জোর করে জীবনের অভাব সৃষ্টি করো না, এ ভাবেই মানুষের বহু দুঃখ বাড়ে।
কাজ শেষ হলে জিনিসপত্র যেখানে সেখানে টান দিয়ে ফেলা, তারপর যখন আবার দরকার হয় তখন সেই জিনিসের জন্য সারাদিন ছুটোছুটি করা বড়ই দোষ। দরকার অ দরকারে সব জিনিস যথাস্থানে ঠিক করে রাখা উচিত। শৃঙ্খলা সভ্যতার লক্ষণ।
স্ত্রীলোকের ব্যক্তিত্ব অর্জন করা সংসার কার্যে অভিজ্ঞতা লাভ করা দরকার। কারণ, কে জানে জীবনে কোন সময় কি বিপদ হয়! মাঝে মাঝে স্বামীকে ছুটি দিয়ে সংসার কার্য নিজে চালাতে চেষ্টা করা উচিত।
মেয়ে মানুষের যত্রতত্র গমনে সমাজ বাধা না দিলেও ধর্ম বাধা দেয়, এ আমার মনে হয় না। বর্তমানে যে অবরোধ প্রথার চলতি হয়েছে, তাতে মুসলমান রমণীর পক্ষে জগতে অন্তত বর্তমানে বেঁচে থাকা কঠিন। হযরত মোহাম্মদের (সঃ) অনেক পরে এই কু-প্রথা স্থায়ীভাবে নারীর গলা চেপে ধরেছে।
পরিবারের সুবিধার জন্য বাড়িতে একটা হোমিওপ্যাথিক বাক্স থাকা ভালো। ছেলেপেলে নিয়ে পল্লীগ্রামে এবং শহরেও অনেক সময় বড় বিপদে পড়তে হয়। কথায় কথায় ডাক্তার ডাকা কঠিন, তাছাড়া হাতুড়ে ডাক্তারের এলোপ্যাথিক ওষুধ খেলে শেষ শরীর খারাপ হয়ে পড়ে।
জীবনের সব সময় মানুষকে চরিত্র, জ্ঞানে ও অর্থে বড় করতে চেষ্টা করা উচিত, কারণ সেটাই ধর্ম। মানুষকে জ্ঞানের কথা শোনান, বই পড়তে উপদেশ দেওয়া বড় ভালো। মাঝে মাঝে পাড়ার মেয়েদের নিয়ে সভা করা ভালো।
মূর্খ ও দুর্বৃত্ত মানুষের কথা ও ব্যবহারে হঠাৎ উগ্র হতে নেই, ধৈর্য সহ্যগুণ ছাড়া মানুষকে বড় করা যায় না। মানুষের জঘন্য দুর্বলতা দেখে ক্রুদ্ধ হলে চলবে না, মনে করতে হবে–মানুষের এটা স্বভাব।
কারো কোনো কথা বা কাজের কঠিন সমালোচনা করতে নেই; কার মধ্যে কি সত্য আছে তা বোঝার ক্ষমতা অনেক সময় আমাদের থাকে না।
অবুঝ ও অপদার্থ লোকের সঙ্গে ভালো কথা নিয়ে তর্ক করাই ভাল। তাতে নিজের সম্মান নষ্ট হয়। মূর্খ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেও কোনো ভালো কথা নিয়ে তর্ক করতে নেই; তাতে ভালো হয় না।
প্রতিবেশীর দুঃখ-বেদনায় সর্বদা সহানুভূতি দেখান চাই। মানুষের দুঃখ-বেদনা বোধ আবশ্যক।
যে কথা শুনে বা যে কাজে গম্ভীর হওয়া আবশ্যক তাতে হাসবে না, তাতে ছেলেমি পরিচয় দেওয়া হয়।
কারো-মন-সন্তোষের জন্য কখনও কোনো অন্যায় কথা বলবে না, সত্য কথা শুনে কেউ রাগে রাগুক।
পরিবারের, সাহিত্যের সঙ্গে যোগ থাকা চাই-ই-চাই। যে পরিবারের সাহিত্যের সঙ্গে সংস্রব থাকে, তাদের কোনো কালে পতন হয় না। ছেলে বুড়ো সকলেরই বই খবরের কাগজে মাসিক পত্রিকা পড়বার অভ্যাস থাকা উচিত।
বিদেশী ভাষা পরীক্ষায় অকৃতকার্য, জীবন মাটি হয়ে গেল, এরূপ যেন মনে করো না। পরীক্ষায় ফেল করেও মানুষ দেশমান্য হতে পারে। জীবনের উন্নতির পথ কোনো বাইরের বাধাতে রুদ্ধ হতে পারে না। সাহিত্যের ভিতর দিয়ে মানুষ সকল অবস্থায় জ্ঞান ও শক্তি অর্জন করতে পারে। একথা পরিবারের সকলেরই বিশ্বাস করা উচিত।
ঘরের মেঝেতে কখনও মাদুর পেতে রেখে দিতে নেই। উঠে যাবার সময় মাদুর গুছিয়ে বেড়ার ধারে হেলান দিয়ে রাখা নিয়ম।
বাড়িতে কোনো অতিথি এলে তাকে অতি সমাদরে গ্রহণ করবে। অব্যশ স্বামী অমত করলে সে অবস্থায় উপায় নেই। অতিথিকে পরের বাড়ি দেখিয়ে দেওয়া ভালো নয়।
স্বামী দূরে গেলে কখনও কোনো ভালো জিনিস তৈরি করতে নেই। তৈরি করলে যত্ন করে স্বামীর জন্যে তুলে রাখবে। স্বামী দূরে থাকলে ভালো জিনিস তৈরি করলে স্বামী অসন্তুষ্ট হন, তা বলছি নে।
ফাতেহা উপলক্ষে বহু মানুষ খাওয়ানোতে কোনো সার্থকতা নেই। ফাতেহার দ্বারা বেহেশতে যাওয়া সম্ভব, এ বিশ্বাস না করাই ভালো। বহু টাকা ফাতেহায় ব্যয় না করে কোনো সৎ কাজে সে টাকা ব্যয় করবে। মসজিদ প্রতিষ্ঠা করলেই খুব বেশি পুণ্য হবে-এ কথা মনে করা ভুল। লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, অনাথ আশ্রম খোলা, নিরাশ্রয় বিধবার জন্য সাহায্য করা উত্তম। না খেয়ে, উলঙ্গ থেকে, মূর্খ হয়ে কী করে লোকে মসজিদে যাবে?
অনেক সময় গ্রামে অংশ করে ছাগল জবেহ হয় এই উৎসবে যোগ দেবে না।
স্বামী কোনো কাজ করতে বললে বিবেক ও ধর্মবিরুদ্ধ না হলে তা করা উচিত। তাতে যদি নিজের কোনো ক্ষতি হয়, তা স্বীকার করে নিতে হবে।
দরিদ্র প্রতিবেশী কোনোও গৃহস্থালীর জিনিস চাইলে কখনও বলতে নেই, নাই।
সংসারের কাজ করলে পরিশ্রম করলে অসম্মান হয় এ যেন কখনও মনে না আসে। যারা অপদার্থ ও দুর্বল-হৃদয়, তারাই এই কথা মনে করে। যে মর্যাদায় দারিদ্র্য আনে, তা পরিত্যাজ্য।
জীবনে কখনও কোনো কাজে পরের উপর নির্ভর করে বসে থেকো না, তাতে লাভ হয় না। বন্ধুর পক্ষেও বন্ধুর গরজ বোঝা কঠিন।
সুযোগের আশায় ভবিষ্যৎতের পানে চেয়ে থাকতে নেই; সুযোগের আশায় বসে থাকলে হয়তো জীবনে আদৌ সুযোগ আসে না।
টাকা অপেক্ষা পয়সার উপর যার নজর বেশি, সে-ই জীবনে উন্নতি লাভ করে। বেশি লোভ করলে আদৌ কিছু হয় না।
ধীরে ধীরে কিন্তু অনবরত যে অগ্রসর হতে যায়, সে-ই অগ্রসর হতে পারে, অন্য লোকের পক্ষে আদৌ অগ্রসর হওয়া সম্ভব কিনা জানি নে।
ভালো আহারে টাকা অপব্যয় হয়, এ মনে করতে নেই।
দেশ-দশের কাজের জন্যই এ জীবন-সর্বদা এই কথা মনে করতে হবে। ভোগ বিলাসের জন্য কোনো কাজ নেই। জীবনকে একেবারে নীরস ও আনন্দহীন করা কিন্তু খারাপ।