কুলসুম : আবার বলিলেন,-ঘরে কতকগুলি ওষুধ রেখে দেওয়া উচিত। এক বাক্সে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ এনে ঘরে রেখে দেওয়াই সুবিধা।
হালিমা : বড় শহর হতে ওষুধ এনে ঘরে রাখা অনেকের পক্ষে অসুবিধা ও অসম্ভব। বুড়িরা তো অনেক ওষুধ জানেন।
কুলসুম : আমিও জানি। যদি মনে করে রাখতে পার তাহলে মোটামুটি ব্যাধির ওষুধের কথা বলছি। এসব ওষুধ আমাদের ঘরের কোণায় বা বেনেদের কাছে পাওয়া যায়। ওষুধের কথা বলবার আগে আমি আরও একটি দরকারি কথা বলে নিচ্ছি।
হালিমা : কী কথা?
কুলসুম : কারো গায়ে যদি আগুন ধরে যায়, তবে কখনও হতবুদ্ধি হবে না। কখনও আগুন নিয়ে তাকে লাফাতে বা দৌড়াতে দেবে না। কাপড়-জামা খুলতে চেষ্টা করা বৃথা। কাপড়ে আগুন ধরলে হাতে আগুন ঠেসে ধরে বিশেষ লাভ হয় না।
হালিমা : আগুনে পুড়ে মরা বড় সাংঘাতিক কথা।
কুলসুম হাই ফেলিয়া বলিলেন–খোদা যেন কাকেও এমন দুর্ঘটনার মধ্যে না ফেলেন। একটু নীরব থাকিয়া কুলসম আবার বলিলেন–ক্ষেপা কুকুর কামড়ালে কী করতে হয়। আগেই বলেছি। আরও একটু বলি,-কামড়ান মাত্র, লোহা লাল করে দংষ্ট্র স্থানে ঠেসে ধরবে। ফিউমিং নাইট্রিক এসিড লাগালেও বিশেষ উপকার হয়। যাই হোক, সেই যে শহরের হাসপাতালের কথা বলেছি, সেখানেই কারো বাধা না শুনে যাওয়া উচিত। সব টাকা গভর্নমেন্ট হতে পাওয়া যায়। সে টাকা দেশের লোকেরই, সুতরাং তার উপর সকলেরই দাবি আছে। ভালো কুকুরে কামড়ালে কিছু হয় না।
শরীরের কোনো জায়গা হতে রক্ত পড়তে থাকলে সেখানে ন্যাকড়া পোড়ার ছাই লাগবে; অনেকক্ষণ চেপে ধরাও মন্দ নয়। ঠাণ্ডা জলে আহত স্থান অনেকক্ষণ ডুবিয়ে রাখলেও রক্ত বন্ধ হয়!
কাউকে বোলতায় কামড়ালে মধু গুড় লাগাতে বলবে। পেয়াজের রস দেওয়া ভালো।
কেউ দেশলাইয়ের কাঠি বেশি চুষলে বমি করিয়ে ফেলানো উচিত। ছেলেপেলেদের ঘরে ম্যাচ বাক্স লুকিয়ে রাখাই নিয়ম।
চোখে কিছু পড়লে চোখ রগড়ান নিষেধ। তীক্ষ্ণ কোনো পদার্থ পড়লে ডিমের সাদা ভাগ চোখে দেওয়া মন্দ না। চোখে দু’টি চাল দিয়ে চোখ বুজে শুয়ে থাকা ভালো। চোখে চুন পড়লে লেবুর রসের পানি দেবে; শুধু পানি চোখে দেবে না।
কেউ হঠাৎ অচৈতন্য হলে ঘরের দরজা-জানালা খুলে চোখেমুখে শীতল পানি ঝাঁপটা দিতে হয়। হুঁশের জন্য বলপ্রয়োগ করবে না। স্বামীর বা কারো ভয়ানক বিষম লাগলে হাঁচতে বলবে।
জ্বর বা ব্যাধি শেষে অরুচি হলে পুরানো কচি ডালিমের রস, জীরের গুড়ো, চিনি, মধু ও ঘি একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে রাখলে অরুচি থাকে না।
বাড়ির কারো ভালো পরিপাক না হলে হরিতকি পুড়িয়ে সৈন্ধব লবণ, বিট লবণ ও বোয়ান সমভাগ করে বাটবে। তারপর আধ তোলা বা এক তোলা বড়ি করে খাবার পরে গরম পানির সঙ্গে খেতে বলবে। এতে বেশ পরিপাক হবে। এসব জিনিস হাটে বেনেদের কাছে পাওয়া যায়।
কারো যদি কোনো আঙুল ফুলে ওঠে ও জ্বালা করে তাহলে তাকে একটি কচি বেগুনের ভিতর লবণ ভরে তার মধ্যে ফোলা আঙ্গুল কয়েক ঘণ্টা ভরে দিয়ে রাখতে বলবে।
আমাশয় হলে পুরানো তেঁতুল চিনি ও মর্তমান কলা এক সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হয়, তাতে আমাশয় সেরে যায়।
হালিমা হঠাৎ বলে উঠলেন–ভাবি, উকুনের কোনো ওষুধ আছে? কুলসুম বলিলেন-চাঁপা ফুলের পাতায় রস মেখে শুকালে উকুন মরে যায়। ময়লা জমে সময় সময় কান বন্ধ হয়ে যায়।
কুলসুম আবার বলিলেন–ছেলেমেয়েরা অনেক সময় কান পাকায় ভোগে। রোজ সকাল কানে ২/৩ ফোঁটা কচি বাছুরের চোনা দিলে কান পাকা সারে। ক্রিমি হলে আনারসের পাতার রস একটু সামান্য চুন দিয়ে মিশিয়ে খেতে হয়।
কুলসুম হালিমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন–আর কিছু শুনবে নাকি?
হালিমা : বলুন।
কুলসুম : বহেড়া বেঁটে ঘি-এর সঙ্গে গরম করে খেলে গলার বেদনা কমে। বেশি নয় ২/৩টি বহেড়া হলেই হবে। বহেড়া বেনেদের থলের মধ্যে থাকে।
চোখ উঠলে ছটাকখানেক ঠাণ্ডা পানিতে একটুখানি লবণ দিয়ে সেই পানিতে ২/৩ বার চোখ ধুলে বিশেষ শান্তি হয়।
নারিকেলের শিকড় থেঁতো করে পানিতে সিদ্ধ করে তাই দিয়ে কুলি করলে দাঁতের গোড়া শক্ত হয়। অনেক প্রৌঢ় মহিলার দাঁত নড়ে।
কুলসুম বলিলেন–তোমার ভাই যখন পড়তেন তখন একবার ফোড়ার যন্ত্রণায় অস্থির হয়েছিলেন। আমি পুরানো তেঁতুল আর একটা জবা ফুল বেঁটে সেখানে দেওয়াতে ফোড়াটি ফেটে গেল। সাবান আর চিনি এক সঙ্গে চটকিয়ে ফোঁড়ার মুখে দিলেও ফোড়া পাকে। যুবতীদের মুখে ব্রণ হলে তাতে একটু তাজা চুন দিতে হয়, নইলে মুখ ব্যথা করে, হাত দেওয়া যায় না।
অনেক সময় নির্দোষ বাগি হয়। মাদার (শিমুল) গাছের আঠা আর একটু নুন তুলায় করে ফোলা স্থানে দিয়ে কোনো গরম কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখবে বাগি একদিনেই বসে যাবে।
কোনো কোনো স্থানে যদি মচকে যায় আর ব্যথা করে, তাহলে চুন আর হলদি বাটা এক
সঙ্গে করে গরম করবে-তারপর বেদনা স্থানে প্রলেপ দেবে। এতে বেশ উপকার হবে।
মেয়েদের মাঝে মাঝে ভারি মাথা ধরে–রাই বা দারুচিনি বেঁটে কানের পাটিতে দিতে হয়।
মুখে ঘা হলে ভেড়ার দুধ লাগাতে পারলে সেরে যায়। কিন্তু ভেড়া পাওয়া তো মুশকিল। বেলের পাতা চিবালে উপকার হয়।
পেট ব্যথার বেশি কোনো ওষুধ আমি জানি নে। হোমিওপ্যাথিক কলোসিস্থ, ম্যাগনেসিয়া, ফস, আর্সেনিক প্রভৃতি ওষুধে যাতনা হতে অব্যাহতি পাওয়া যায়।