খাওয়াই ভালো। সকাল বেলায় ছেলেদের এই ভাত খাবার দৌরাত্মে কাজের ঝঞ্ঝাট বড় বেড়ে ওঠে। মুড়ি, বিস্কুট, পাউরুটি, চিনি নাস্তার জন্য ব্যবহার করলে বেশ হিসাব করে খরচ করতে হবে। চিনি ছেলেপেলেরা একদিনেই দু-সের শেষ করতে পারে। অথচ হিসাব করে খরচ করলে আড়াই সের চিনিতে একমাস চলে। মুড়ি, বিস্কুট, একজায়গায় বসে একা অনেক খেয়ে ফেলা যায়–নিয়ম মতো ব্যবহার করলে দুজনের তা পনর দিন চলে। খাওয়া দাওয়ার একটা নিয়ম থাকা চাই-রাতদিন মুখে হাত বেঁধেই আছে–এ ভালো নয়। সবাইকে নিয়ম ও পরিমাণ মতো খাওয়াবে। নাস্তার জিনিসপাতি দেওয়ালের আলমারির ভিতর বন্ধ করে রাখতে হয়। কোনো কোনো মা নীচতা ভেবে ছেলেদের খাওয়া-দাওয়ার হিসেব রাখেন না-এতে অনেকখানি অসুবিধা হয়। ছেলেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সংসারের ব্যয়ের উপর কড়া নজর রাখতে হবে। সপ্তাহে বা মাসে একদিন কোনো ভালো জিনিস যত খুশি পেট ভরে খাওয়া যায়-রোজ এমন করলে ফকির হতে হয়।
হালিমা : নাস্তায় ঘি, ডিম ও রুটি ব্যবহার কর কেমন?
কুলসুম : এগুলি গুরুপাক, তা ছাড়া সকল পরিবারের সংগ্রহ করাও কঠিন। যত ভালো খাওয়া যায় তত ভালো–আবার আয় বুঝে ব্যয় না করলে শেষকালে মন্দ খাবারও জোটে না। রুটি তৈরী করে নেওয়া যায় সুতরাং বিশেষ কোনো অসুবিধা হয় না। প্রত্যহ ডবল ডবল চুলো ধরান অসুবিধা, একটা স্টোভ কিনলে কাজ চলতে পারে। স্টোভেও যে বিরক্তি নাই তা বলা যায় না–যে নাস্তার সঙ্গে চুলো ধরানোর সম্বন্ধ নাই সেইরূপ নাস্তা ব্যবহার করাই ভালো। ছেলেদের জন্য কতকগুলি রুটি তৈরি করে রাখলে মন্দ হয় না। বারে বারে ভাতের জন্য হাঁড়িতে হাত দেওয়া বিরক্তি কর। যখন ইচ্ছে তখনই তারা নিজ হাতে রুটি নিয়ে খেতে পারে। এতে এটো কম হয়, ছেলের ক্ষুধা হলেই খাবে।
হালিমা : ভাত কোন সময় খাওয়া উচিত? কুলসুম : যার যার সময় মতো, তবে তা প্রত্যহ এক সময় হওয়া উচিত। হালিমা : খাবার আয়োজন কেমন হবে?
কুলসুম : খাবার আয়োজন কেমন হবে, তা ঠিক করে বলা কঠিন। সাধ্যমতো খাওয়া ভালো করতে পারলে লাভ ছাড়া লোকসান নেই। কারো কারো ধারণা যা তা খেয়ে দিন। গুজরিয়ে দিতে পারলেই হল। আয় বেশি না হলে যা তা খেতে পারা যায়। হাতে যদি টাকা। থাকে তবে খাবার বেলা কৃপণতা করতে নেই। বাবুগিরি করে টাকা উড়িয়ে দিয়ে খাবার বেলা মাটি খাওয়া ঠিক নয়। সংসারের জন্য সব খরচ কমিয়ে খাবার ব্যবস্থা ভালো করতে পারলে তাই করবে। আয় না থাকলে পক্ষান্তরে খাওয়া কমাতে হবে সেইটাই মনুষ্যত্ব। দেনা শোধ না দিয়ে ভালো খাবারের ব্যবস্থা অভদ্রতা। বধূ বাপের বাড়িতে খুব খরচ করে এসেছেন বলেই স্বামীর বাড়িতে সেইভাবে চলতে হবে, এমন কোনো কথা হতে পারে না। মেয়েরা স্বামীর বাড়িকেই নিজের বাড়ি মনে করবেন। স্বামীর যেমন অবস্থা, তেমনি করে চলতে হবে। মাসে কতখানি তেল খরচ করতে হবে, তা স্বামীকে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া। উচিত। এতে অপমান বোধ করতে নেই। নিজের ইচ্ছামত রান্নার ব্যবস্থা করবে না। মাছ,মাংস,তরকারি একেবারে শেষ করতে হবে না, কয়বার চালাতে হবে, তা নরম ভাষায় ভদ্রতার সঙ্গে স্বামীকে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া উচিত। অবজ্ঞাপূর্ণ ভাষায় এ সব জিজ্ঞাসা করা ভালো না। কোনো জিনিস রান্না হলে বা বাইর হতে কোনো জিনিস এলে একবারেই সে-সব শেষ না করে দিতে চেষ্টা করবে। গৃহিণী সব নিজে খেয়ে ফেলেন এ বলছি না। ফল কথা, স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা করবে।
হালিমা : জিনিসপত্র কীভাবে খরচ করতে হবে তা জিজ্ঞাসা করায় মেয়ে মানুষের। বিরক্তি জন্মে না কি?
কুলসুম : অনেকে বিরক্ত হন, যেমন ইচ্ছা খরচ করে যান, তাতে স্বামী জেলে যাক, স্ত্রীর তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। স্বামীর প্রতি সহানুভূতি রাখা নারীর কর্তব্য। অনেক রমণী স্বামীর খরচপত্রের প্রতি বিদ্রূপবাণ বর্ষণ করেন–এমন করতে নাই। এতে স্বামী বড় আঘাত পান।
হালিমা : গৃহিণীরা ইচ্ছামত রান্না করেন নাকি?
কুলসুম : অনেক মহিলা স্বামীর কোনো জিনিস খেতে যদি বিরক্তি হয় তবে গৃহিণীর নিজের কাছে যা ভালো লাগে তিনি তাই রান্না করেন। মন যাদের বড় তারা নিজের সুখের চেয়ে পরের সুখের দিকে দৃষ্টি রাখেন। পরকে খাইয়ে যেমন সুখ লাগে, নিজে খেয়ে কি তেমন সুখ লাগে?
হালিমা : তা তো ঠিক। আচ্ছা, পরিবারের মধ্যে তৈরি জিনিস কাকে কতটুকু দেওয়া হবে?
কুলসুম : এক পরিবারে বহু লোক থাকলে তৈরি জিনিস দেওয়া নিয়ে একটু বিপন্ন হতে হয়। বহুলোক একসঙ্গে না থাকাই আমার কাছে ভালো লাগে। একসঙ্গে থাকলে পরিবারের অনেকে মনে করে তাদের উপর গৃহিণীর অত্যাচার হচ্ছে। সুতরাং ভিন্ন ভিন্ন। হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবার সৃষ্টি করাই ভালো, এতে মেয়েদের কাজ কমে, পরিবারে সকলে আত্মনির্ভরশীল হয়ে গেলে কুড়ের মতো বসে না থেকে সকলে নতুন নতুন উপায়ের পন্থা অবলম্বন করেন।
হালিমা : কাজকর্মের সুবিধা হয়, অনেক ঝগড়া অশান্তির হাত থেকেও অব্যাহতি পাওয়া যায়। কিন্তু যেন কেমন লাগে! ভাগ ভাগ হয়ে যাওয়া–এর ভেতর যেমন। অনেকখানি নিষ্ঠুরতা আছে। যার যার মতো সেই সেই-কেউ কারো দিকে ফিরে তাকাবে না–কেমন কথা!