আর একটা বিশেষ কথা–যেমন করে তোক টাকা কিছু জমাতে হবে। কি জানি, স্বামীর যদি কোনো বিপদ হয়, পয়সার জন্যে যেন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়। পয়সার জন্যে যেন নীচ ব্যক্তির কাছে অন্যায়ের সম্মুখে মাথা নত করতে না হয়। অন্যায় ও নীচতাকে মেনে নিয়ে এবাদতে লাভ কী?
বর্তমানকালে স্বামীকে পরের গোলামি না করে কোনো স্বাধীন কাজ করতে বলা উচিত; গোলামিতে স্বামী-স্ত্রীর দুইয়েরই অসম্মান।
অপরিচিত স্থানে যেয়ে কোনো হীন কাজ করে যদি স্বামী উন্নতির পথ করে নিতে পারে সেও ভালো। চরিত্র হারিয়ে অর্থ উপার্জন নিষেধ।
অপ্রয়োজনে বা সময়ের পূর্বে কোনো কথা বলতে নেই; তাতে বধূর বদনাম হয়।
স্বামীকে সেবা করতে যদি কষ্ট হয়, তাহলে স্বামীর সেবার জন্যে নিজে দূরে থেকে, একটা সুন্দরী কোমলাঙ্গী বালিকা দাসী নিযুক্ত করো, সে তোমার স্বামীর সেবা করবে। তাহলে দু’দিনেরই বুঝবে স্বামীর সেবায় কী আনন্দ।
জোর করে কারো কাছ থেকে দাওয়াত আদায় করতে নেই। ছেলেমেয়েকে বাদ দিয়ে স্বামীকে যদি কেউ দাওয়াত করে, তবে সে জন্য অসন্তুষ্ট হওয়া ভালো নয়। দাওয়াত না করলে ছেলেমেয়েকে ছোট বলে স্বামীর সঙ্গে পাঠানো উচিত নয়।
অর্থশালী লোক অপেক্ষা জ্ঞানী ও পণ্ডিত ও সাহিত্যিক, সুধীদের প্রতি বেশি শ্রদ্ধা পোষণ করা উচিত, নইলে আত্মার অবনতি হয়।
স্বামী খেতে চাইলে তৎক্ষণাৎ তাঁকে খেতে দেবে। যাই থাক না, যত্ন করে খাওয়াবে।
স্বামী কোনো কারণে অসন্তুষ্ট হলে অসন্তোষের কারণ জিজ্ঞাসা করবে এবং তা দূর করতে চেষ্টা করবে। আপন মনে চুপ করে থাকতে নেই।
পরের চিঠি কখনও পড়তে নেই। পিয়ন বাড়িতে চিঠি দিয়ে গেলে মালিকের কাছে পাঠিয়ে দিতে কখনও ভুলবে না। ছেলেদের কাছে ডেকে চিঠি ফেলে দিতে বললে অনেক সময় তারা বইয়ের ভিতরেই রেখে দেয়। এ যেন মনে থাকে।
পিয়ন চিঠি দিয়ে গেলে অনেক সময় মালিককে তা কখনও দেওয়া হয় না, এর মত নীচতা আর নেই।
মেয়েরা অনেক সময় দোষ করে অচেতন পদার্থের উপর ক্রোধ করেন। নিজে দোষ করে ‘দুরো’ ‘ছাই’ এই সমস্ত কথা বলো না।
স্ত্রীকে যেন দুইবার করে কোনো কথা না বলতে হয়। কতকগুলি মেয়ে আছেন তাঁরা কোনো কথা বললেই ‘কী বললেন’–বলে পুনরায় প্রত্যেক কথা শুনতে ইচ্ছা করেন। কথা প্রথমবারেই শুনতে চেষ্টা করা উচিত।
ধোয়া কাপড় বা অলঙ্কার পরে মনে যেন কোনো অহঙ্কার না আসে।
ঘরের মেঝেতে যেন কোনো প্রকার ময়লা না জমে। মুরগি যাতে ঘরে না ঢোকে সেজন্য রেলিং নিয়ে বা বেড়া দিয়ে ঘরের বারান্দা ঘিরে রাখবে। কতকগুলি মুরগি আছে, তারা আদৌ ঘরে ঢোকে না। ঘরের মধ্যে মুরগি পায়খানা করলে তখন তখন ছাই দিয়ে দূর করে ফেলে দেবে। একটা ছোট এক ইঞ্চি পরিমাণ খুরপো তৈরি করে নেওয়া ভালো। যে সমস্ত মুরগি অনবরত ঘরে ঢোকে, সেগুলি না পোষাই উচিত।
স্বামী রাগ করে কোনো কাজ করতে অগ্রসর হলে, মিষ্ট ভাষায় তাকে সে কাজ না। করতে অনুরোধ করবে। বোকার মতো চুপ করে থেকো না।
বাড়িতে একটা ছোট লাইব্রেরি থাকা নিতান্ত দরকার। বাজে অকেজো বইতে লাইব্রেরি ভর্তি করা ঠিক নয়। ভালো ভালো বই পড়লে পরিবারের বড়ই কল্যাণ হয়।
কেউ যদি কোনো বই নিয়ে যায়, খাতায় তার হিসাব রাখবে, নইলে বই হারিয়ে যাবেই। নিজে গুছিয়ে, খোঁজ করে না রাখলে হারাবেই, বই নিয়ে ফেরত না দেওয়া মানুষের স্বভাব। এজন্য রাগ করা বৃথা।
খবরের কাগজের গ্রাহক হতে কখনও ভুলো না। খবরের কাগজ না পড়া–জগতের খবর না রাখা, চরম অসভ্যতা।
একটা বিশেষ কথা মনে রেখো মানুষের পনের আনা ব্যাধি তাড়াতাড়ি খাবার দরুণ হয়। কখনও তাড়াতাড়ি খাওয়া উচিত নয়। পরিবারের সকলে গল্পে আলাপে একসঙ্গে একঘণ্টা বসে খাওয়া উচিত।
শীতকালের জন্য গরম কাপড়-চোপড়ের ব্যবস্থা হওয়া বড়ই দরকার। শীতে মানুষের শক্তি ও আয়ু ক্ষয় হয়। যেমন করেই হোক পরিবারের প্রত্যেকের জন্য যথেষ্ট কাপড়ের বন্দোবস্ত চাই। কাপড় যদি না জোটে, তা হলে তুলা দিয়ে গায়ের কাপড় ও জামা তৈরি করে নেওয়া উচিত। গায়ের কাপড়ের জন্যে অন্য খরচ না হয়, তাও ভালো।
অতিথি অভ্যাগতদের জন্য অন্দর বা বাইর বাড়িতে একই রকমের বরতনের ব্যবস্থা করবে। কারো জন্য চমৎকার থালা, তারই পার্শ্বে লোকের জন্য অপেক্ষাকৃত মন্দ বরতন দেওয়া অভদ্রতা। সকলের জন্য একই রকমের বিছানা চাই। কারো জন্যে গদি তোষক, কারো জন্যে মন্দ বিছানার বন্দোবস্ত করলে ভদ্রলোকের এবং ভদ্রমহিলাদের অপমান করা হয়। খেতে বসিয়ে কাউকে বিশেষভাবে আদর-যত্ন করবার দরকার নেই। খাবার জিনিসপত্র পেয়ালায় পূর্ব হইতে ঠিক করে রাখা উচিত। নইলে কাউকে আগে দিতে হয়, কাউকে বসিয়ে রাখতে হয়। দশজনকে তুলে একজনকে সম্মান জানানো প্রাচীন লোকদের রীতি।
যাদের দাওয়াত করবে তারা বাড়িতে এলে তাদের অভ্যর্থনার জন্য বিশেষ করে একজন লোক নিযুক্ত করবে। নইলে তাদের অসম্মান করা হয়। চীনা মাটির বাসনে ভদ্রলোক হওয়া যায়–এ ধারণা কিন্তু ঠিক নয়। বিদেশী জিনিসে ভদ্র না হয়ে গাছের পাতা এবং মাটির বাসনপত্র দিয়ে অভদ্র নাম অর্জন করা ভালো।
হাত মুখ ধোবার জন্যে অতিথিদের চিলমচী দেবার দরকার নেই। সকলের জন্যে বারান্দায় পানি রেখে দেওয়া উচিত। চিলমচীতে কেউ হাত ধুইয়ে দিলে বেশি সম্মান হয়-এ বিশ্বাস করা বিশেষ প্রশংসাজনক বলে মনে করি না।