• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
শনিবার, জুন 14, 2025
  • Login
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
No Result
View All Result

অলীক মানুষ – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

Olik Manush by Syed Mustafa Siraj

Love begin in shadow and end in light’

“পদ্মার ধসিয়া-পড়া ঢালু তীরে দুর্বাঘাসের হরিদ্বর্ণ কোমলতা এবং তাহারও নিম্নে একফালি নীলাভ জলের অধিকতর কোমলতার পর চরের ধূসর বালির মিশ্রিত কোমলতা একটি কালো চতুষ্পদ প্রাণীর কঠিন খুরে বিক্ষত হইতেছিল! পাহলোয়ান, তুই বর্বর। তুই একজন ভ্যানডাল! পাহলোয়ান, বলিল, কাহাকে গালি দিতেছ? আমি নিমিত্ত মাত্র। পাহলোয়ানের সহিত নির্জনে এরূপ কথোপকথনের সূত্রপাত হইল। চরটি ক্রমে-ক্রমে কচ্ছপের পিঠের আকৃতি বোধ হইল এবং বালি দৃঢ়তম হইতে মাটিতে পরিণত হইল। শীর্ষদেশে, কেন্দ্রস্থলে একটি বৃক্ষ দেখিলাম। যখন। বৃক্ষটি দেখিতেছিলাম, তখন পাহলোয়ান বলিল, অমন করিয়া কী দেখিতেছ? বলিলাম, একটি বৃক্ষ। পাহলোয়ান এবার একটি আশ্চর্য বাক্য উচ্চারণ করিল। যখন প্রান্তরে কোনও বৃক্ষকে দেখ, তখন প্রান্তর দৃষ্টির অগোচরে থাকে। বলিলাম, ঠিক বলিয়াছ। বৃক্ষ ও প্রান্তর একই সঙ্গে দর্শন অসম্ভব বটে! পাহলোয়ান বলিল, অথচ দেখ, প্রান্তর না থাকিলে বৃক্ষ থাকে না। প্রান্তরই বৃক্ষকে প্রকাশ করে। বলিলাম, এমন কথা কেন বলিতেছ? কৃষ্ণকায় অশ্বটি মুন্সি আবদুর রহিমে পরিণত হইল। বলিল, অবতরণ কর। বলিতেছি। তাহার পৃষ্ঠ হইতে অবতরণ করিলে সে বলিল, পরিপ্রেক্ষিত ব্যতিরেকে সকল বস্তু –জড় হউক, কী অ-জড় হউক, মায়াবিভ্রম মাত্র । তুমি সতর্ক হও। মায়াবিভ্রম–উহা মরীচিকা। উহার দিকে ধাবিত হইও না। শূন্যতায় নিক্ষিপ্ত হইবে! ভুদ্ধ হইয়া বলিলাম, ইহার অর্থ কী? ইহা বলারই বা উদ্দেশ্য কী, রূপান্তরিত সত্তাটি বলিল তোমার জন্য দুঃখ হয়। তুমি পরিপ্রেক্ষিত ব্যতিরেকে সকল কিছু দর্শন কর। তুমি সিতারা বেগম, স্বাধীনবালা মজুমদার, কিম্বা রত্নময়ী ত্রিবেদীকে ওই বৃক্ষবৎ দেখিয়াছ। আরও ভাবিবার আছে। দেখ, দেখ! বৃক্ষে একটি পক্ষী আসিয়া বসিল। এবার বৃক্ষটি আর নিতান্ত বৃক্ষ রহিল কি? উহা পক্ষীময় হইল। এবার দেখ, একজন মানুষ আসিয়া বৃক্ষতলে দাঁড়াইল। বৃক্ষটি আরও পরিবর্তিত হইল। উহার নির্জনতার আকৃতি লোপ পাইল। দেখ দেখ মানুষটির কাঁধে একটি বন্দুক! বৃক্ষটি নিজস্বতা হারাইল। পক্ষী, মানুষ, বন্দুক, বৃক্ষ মিলিয়া একটি জটিল বিভ্রম। সক্রোধে বলিলাম, বিভ্রম গুঁড়াইয়া ফেলিতেছি। দেখ, কী করি! বলিয়া অগ্রসর হইলাম। এই বিশাল চরসমাকীর্ণ নদীটি পূর্ববাহিনী। পশ্চিম হইতে অস্তসূর্যের পীতাভ লাল আলোয় মানুষটিকে দেখিয়া চমকিয়া উঠিলাম। একজন গোরা সাহেব! সে বৃক্ষের মূলে বসিয়া কাণ্ডে হেলান। দিয়া উত্তরে কিছু দেখিতেছে। আমি ও পাহলোয়ান দক্ষিণে নিম্নভূমিতে থাকায় সে আমাদের দেখিতে পায় নাই বোধ হইল। নিকটবর্তী হইলে সে আমার পায়ের শব্দে চমকিয়া মুখ ঘুরাইল। তাহার পর ধমক দিয়া বলিল, হেই ব্যাবু! ইদার মাত আও! গো অ্যাওয়ে! সে ইঙ্গিতে স্থান ত্যাগ করিতে বলিল। সম্ভবত গোরা সাহেবটি হাঁস মারিতে আসিয়াছে! তবু আমি তাহার দিক যাইতেছি দেখিয়া সে বন্দুক তাক করিয়া বলিল, ইউ ড্যাম নেটিভ কুত্তা! ভাগো! সহস্যে দ্রুত বলিলাম, স্যার! আই মে হেল্প ইউ টু ফাইন্ড আউট এ প্লেস হোয়্যার উ উইল সি থাউজ্যাণ্ডস অ্যান্ড থাউজ্যান্ডস্ অফ ওয়াইন্ড ডাক। গোরা শিকারী বন্দুক নামাইল । চকিতদৃষ্টে চতুর্দিকে দেখিয়া লইলাম। উঁচু চরটির উত্তৰ-পূর্বাংশ ঢালু হইয়া পরিব্যাপ্ত কালো জলে মিশিয়াছে। দূরে কয়েকটি নৌকা। পশ্চিমেও জল –কিন্তু উহা দিনশেষের ম্রিয়মাণ আলোকে ঈষৎ রঞ্জিত। দক্ষিণে দূরে উঁচু জনহীন। দক্ষিণ-পূর্বে আরও দূরে কৃষ্ণপুর। দিগন্তরেখার সহিত মিশ্রিত। গোরাসাহেব উঠিয়া দাঁড়াইল। বলিল, ডোন্ট মাইন্ড ব্যাবু! আই অ্যাম ড্যাম টায়ার্ড। লেটস গো দেয়ার। ও মাই গড! সে বন্দুক তুলিবার পূর্বেই ভূতলশায়ী হইল। তাহার বুকে মাত্র একহাত দূর হইতে পিস্তল-এর গুলি গিয়া ঢুকিয়াছিল। তাহার তলপেটে একটি পা দাবাইয়া ঝুঁকিয়া পড়িলাম। দ্বিতীয় গুলি তাহার কপাল ফুটা করিল। বন্দুকটির জন্য লোভ সম্বরণ করিলাম। পুনর্বার চাবদিক চকিতদৃষ্টে দেখিয়া লইয়া ধীরে গম্ভীর শরীরে পাহলোয়ানের নিকট ফিরিলাম। দেখিলাম, উহার দার্শনিক সত্তা লোপ পাইয়া পুনরায় চতুষ্পদ বাহনে পরিণত হইয়াছে। পাড়ে উঠিয়া একটু ভাবনা হইল। পাহলোয়ানের খুর এবং আমার। জুতার ছাপ ফেলিয়া আসিলাম! তবে হরিবাবু এবং স্বাধীনবালার কাছে সগৌরবে এবং সবিস্তারে বর্ণনার যোগ্য একটি কীর্তি বটে! পাড় হইতে কিছুদূর শস্যশূন্য জমি এবং ঝোঁপঝাড়ের পর কাঁচা রাস্তায় পৌঁছাইয়া ভাবিলাম, রত্নময়ীকে ঘটনাটি বলিব কি? তৎক্ষণাৎ মনে হইল, কিন্তু কেন এই কদর্য কর্মটি কবিলাম? মুন্সিজির সেই উক্তির উপযুক্ত প্রত্যুত্তরদান হইল কি? স্ট্যানলির পিস্তলে আর চৌদ্দটি কার্তুজ অবশিষ্ট রহিল। যদি গুলি না ছুটিত, গোরা শয়তানটির বন্দুক কাড়িয়া লইতাম সন্দেহ নাই। কিন্তু কেন এ কাজ করিলাম? পাহলোয়ান! ব তো ভাই, কেন আবার এই দুর্মতি ঘটিল? পাহলোয়ান চুপ করিয়া রহিল। তখন বলিলাম, ওই শালা আমাকে নেটিভ কুত্তা বলিযা তাক করিয়াছিল। উত্তরের ফটক দিয়া রাজবাড়িতে ঢুকিলাম। ঘুরিয়া বাড়ির সম্মুখে যাইলে রত্নময়ীকে দেখিতে পাইলাম। আবছা আঁধারে ফোয়ারার বৃত্তাকার বেদীতে একা বসিয়া আছে। আমাকে দেখিয়া সেই সহিস দৌড়াইয়া আসিল। পাহলোয়ানকে কিছুক্ষণ টহল খাওযাইবার নির্দেশ দিয়া রত্নময়ীর কাছে গেলাম। সে ঈষৎ হাসিয়া বলিল, তোমার সঙ্গে আমার প্রিয়তমের দেখা হয় নাই? কিছু তফাতে বসিয়া বলিলাম, একজন গোরা সাহেবকে দেখিয়াছি। নিশ্চয় সে তোমার প্রিয়তম নহে? রত্নময়ী বলিল, বুঝিয়াছি। তুমি মতিগঞ্জের কুঠিয়াল রিজলিকে দেখিয়াছ। জিজ্ঞাসা করিলাম, সে কে? রত্নময়ী বলিল, সে রেশম কারবারী। তাঁতী এবং জোলাদিগকে বেমরশুমে দাদন দেয়। রেশমী থান রেলপথে। কলিকাতা চালান করে। বাবার সহিত তাহার খুব বন্ধুতা আছে। আস্তে বলিলাম, লোকটি কি প্রকৃতির? রত্নময়ী শুধু বলিল, বাবার বন্ধু! বুঝিলাম সে কী বলিল! একটু পবে বলিলাম, বৈকালে শুনিয়াছি, তোমার শরীর খারাপ। বাহির হইলে কেন? রত্নময়ী আস্তে বলিল, তোমার প্রতীক্ষা করিতেছি। সে কিয়ৎক্ষণ নীরব রহিল। বলিলাম, আমি এখনই রওয়ানা হইব। দাওয়াত করিয়াছিলে। দাওয়াত খাইয়াছি। এইবার বিদায় চাহি। রত্নময়ী শ্বসমিশ্রিত স্বরে বলিল,দাওয়াত শব্দের অর্থ শুধু খাদ্যবিষয়ক নহে। তোমাকে আমার জিনটির সঙ্গে ডুয়েলে লড়িতে ডাকিয়াছিলাম। তুমি বিস্মৃত হইয়াছ দেখিতেছি। হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিলাম, কোথায় সে? তাহাকে ডাক। দেখি, লড়িতে পারি নাকি। রত্নময়ী উঠিয়া দাঁড়াইল। বলিল, আমার সহিত আইস। দেখাইতেছি। এইসময় প্রাসাদের পার্লারের এদিকে, ফোয়ারার পিছনে আবছা একটি মূর্তি দৃষ্টিগোচর হইল। বলিলাম, কে? মুন্সিজি সাড়া দিয়া বলিলেন, কতদূর ঘুরিলেন? মনে হইল, লোকটি আড়ালে দাঁড়াইয়া কথা শুনিতেছিল। বলিলাম, বিহারের মাটি দেখিয়া আসিলাম। মুন্সিজি বলিলেন, চরে যান নাই? বলিলাম, না। ঘোড়া লইয়া যাইবার রাস্তা দেখিলাম না। পার্লারের কড়িকাঠ হইতে একটি ঝাড়বাতি জ্বলিতেছে। সেখানে মুন্সিজি আসিয়া মৃদুস্বরে ডাকিলেন, মা জহরত! রত্নময়ী বলিল, জী, মুন্সিজির মুখ দেখিয়া মনে হইতেছিল, অন্য কিছু বলিবেন। কিন্তু বলিলেন, বেশী চলাফেরা করিও না। বেশী কথাবার্তা বলাও ঠিক নহে। মুন্সিজি কথাটি বলিয়াই চলিয়া গেলেন। হলঘরেও ঝাড়বাতি জ্বলিতেছিল। রত্নময়ী গালিচাঢাকা কাঠের সোপানে বালিকার ন্যায় উঠিতেছিল– চঞ্চল ও দ্রুতগতি। উত্তর-পূর্ব কোণে হরিবাবুর সেই কক্ষের বারান্দায় এক পরিচারিকা দাঁড়াইয়া ছিল। রত্নময়ী বলিল, দুইখানি চেয়ার পাতিয়া দাও। আর বাবুমহাশয়ের জন্য চা লইয়া আইস। কিছু খাদ্যও আনিবে। আপত্তি করিবার সুযোগ পাইলাম না। রত্নময়ী চেয়ারে বসিয়া বলিল, বস। জ্যোৎস্নারাত্রে এখানে বসিয়া আমি এবং দাদা পদ্মা দেখিতাম। একটু পরে চাঁদ উঠিবে। সে হাসিল। পুনরায় বলিল, ওইখানে আমার প্রিয়তম জিনটি শাদা ঘোড়ায় আমাকে চড়াইয়া খেলা করে। কী? চুপ করিয়া রহিলে যে? তুমি কি আমাকে মিথ্যাবাদিনী ভাবিতেছ? রত্নময়ীর কথায় তীব্রতা ছিল। বলিলাম, না। তুমি যখন বলিতেছ, তখন উহা সত্য বলিয়া মানিব। রত্নময়ী উষ্ণস্বরে বলিল, আমি কিছু বলিলেই উহা সত্য হয় না। তুমি বলিলেও হয় না। যাহা সত্য, তাহা সত্য। ইংলিশ প্রবচনটি নিশ্চয় অবগত আছ যে ‘টুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন।’ তোমাকে দেখাইতেছি। বলিয়া সে বারান্দা দিয়া ছায়ার ভিতর মুছিয়া গেল। আমাকে অবিলম্বে স্থান ত্যাগ কবিতে হইবে। মানসিক অস্থিরতা প্রবলতর হইতেছে। চরে পাহলোয়ান ও আমার পদচিহ্ন রহিয়া গিয়াছে। পদচিহ্নগুলি ষড়যন্ত্রপূর্ণ চাপাস্বরে কথাবার্তা বলিতেছে। পবিচারিকা ইংলিশ খাঞ্চায় (ট্রে) খাদ্য এবং চায়ের সরঞ্জাম বেতের টেবিলে রাখিয়া চলিয়া গেল। এই বাড়ির মানুষগুলি পুতুল। কোনও অদৃশ্য হাত ইহাদের চালনা করিতেছে যেন। সেই চালনায় বদ্ধ ফটক খুলিয়া যায়। সহিস দৌড়াইয়া আসে। বান্দা-বাঁদীরা হুকুম তামিল করিতে মুহঁতমাত্র বিলম্ব করে না। মনে হইল, বাড়িটি একটি কারখানা। কিম্বা এই প্রথম জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে প্রবেশের জন্য এইসব ধারণা হইতেছে। সম্ভবত সকল রাজা-নবাব-জমিদার-বিত্তশালীদের গার্হস্থ্য জীবনযাত্রা এমনভাবে ঘড়ির কাঁটার নিয়মে চালিত হয়। কক্ষের ভিতর শেজবাতি ছিল। তাহার আলোকে বারান্দা ঈষৎ আলোকিত! কিয়ৎক্ষণের মধ্যে রত্নময়ী আসিয়া কক্ষ হইতে বাতিটি আনিয়া টেবিলে রাখিল। তাহার হাতে একখণ্ড কাগজ ছিল। বসিয়া বলিল, এই দেখ। ইহাতে সত্য চিত্রিত করিয়াছি। আলোয় কাগজটি ধরিলাম। উহাতে নিম্নরূপ ছক রহিয়াছে।

অলীক মানুষ

রত্নময়ী গম্ভীরমুখে বলিল, কিছু বুঝিলে? চিন্তা কর। খাইতে খাইতে চিন্তা কর। গভীর মনোযোগের ভান করিয়া বলিলাম, আহার চিন্তার প্রতিকূল। বরং পানীয়–বিশেষত উষ্ণ পানীয় মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করার অনুকূল। রত্নময়ী দ্রুত চা প্রস্তুত করিল। চায়ে চুমুক দিয়া বলিলাম, ‘আমি’টা কে? রত্নময়ী সমিশ্রিত স্বরে বলিল, আমি উহা দেখিলে আমি! এক্ষণে তুমি দেখিতেছ। সুতরাং তুমি এক্ষণে ‘আমি’ হইয়াছ। মুখে গম্ভীর্য রাখিয়া বলিলাম, ‘আমি’ রক্তবর্ণ কেন? রত্নময়ী চক্ৰান্তসঙ্কুল অথচ যন্ত্রণাপূর্ণ কণ্ঠস্বরে বলিল, ‘আমি’ নিয়ত আক্রান্ত। শরবিদ্ধ। রক্ত ঝরিতেছে। তাহার দিকে চাহিলাম। সে আমার দিকে চাহিয়া আছে। চক্ষুদ্বয়ে নিঃশব্দ অশ্রুজনিত সিক্ততা। বিস্মিত ছইয়া বলিলাম, তুমি কাঁদিতেছ কেন রত্নময়ী? (বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’ নবেলের প্রসিদ্ধ উক্তিটির প্রতিধ্বনি করিয়াছিলাম বটে; কিন্তু তৎকালে উহা স্মরণ ছিল না)। রত্নময়ী বলিল, কেহ আমাকে উদ্ধার করার নাই। বলিয়া কাঁদিতেছি! ভাবিয়াছিলাম –সে চুপ করিলে জিজ্ঞাসা করিলাম, কী ভাবিয়াছিলে? এই প্রশ্নের জবাব দিল না। তখন বলিলাম, তুমি বিত্তবান ব্যক্তির কন্যা। কেন-না-কেহ একদিন তোমাকে বিবাহ করিবে। বিত্ত-ঐশ্বর্য এমন বস্তু, যাহা জাতিপাতজনিত সংস্কার পদদলিত করিয়া থাকে। ডোজ বেশ কড়া হইয়া ছিল। আমি ঠিক ইহাই চাহিয়াছিলাম। রত্নময়ী সহ্য করিতে পারিল না। হুংকার ছাড়িয়া বেতের টেবিলটি উল্টাইয়া দিল। সুদৃশ্য বাতি এবং চীনামাটির সুন্দর পাত্রগুলি চূর্ণ বিচুর্ণ হইল। অন্ধকারে উহার শাসপ্রশ্বাসের শব্দে ঝড় বহিতেছিল। তাহার পর সে মুর্ছিতা হইল। চেয়ার উল্টাইয়া মুহূর্তে উহাকে ধরিয়া ফেলিলাম। বিস্ময়ের কথা, এই বাড়ির অদৃশ্য জাদুকরের হাতের খেলা এমনই নিপুণ যে তৎক্ষণাৎ লণ্ঠন হাতে পরিচাক পরিচারিকারা আসিয়া পড়িল। উহারা কি সতত এই জিনগ্রস্ত রাজকন্যাটির গতিবিধির প্রতি নজর রাখিয়া আড়ালে ওত পাতিয়া থাকে? উহাদের হাতে কম্পিত শীর্ণ যুবতীদেহটি অৰ্পণ করিয়া দ্রুত চলিয়া আসিলাম। হলঘরে নামিলে মুন্সিজির সহিত দেখা হইল। বলিলাম, আমি এখনই রওনা দিতেছি। আসুন, পাহলোয়ানের আস্তাবল দেখাইয়া দিন। মুন্সিজি বিলম্ব করিলেন না! বুঝিলাম, তিনি এই অবাঞ্ছিত আপদবিদায়ের জন্য ব্যগ্র ছিলেন।…”

Page 124 of 138
Prev1...123124125...138Next
Previous Post

হাঙর নদী গ্রেনেড – সেলিনা হোসেন

Next Post

কর্নেলের গল্প – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

Next Post

কর্নেলের গল্প - সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

কাগজে রক্তের দাগ - সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In