সন্তানের উন্নতির কথা ভাববার আগে মা নিজের জ্ঞান, রুচি ও চরিত্র মার্জিত করতে চেষ্টা করবেন।
মা’র মানসিক শক্তি স্বাধীনতাবোধ ও ব্যক্তিত্ব সন্তানের চরিত্রে ফুটে ওঠে, সন্তানের মনকে স্বাধীনতাবোধসম্পন্ন করতে এবং তার ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলবার জন্যে মাকে মানসিক বল সংগ্রহ করতে হবে।
অনেক সময় খুব শিশু বয়সেই সন্তানকে পড়তে বাধ্য করা হয়। এ ভালো নয়। এতে শিশু পড়াশুনাকে ঘৃণা করতে শেখে।
অনেকক্ষণ বসিয়ে শিশুকে ‘ক’ ‘খ’ শিখাবে না। হাঁটবার সময়, কথা বলবার সময় অক্ষর চেনাবে।
একদিন হতে এক সপ্তাহ ধরে মাত্র একটি করে অক্ষর শেখাতে হয়, কিছু হচ্ছে না বলে ধৈর্যহারা হয়ো না। অক্ষর শেখা হলে, প্রতিদিন ১০/১৫ মিনিট করে বই নিয়ে বসতে অভ্যস্ত করবে। খুব বাল্যকালে ছেলেকে পড়াবার জন্যে স্কুলে পাঠাবে না। স্কুলে শিশুর পক্ষে ৩/৪ ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকা খুব কঠিন। এই নির্যাতনে শিশুর মন ভিতরে ভিতরে নিষ্ঠুর ও নিচ হতে থাকে। স্কুলে যদি পড়া অপেক্ষা খেলার ব্যবস্থা বেশি থাকে, তাহলে শিশুকে স্কুলে পাঠান যেতে পারে।
শিশুরা ছোটকালে বড় লোভী হয়। এ সম্বন্ধে জননীদের বিশেষ সাবধানতা আবশ্যক। লোকে কি বলবে ভেবে ভয় করো না। অন্যে যা ভাবে ভাবুক। শিশুর লোভকে একটা অপরাধ বলেই মনে করতে হবে। লোভের জন্য ছেলেমেয়েকে শাস্তি দিতে হবে।
কোনো ব্যক্তির মনস্তুষ্টির জন্য সন্তানকে মারতে নেই। এতে নিজেই অসম্মান হয়; ছেলেমেয়ে ছোট হলেও তাদের সম্মানে বাপের সম্মান বাড়ে, বিনা কারণে ছেলেপেলের অসম্মান করবে না।
বাল্যকাল হতেই ভাইবোনদের মধ্যে ভাই-এ ভাই-এ, বোন-এ বোন-এ যাতে সদ্ভাব স্থাপিত হয়, সেদিকে যেন লক্ষ থাকে। ঝগড়া করলে এক ভাইকে অন্য ভাই-এর ও এক বোনকে অন্য বোন-এর কপাল চুম্বন করতে বলবে।
এই প্রসঙ্গে একটা অন্য কথা মনে পড়ে গেল–অন্তঃসত্তা হলে স্ত্রীরা সাধারণত অযত্নের ভয়ে মায়ের বাড়ি চলে যান। এটা রমণী-জীবনের একটা মস্ত ভুল। বিয়ের পর স্ত্রীকে ছেড়ে থাকা স্বামীর পক্ষে অন্যায়, এ কথা আমাদের দেশের মানুষ বোঝে না। স্ত্রীর কর্তব্য সর্বদা স্বামীর কাছে থাকা, বিশেষ করে ছেলেপেলে হবার সময়। শিশু অবস্থাতেই সন্তান যদি বাপের কোলে পিঠে মানুষ হবার সুবিধে না পায় তাহলে সে সন্তানের উপর বাপের মায়া হয় না-এ কথা অতি সত্য। এই প্রসঙ্গে আরও একটি কথা বলে নিই। মেয়ের বিয়ের পর মেয়ের বাপ মেয়েকে স্বামীর বাড়ি হতে মাঝে মাঝে নিয়ে যান। মাঝে মাঝে ২/৩ দিনের জন্যে বাপের বাড়ি যাওয়া মন্দ না, বাপ যে ছেলেপেলে না হওয়া পর্যন্ত ঘন ঘন মেয়ে নিয়ে যান, তার কারণ হচ্ছে জামাই-এর প্রতি শ্রদ্ধা ও অনুরাগ বাড়ান।
স্বামীকে ছেড়ে বাপের বাড়িতে বসে থাকা মেয়েদের একটা ভয়ানক বোকামি। যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া স্ত্রীর সর্বদা স্বামীর সঙ্গে থাকাই আবশ্যক। আজকাল যে দিন পড়েছে তাতে পুরুষের মনকে পবিত্র রাখার জন্যে নারীকে সর্বদা স্বামীর পাশে থাকতে হবে। পরদার বাড়াবাড়িতে স্বামীর সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণ মুসলমান নারীর পক্ষে কিছু অসুবিধা, কিন্তু বর্তমান এই যন্ত্র যুগে বেঁচে থাকতে হলে এই পরদাটাকে একটুখানি ছিঁড়ে ফেলতে হবে। পিঞ্জরাবদ্ধ পাখি হয়ে শূন্যে বাস করা সম্ভব, মানব সমাজে নয়। নিজে সতী হয়ে পুরুষকে কাজে ও চিন্তায় সকল সময় নির্মল করে রাখাও স্ত্রীর জীবনে একটা বড় কাজ। পুরুষের চরিত্রবলের খুব অভাব; অধিকাংশ পুরুষের কাজে না হোক চিন্তায় পাপ ও দুর্বলতা জড়িয়ে আছে। এটা হয়তো তার স্বভাব, সুতরাং এর জন্যে তাকে দোষ দেওয়া চলে না। প্রাণহীন মিঠাই এর দলা অপেক্ষা মরে যাওয়াই ভালো। কাকে ছোঁ মেরে নিয়ে পালাবে। নারী নিজের মর্যাদা ও চরিত্রের মূল্য নিজেই বুঝুক, সঙ্গীন তলোয়ারধারী পাহারাওয়ালাদের পেছনে কোষাগারে প্রাণহীন রূপার পিঠা হয়ে থাকলে চলবে না।
যা বলেছিলাম-ছেলেমেয়েরা যাতে লোকের সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলে, সেদিকে দৃষ্টি রাখা চাই। যদি সন্তানকে ভদ্রতা শিখান তাহলেই সে ভদ্র হয়ে ওঠে। শিশুকালে ছেলেমেয়ের সঙ্গে ৪/৫ বৎসর পর্যন্ত খুব সম্ভ্রম করে কথা বলা ভাল। মা বলে ডাকলে ‘জি’ বলা উচিত। এতে ছেলেমেয়েরা শিশু বয়সেই ভদ্র হয়ে ওঠে। বাপ-মা ছেলের সঙ্গে যেমনভাবে কথা বলেন, যেমন করে ব্যবহার করেন সন্তানেরাও তেমনি করে কথা বলতে ও লোকের সঙ্গে ব্যবহার করতে শেখে।
পোশাক-পরিচ্ছেদ সম্বন্ধে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন স্বজাতীয় বৈশিষ্ট্যতা হারিয়ে না ফেলে। ইংরেজ মহিলারা যে পোশাক পরেন এটা কিন্তু মুসলমানদের পোশাক। তবে বর্তমানে হাঁটুর উপরে মেয়েদের পোশাক সেটা কিন্তু নয়। মেয়েকে মেমের পোশাক দিতে বলছি, এ মনে করো না। নারীদের টুপি পরাও ইসলাম সভ্যতা। ছেলের মতো মেয়ের পোশাক কোনো প্রকারেই হওয়া উচিত নয়।
হিন্দু ছেলেমেয়েরা বাল্যকাল হইতেই মানুষকে ঘৃণা করতে শেখে। সঙ্গদোষে নিজের ছেলেমেয়ের, যেন তেমনি রুচি বিকৃতি না ঘটে। মানুষকে ঘৃণা করা পাপ ও অন্যায়, ছেলেমেয়েকে এটা বুঝিয়ে দিতে হবে। এতে জাতির অকল্যাণ হয়। পৃথিবীর কোনো মানুষের স্পর্শে মুসলমান বা অন্য কোনো জাতির পানি বা ভাত নষ্ট হয় না, এ কথাও তাকে বলতে হবে। পৃথিবীতে একমাত্র হিন্দুরাই এই রোগে ভুগছে।