
ভালোবাসার ছলে আমায় তোমার নাম গাওয়ালে
তিলক-কামোদ ।। রূপক ।।
ভালোবাসার ছলে আমায় তোমার নাম গাওয়ালে।
চাঁদের মতন সুদূর থেকে সাগরে মোর দোল খাওয়ালে।।
কাননে মোর ফুল ফুটিয়ে উড়ে গেলে গানের পাখি,
যুগে যুগে আমায় তুমি এমনি করে পথ চাওয়ালে।।
আঁকি তোমার কতই ছবি, তোমায় কতই নামে ডাকি,
পালিয়ে বেড়াও, তাই তো তোমায় রেখার সুরে ধরে রাখি।
মানসী মোর! কোথায় কবে আমার ঘরের বধূ হবে,
লোক হতে গো লোকান্তরে সেই আশে তরী বাওয়ালে।।
ভালোবাসায় বাঁধব বাসা আমরা দুটি মানিক-জোড়
[ দ্বৈত ] গান
উভয়ে॥ ভালোবাসায় বাঁধব বাসা
আমরা দুটি মানিক-জোড়।
থাকব বাঁধা পাখায় পাখায়
মাখামাখি প্রেম-বিভোর॥
পু॥ আমার বুকে যত মধু
স্ত্রী॥ আমার বুকে ঢালবে বঁধু!
পু॥ আমি কাঁদব যখন দুখে
স্ত্রী॥ আমি মুছাব সে নয়ন-লোর॥
পু॥ আমি যদি কভু মনের ভুলে
তোমায় প্রিয়া থাকি ভুলে,
স্ত্রী॥ আমি রইব তাতেই ফুলের মালায়
লুকিয়ে যেমন থাকে ডোর॥
উভয়ে॥ মোরা নীল গগনের নীল স্বপনে
চিরকালের চাঁদ-চকোর।