প্রত্যেক মানুষের একটা মূল্য আছে–এ কথা সে বিশ্বাস করুক। এ বিশ্বাসের মধ্যে উন্নতি নিহিত। এই বিশ্বাস যে করে, সেই বাঁচে। স্বাতন্ত্র, বৈশিষ্ট্যতা, বিশিষ্টতা ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে মানুষের জীবন।
আজ যা নতুন ও বর্তমান বলে মনে হচ্ছে, কাল তা প্রাচীন ও সুদূর অতীতের কথা বলে মনে হবে।
যাদের অবস্থা খারাপ, তাদের বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করতে নেই।
ঘরগুলি যত বড় হয় ও জানালাযুক্ত হয় ততই ভালো। ছোট ঘরে বাস করবে মন ছোট হয়ে যায়। জীবনে অবসাদ আসে।
সালাম ও নজর স্বরূপ কারো কাছ থেকে টাকা নিতে নেই–এটা ছোট মনের কাজ।
প্রতিকার বা সংশোধনের ব্যবস্থা না করে শুধু অনবরত দুঃখ প্রকাশ করা অনেক মেয়ের স্বভাব। যেমন করে কর-পথে একটা কাটা রয়েছে, সেটাকে না সরিয়ে ফেলে অনবরত হাঁটার অসুবিধা প্রকাশ করা অন্যায়।
তোমার চেয়ে যারা অল্পবুদ্ধির লোক, তাদের সঙ্গে তা বলতে খুব হুঁশিয়ার হবে–তোমার রহস্য বা তোমার সরল কথায় অকারণে অনেক সময় তারা ভয়ানক রেগে যেতে পারে–বিনা কারণে শত্রু হতে পারে!
বাপ ও শ্বশুর ছাড়া কোনো পুরুষকে সম্মান জানাবার জন্যে নারীর আসন ছেড়ে উঠতে নেই। কোনো পুরুষকে সালাম করাও নারীর পক্ষে অবৈধ। নারী সর্বদাই পুরুষের সম্মানের পাত্র, বিশেষ কারণ না থাকলে কোনো পুরুষের সঙ্গে আগে কথা বলবার দরকার নেই।
পরমাত্মীয় ছাড়া কোনো পুরুষের সামনে হাসবে না।
অনেক মেয়ে মনে করেন–দুই একখানা উপন্যাস পড়তে পারলেই লেখাপড়া শেষ হলো এটা ভুল ধারণা। ইতিহাস, ভূগোল, অঙ্ক, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ব্যাকরণ প্রভৃতি সকল বিষয়ে জ্ঞানলাভ না করতে পারলে, লেখাপড়া শেখার কোনো মূল্য নেই। ভূগোল ইতিহাসের জ্ঞান ছাড়া, লেখাপড়ায় কোনো লাভ হয় না। খবরের কাগজ মাসিক পত্রিকা, বইপুস্তক রীতিমতো ভাবে না পড়লে মেয়েরা জাতি ও সন্তান গঠন কার্যে কোনো কিছু করতে পারেন না। তাদের মনের উন্নতি হবে না। স্বামীর ভাব ও চিত্তকে বোঝা যাবে না, সংসার ও পরিবার শ্রীময় হয়ে উঠবে না। অশিক্ষিত স্ত্রীলোক যেমন নিজে ছোট; যারা তাদের স্পর্শে আসে তারাও হীন ও ছোট হয়ে যায়।
মানুষকে ভক্তির দ্বারা জয় করতে চেষ্টা না করে, আত্মমর্যাদাবোধ ও প্রীতির দ্বারা জয়। করাই ভদ্রতা ও মনুষ্যত্ব।
যা সত্য তাই করবার স্বাধীনতার জন্যে জগতে লড়াই বাঁধে, ভয়ে মিথ্যে মেনে নিলে মৃত্যু হয়।
বাঙালি পরিবারে অনেক বাড়িতে বৃষ্টি বাদলার দিনে উঠোনে বড় কাদা ও ময়লা জমে, এটা বড় দোষের।
নিজের শানশওকাত, গহনা ও কাপড় দেখাবার জন্যে কোনো ভদ্র মহিলাকে দাওয়াত করে বাড়িতে আনবে না।
দামি খাট পালঙ্ক কিনে, বিলাসিতার পরিচয় দিয়ে অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। এইসব জিনিসের দ্বারা পরিবারের সম্মান বাড়াতে চেষ্টা করা ভুল। অনুন্নত সমাজে অনেক সময় বাইরের সাজসজ্জা দরকার হয়ে পড়ে–এ কথা ঠিক, কিন্তু অবস্থা বুঝে না চললে জীবনে দুঃখ হয়। বাইরের শানশওকাতে মনে অহঙ্কার আসা পাপ।
মনের অসন্তোষ প্রকাশ করতে হলে খোলা শান্তভাবে গম্ভীর ভাষায় তা করবে, লাঠি নিয়ে উঠতে হবে না। ভয়ানক উগ্র হয়ে যাওয়া বা প্রথমেই কাউকে ভয়ঙ্কর গালি দিলে ফল হয় না। কোনো কাজে বা কথায় সহজে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠা ছেলেমি।
নিতান্ত গোবেচারী, অত্যন্ত বিনয়ী লোককে খুব শ্রদ্ধার চোখে না দেখা উচিত। যে মানুষ কিছু বিদ্রোহী, সমালোচক সকল কথাই মাথা নত করে মেনে নেয় না,–যে নিজের দাবির কথা জানায়–সেই উপযুক্ত লোক। যে মানুষ বেশি দ্ৰ, সে নিজেকে ছোট করে এবং যার প্রতি ভদ্রতা দেখায়, তাকেও ছোট করে। সন্তুষ্ট অবিদ্রোহী মানুষের শেষ-মৃত্যু ও অসম্মান। অপ্রয়োজনে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে খামাখা কারো সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করা, কারো প্রতি অসন্তোষ পোষণ করা বড় দোষের।
তর্ককালে কখনও রাগবে না, হাসবেও না। নিতান্ত খোলা কথা শুনেও শান্তভাবে উত্তর দেবে।
যতদিন বেঁচে থাকা যায় বই-পুস্তক পড়তে হবে, জগতের খবর রাখতে হবে, নইলে আত্মা অবনত হতে থাকে। মানুষের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারের ও কাজে কামে চিন্তায় কোনোটি ঠিক কোনোটি অঠিক ভালো করে বোঝবার জন্য আমাদের বই পড়তে হবে। নিজেকে
পণ্ডিত ও সম্পূর্ণ মনে করে বই পড়া কোনো সময়ে ইস্তফা দিলে চলবে না।
চিন্তাশূন্য পাঠে লাভ হয় না। যে চিন্তা করে সেই বেশি পণ্ডিত।
কোনো কোনো লোক বলে থাকে–নারীর পড়াশুনার দরকার নেই, তারা সাধারণত অল্পশিক্ষিত লোক। কোনো কোনো অপদার্থ নরপিশাচ বলে থাকে–চাষারাই লেখাপড়া শিখে ভদ্র হতে চেষ্টা করে।
মানুষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সর্বদা স্বাভাবিক হবে, এটা বিশেষভাবে স্মরণ করে রাখতে হবে।
পরের অনুগ্রহ বেঁচে থাকার মতো কষ্টের কারণ আর নেই।
কোনো লোক উপহাস বা ঠাট্টা করে বললেও রাগবে না! উপহাসকেই উপহাসরূপে গ্রহণ না করে ধীরে ও শান্তভাবে উত্তর দেবে। মূর্খ বলে ঘৃণা করে থাকা সব সময় ঠিক নয়, পাপী-মূর্খকে সত্যপথে আনা উত্তম কাজ।
কোনো মানুষকে কোনো নতুন কথা বলা তার অজানা বিষয় বোঝাতে হলে কখনও উগ্র হয়ো না, বিশেষ ধৈর্য চাই–গাধা, মূর্খ এই সমস্ত কথা বললে, ফল খারাপ হয়। শিশু ও ছেলেপেলে সম্বন্ধেও এই কথা সত্য।