ও দুখের বন্ধু রে, ছেড়ে কোথায় গেলি
চাষানির গান
ঝুমুর কাহারবা
ও দুখের বন্ধু রে, ছেড়ে কোথায় গেলি।
ছেড়ে কোথায় গেলি রে বন্ধু, একলা ঘরে ফেলি॥
আমায় গঞ্জনা দেয় ঘরে পরে,
আমি ভুলতে তবু নারি তোরে রে,
আমি লবণ দিতে পান্তা ভাতে হলুদ দিয়ে ফেলি॥
তোর লাঙল তোর কাস্তে নিয়ে,
আমি খুঁজে বেড়াই মাঠে গিয়ে,
আমার চোখের জলে মাঠ ভেসে যায়
তুই তবু কই এলি॥
তেল মেখে কী গায়ে তোরা
পিরিতি করিস মনোচোরা,
ধরিতে কী না ধরিতে
যাস রে পিছলি॥
ও মন চল অকূল পানে
ভজন
(‘আরে দাতা শোন’ সুর)
ও মন চল অকূল পানে
মাতি হরিপ্রেম-গুনগানে।
নদী যেমন ধায় অকূলে
কূল যত তায় টানে॥
তুই কোন পাহাড়ে ঠেকলি এসে
কোন পাথারের জল,
হরির প্রেমে গলে এবার
সেই অসীমে চল,
তুই স্রোতের বেগে দুলবি রে
কূল বাধা যদি হানে॥
কুলু কুলু কুলুকুলু হরি-গুনগান
গাইবি অবিরল,
আর দুই কূলে প্রেম-ফুল ফুটায়ে
করবি রে শ্যামল,
যত তাপিত প্রাণ হবে শীতল
তোর জলে সিনানে॥
এ- পারের সব যাত্রী যাবে
তোর বুকে ওপারে,
তোর কূলে শ্যাম বাজিয়ে বাঁশি
আসবে অভিসারে,
তুই শ্যামের ছবি ধরবি বুকে
মাতবি প্রেম-তুফানে॥
ওগো প্রিয়তম এত প্রেম দিয়ো না গো
ওগো প্রিয়তম! এত প্রেম দিয়ো না গো, সহিতে পারি না আর।
তটিনীর বুকে ঝাঁপায়ে পড়িলে কেন মহা-পারাবার?
তোমার প্রেমের বন্যায় বঁধু হায়!
তুই কূল মোর ভাঙিয়া ভাসিয়া যায়,
আমি নিজেরে হারাতে চাহিনি বন্ধু
দিতে চেয়েছিনু হার॥
তুমি চাহ বুঝি তুমি ছাড়া আর রহিবে না মোর কেউ,
তাই কি পরানে তুফান তোল গো, এত রোদনের ঢেউ?
দেহ ও মনের সীমা ছাড়াইয়া মোরে,
কোথা নিয়ে যেতে চাও মোর হাত ধরে?
বলো, কোন মধুবনে শেষ হবে বঁধু আমাদের অভিসার?
ওমা ফিরে এলে কানাই মোদের
কীর্তন ভাঙা
ওমা ফিরে এলে কানাই মোদের
এবার ছেড়ে দিসনে তায়
তোর সাথে সব রাখাল মিলে
বাঁধব সে ননীচোরায়॥
তারে তুই যখন মা রাখতিস বেঁধে,
ছড়ায়েছি কেঁদে কেঁদে
তখন জানতে কে, যে, খুললে বাঁধন
পালিয়ে যাবে মথুরায়॥
এবার আমরা এসে ডাকলে শ্যামে
গোঠে যেতে দিসনে তায়।
ওই পথে অক্রুর মুনির সাথে
পালিয়ে যাবে শ্যামরায়॥
মোরা কেউ যাব না বনে মা আর
খেলব তোর এই আঙিনায়,
শুধু খেলব লুকোচুরি লো
আগলাতে চোরের রাজায়॥
কালা এত ভালো কি হে কদম্ব গাছের তলা
ঝুমুর খেমটা
কালা এত ভালো কি হে কদম্ব গাছের তলা।
আমি দেখছি কত দেখব কত তোমার ছলাকলা॥
আমি জল নিতে যাই যমুনাতে
তুমি বাজাও বাঁশি হে,
মনের ভুলে কলস ফেলে
তোমার কাছে আসি হে,
শ্যাম দিন-দুপুরে গোকুলপুরে দায় হল যে চলা॥
আমার চারদিকেতে ননদ সতিন দু-কূল রাখা ভার,
আমি সইব কত আর,
ওরা লুকিয়ে হাসে দেখে মোদের
গোপন লীলার ছলা॥
কুসুম-সুকুমার শ্যামল তনু
বাগেশ্রী – সিন্ধু কহারবা
কুসুম-সুকুমার শ্যামল তনু
হে ফুল-দেবতা লহো প্রণাম।
বিটপী-লতায় চিকন পাতায়,
ছিটাও হাসি কিশোর শ্যাম॥
পূজার থালা এ অর্ঘ্য-ডালা
এনেছি দিতে তোমার পায়,
দেহো শুভ বর কুসুম-সুন্দর
হউক নিখিল নয়নাভিরাম॥
এ বিশ্ব বিপুল কুসুম-দেউল
হউক তোমার ফুল-কিশোর,
মুরলী-করে এসো গোলোক-বিহারী
হউক ভূলোক আনন্দ-ধাম॥
কে এলে মোর চির-চেনা
বেহাগ মান্দ কাহারবা
কে এলে মোর চির-চেনা
অতিথি দ্বারে মম।
ফুলের বুকে মধুর মতো
পরাগে সুবাস সম॥
বর্ষা-শেষে চাঁদের মতন
উদয় তোমার নীরব গোপন,
জ্যোৎস্না-ধারায় নিখিল ভুবন
ছাইয়া অনুপম॥
হৃদয় বলে, চিনি চিনি,
হৃদয়ের এ স্বদেশিনি,
আঁখি বলে, দেখিনি তায়,
মন বলে, ‘প্রিয়তম’॥
কে নিবি ফুল কে নিবি ফুল
তিলং-খাম্বাজ মিশ্র তালফেরতা
কে নিবি ফুল কে নিবি ফুল।
টগর যূথী বেলা মালতী
চাঁপা গোলাব বকুল।
নার্গিস ইরানি গুল॥
আমার যৌবন-বাগানে
হাওয়া লেগেছে ফুল জাগানে,
চলে যেতে ঢলে পড়ি
খুলে পড়ে এলোচুল।
তনু মন আকুল, আঁখি ঢুলু ঢুল॥
ওগো ফুটেছে এত ফুল, ফুল-মালি কই,
গাঁতিবে মালা কবে, সেই আশে রই,
সে মালা দিব কারে, ভেবে সারা হই,
সহিতে পারে না এ ফুল-ঝামেলা
চামেলী পারুল॥
কেমনে কহি প্রিয় কী ব্যথা প্রাণে বাজে
পিলু-খাম্বাজ কাহারবা
কেমনে কহি প্রিয়
কী ব্যথা প্রাণে বাজে।
কহিতে গিয়ে কেন
ফিরিয়া আসি লাজে॥
শরমে মরমে মরে
গেল বন-ফুল ঝরে
ভীরু মোর ভালোবাসা
শুকাল মনের মাঝে॥
আগুন লুকায়ে বুকে
জ্বলিয়া মরি যে দুখে,
ভুলিয়া রয়েছ সুখে
তুমি তো আপন কাজে॥
আজিকে ঝরার আগে
নিলাজ অনুরাগে
ধরিতে যে সাধ জাগে
হৃদয়ে হৃদয়-রাজে॥
কোকিল সাধিলি কি বাদ
পিলু-বারোয়াঁ আন্ধা কাওয়ালি
কোকিল, সাধিলি কি বাদ।
নিশি অবসান হল
না মিটিতে সাধ॥
মিলনের মোহ কেন
ডাকিয়া ভাঙিলি হেন,
তুই রে সতিনি যেন
চন্দ্রাবলীর ফাঁদ॥
সার নিশি অভিমানে
চাহিনি শ্যামের পানে,
জেগে দেখি কুহু তানে –
নাহি শ্যাম চাঁদ॥
ননদিনি কুটিলা কি
পাঠায়েছে তোরে পাখি,
সুখের বাসরে ডাকি
আনিলি বিষাদ॥
কোথায় তুই খুঁজিস ভগবান
ভজন
পাহাড়ি কাহারবা
কোথায় তুই খুঁজিস ভগবান
সে যে রে তোরই মাঝে রয়,
চেয়ে দেখ সে তোরই মাঝে রয়।
সাজিয়া যোগী ও দরবেশ
খুঁজিস যারে পাহাড় জঙ্গলময়
সে যে রে তোরই মাথে রয়॥
আঁখি খোল ইচ্ছা-অন্ধের দল
নিজেরে দেশ রে আয়নাতে,
দেখিবি তোরই এই দেহে
নিরাকার তাঁহার পরিচয়॥
ভাবিস তুই ক্ষদ্র কলেবর
ইহাতে অসীম নীলাম্মর,
এ দেহের আধারে গোপন
রহে রে বিশ্ব-চরাচর,
প্রাণে তোর পাণের ঠাকুর
বেহেশতে স্বর্গে কোথাও নয়॥
এই তোর মন্দির মসজিদ
এই তোর কাশী বৃন্দাবন,
অপনার পানে ফিরে চল
কোথা তুই তীর্থে যাবি, মন!
এই তোর মক্কা-মদিনা,
জগন্নাথ-ক্ষেত্র এই হৃদয়॥