গাড়ি বোধনদের জন্যেই পাড়ায় এসেছে। মাধবরা আটকে রেখেছে। কেন? বোধনের মাথা গরম হয়ে উঠছিল। ব্যাপারটা কী?
বোধন আবার মাধবের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। গাড়ি তো আমাদের জন্যে এসেছে। মাকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে। আটকে রাখছ কেন?
ফটিকদা জখম হয়েছে, হাসপাতালে নিয়ে যাব, কে একজন বলল।
পা থেকে মাথা পর্যন্ত রাগে জ্বলে উঠল বোধনের। দুপুর থেকে ফোন করে করে বসে বসে সে শেষ পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স পেল এই সন্ধেবেলায়, আর সেই অ্যাম্বুলেন্স আটকে, কেড়ে নিয়ে ওরা ওদের ফটিকদাকে হাসপাতাল নিয়ে যাবে।
বোধন বোঝাবার মতন করে বলল, আমি দুপুর থেকে ছোটাছুটি করছি অ্যাম্বুলেন্সের জন্যে। মার অসুখ। সাহা ডাক্তার সেই তখনই হাসপাতালে পাঠাতে বলেছে।
ট্যাক্সি করে লিয়ে যাও,মাধব বলল তাচ্ছিল্যের গলায়।
ট্যাক্সি করে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
তো অন্য গাড়ি দেখো।
বাঃ, এ আমার গাড়ি। …তুমি কেন বুঝছ না, আমার মা সকাল থেকে বেহুশ।
ঝামেলা কোরো না। হাসপাতাল যাবার বহুত গাড়ি আছে। বলে মাধব বোধনকে ঠেলে দিয়ে চেলাদের দিকে তাকিয়ে বলল, কীরে তোরা শালা লড়তে চড়তেই রাত কাবার করবি। ফটিকদাকে লিয়ে আয়।
আসছে। রজনীদা সবুর করতে বলল। রজনীদা ফটিকদাকে লিয়ে আসবে।
বোধন বুঝতে পারল, তার গাড়ি কেড়ে নিয়ে এরা ফটিককে হাসপাতালে পাঠাচ্ছে। বোধনের মা কিছু নয়। তার মা বাঁচুক বা মরুক রজনীদের কিছু আসে যায় না, ফটিক গোপাল কচা এরা অনেক দামি মানুষ। প্রাণের দাম ফটিকদের। যে-ফটিক বোমা বাঁধে, বস্তির ডাগর মেয়েদের নিয়ে রং করে, পুলিশ যাকে মেরে কাঁধের হাড় ভেঙে দিয়েছিল।
রাগে, দুঃখে, হতাশায় বোধনের হুঁশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। মাধবরা তার মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেবে না। তাদের গাড়ি কেড়ে নিয়ে নিজেদের লোক পাঠাবে। শালা, শয়তানের বাচ্চা সব।
আচমকা বোধনের মাথায় রক্ত চড়ে উঠল। কী মনে করেছে এরা। বোধন মাধবের মুখের সামনে হাত তুলে বলল, না, এ-গাড়ি আমার। আমি নিয়ে যাব।
মাধব তাকাল, ঝামেলা কোরো না।
কীসের ঝামেলা! আমি তোমাকে বলছি, আমার মা সকাল থেকে অজ্ঞান হয়ে বাড়িতে পড়ে আছে। দুপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্স ডাকছি। আর তুমি আমার গাড়ি কেড়ে নিচ্ছ। আমার মাকে মারতে চাও?
মাফা বাদে হবে। ফালতু কথা বাড়িয়ো না।
কীসের ফালতু কথা?
এ-গাড়ি যাবে না। কিছু বলার থাকে, থানায় যাও।
কথা তুমি বাড়াচ্ছ। …গাড়ি আমার। আমাদের জন্যে এসেছে। রাইট আমাদের। আমায় ছেড়ে দাও।
তোমার বাবার গাড়ি।
বোধন হুঁশ হারাল। তোমাদের বাবারও নয়।
বলার সঙ্গে সঙ্গে বোধন বুঝল মাধব তাকে মারবে। সরবার চেষ্টাও করল। পারল না। মাধব প্রচণ্ড জোরে এক চড় মারল বোধনের মুখে। চড়টা সামান্য সরে বোধনের গলা আর ঘাড়ের কাছে লাগল। ভীষণ লাগল তার। মাধবের হাত লোহার মতন। শালা শুয়ারের বাচ্চা…,বানচোত তুমি শালা আমার বাপ তোলো৷ মাধব এবার জোরে লাথি কষাল বোধনের কোমরে।
লেগেছিল বোধনের। যন্ত্রণায় শব্দ করল। কিন্তু মুহূর্তে সে সমস্ত ভুলে গেল। ভুলে গেল তার ক্ষমতার কথা, যন্ত্রণার কথা। মাধবের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শালা, শয়তান…।
জামা ছিঁড়ে গেল মাধবের। বোধন ঝাঁপ মেরে জামাটাই ধরতে পেরেছিল মাধবকে নয়।
এবার ঘুষি চালাল মাধব। হারামির বাচ্চা, তুই আমার ওপর হাত তুলিস। রোয়াবি। তোকে বানচোত তোর মার গভভে পাঠাব আজ। মাধব আবার লাথি মারল। বোধনের বুকের পাঁজরায়।
বোধনও ছাড়বে না। মুখ নিচু করে দু হাতে মাধবের জামা ধরে টানছে। জামা আরও ছিঁড়ে গেল। ঘুষি চালাল বোধন। মাধবের হাতে লাগল।
গোপাল বলল, আবে এই শালা বোধন হটে যা… খুন চড়িয়ে দিচ্ছিস বেকার। হঠে যা। মরে যাবি।
বোধন হটবে না। না, আজ সে হটবে না। মানুষ কত হঠতে পারে। সে প্রায় খেপার মতন একটা লাথি চালাল। মাধবের কুঁচকিতে লাগল।
এতক্ষণ মাধব তেমন যেন পাত্তা দেয়নি বোধনকে। দুটো চড় কষিয়ে, লাথি মেরে বেটাকে হটিয়ে দেবে ভেবেছিল। কুঁচকির কাছে লাথি খেয়ে সে কাণ্ডজ্ঞান হারাল।
মাধব মানুষকে মারতে জানে। বোধন জানে না।
এবার মাধব মারতে লাগল। ঘুষি, লাথি, চড়। কোনও দিক দিয়ে বোধন নিজেকে বাঁচাতে পারছিল না। বোধনের হাত মুচড়ে দিল মাধব, ঘাড়ের কাছে কনুই দিয়ে জোর মারল, কোমরে পেছনে লাথি মারতে মারতে ছিটকে ফেলে দিল।
বোধন রাস্তায়, মাটিতে ছিটকে এসে পড়ল। লাগল ভীষণ। ছড়ে গেল খানিকটা।
মাধব দু পা এগিয়ে এল! তোর পেটে লাথি চেপে মেরে ফেলব শালা। দেখি কে তোকে বাঁচায়। তোর কোন বাপ! আমার কাছে রংবাজি করতে এসেছিস। চুতিয়া কাঁহাকার।
মাধব বোধনের পেটে পা তুলতে আসছিল।
গোপাল বলল, ছেড়ে দে, মাধব। ও শালা মেয়েছেলে।
কচা বলল, সুকুমারের চামচা, মাধবদা।
মাধব তার চটি সমেত পা বোধনের পেটে চাপাল। শোন শালা, আমার নাম মাধব। তোর সুকুমার নই। বেচাল করবি তো খালের জলে লাশ পড়ে থাকবে। তোর মা বাপ দাদা মারাতে আসিস না। মরে যাবি। হ্যাঁ, গাড়ি আমার। আমার বাবার। তোর হিম্মত থাকে তুই ওই গাড়ি নিয়ে যা।
বোধন মাধবের পায়ের তলায় শুয়ে শয়তানটাকে দেখছিল। পেটে লাগছে। চোখ বুজে ফেলল।
পেট থেকে পা সরিয়ে মাধব বোধনের পাছায় একটা লাথি মেরে ছেড়ে দিল তাকে। যেন নেহাতই দয়া করল।