হালিমা : বিয়ের জন্য কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া কেমন?
কুলসুম : বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত; এতে কারো আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগে না। বিয়ের প্রস্তাব ব্যাপারে অনেক সময় অনেক অপমান সহ্য করতে হয়-মেয়ের মাতা বা পিতার পক্ষে যা সহ্য করা বড় কষ্টকর।
মেয়ে বা ছেলে নিজেরাই মেয়ে ঘটক দিয়ে নিজের নিজের ভাবি স্বামী বা পত্নীর কাছে বিয়ের প্রস্তাব করে পাঠাতে পারেন। পরস্পরে কথা ঠিক হলে, বাপ-মায়ের সম্মতি নিতে হবে। বিশেষ বাধা না থাকলে তাদের সম্মতি দেওয়া উচিত। এতে কোনো পক্ষেরই অসম্মান হয় না। স্বামী বা পত্নী ঠিক করে নেওয়া পাপ বা লজ্জাজনক কাজ নয়।
১৬-২০. স্ত্রীকে স্বামীর মত নিয়েই চলতে হবে
ষোড়শ পরিচ্ছেদ
কুলসুম : স্ত্রীকে স্বামীর মত নিয়েই চলতে হবে। নইলে স্বামীর শ্রদ্ধা হারাতে হয়, ফলে স্বামীর সঙ্গে মিল হয় না।
হালিমা : যা কোনো দিন করি নি, হঠাৎ স্বামীর ইচ্ছায় তা কি করা সম্ভব?
কুলসুম : বাপের বাড়ির সকল সংস্কার, সকল অভ্যাস ভুলে যেতে হবে; নইলে রমণী জীবনে সমূহ বিপদ উপস্থিত হয়। দুটি লোক দু রকমের হলে তাদের কি করে মিল হবে?
হালিমা : স্বামী স্ত্রীর ইচ্ছায় চললেই পারেন।
কুলসুম : মেয়েরা সাধারণত পুরুষ অপেক্ষা কম বুদ্ধিমতী, তাদের রুচি স্বামী অপেক্ষা কম মার্জিত। মানসিক শক্তি ও দৃষ্টিতে মেয়েরা পুরুষ অপেক্ষা হীন, সুতরাং নারীকে স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী কাজ করা উচিত। স্ত্রী যদি স্বামী অপেক্ষা অধিক শিক্ষিত হন তা হলে স্বামী স্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে পারেন, তাতে কোনো দোষ নেই। স্বামী সম্ভবত স্ত্রীর মন যুগিয়ে কাজ। করবেন; স্ত্রী ও সর্বদা স্বামীর ইচ্ছা মেনে চলবেন। বন্ধুজনের মধ্যে এইরূপ কার্যনীতিই প্রশস্ত। মনে কর স্বামী ইচ্ছা করেন স্ত্রী বিশেষ কোন রকমের কাপড় পরেন; স্ত্রী সেরূপ কাপড় পছন্দ করলেও তাই পরতে হবে, কোনো স্বামী ছাড়া অন্য কারো জন্য স্ত্রীর রূপ নয়।
হালিমা : সেকালের মেয়েদের সঙ্গে বর্তমান কালের মেয়েদের চালচলন অনেক তফাত।
কুলসুম : অনেক তফাৎ ঠিকই। তবে অনেকে আছেন, তাঁরা মা-দাদীর উপদেশ অনুযায়ী বাপের বাড়ি চালচলনের দস্তুর অনুসারে সেকালেন বুড়ী সাজতে যান; স্বামীর কথা উপেক্ষা করেন, মা যা শিখিয়েছেন সেই রকমই চলেন। আজকালকার ছেলেরা ইচ্ছা করেন, মেয়েরা কিছু চটপটে হয়–বেশ বই পড়তে পরে, উচ্চাসনে বসতে লজ্জা করে না, গুছিয়ে কথা বলতে জানে, একটা ফুটফুটে পরিষ্কৃত পরিচ্ছন্ন বাবু পরীর মত বধূ সামনে ঘুরে বেড়ায়, লজ্জাবতী ধানের বস্তার মতো এক পাশে ঘোমটা টেনে পড়ে না থাকে, কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতে জানে, পৃথিবীর খবর রাখে, হাতের লেখাটা খুব ভালো হয়। কিছুকাল আগে, যা তা একটু লিখতে পারলেই স্বামী এবং পাড়া প্রতিবেশীর কাছে মেয়েরা প্রশংসা লাভ করতো, আজকাল আর তা হবার যো নেই। কোনো কোনো হতভাগিনী বলে থাকে, মেয়ে যখন চাকুরীর জন্যই লেখাপড়া, পরের পদলেহন করার জন্যেই বিশ্বে লক্ষ লক্ষ জ্ঞানকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা এত স্কুল, কলেজ।
হালিমা : তা হলে স্বামী যেরূপ ইচ্ছা করেন সেই মতোই চলতে হবে।
কুলসুম : নিশ্চয়ই, তা না করলে স্বামীর সঙ্গে মিল হবে না। ভিতরে ভিতরে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে। লেখাপড়া না জানলে নিজের মধ্যে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকলে, অনেক সময় স্বামীর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার প্রবৃত্তি মেয়েদের হয় না। স্বামীর ইচ্ছামতো চলতে, পাড়া-প্রতিবেশী বা অন্য লোকের কাছে লজ্জাবোধ হয়। এতে লোককে ভয় করবার বা লজ্জা করবার কোনো দরকার নেই। মেয়েরা যদি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমতী হন তা হলে তাঁরা স্বামীর মত অনুসারে কাজ করতে লজ্জা করেন না।
হালিমা : প্রাতঃকালে উঠেই স্বামীর সঙ্গে কিরূপ ব্যবহার করতে হবে?
কুলসুম : স্বামী যদি সে সময় ঘুমিয়ে থাকেন, তা হলে ধীরে ধীরে পদে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। নামাজ পড়বে, তৎপর কোরান শরীফ আস্তে পড়বে। কোনো কোনো স্বামী অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকেন। যদি স্বামী বেনামাজী হন, তা হলে তাঁর সঙ্গে ঝগড়া না করে নামাজ পড়ার জন্য তাকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করবে, উপদেশ দেবে। স্ত্রীর ব্যবহার ও পবিত্র জীবন দেখে স্বামীও পবিত্র হয়ে উঠবেন। সুপ্ত স্বামীর কাছে জিনিস পত্রের খুটখাট শব্দ করা উচিত নয়। স্বামী জাগলে হাসিমুখে তার কুশল জিজ্ঞাসা করবে।
শীতকালে বাড়ির দাসীকে প্রাতঃকালে পানি গরম করে রাখতে বলবে; দাসী না থাকলে নিজেকেই এই কাজ করতে হবে। রাত্রির রান্না শেষে খানিক পানি চুলোর উপর দিয়ে রাখলেও পানি গরম থাকে।
হালিমা : কতকগুলি স্বামী স্বভাবত খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকেন, কিছুতেই তাঁরা সন্তুষ্ট হন না।
কুলসুম : অনেক লোক খিটখিটে হয়ে থাকে; এর কোনো প্রতিকার নেই। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া না করে স্ত্রী নিজের কর্তব্য করে যাবেন। বুদ্ধি, ভালো কথা, সৎস্বভাবে ও মিষ্ট ব্যবহারের জয় হবেই হবে। স্বামী কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলেন, মনে রাগ থাকলেও চট করে কথার উত্তর দিতে হবে। অভিমান করে ঘাড় ও মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে, দরাজায় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে না। স্বামীর ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে হাঁড়ি, বাসন মাটির উপর শব্দের সঙ্গে রাখতে নেই।