ছেলের বিয়ে হলে প্রস্তাব করবার আগেই ছেলেকে বিদেশে বউ নিয়ে যেতে বলবে। সংসারের অবস্থা খারাপ হলে বা অন্য কারণ থাকলে সেয়ানা ছেলে নিজে যা কর্তব্য মনে। করে, করবে।
সংসারের অবস্থা ভালো হলে দরিদ্র ছেলের উপর ট্যাক্স বসিও না। ছেলের কর্তব্য বুদ্ধির উপর নির্ভর করবে; সেয়ানা ছেলের সঙ্গে মারামারি ঝগড়া করলে ফল খারাপ হয়। অবস্থা ভালো হলে, ছেলেকে দুই-চার টাকার জন্য গোলামি করে, উৎকোচ নিয়ে নীচতার পরিচয় দেওয়ার চেয়ে বাড়ি থেকে স্বাধীনভাবে শাক-ভাত খাওয়া ভালো।
বিবাহিত ছেলে দূরদেশে থাকলে হামেসা বাড়ি আসবার জনে পীড়াপীড়ি করো না; কারণ বড় লোক না হলে ভ্রমণ খরচা সংগ্রহ করাও তার পক্ষে অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। সম্ভব হলে নিজে যেয়ে ছেলের কাছে থাকবে।
বাল্যকাল হতে ছেলেকে গৃহস্থালীর কাজ শিক্ষা দেওয়া উচিত। মাঝে মাঝে সংসারের চাপ তার ঘাড়ে দেওয়া ভালো। ভুল হবে বলে ভীত হতে নেই, সংসার কার্যে অভিজ্ঞতা থাকলে ভবিষ্যতে বিপন্ন হতে হয় না।
বিদেশে ছেলেকে শান্তিহীন পত্র দিও না। পত্রের ভাষা সর্বদা মিষ্টি ও মধুর হওয়া উচিত। মুখে যাই বল, পত্রে কোনো কু-কথা লিখো না। ছেলে যখন স্কুলে পড়তে থাকে তখন তাকে সাংসারিক বেদনা ও অপর অভিযোগের কথা কিছু বলো না, তাতে তার পড়ার ক্ষতি হবে।
শীতকালে ছোট ছেলেমেয়েরা আলস্যে গায়ে কাপড় দেয় না, ফলে পড়বার সময় ভালো পড়তে পারে না; অসুখ হয়। সন্ধ্যার সময় যাতে ছেলেমেয়েরা গায়ে জামা দেয়, তা দেখবে।
ছেলেমেয়েকে খুব বাল্যকালে মুখে মুখে দোয়া দরুদ শেখাতে হয়, নইলে জীবনে আর তা শেখা হবে না।
শিশু পড়া না বুঝলে বা না পড়লে উগ্র হয়ো না, বারে বারে বুঝিয়ে দিতে হবে। তোমার উগ্রমুখ দেখে ছেলেমেয়েও লোকের সঙ্গে কথা বলবার সময় উগ্র ও কঠিন হয়ে উঠবে, যা অত্যন্ত দোষের। তার বুদ্ধিও লোপ পাবে।
ছেলেমেয়েকে পড়বার সময় নিজে আগে আগেই পড়া বলে দিও না। তাকে জিজ্ঞাসা করবে, তার চিন্তাশক্তি জাগিয়ে তোলবার জন্য তাকে উত্তর দেবার সময় দেবে সেই পড়বে, নিজে বেশি কিছু বলো না, তাতে ছেলেমেয়ের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি অবশ হয়ে যায়।
অপরিণত বুদ্ধির ছেলেমেয়ে যদি তার শিক্ষক বা অভিভাবকের নিন্দা করে তা বিশ্বাস করো না।
অনেক মেয়েলোক সতীনের ছেলেমেয়েকে নানা রকমে ছোট হীন করতে চেষ্টা করেন। স্বামী যদি ভুল করে আবার বিয়ে করে, তবে তাকে ভালবেসে ঘরে তুলে নিও। ঝগড়া-বিবাদ করা উচিত নয়। নিজের দুঃখ নিজের মধ্যে পুষে রাখাই ভালো। কিছু প্রকাশ করো না। সতীনের ছেলে মেয়েকে ঘৃণা করো না, চিরদিন সমান যায় না। সতীনের দাবিকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করা অমানুষের কাজ।
বাড়ির ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় শিয়রে বাতি জ্বালিয়ে শুয়ে থাকে এতে অনেক সময় বিপদ হয়।
কোনো কোনো ছেলেমেয়ে ভালো জিনিস খেয়েছে বলে অন্য ছেলেমেয়েদের কাছে বড়াই করে। কাপড়ের, আহারের বংশের মর্যাদা ও ধনদৌলতে বড়াই করতে দেখলে ছেলেমেয়েকে গালি দেবে। এটা বড় দোষের কথা, পতনের পূর্ব সূচনা।
ছেলেমেয়ে কোনো অপরাধ করলে নিজে যাই বল না; কখনও পরের কাছে তার নিন্দা করো না। অপরের কাছে ছেলেমেয়ের চরিত্র সমালোচনা করলে নিজেরও সম্মান নষ্ট হয়। ছেলেমেয়েকেও বড় বেদনা দেওয়া হয়। সে ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহী ও হীন হয়ে যায়।
ছেলেমেয়েদের দুপুরবেলা বাড়ির উঠোনে বা সন্ধ্যাকালে ঘরের মধ্যে বা বিছানার উপর চীৎকার লাফালাফি ও মারামরি করতে দেবে না। সোরগোল ও লাফালাফি করবার জন্য স্থান না থাকলে, উঠোনেই করবে।
শিশুরা অনেক সময় পথের উপর এবং পুকুরের ভিতর পায়খানা করে শুচি হয়-এর জন্য সাবধান থাকবে।
ছেলেমেয়েরা অনেক সময় বাইরে জুতো-কাপড় ফেলে আসে সেদিকে মায়ের লক্ষ থাকা চাই। যখন ছেলেমেয়ে বাড়িতে ঢোকে তখনই তার দিকে তাকিয়ে দেখো, যে জিনিস নিয়ে বাইরে গিয়েছিল তা নিয়ে ফিরে এসেছে কিনা।
ছেলেমেয়েকে হিম, ঝড়, বৃষ্টি, বাতাস, সহ্য করাতে একটু শিক্ষা করানো ভাল। একেবারে ননীর পুতুল করে তোলা অন্যায়। একটু বাতাসে ছেলের ঠাণ্ডা না লাগে, একটু বৃষ্টিতে ছেলের নিউমোনিয়া যেন না হয়।
ছেলেমেয়েদের যদি হজম হয় তাহলে যত পার খেতে দেবে। বাল্যকালে শরীর যদি একবার ভালো হয়ে যায়, তাহলে সে শরীর আর কোনো কালে নষ্ট হবে না। শিশুদের মাংস, দুধ ও যথেষ্ট ডিম খেতে দেবে। এতে তাদের শরীরে শক্তি হবে। ছোট শিশুকে যথেষ্ট দুধ প্রভৃতি পুষ্টিকর খাদ্য খেতে না দিলে কালে শরীর ভেঙ্গে যায়, অনেক সময় স্বাস্থ্য হারিয়ে মরে যায়। সংসারের অবস্থা ভালো না হয় তাহলে ছেলেমেয়েদের খাবারের জন্য স্বামীকে কিছু বলবে না। অবস্থা ভালো হলে শুধু ছেলেমেয়ে বলে নয়, সকলেই ভালো খাওয়া উচিত! জীবন ধারণের জন্য ভালো টাটকা মাছ, মাংস, ঘি, দুধ ও ডিম প্রধান সহায়; শুধু মাছ ও শাক খেয়ে বেঁচে থাকা কঠিন; মাংসের পরে দুধ খেতে নেই। ছেলেমেয়ে সেয়ানা হলে তাদের স্বতন্ত্র থাকবার জায়গা করবে। তাদের প্রতি তাতে অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয় না।
ছেলেমেয়ের সামনে তৃতীয় ব্যক্তির চরিত্র সমালোচনা করবে না। ছেলে মেয়েরা মায়ের কাছ থেকেই পরনিন্দা ও পরিচর্যা শেখে। ছেলেমেয়েরা যার যার কাপড় জামা সেই যেন ব্যবহার করে। একজনের জামা কাপড় নিয়ে যেন অন্যে টানাটানি না করে।