ছোট শিশুর জন্য পাহলোয়ানদের মতো ৮/১০টি নেংটি তৈরি করে নিও। শিশু সন্তান কাকেও নেংটা থাকতে দেবে না। ছোট ছেলেমেয়েদের সর্বদা নেংটি পরতে বাধ্য করা উচিত। এতে ছেলেমেয়েদের নৈতিক শক্তি বাড়ে।
ছেলেমেয়েরা খাওয়া-দাওয়া নিয়ে যেন মোটেই কামড়া-কামড়ি না করে, এক ভাই বোন আর এক ভাই বোনকে না দিয়ে নিজে খেতে চেষ্টা করলে তাকে বলবে, নিজে না খেয়ে পরকে খাওয়াই ভালো। বার বার সন্তান যদি খাওয়ার ব্যাপারে নীচতার পরিচয় দেয়, অন্য ভাই বা বোনদের কথা না ভেবে নিজের পেটের কথা বা নিজের সুবিধার কথা। বেশি ভাবে, তাহলে তাকে প্রহার করবে। সন্তান যদি হাঁড়ি বা পেয়ালা হতে সব মাছ বা ডিম তুলে খেয়ে শেষ করতে চায়, তাহলে থাকে নিষেধ করবে। পরের কথা না ভেবে, নিজের বিষয়ে বেশি করে ভাবার অভ্যাস ভালো নয়, এতে বড় হলে সে নীচ ও স্বার্থপর হবে। অনেকে মনে করে ছেলেমেয়ে বড় হলে তার সকল দোষ সেরে যাবে, এটা ঠিক কথা নয়।
সন্তান সেয়ানা হলে তার চিন্তা ও ভাবকে অবহেলার চোখে দেখো না। তাকে সম্মান করবে। ছেলেমেয়ে যা হতে চায়, তাতেই তাকে উৎসাহ দেবে, নইলে সন্তানের জীবন মিথ্যা হয়ে যাবে। অনেক বাপ-মা সন্তানকে জোর করে নিজের ইচ্ছামতো পথে চালাতে চান, এর শেষ ফল খারাপ। সন্তান বড় হলে সে বুদ্ধিমান হয়, কিন্তু কোনো মাতা-পিতা সন্তানকে চিরকালই বোকা ও অপদার্থ মনে করেন। ছেলেমেয়ে বুদ্ধিমান হলে বাপ-মার সন্তুষ্ট হওয়া উচিত। চিরকাল সন্তান বোকা থাকবে এরূপ মনে করা অন্যায় এবং বাপ-মার পক্ষেই অগৌরবের বিষয়। সন্তানকে অনবরত বোকা বললে বাস্তবিক সে বোকা হয়ে যায়, তার মনুষ্যত্ব নষ্ট হয়।
বাপ-মায়ের উৎসাহ পেলে সন্তান সাগর লঙ্ঘন করতে পারে। বাপ-মার বুদ্ধির দোষে আবার বহু বড় বড় জীবন মাটি হয়ে যায়।
সন্তান যা করতে চায় না, যা হতে চায় না, তা করতে বা হওয়াতে বাধ্য করো না। সন্তানের কোনো সঙ্কল্প সাহায্য করবার আগে তার সঙ্কল্প সত্য ও দৃঢ় কিনা দেখতে হবে। সঙ্কল্প ও কাজ আলাদা কথা। ছেলেমেয়েরা অনেক সময় মিথ্যা উৎসাহ প্রকাশ করে থাকে।
সন্তান যদি চরিত্রবান হয়, সে যদি উৎকোচ গ্রহণ করতে ঘৃণা বোধ করে, সে যদি গোলামি করতে না চায়, তবে অসন্তুষ্ট হয়ো না।
সে কিন্তু দরিদ্র হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু ছোট ও অবহেলিত হয়ে থাকা ভালো লোকের ধর্ম নয়। বড় হওয়া তার স্বভাব। সে বড় হবেই।
সন্তান ঘুষখোর ও শয়তান নীচ-হৃদয় ও গোলাম না হলে যে বাপ-মা অসন্তুষ্ট হন, তারা বড় ছোট।
কুলসুম বলিলেন-বাপ মার দোষেই জগতের পনর আনা দোজখে যাবে। মানুষের নৈতিক অধঃপতন কারণ মাতাপিতার নীচ প্রবৃত্তি ও জঘন্য রুচি।
কতকগুলি লোক আছেন, তাঁরা বলে থাকেন–মুক্তির প্রধান কারণ পিতৃ-মাতৃ ভক্তি। এ কথা কিন্তু সর্বদা মিথ্যা। পবিত্র, জীবন, জ্ঞান এবং সূক্ষ্ম কর্তব্য-বোধই মুক্তির শ্রেষ্ঠতম দাবি। মাতা-পিতাকে ভক্তি করতে যেয়ে যদি নিজের মাথায় মূর্খতা পতন ও পাপের ডালি তুলে নিতে হয় তবে সেরূপ ভক্তিতে কী লাভ? তুমি চোর বদমাইশ অত্যাচারী ও মূর্খ–তোমার পিতৃ-মাতৃ ভক্তির মূল্য কি? তুমি যদি মানুষ হও তোমাকে শ্রেষ্ঠ পিতৃ-মাতৃ ভক্ত বলা হবে।
মাতা-পিতার দুর্বলতা সন্তানের যথাসম্ভব মেনে নেওয়া উচিত। সেটাও কম মনুষ্যত্ব নয়, উগ্রভাবে তাদের সঙ্গে তর্ক করা অসভ্যতা। শান্তভাবে ভালো উদ্দেশ্যে কথা বলা যেতে পারে।
মাতাপিতাকে অন্যায় রকমে কষ্ট দেওয়া পাপ এবং কাপুরুষতা।
সন্তান বয়স্ক হলে যদি সে কোনো অন্যায় করে ফেলে, তবে কোনো কথা বলো না। সে যদি কোনো ভুল করে ফেলে, তাকে উৎসাহ দিয়ে বলবে–কিছু হয় নাই–চল অগ্রসর হও। সন্তানের ভুল তার গতিরোধ করবে না। শিক্ষিত ছেলে যে পথে হাঁটতে চায়, তাকে সেই পথে ভীম বেগে চলতে বলবে। উৎসাহ দেবে, তাকে পাগল বলো না, তাতে নিজের ‘ এবং ছেলের দুয়েরই ক্ষতি হবে। সন্তান যা বলে, যা ভাবে তা সত্য কি না ভেবে দেখো! সন্তান যদি তোমার চেয়ে অপেক্ষাকৃত জ্ঞানের কথা বলে, তবে আনন্দ প্রকাশ করবে।
সেয়ানা সন্তানকে জ্ঞানদানে মাতাপিতা বন্ধু মনে করেন, সন্তানকে সম্মান করেন–তাতে তাঁদের অসম্মান হয় না। সন্তান তো নিজেরই প্রতিকৃতি।
কি বড় কি ছোট–কাউকে প্রথমে কঠিন ভাষা বলো না। শুধু সন্তান বলে নয়–প্রথম সম্বোধনেই কারো সঙ্গে কঠিন কথা ব্যবহার করতে নেই। বেশি কঠিন কথার ফল সম্পূর্ণ বিপরীত হয়। প্রথমে গম্ভীর হয়ে শুধু নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করবে–অপরাধী তাতেই শরমে মরে যাবে।-শেষ মুহূর্তে বা নিতান্ত অপারগ হলে-কঠিন কথা বলো বা একটা কঠিন ব্যবহার করো। যে নিতান্ত নরপিশাচ, কঠিন কথা না বলে তার সঙ্গে সম্বন্ধ ত্যাগ করা উচিত।
ছোট ছেলেমেয়ের সম্মুখে কখনও দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে কথা বলো না-শান্ত, ধীর ও গম্ভীরভাবে কথা বলা উচিত। মুহূর্তে মুহূর্তে সন্তানের সঙ্গে রাগ করলে, তাদের মন বড় না হয়ে ছোট হতে থাকে। বাপ-মার কাছ থেকে ছেলেমেয়েরা যে রূপ ব্যবহার পায় তারাও লোকের সঙ্গে তেমনি ব্যবহার করে।
সন্তানকে মাঝে মাঝে মেঝেতে খাড়া করে দিয়ে বক্তৃতা দিতে বলবে। মায়ের চেষ্টা ও ইচ্ছায় সন্তান কালে একজন ভালো বক্তা হতে পারে। বক্তা হওয়া জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ। যারা বক্তা নয়, তারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাপুরুষ হয়ে পড়ে। সত্য কথা বলবার সাহস সঞ্চয় করা প্রত্যেকের জন্য ফরজ।