কোন বন হতে করেছ চুরি হরিণ-আঁখি
গজল
জংলা কাহারবা
কোন বন হতে করেছ চুরি হরিণ-আঁখি(গো ওই)।
যেন আননে বেঁধেছে বাসা কানন-পাখি (ভীরু),
চুরি করা ওই নয়ন কি তাই ভয় এত চোখে।
নীল সাগর বলে, ডাগর ও চোখ আমারই নাকি॥
চিরকালের বিজয়িনী ও উজল নয়নে,
(তুমি) দু-ধারী তলোয়ার রেখেছ জহর মাখি॥
পুড়িল মদন তোমারই ওই চোখের দাহে,
সে গেছে তোমার ওই চোখে তার ফুল-বাণ রাখি॥
কোন রস-যমুনার কূলে বেণু-কুঞ্জে
কোন রস-যমুনার কূলে বেণু-কুঞ্জে
হে কিশোর বেণুকা বাজাও।
মোর অনুরাগ যায় যেথা, তনু যেতে নারে,
তুমি সেই ব্রজের পথ দেখাও॥
মোর অন্ধ আঁখি কাঁদে চাঁদের তৃষায়
তব পানে চেয়ে রাত কেটে যায়।
বঁধু এই ভিখারিনি সেই মাধুকরী চায়
মধুবনে, গোপীগণে যে মধু দাও॥
প্রেমহীন নীরস জীবন লয়ে,
পথে পথে ফিরি বৈরাগিনী হয়ে –
বুঝি আমি চাই তাই তব প্রেম নাহি পাই,
কৃপা করো প্রেমময়, তুমি মোরে নাও॥
খোদা এই গরিবের শোনো শোনো মোনাজাত
খোদা এই গরিবের শোনো শোনো মোনাজাত।
দিয়ো তৃষ্ণা পেলে ঠাণ্ডা পানি,
ক্ষুধা পেলে লবণ-ভাত॥
মাঠে সোনার ফসল দিয়ো
গৃহভরা বন্ধু প্রিয়,
আমার হৃদয়ভরা শান্তি দিয়ো
সেই তো আমার আবহায়াত॥
আমায় দিয়ে কারও ক্ষতি
হয় না যেন দুনিয়ায়।
আমি কারুর ভয় না করি,
মোরেও কেহ ভয় না পায়।
যবে মসজিদে যাই তোমার টানে
যেন মন নাহি ধায় দুনিয়া পানে
আমি ঈদের চাঁদ দেখি যেন
আসলে দুখের আঁধার রাত॥
চলো মন আনন্দ – ধাম
ভজন
ভৈরবী কাহারবা
চলো মন আনন্দ – ধাম
চলো মন আনন্দ-ধাম রে
চলো আনন্দ-ধাম॥
লীলা-বিহার প্রেম-লোক,
নাই রে সেথা দুঃখ শোক
সেথা বিহরে চির-ব্রজ-বালক
বনশিওয়ালা শ্যাম রে
চলো আনন্দ-ধাম॥
সেথা নাহি মৃত্যু, নাহি ভয়,
নাহি সৃষ্টি, নাহি লয়,
খেলে চির-কিশোর চির-অভয়
সংগীত ওম্ নাম রে
চলো আনন্দ-ধাম॥
চিরদিন কাহার ওসমান নাহি যায়
মান্দ কাহারবা
চিরদিন কাহার ওসমান নাহি যায়।
আজিকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়॥
অবতার শ্রীরামচন্দ্র যে জানকীর পতি
তারও হল বনবাস রাবণ-করে দুর্গতি।
আগুনেও পুড়িল না ললাটের লেখা হায়॥
স্বামী পঞ্চ পাণ্ডব, সখা কৃষ্ণ ভগবান।
দুঃশাসন করে তবু দ্রৌপদীর অপমান।
পুত্র তার হল হত যদুপতি যার সহায়॥
মহারাজা শ্রীহরিশচন্দ্র রাজ্যদান করে শেষ
শ্মশান-রক্ষী হয়ে লভিল চণ্ডাল বেশ।
বিষ্ণু-বুকে চরণ-চিহ্ন, ললাট-লেখা কে খণ্ডায়॥
জয় বানী বিদ্যাদায়িনী (সরস্বতী বন্দনা)
সরস্বতী বন্দনা
জয় বানী বিদ্যাদায়িনী।
জয় বিশ্বলোক-বিহারিণী॥
সৃজন-আদিম তমঃ অপসারি
সহস্রদল কিরণ বিথারি
আসিলে মা তুমি গগন বিদারি
মানস-মরাল-বাহিনী॥
ভারতে ভারতী মূক তুমি আজি
বীণাতে উঠিছে ক্রন্দন বাজি
ছিন্ন-চরণ শতদলরাজি
কহিছে বিষাদ-কাহিনি॥
ঊর মা আবার কমলাসীনা
করে ধরো পুন সে রুদ্র বীণা,
নব সুর তানে বাণী দীনাহীনা
জাগাও অমৃত-ভাষিণী॥
জয় বিবেকানন্দ বীর সন্ন্যাসী চীর গৈরিকধারী
জয় বিবেকানন্দ বীর সন্ন্যাসী চীর গৈরিকধারী।
জয় তরুণ যোগী, শ্রীরামকৃষ্ণ-ব্রত-সহায়কারী॥
যজ্ঞাহুতির হোমশিকা সম,
তুমি তেজস্বী তাপস পরম
ভারত-অরিন্দম নমো নমো
বিশ্ব মঠ-বিহারী॥
মদ-গর্বিত বলদর্পীর দেশে মহাভারতের বাণী
শুনায়ে বিজয়ী, ঘুচাইলে স্বদেশের অপযশ গ্লানি।
নব ভারতে আনিলে তুমি নব বেদ,
মুছে দিলে জাতি ধর্মের ভেদ
জীবে ঈশ্বরে অভেদ আত্মা
জানাইলে হুংকারি॥
ঝলমল জরিন বেণি দুলায়ে প্রিয়া কি এলে
মাঢ় কাহারবা
ঝলমল জরিন বেণি
দুলায়ে প্রিয়া কি এলে।
সজল শাওন-মেঘে
কাজল নয়ন মেলে॥
কেয়া ফুলের পরিমল
ঝুরে মরে তোমার পথে,
হেরি দিঘল তব তনু
তাল পিয়াল তরু পড়ে হেলে॥
পরিবে বলিয়া খোঁপায়
ঝরিছে বকুল চাঁপা,
তোমারে খুঁজিছে আকাশ
চাঁদের প্রদীপ জ্বেলে॥
তোমারই লাবণি প্রিয়া
ঝরিছে শ্যামল মেঘে,
ফুটালে ফুল মরুভূমে
চঞ্চল চরণ ফেলে॥
তুমি দুখের বেশে এলে বলে ভয় করি কি
বাউল খেমটা
তুমি দুখের বেশে এলে বলে ভয় করি কি, হরি!
দাও ব্যথা যতই, তোমায় ততই নিবিড় করে ধরি।
আমি ভয় করি কি হরি॥
আমি শূন্য করে তোমার ঝুলি
দুঃখ নেব বক্ষে তুলি,
আমি করব দুখের অবসান আজ
সকল দুঃখ বরি।
আমি ভয় করি কি হরি॥
তুমি তুলে দিয়ে সুখের দেয়াল
ছিলে আমার প্রাণের আড়াল
আজ আড়াল ভেঙে দাঁড়ালে মোর
সকল শূন্য ভরি।
আমি ভয় করি কি হরি॥
তুমি ফুল আমি সুতো গাঁথিব মালা
[ দ্বৈত ] গান
পুরুষ॥ তুমি ফুল আমি সুতো গাঁথিব মালা॥
স্ত্রী॥ তাহে মোরেই সহিতে হবে সূচির জ্বালা॥
পু॥ দুলিবে গলে মোর বুকের পরে,
স্ত্রী॥ ফেলে দিবে বাসি হলে নিশিভোরে,
আমি বন-কুসুম ঝরি বনে নিরালা॥
পু॥ তব কুঞ্জ-গলি
আসে দখিন-হাওয়া,
আসে চপল অলি॥
স্ত্রী॥ তারা রূপ-পিয়াসি
তারা ছিঁড়ে না কলি।
তারা বনের বাহিরে মোরে নেবে না কালা॥
পু॥ তবে চলিয়া যাই আমি নিরাশা লয়ে,
স্ত্রী॥ না, না, থাকো বুকে শিশির হয়ে,
তব প্রেমে করিব আমি বন উজালা॥
দিতে এলে ফুল হে প্রিয়
গজল
যোগিয়া মিশ্র কাহারবা
দিতে এলে ফুল, হে প্রিয়,
কে আজি সমাধিতে মোর।
এত দিনে কি আমারে
পড়িল মনে মনোচোর॥
জীবনে যারে চাহনি
ঘুমাইতে দাও তাহারে।
মরণ-পারে ভেঙো না
ভেঙো না তাহার ঘুম-ঘোর॥
দিতে এসে ফুল কেঁদো না প্রিয়
মোর সমাধি পাশে,
ঝরিল যে ফুল অনাদরে হায় –
নয়ন-জলে বাঁচিবে না সে!
সমাধি-পাষাণ নহে গো
তোমার সমান কঠোর॥
কত আশা সাধ মিশে যায় মাটির সনে
মুকুল ঝরে কত ফুল কীটেরই দহনে।
কেন অ-সময়ে আসিলে,
ফিরে যাও,
মোছো আঁখি-লোর॥
দীন দরিদ্র কাঙালের তরে এই দুনিয়ায় আসি
দীন দরিদ্র কাঙালের তরে এই দুনিয়ায় আসি
হে হজরত, বাদশাহ হয়ে ছিলে তুমি উপবাসী॥
তুমি চাহ নাই কেহ হইবে আমির, পথের ফকির কেহ
কেহ মাথা গুঁজিবার পাইবে না ঠাঁই, কাহারও সোনার গেহ,
ক্ষুধার অন্ন পাইবে না কেহ, কারও সত দাসদাসী॥
আজ মানুষের ব্যথা অভাবের কথা ভাবিবার কেহ নাই
ধনী মুসলিম ভোগ ও বিলাসে ডুবিয়া আছে সদাই,
তাই তোমারেই ডাকে যত মুসলিম গরিব শ্রমিক চাষি॥
বঞ্চিত মোরা হইয়াছি আজ তব রহমত হতে
সাহেবি গিয়াছে, মোসাহেবি করি ফিরি দুনিয়ার পথে,
আবার মানুষ হব কবে মোরা মানুষেরে ভালোবাসি॥