১ম–মুসলমান সমাজের দান বলে একটি কথা আছে। এর মহিমা সকলেই প্রচার করে থাকে। পতিতদের উদ্ধারের জন্যও দান আবশ্যক। এসব ক্ষেত্রে কৃপণতা করা উচিত নয়। তবে হরদম যাকে তাকে দান করায় কোনো লাভ নেই–দানের মহিমা সর্বত্র প্রচার করার চাইতে মানুষকে আল্লাহর ওয়াস্তে অর্থশালী, ব্যবসায়ী, সঞ্চয়ী হতে বলাই ঠিক। ভিক্ষুক মোল্লাদের পকেটে টাকা দেওয়ার চাইতে দেশের মঙ্গল হয় এরূপ বড় অনুষ্ঠানে দান করা উত্তম। দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীর জন্য ছোট ছোট দানের আবশ্যকতা আছে। প্রত্যেক পরিবারে অন্তত একশ টাকা হরদম মজুদ থাকা চাই।
১ম–সংসারে খরচপত্র কি কর্তার হাতে হওয়াই ভালো?
২য়–বাজারের হিসাব পত্নী বা পরিবারের অন্য কোনো লোকের হাতে দেওয়াই ভালো।
২. পীড়িতের সেবা
১ম বন্ধু–বন্ধু, পীড়িতের সেবা সম্বন্ধে কিছু বলো।
২য়–পরিবারে যদি কারো অসুখ হয় তবে তাকে একা একা অবহেলিত অবস্থায় ফেলে রাখা যারপরনাই অন্যায়। ভদ্র পরিবারের এটি নিয়মই নয়। ছোট হোক, বড় হোক, বুড়ো হোক, যুবক হোক-পীড়িত হলে বাড়ির আর সকলের উচিত–তার কাছে যেয়ে বসে সহানুভূতি জানানো, কথা বলে তার বেদনার উপশমের চেষ্টা করা। রোগী যদি কথা না বলে, অবস্থা যদি বিশেষ খারাপ হয়, তবে তার কাছে একজন না একজন চুপ করে বসে থাকা উচিত। রোগীকে একা একা ফেলে রেখে–যে যার মতো হাসি ঠাট্টা বা সাংসারিক কার্যে ব্যস্ত থাকা ঠিক নয়। ২/১ জনের উপর সেবার ভার পড়লে তার কষ্ট হতে পারে, পরিবারে পালা করে পীড়িতের সেবার ভার গ্রহণ করবে।
১ম–রোগীর যত্ন সম্বন্ধে আরো কিছু বলল।
২য়–এ সম্বন্ধে সমস্ত কথা এখানে বলা অসম্ভব। তবে যেগুলি প্রত্যেক যুবক-যুবতীর জন্য দরকার তাই বলছি। নোংরা বিছানাপত্র, চাঁদর, বালিশের ওয়াড় নিতান্ত অশান্তিজনক পরনের বস্ত্র কোনোমতে মলিন থাকা ঠিক নয়। গায়ে ময়লা, মাথায় চুলগুলি জড়ানো গোছের ময়লা, এলো-মেলো এসব বড়ই মন্দ।
১ম–ভালো সুস্থ লোকেরাও তো এসব গ্রাহ্য করেন না।
২য়–পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা প্রত্যেকেরই উচিত। এলোমেলো বিছানা-পত্র, ধুলা বালিতে ভরা ঘর, ময়লা কাপড়, বালিশ বর্জন করতে হবে। চুল আঁচড়ালে অনেক বুড়া তোক বিরক্ত হয়। ফচকে এবং অসভ্য বলে। কিন্তু যারা এরূপ বলে তারা অন্যায় করেই বলে। চুলগুলি পরিষ্কার করলে, পোশাক-পরিচ্ছদ আধুনিক সভ্যতা অনুযায়ী করলে অসভ্যতার পরিচয় দেওয়া হয়–এরূপ মনে করা অন্যায়। নোংরা ময়লা পোশাকে থেকেও অনেকে পাপ চিন্তা পোষণ করে। নোংরা থাকাতেই মনুষ্যত্ব সূচিত হয় না। হ্যাঁ, যা বলছিলাম রোগীদের কথা। কোনো কোনো লোকের ধারণা ব্যাধি আপনা আপনি সেরে যাবে–এজন্য অনেক সময় রোগীদের প্রতি অবহেলা হয়ে থাকে। তারা এভাবে ভুগে ভুগে বেঁচে উঠবে। কিন্তু দুর্বলের প্রতি নিছক অত্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। চিকিৎসার অবহেলায় মানুষ মারা যায়। ঔষধ আল্লাহর দান। সুতরাং সেগুলি উপযুক্ত সময়ে ব্যবহার
করলে আলাহ্র দানের সদ্ব্যবহার করা হয় না। কোনো কোনো কৃপণ পীড়িতের জন্য টাকা খরচের বেলায় অতিশয় সাধ হয়ে বলেন–”খোদা আয়ু দিলে কে রোগীকে মারে?” আহারের যেমন শরীর রক্ষার ক্ষমতা আছে, ঔষধেরও তেমনি শরীরকে বাঁচিয়ে রাখবার ক্ষমতা আছে। মূর্খেরাই ঔষধকে অবহেলা করে, অসময়ে স্বাস্থ্য হারায়। ত্রিশ বৎসরের পর থেকে অর্থাৎ বিবাহিতদের শরীর অটুট স্থাস্থ্যসম্পন্ন বলতে হলে এবং যাদের স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ আছে তাদেরও শরীরে ক্ষয় নিবারণের জন্য বিশেষ বিশেষ পুষ্টিকর কবিরাজী ও হেকিমী ঔষধ সেবন আবশ্যক–এতদ্ভিন্ন নারী উভয়ের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সেবন, বিজ্ঞ বৈদ্যের সুপরামর্শ সত্বরই আবশ্যক। একটা লঙ্কা মরিচ, পচা ডাল, একটু টক দিয়ে কাজ সেরে নেবার অভ্যাস মেয়েদের আছে। এর ফল অতিশয় খারাপ–একথা প্রত্যেক বুদ্ধিমান লোকের ধারণা বোঝা উচিত। এতে শরীর দুর্বল হয়, শরীরের অবশ্য সৌন্দর্য নষ্ট হয়। আরও গুরুতর কথা দুর্বল স্বাস্থ্য-শক্তিহীনা নারীর গর্ভে সন্তানেরা কখনও বলশালী ও স্বাস্থ্যবান হয় না।
১ম–বধূরা, অনেক সময় শাশুড়ীদের কোনো যত্ন নেন না। রোগ-ব্যামো হলে ফিরে তাকান না।
২য়–হ্যাঁ ঠিক, বধূ ও পুত্রবধূতে অনেক পরিবারে একটা বিরোধ লেগে থাকে। এটা বড়ই অন্যায়। বন্ধুদের মনে রাখা উচিত, এই দুর্ব্যবহারের ফলে পরিবারে এমন একটা আবহাওয়া গড়ে উঠবে, যে আবহাওয়ায় নূতন বধূরা এসে তারা যখন বুড়ো হবেন তাদের সঙ্গে ঠিক তারা ঐরূপ ব্যবহার করবেন। যে পরিবারের বা মেয়েরা পরস্পরে প্রেম-পূৰ্ণ ব্যবহার করে, নূতন কোনো লোক ভর্তি হলে, তার ব্যবহার ও রুচি ঠিক ঐ পরিবারের মতো হয়; কোনো মন্দ পরিবারে ভালো লোক এসেও মন্দ হয়ে যায়।
শাশুড়ীদের সঙ্গে বধূদের বিলক্ষণ বন্ধুত্ব হওয়া চাই–পরস্পরে প্রীতি ভালোবাসার সুনিবিড় বন্ধন গড়ে চাই। যখন ছেলেরা বড় হয়ে ওঠে তখন বুড়া মাতার সঙ্গীহীন জীবনের বেদনা বন্ধুদের কলহাসি, তাদের প্রেম ও শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও সরল ব্যবহারে বহু পরিমাণে লাঘব হবে। বুদ্ধিমতী বধূদের এটি বিশেষ করে মনে রাখা চাই। যখন জীবন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে সংসারে আকর্ষণ কিছু নাই–ছেলেরা সংসারের কাজে যেখানে সেখানে ছুটে আসে না–তখন তাদের জীবনকে সরস ও মধুর করে তুলতেই হবে–এটি প্রত্যেক বধূর অবশ্য কর্তব্য। শুধু স্বামী ও নিজের ছেলেমেয়ে নিয়ে মত্ত থাকলে চলবে না।