সত্য সদুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে। উত্তর না দিয়ে পারে না। আস্তে বলে, আমি যে কতখানিটা হয়েছি ঠাকুরঝি, তার প্রমাণ তো এই দেখছো!
এ তো মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা বৌ। এ নিয়ে বিচার চলে না। কিন্তু সুবর্ণকে মানুষ করে তোলার যে বড় আশা ছিল তোমার!
সত্য আকাশের দিকে চোখ ফেলে। সেখানে কি সুবর্ণর মুখটাই খোঁজে?… সুবর্ণকে কি দেখতে পায় সত্য? তাই মন আচ্ছন্নের মত বলে, সুবর্ণ যদি মানুষ হবার মালমশলা নিয়ে জন্মে থাকে ঠাকুরঝি, হবে মানুষ।…. নিজের জোরেই হবে। তার মাকে বুঝবে। নইলে ওর বাপের মতন ভাবতে বসবে, মা নিষ্ঠুর! সে ভাবনা বন্ধ করি এ উপায় আমার হাতে নেই!
কিন্তু বৌ, তালুই মশাই সংসার ত্যাগ করে কাশীবাসী হয়েছেন, তাঁর ওপর আবার এই অশান্তির বোঝা চাপানোই ঠিক হবে তোমার?
সত্য এবার যেন তার নিজস্ব দৃঢ় ভঙ্গীতে ফিরে আসে। নিজস্ব ধরনে বলে, না ঠাকুরঝি, সে অন্যায় আমি করবই বা কেন? বাবার বোঝা হবো কেন? তারপর একটু হেসে বলে, অনেকদিন আগে সুবর্ণ যখন জন্মায় নি, পাঠশালা খুলে পড়ানো-পড়ানো খেলা করতাম মনে আছে তোমার ঠাকুরঝি! আবার দেখবো, সে খেলা ভুলে গেছি না মনে আছে? একটা মেয়েমানুষের ভাতকাপড় চলে যাবে না তাতে?
নিজের পেট নিজে চালাবি বৌ? এই সাহস নিয়ে ঘর ছাড়ছিস! সদু একটা নিঃশ্বাস ফেলে। বলে, পায়ের ধুলো নেবার সম্পর্ক নয় বৌ, তবু নিতে ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু তখন যে বললি কাশীতে
হ্যাঁ, যাবো কাশীতে বাবার কাছে। সারাজীবন ধরে অনেক প্রশ্ন জমিয়ে রেখেছি, আগে তার উত্তর চাইতে যাবো।
সহসা স্তব্ধতা নামে। গাড়ি ধীরে ধীরে হাটতলায় এসে থামে। গরুর গাড়ির পথ শেষ হয়।
— শেষ—