থরথর করে সারা হলে ফেটে পড়ল গোলাপের সুগন্ধ। এক পশলা গোলাপে ভরে গেল সামনের সারি। করতালি আর উল্লাসে বধির হয়ে গেল শ্রবণ। প্রথমে বিহ্বল পরে নিজের কৃতিত্বেই মুগ্ধ হয়ে গেল জহির। দ্রুত সে দ্বিতীয়টি হাতে নিল। নেশার মতো এক সব–বোধ অন্ধ করা অনুভূতিতে মাতাল হয়ে উঠল তার হাত।
দরোজার খিল খুলে ফেলল চম্পা। এতক্ষণ তার ঘরে যে সুগন্ধ ছিল গোলাপের, হঠাৎ এক বাতাসের দমকে যেন তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। কী হল? এতো করতালি কেন?
সারা হলে তখন পশলার পর পশলা গোলাপের বৃষ্টি হচ্ছে। ফোয়ারা থেকে শীকরের মতো উৎক্ষিপ্ত হচ্ছে গোলাপ, গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে সুগন্ধ। ভারি হয়ে আসছে বাতাস। এক আশ্চর্য যাদুর সন্ধান পেয়ে লোকের কণ্ঠে মুহুর্মুহু ধ্বনিত হচ্ছে অভিনন্দন।
সাতাশ–আটাশ–উনত্রিশ–ত্রিরিশ–শেষ ছোরাটা জহিরের হাত থেকে যখন উড়ে গেল তখন গোলাপ ছাড়া আর কিছুই দেখা গেল না সারা হলে। যেন গোলাপের ঝড় উঠেছে।
রাশি রাশি গোলাপ উড়ছে, ছিটকে পড়ছে ডুবিয়ে দিচ্ছে–গোলাপ আর গোলাপ। এমনকি সারা স্টেজেও আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না, শুধু অগণিত গোলাপের রঙ আর সুগন্ধ।
সমুদ্র জলোচ্ছাসের মতো করতালির মধ্যে নেমে এলো পর্দা। দৃশ্য আড়ালে চলে গেল, আর দেখা গেল না, তবু সে করতালি থামল না। থামল না সপ্তমে ওঠা ব্যাণ্ডপার্টির সুর। থামল না প্রফেসরের অবিশ্রান্ত করাঘাত। চম্পা জানতেও পারল না সাতশ ছিয়াশিটা গোলাপ ফুরিয়ে গেলেও ফিরদৌসি আজ আবার গোলাপ আনতে পেরেছে।
পর্দার সঙ্গে সঙ্গে বোর্ড থেকে ফিরদৌসি আস্তে আস্তে বসে পড়ল তার পায়ের ওপর, যেন সিজদা দিতে যাচ্ছে। হঠাৎ দ্রুততা এলো তার ভঙ্গিতে, যেন এক মুহূর্ত সময় আর নেই। গোড়ালির ওপর বসবার আগেই মাথা নত হয়ে এলো তার। সেখানে নিজের রক্তের স্রোতে মুখ থুবড়ে পড়ে রইল রক্তগোলাপের যাদুকর ফিরদৌসির প্রাণহীন দেহ।
মাউরেণ্ডার রেস্তোরাঁ, ঢাকা
রচনাকাল ১৯৬৩