- বইয়ের নামঃ রাজার বাড়ি অনেক দূরে
- লেখকের নামঃ দিব্যেন্দু পালিত
- বিভাগসমূহঃ কবিতা
অপেক্ষা
অন্যমনে একদিন ভালোবাসা কড়া নেড়ে যাবে;
অপেক্ষায় থেকো।
পদশব্দে মনে হবে বাতাসের নিষ্ঠুর শাসানি
বহুদূরে শাণ দিচ্ছে ভয়ানক কৌতুকের থেকে।
তোমার দু’পাশে রাস্তা, সাজানো হর্ম্যের
অলিন্দ থম্কে আছে, চারিদিকে আলোর চাতুরি
স্বপ্নের ভিতর কিংবা মৃত্যুর ভিতর কিংবা
জাগরণে, সূর্যের ভিতর
একাকী, নিঃসঙ্গ, এই আত্মঘাতী শোকের ভিতর
থেক, তবু অপেক্ষায় থেকো।
জলাতঙ্ক
স্নানার্থীরা সবাই মাপে জল–
কেউ ঝুঁকে, কেউ গভীরতর কষ্টে, আরো নিচ।
প্রতিবিম্ব নিজেকে দ্যাখে স্বচ্ছ, অবিকল।
সারাটা দিন মিথ্যে ঘুরি পিছে।
অসম্ভবের পাষ্পে ভ’রে আচম্বিতে
দু’চোখ যদি স্রোতের টানে বিলম্বিত তাকায়–
পুরনো জল উপচে পড়ে কলসটিতে।
অমল যাদু কলসটিকে উপুড় ক’রে রাখায়!
না হ’লে ওই মৃত্তিকার প্রান্ত ছুঁয়ে
ঢেউ-ভাঙা স্রোত তবুও কেন ভাসায় না কূল!
জোয়ার কারো উজান, কারো হৃদয় ধুয়ে
মাল্য হ’তে হঠাৎ খসে দু’একটি ফুল।
স্বপ্ন শুধু স্বয়ংবৃত; বিবিধ ক্ষণ
যত্নে-আকা সিঁথির মতো একাকী রয়।
চিবুক ছুঁয়ে, তথাপি সে নিষিদ্ধ জন–
পেঁচিয়ে ওঠে সত্তা জুড়ে বিষাক্ত ভয়।
রাজার বাড়ি অনেক দূরে
রাজার বাড়ি অনেক দূরে। তুমি
পথ দেখালে যেতে পারি।
সকালে হোক, বিকালে হোক,
রাত্রিবেলা–
নিভলে আলো; হলুদ সবুজ থাম পেরিয়ে;
হাওয়ার থেকে পথের মতো
আনতে পারি শ্বাস–
সকালে হোক; বিকালে হোক;
শুধু তোমার ইচ্ছা যদি থাকে।
দিলাম আমার ভালোবাসা, তোমার হাতে।
ভালো লাগছে, সুখী। আমার
কতোকালের ইচ্ছা ছিলো
দুঃখে-সুখে, দুঃখে-শোকে
তোমার কাছে
রাখবো আমার আনত বিশ্বাস।
কিন্তু ভয় : সত্যি কিছু আছে না কি!
দুরন্ত দিন, ফলন্ত মাঠ?
যাকে পাবার ইচ্ছা ছিলো?
জানি না তা। এখন শুধু
তৃষ্ণা আমার
রক্ত; এবং তরল আঁধার–
নেমে আসছে, নেমে যাচ্ছি হঠাৎ যেন
সিঁড়ির গাঢ় অন্ধকারে,
তবু–
নিঃস্ব হবার আগে যেন শান্ত হ’তে পারি।