হলিমা : সে তো নিশ্চয়ই।
কুলসুম : ও পাড়ার মধুর মা তার বড় তিনটি ছেলের সঙ্গে যোগ হয়ে বুড়ো স্বামীকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
হালিমা : মাগী তো বড় শয়তানী।
কুলসুম : বেচারা স্বামীর গায়ে এখন জোর নেই কিনা! বিবাহিত জীবনের পিপাসা এখন কেটে গিয়েছে কিনা!
হালিমা : তাড়িয়ে দিয়েছে না রাগ করে বের হয়ে চলে গিয়েছে?
কুলসুম : নিজে যদি রাগ করে বের হয়ে চলে গিয়েই থাকে, তাই বলে কি তাকে ফিরিয়ে আনা যায় না? স্বামীকে বাড়ির বাইরে রেখে কি করে এরা ভাত খায়, আমোদ আহ্লাদ করে। এটা তাড়িয়ে দেওয়া ছাড়া আর কি? স্বামী তো নয় যেন বাড়ির ভৃত্য। দাস দাসী, ছেলে-পেলে, টাকাকড়ি, দালান-সম্পত্তি পেয়ে অনেক নারীর মনে অহঙ্কার আসে।
হালিমা : একেবারে দোজখে যাবে।
কুলসুম : ওমা, এই সমস্ত স্ত্রীলোকের দোজখ বলে ভয় আছে, তুমি মনে কর? ক’টি মেয়ে মানুষের দোজখের ভয় আছে, শতকরা একজনারও না। যারা নামাজ পড়ে, তারাও দেখাদেখি পড়ে, খোদার মমতায় নয়–দোজখের ভয়ে নয়। মন যাদের অনুন্নত তারা। আবার কি ছাই নামাজ পড়বে? অন্ধ বিশ্বাস, মূর্খতা ও কুসংস্কারের ফলে রমণী যা তা করে, তাতে তাদের একটুও লজ্জা হয় না। দোজখের আগুনের কথা, পরকালের কষ্টের কথাগুলিকে অনেক রমণী রসিকতা করে ভীত না হয়ে হাসতে থাকে।
হালিমা : গর্বিত স্ত্রী যে স্বামীর সঙ্গে এমন ব্যবহার করে–আচ্ছা, স্বামী যদি রেগে একটা ভয়ানক কিছু করে বসে?
কুলসুম : সাত ছেলের মাকে কেউ তালাক দেয় না। হালিমা : দিলে কী হয়?
কুলসুম : দিলে দুঃখের একশেষ। কঁদতে জীবন যায়-পথের ভিখারিণী হতে হয় ছেলেরা বাপের বাড়ি থুয়ে মার সঙ্গে যায় না। যতই যা করপেটের চিন্তায় সব উৎসাহ মায়া নিবে যায়। তালাক দিলে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে স্ত্রীলোকের যেতেই হবে–না যেযে। উপায় নেই। তবে এরূপ ভয়ানক কাজ কোনো স্বামী করে না। মূর্খ স্ত্রীলোক না বুঝে স্বামীর সঙ্গে অনেক সময় দুর্ব্যবহার করে। তাই বলে তাকে হত্যা করা মানুষের কাজ নয়। সহ্য করাই পৌরুষ, প্রতিশোধ নেওয়া কাপুরুষতা।
হালিমা : তা হলে পুরুষকে অত্যাচারী রমণীদের অত্যাচার সয়ে থাকতে হবে। এতে যে জীবনের অনেক শক্তি কমে যায়। ঘরের ভিতর অশান্তি ও বেদনা ভোগ করে, কোনো পুরুষ কোনো কর্ম করতে পারে না।
কুলসুম : স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া-ফ্যাসাদ না করে বা তাকে দূর করে না দিয়ে সতর্ক করে দেওয়া উচিত। তাদের কথার উত্তর না দেয়াটাই কর্তব্য। অনেক সময় পুরুষেরা স্ত্রীর অত্যাচারে নূতন স্ত্রী গ্রহণ করেন এবং স্বতন্ত্র সংসার প্রতিষ্ঠা করেন। অভাগিনীদের এই দুরবস্থার কারণ তাদের নিজের দোষ।
হালিমা : স্বামী যখন দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করেন,তখন আগেকার স্ত্রীর মনে কি খুব কষ্ট হয়?
কুলসুম : খুব কষ্ট হয়–কিন্তু তখন আর উপায় থাকে না–চিরদিনের জন্যে সে স্বামী হারা হয়।
হলিমা : সখের বসে কোনো স্বামী নূতন স্ত্রী গ্রহণ করে নাকি?
কুলসুম : তোমার মতো সাধ্বী পতিগতপ্রাণ, সদালাপী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর স্ত্রী যার ঘর উজ্জ্বল করবে, সে কোনো দুঃখে নতুন স্ত্রী গ্রহণ করবে? স্ত্রীলোকের রূপ অপেক্ষা কথা বলার শক্তি স্বামীকে গভীরভাবে মুগ্ধ করে। আনারী অসভ্য স্বামীর কাছে আদর না। থাকতে পারে, কিন্তু শিক্ষিত লোকের কাছে আছে।
হলিমা : স্বামীকে কথার দ্বারা মুগ্ধ করা কি কম কথা? মেয়ে মানুষের এমন শক্তি কোথায়??
কুলসুম : নারীর মুখের একটা জ্ঞানপূর্ণ মধুর কথা, স্বামী দশটি বলেই গ্রহণ করেন। সুতরাং ভয়ের কোনো কারণ নেই।
হালিমা : নারীর লেখাপড়া শেখা নিতান্ত আবশ্যক।
কুলসুম : পুরুষ জাতির মঙ্গলের জন্য-বাঁচিবার জন্য-পুরুষকে পাপ ব্যভিচার থেকে রক্ষা করিবার জন্য বিদ্যালাভ করা আবশ্যক। বিদ্যা ব্যতীত নারী যে পশু অপেক্ষা অধম।
১১-১৫. স্বামীর বাড়িতে বিশেষ সতর্কতা
একাদশ পরিচ্ছেদ
কুলসুম : প্রিয় বন্ধু, স্বামীর বাড়িতে একটা বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা চাই।
হালিমা : সেটি কী?
কুলসুম : বাহুল্য ব্যয় করা যাবে না।
হালিমা : স্বামী যখন সংসারের ব্যয় নিজ হাতে করেন, তখন আর ব্যয় বাহুল্যের ভয় কী?
কুলসুম : স্বামী বাইরে থেকে যে জিনিস-পত্র নিয়ে আসবেন, তা দেখে শুনে খরচ করলে যে জিনিসে স্বামীর অবস্থা ভালো হলেও খরচ সম্বন্ধে বেপরোয়া হতে নেই। হিসাব করে খরচ করলে যে জিনিসে দুদিন চলতো সেই জিনিসেই তিন দিন চলবে। ভালো গৃহিণীর হাতে অল্প টাকাতে সংসার বিনা কষ্টে চলে। পরিবারে অন্য সকলে বেহিসেবী হতে পারে, গৃহিণী বেহিসেবী হলে বড়ই বিপদের কথা। তেল, লবণ, একটা মরিচ, একটা পেঁয়াজ বা নগণ্য দুই ফোঁটা কেরোসিন তেল নষ্ট হলে কি ক্ষতি, এ কখনোও ভেবো না। আমাদের মহানবীকে অনুকরণ করা সকল মুসলমান নারীর উচিত। তিনি পরিত্যক্ত বাতির পলতে টিপে তেল বের করতেন। স্বামী বাইর থেকে জিনিসপত্র কিনে আনতে পারেন, সেগুলি কীভাবে খরচ হবে তার হিসাব তিনি রাখেন না। সে হিসাব গৃহিণীর কাছে।
হালিমা : বাড়িতে কী প্রকারে খাবার জিনিসপত্র ব্যয় করতে হয়?
কুলসুম : সকাল বেলা উঠে সকলের কিছু নাস্তা চাই (দরিদ্র পরিবারে এজন্য বিশেষ কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় না, সুতরাং খরচও নাই)। মুড়ি, বিস্কুট, পাউরুটি, মোহনভোগ, চিড়ে, কলা, গুড়, চিনি, মিছরি, টাটকা দুধ বা বাসি দুধ সাধারণত নাস্তারূপে ব্যবহার করা যায়। সকালে ছেলেরা ঠাণ্ডা ভাতও খেয়ে থাকে-নাস্তার সুবিধা করতে পারলে বাসি ভাত