প্রত্যেক মানুষের একটা বিশেষত্ব ও স্বাতন্ত্র্য আছে। কখনও ইচ্ছা করো না–কোনো মানুষ তার সমস্ত বিশেষত্ব হারিয়ে তোমার মতো হতে পারে। কথায় কথায় ছোটর
সমালোচনা করলে অন্যায় কাজ করা হয়। কি ছোট কি বড় সকলেই বিবেক বুদ্ধির দোহাই। দিয়ে কথা বলে। ডেস্পট ও অটোক্রাটের কথা ও কাজ মূল্যহীন!
ভক্তির দ্বারা এ জগতে বেঁচে থাকা যায় না। স্বাধীনতা ও নিজের মূল্যই জীবন। আনাড়ী ও অপদার্থ লোককে কখনও বেশি সম্মান করবে না–তাদের ভালবাসলে, সম্মান করলে তাদের অধঃপতন হবে।
কর্তব্যের জন্যে প্রাণ অসীম যন্ত্রণা চেপে রাখতে হবে। অসীম ধৈর্য ছাড়া মানুষকে বড় করা যায় না।
মনে অনিচ্ছায় কোনো কাজ করতে নেই। অল্প অল্প করে করলেই কাজ হয়। যা তুমি ভালো করে জান, যা স্বাভাবিক বলবে ও করবে। এইরূপ করলে সিদ্ধি লাভ হয়, অন্যথা হয় না।
কারো পদচুম্বন করে বা দয়া ভিক্ষা করে জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করো না, বস্তুত এইভাবে বাঁচতে পারা যায় না। মানুষকে বেশি ভক্তি জানান পাপ।
অনেক পুরুষ বিয়ের পর অন্ধের মতো হীনস্বভাব পত্নীর মতো হীন হয়ে যান, অনেক সৎস্বভাবা নারীও হীনপ্রবৃত্তির স্বামীর স্পর্শে এসে হীন হয়ে যায়। কুচরিত্র স্বামীর সঙ্গে বাইরে ঝগড়া না করে, তাকে মিষ্টি কথায় সংশোধন করতে চেষ্টা করবে।
যৌবনের ভালবাসায় স্বামীর নীচস্বভাব হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। মানুষের এই ভাবের পতন যার পর নাই ঘৃণিত। যেকোনো কাজই হোক না, তা তোমার অনায়ত্ত নয়। সাহসের সঙ্গে একটু একটু করে আয়ত্ত করতে চেষ্টা কর। পাহাড় দেখে ভীত হয়ো না, একটু একটু করে আঘাত কর,-পাহাড় ধুলা হয়ে তোমার গায়ে পড়বে। পরের চোখে না দেখে নিজের চোখে দেখার মধ্যে সফলতা আছে।
অনুগ্রহ লাভের আশায় কারো কাছে প্রাণের গোপন দুঃখের কথা বলতে নেই।
দেশের লোক ছোট ও হীন হলেও তাকে ঘৃণা করো না। যতদিন না তারা বড় হচ্ছে। ততদিন আমরাও বড় হতে পারবো না। ভিতরের দৃষ্টি জ্ঞান ছাড়া কোনো ধর্মপুস্তক মানুষকে বা জাতিকে ধ্বংস হতে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না।
অপ্রিয় সত্যের পরিবর্তে নির্দোষ মিথ্যা বলা উচিত। সত্যটি ঠিক অপ্রিয় কিনা, এ বিষয়ে বিবেচনা চাই। শিশু ও অবোধের কাছেও অনেক সময় নির্দোষ মিথ্যা বলা বিশেষ আপত্তিজনক নয়।
মানুষকে অনেক সময় নিজের গুণ বুঝতে দিতে হবে, নইলে তাদের কাছে তোমার সম্মান হবে না; তাই বলে আত্মপ্রকাশ সব সময় ভালো নয়। নিজের গুণ অন্যকে কাজের খাতিরে জানানো দরকার।
কোনো কোনো লোকের সামনে চুপ করে থাকা উচিত। মূর্খ ক্ষমতাশালী ব্যক্তির সামনে জ্ঞানের কথা বললে তারা রাগে।
মানুষকে বড় করতে হলে, অনেক সময় তাকে প্রশংসা করতে হয়।
জনমত, পুণ্যশক্তি বা আর্থিক প্রভা ব্যতীত জগতে টেকা যায় না। জনমত ও পুণ্যশক্তির মূল্যই বেশি। বাঁচবার জন্য অর্থ, না হয় জনমত সৃষ্টি করতে হবে।
অবাধ্য ও বেগানা লোককে আস্তে আস্তে তোমার শক্তি উপলব্ধি করিও। হঠাৎ তাকে বাধ্য করতে চাইলে সে বিদ্রোহী হবে। কারো সঙ্গে ‘তুই’ ‘তুই’ করে কথা না বলাই ভালো। মানুষ যতই ছোট ও হীন হোক না, কাউকে ছোটলোক বলে গাল দিও না। এরূপ করা পতিত জাতির অভ্যাস-অধঃপতিত মানুষের স্বভাব।
মানুষকে গালি দিয়ে বেদনা দিয়ে কখনও বড় করতে যেয়ো না। পরিশ্রম বৃথা হবে। অন্যায় কথা শুনে বা অন্যায় কাজ দেখে প্রয়োজনমতো মিষ্টি বিনয়-নম্র বা উগ্র ভাষায় প্রতিবাদ করা চাই। যে ভুল করে–তার এবং নিজের অর্থাৎ উভয়েরই মঙ্গল এতে নিহিত আছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ না করা পাপ ও মূর্খতা।
দুর্বলচিত্ত ব্যক্তিরা এক পক্ষের কথা শুনেই প্রকাশ করে।
অতি আত্মীয়ও কোনো অভিযোগ করলে, ঠিক কি না, চিন্তা করে দেখে নিতে হবে।
কেউ কোনো অন্যায় করলে, তা সাধারণকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। জনসাধারণের ঘৃণা ও সমালোচনা সহ্য করা কঠিন। অস্ত্র অপেক্ষা জনমতের শক্তি প্রবল।
সেধে দেওয়া দান গ্রহণ না করা দোষ।
অনুগ্রহ দৃষ্টি লাভ করবার আশায় জীবনে কখনও কারো সেবা করতে নেই। মনুষ্যত্বের খাতির ছাড়া অন্য কোনো লোভে মানুষের সেবা করা নিষেধ।
ধনী ব্যক্তিদের ব্যাধিশৰ্যাপার্শ্বে উপস্থিত হলে, লোকে সন্দেহ করে বলে থাকে এই ব্যক্তির সেবা ও সহানুভূতি তোষামোদ ছাড়া আর কিছু না।
যে সম্মান আদায় করে না, তাকে মানুষ সম্মান করে না। মানুষের স্বভাব প্রভুত্বপ্রিয়তা, সে যতই কেন সাম্যের কথা মুখে বলুক না। মানুষের এই কুস্বভাবকে জোর করে ভাঙ্গতে হবে।
মানুষের সঙ্গে শান্তভাবে বুঝিয়ে কথা বললে বেশি কাজ হয়। মূর্খ ও অপদার্থের কথায় উত্তর দেওয়া অনেক সময় অপমানজনক মূখের কটু কথা হাসির সঙ্গে গ্রহণ করাই ভালো।
বয়সে বুড়ো অপেক্ষা জ্ঞানের বুড়ো মানুষের মূল্য বেশি।
কুলসুম বলিলেন–প্রিয় হালিমা, অনেক কথা বলেছি। কথার কি অন্ত আছে? মানুষের ভিতরটা উন্নত হলে পরের কথার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। সে নিজেই নিজের পথ ঠিক করে নেয়। বাঁধাধরা নিয়ম নারীকে, এমনকি কোনো মানুষের সমাজকে বড় করে রাখতে পারে না। দৃষ্টিই মানবজীবনের প্রধান অবলম্বন।
কুলসুম হালিমার গলা ধরিয়া বলিলেন-প্রার্থনা করি, আল্লাহ, তোমাকে আদর্শ বধূ করেন।