ছেলেমেয়েরা আলস্য করে শীতকালে স্নান করে না। স্নান না করলে মনের অবনতি ঘটে।
ছেলেমেয়েকে গালি দিতে হলে সর্বদা সভ্য ও ভদ্র ভাষায় দেবে। ছেলে মেয়েরা অভদ্র। নীচু ভাষা বাপ-মার কাছ থেকেই শেখে।
শিশুদের জন্যে মায়ের পার্শ্বে আলাদা বিছানা ও লেপের ব্যবস্থা করবে, তাতে তারা মাকে কম বিরক্ত করবে।
রাত্রি ১০টা হইতে প্রাতঃকাল পর্যন্ত শিশুদের মোটেই কিছু খেতে না দিতে অভ্যাস করবে। ভয়ের কোনো কারণ নেই, বরং শরীর ভালো থাকে। খাওয়া-দাওয়া সম্বন্ধে তাদের জন্যে একটা নিয়ম থাকা চাই। নিয়ম করে নিলে পূর্বে যে ফিডিং বোতলের কথা বলেছি, সে সব জঞ্জালের দরকার হবে না। কাঁদলেই মুখে মাই দিতে হবে, তার কোনো মানে নেই।
ছোট শিশুকে ছয় মাস বয়স হতেই কাপড় পরাতে হবে, নইলে ভবিষ্যৎ জীবনে তার স্বাস্থ্যভঙ্গ হয়।
শিশুদের নাকে শ্লেষ্ম জমলে তখন তখন মুছিয়ে দেবে, সেই অবস্থায় তারা যেন কারো কাছে খাবার না চায়।
বড় ছেলের দেখাদেখি ছোট ছেলেমেয়েরা অনেক সময় পানিতে নেমে পড়ে। ছোট ছেলেমেয়েকে পানির কাছে না যেতে দেওয়া উচিত। পানির মধ্যে ছেলেদের উৎসাহ ক্রীড়াও না দেখতে দেওয়া উচিত।
ছোট ছেলেমেয়ে জামা-কাপড়ে পেশাব করলে তখন তা শুকাতে দেবে, ফেলে রাখবে না।
প্রতিবেশী বাড়িতে মুরগী বা ছাগল জবেহ হতে থাকলে ছেলেমেয়েরা সেখানে যেন আনন্দ না করে।
ছেলেমেয়েদের মধ্যে বড় ভাই বা বোনের, ছোটদের সামনে যাতে অসম্মান না হয়। সেদিকে নজর চাই। বড় ভাই অন্যায় করলে তার শাস্তি হবে না তা বলছি না; একটু আড়ালে হওয়া ভালো।
ছেলে-মানুষ বোঝে নাবড় হলে সেরে যাবে একথা ছেলেমেয়ের সামনে কখনও বলবে না।
শিশুর নাগালের বাইরে ঘরের জিনিসপত্র রাখবে; ছোট ছেলেমেয়ে জিনিস নষ্ট করে ফেলবে তার জন্য বচসা করা বৃথা। অতি ক্ষিপ্র হস্তে তাদের হাত থেকে জিনিস-পত্র কেড়ে নেবে। দেরি করলেই বিপদ!
স্ত্রীর অসাবধানতায় শিশুরা অনেক সময় অনেক ক্ষতি করে।
ছেলেমেয়েরা কারো অসাক্ষাতে বা কারো কথা বলতে হলে, যেন অসম্মানের সঙ্গে না বলে। ‘গিয়েছে’, ‘এসেছে’, ‘বলেছে’–এরূপ করে না বলে ‘গিয়েছেন ‘এসেছেন’ এরূপ করে বলতে বলবে।
ছোট শিশুকে স্কুলে ৫/৬ ঘণ্টা আবদ্ধ করে না রাখতে দিয়ে, যদি বাড়িতে রাখা যায় তাই ভালো। বাড়িতে কু-সঙ্গের ভয় থাকলে স্কুলেই পাঠাতে হবে। অবস্থায় কুলোলে সারাদিন ছেলেদের নিয়ে থাকবার জন্য বাড়িতে একজন শিক্ষক রেখে দেওয়া উচিত। শিশু সারাদিন পড়বে বা এক জায়গায় অধিকক্ষণ আবদ্ধ হয়ে থাকবে সে জন্যে নয়।
শিশুকে খেতে দেবার সময় কখনও জিজ্ঞাসা করো না–কী খেতে চাও মাছ খাবে, না ভাজি খাবে, না দুধ খাবে–এরূপ ধরনের কথা জিজ্ঞাসা করতে নেই। যা ইচ্ছা খেতে দেবে। সব জিনিস খেতে দিলে কি ক্ষতি? অমুক জিনিস খাবে, না অমুক জিনিস–বললে ছেলেমেয়ে খারাপ মেজাজের হয়ে ওঠে।
ছেলেপেলেকে অনবরত সমালোচনা করবে না। হরদম তাম্বি করলে, ভুল ধরলে, তার ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। তাকে স্বতন্ত্র রকমের জ্ঞান ও উপদেশ দেওয়া বেশি ভালো। তার ভিতরের অন্যায় ও খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা কর। নিজের সংশোধন সে নিজে করবে। এ নীতি সকলের সম্বন্ধেই সত্য।
ছেলেমেয়েকে বেশি ঔষধ খাওয়ান দোষ। তাতে তার স্বাস্থ্যভঙ্গ হতে পারে।
মেয়েলোকের প্রশ্রয় পেয়ে অনেক সময় ছেলেমেয়েরা তামাক খেতে শিখে একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। কোনো সন্তানকে সামনে তামাক খেতে দেখলে, উগ্র হয়ে ওঠা উচিত।
ছেলেমেয়েরা কারো নিন্দা করলে চোখ গরম করবে। তাদের কথা বিশ্বাস করা মূর্খতা।
“তুমি মিথ্যা বলেছ”-এরূপ কথা ছেলেমেয়েদের সামনে কখনও বলবে না। ছোট ছেলেমেয়ে হোক, বড় ছেলেমেয়ে হোক, তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর রাখবে। সন্তানের অসুখ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে কখনও কৃপণতা করো না। দরিদ্র পরিবার হলে স্বতন্ত্র কথা।
সন্তানের কাজের কখনও কঠিন সমালোচনা করো না, তাতে খারাপ ফল হয়। অন্যায় কাজ করলে প্রথমে শুধু অসন্তোষ প্রকাশ করাই নিয়ম।
সন্তানকে স্কুলে দিয়ে সর্বদা শিক্ষকের কাছ থেকে দৈনিক পড়া সম্বন্ধে সংবাদ গ্রহণ করতে ভুলবে না।
ছেলেমেয়ে যদি পড়াশুনা ভালো না চালাতে পারে; তাহলে তাকে নিচের সহজ বই পড়তে দেবে। ধৈর্য হারিয়ে শক্ত বই পড়তে দিয়ে কখনও তার জীবন মাটি করো না।
ছেলেমেয়ে অল্প নম্বর পেয়ে প্রমোশন পেলে তাদের নিচেই বই পড়তে দেবে। উপরে যেতে দিবে না।
যদি সন্তানের বুদ্ধি কম বলে মনে হয়, তাহলে এক বৎসর বা দু বৎসর তাকে নানা প্রকার শিশু পাঠ্য বই পড়তে দিও। তার ভিতরে বিবেক ও বিচক্ষণতার সৃষ্টি হবে। ফলে তার কঠিন বিষয় বোঝবার ক্ষমতা লাভ হবে।
বন্ধের সময় ছেলেপেলেকে বাড়ি আসবার জন্য চাকর থাকলে চাকর পাঠিয়ে দেবে বা কোনো লোক পাঠাবে।
অবশ্য নিতান্ত খারাপ না হলে, ছেলেকে কখনও পরের বাড়ি থেকে পড়তে দিও না। এতে ছেলের মন ছোট হয়ে যায়; ভবিষ্যৎ জীবনে তার কর্ম করবার বা সাহস করে সত্য কথা বলবার ক্ষমতা থাকে না। বিদেশে সন্তানের খাওয়া-দাওয়া, সুখ-সুবিধার দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা চাই।
সন্তানের জন্য বাড়িতে যদি শিক্ষক থাকেন, তবে তাকে অসম্মান করো না; নিরন্তর তার কাজকে সমালোচনা করে তার ব্যক্তিত্ব নষ্ট করো না। সন্তানের সামনে মাষ্টারকে অসম্মান করলে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া হবে না।