হাঁ, চিনিতে পারিতেছি, ইনিই আমার গর্ভধারিণী।
সন্দেহ নাই?
ইয়াসমিন অনুষ্ঠানের মাদকতায় প্রতিধ্বনি করে ওঠে, সন্দেহ নাই।
ভিনসেন্ট চোখ বুজে গম গম গলায় উচ্চারণ করে, তবে গর্ভে প্রবিষ্ট হও।
ইয়াসমিন আবার অপ্রতিভ বোধ করে। কী কর্তব্য অনুমান করতে পারে না। এদের উপযুক্ত সে এখনো নয়, তাকে ক্লিষ্ট করে ফেলে।
ভিনসেন্ট নিমিলীত চোখেই বলে, ক্ষণকাল অপেক্ষা করবার পর, বালিকাগণ, তোমাদের কি কর্তব্যবোধ নাই? তোমাদের ভগ্নীকে সাহায্য করিবার কোনো প্রেরণাই কি বোধ করিতেছ না?
চঞ্চল হয়ে ওঠে প্যাম, কোকো। তারা জো আর পিটারের পাশ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসে ইয়াসমিনের কাছে। ইঙ্গিতে তাকে উঠে দাঁড়াতে বলে। বসে থাকা প্রত্যেকের দিকে চোখ না ফিরিয়েও ইয়াসমিনের মনে হয়, সে ভীষণ লম্বা হয়ে গেছে। তার সংকোচ বোধ হয়। কিছুক্ষণ পর অতি ধীর গতিতে উঠে দাঁড়ায় কোকো আর প্যাম। নিঃশব্দে তারা ইয়াসমিনের দেহ থেকে একে একে সোয়েটার, জামা, লম্বা স্কার্ট স্নেহের সঙ্গে খুলে ফেলতে থাকে। ইস্কুলে সাঁতার কেটেছে, যদিও বাবা জানলে তাকে সাঁতার কাটতে দিতেন না ঐ সংক্ষিপ্ত পোশাকে, এ ছাড়া প্রকাশ্যে অনাবৃত হবার অভিজ্ঞতা তার নেই। মুহূর্তের জন্য একবার মনে হলো, তার ভীষণ লজ্জা করবে। কিন্তু একে একে যখন সমস্ত কিছু পায়ের। কাছে লুটিয়ে পড়ল, তখন বিন্দুমাত্র মনে হলো না, সে উলঙ্গ। নগ্নতার উপলব্ধি যদি কিছুটা হয়ে থাকে তো শীতবোধেই তা সীমিত। তার নিজের মনে হয়, লজ্জায় নয় শীতের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্যে দুহাত বুকের ওপর গুটিয়ে আনে এবং দু হাঁটুর ভেতরে মুখ গুঁজে দেয়।
সে কাঁধ গুটিয়ে বসে পড়তে গিয়েও, পাছে কিছু ত্রুটি হয়, বসে না।
ভিনসেন্ট নির্দেশ উচ্চারণ করে, প্রবিষ্ট হও।
তার সেই কণ্ঠস্বরের অভিঘাতেই যেন ইয়াসমিন উপুড় হয়ে বসে পড়ে। তার মাথার ভেতরে ঝিম ঝিম করতে থাকে। ভোরে উঠেই এক প্রস্থ ধোঁয়া গেলার পর যা মনে হয় নি, এখন নিজেকে অস্বভাবিক রকমে নির্ভার ও অবাস্তব বলে বোধহয় তার।
ইয়াসমিন কাত হয়ে শুয়ে পড়ে। শিশুর মতো তার পা ভাঁজ হয়ে আসে বুকের কাছে, তার ফাঁকে দুহাত গুঁজে দেয় সে। ঠোঁট নীল হয়ে যায় শীতে ও উত্তেজনায়। ঠোঁট থর থর করে কাঁপতে থাকে।
ইয়াসমিন প্রবিষ্ট হও।
ইয়াসমিন তার দুপাশে কিছু একটার উপস্থিতি অনুভব করে। চোখ খুলে দ্যাখে গ্যাবি যে এতক্ষণ পদ্মাসনে বসেছিল, এখন সে দুপা ছড়িয়ে ইয়াসমিনের দুদিকে মেলে দিয়েছে। তখন তার পাশ থেকে সরে গেছে প্যাম আর কোকো। তারা ফিরে গেছে জো আর পিটারের কাছে। যার যার জুটির হাত শক্ত মুঠোয় ধরে তারা বিস্ফারিত চোখে স্থির তাকিয়ে আছে ইয়াসমিনের দিকে।
ধীরে ধীরে গ্যাবি এগোয়। বসে বসেই সে এগিয়ে এসে দুপায়ের ভেতরে ইয়াসমিনের মাথাটা সম্পূর্ণ নিয়ে নেয়। তারপর নিজের লম্বা স্কার্ট দিয়ে ঢেকে দেয় তার মাথা, কাঁধ, পিঠ। ক্রমশ ইয়াসমিনের পুরো দেহে ঢাকা পড়ে যায় গ্যাবির ঢিলে স্কার্টের তলায়।
মার্ক তার গিটারে ঝনঝনাৎ করে অপ্রত্যাশিত এবং ক্ষণস্থায়ী আওয়াজ তোলে।
ইয়াসমিন, তুমি এখন কোথায়?
এইখানে।
বিশ্বজননীর গর্ভে?
সকলে একসঙ্গে মন্ত্রের মতো প্রতিধ্বনি করে, বল, হাঁ, বিশ্বজননীর গর্ভে।
হাঁ, বিশ্বজননীর গর্ভে।
তুমি কি গর্ভের উষ্ণতা বোধ করিতেছ?
এবার সমবেত সকলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইয়াসমিন বলে–হাঁ, গর্ভের উষ্ণতা বোধ করিতেছি।
তোমার কি ভ্রূণাবস্থা?
হাঁ, আমার ভ্রূণাবস্থা।
তোমার কি হস্তপদ আছে?
না, আমার হস্তপদ নাই।
তোমার কি চক্ষু আছে?
না, আমার চক্ষুও নাই।
ভিনসেন্ট এবার আদেশ করে, তুমি প্রার্থনা কর–আমাকে ভ্রুণ হইতে পূর্ণদেহ কর যাহাতে দেহের সমস্ত সম্ভাবনা আবিষ্কার করিতে পারি, আমাকে হস্তপদ প্রদান কর যাহাতে নির্মাণ ও অতিক্রম করিতে পারি, আমাকে চক্ষু দাও যাহাতে বন্ধুকে অবলোকন করিতে পারি। তুমি ভূমিষ্ঠ হও।
সঙ্গে সঙ্গে ইয়াসমিন টের পায় গ্যাবির পা দুখানা তার গলা জড়িয়ে ধরেছে। প্রথমে সে গুরুত্ব দেয় নি, ক্ষণকাল পরে কণ্ঠনালীর ওপর পায়ের সবল চাপ অনুভব করে সে। গ্যাবির স্কার্টের ভেতর তার সমস্তটা শরীর, ফলে নিঃশ্বাস নেয়া আরো কঠিন হয়ে পড়ে। সে ছটফট করতে থাকে। আর্তনাদ করে ওঠে। গ্যাবি আরো জোরে পীড়ন করতে থাকে তাকে। সে তখন নিজেকে মুক্ত করে নেবার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করে, গ্যাবির স্কার্টের তলা থেকে বেরিয়ে আসবার জন্যে শরীরের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে।
মুহূর্তেই সে বেরিয়ে আসে গ্যাবির স্কার্টের ভেতর থেকে। বেরিয়ে মেঝের উপর নগ্নদেহে পড়ে থেকে সে হাঁপায়। সকলে একসঙ্গে আহ ধ্বনি করে ওঠে। প্যাম একটা কম্বল দিয়ে ঢেকে দেয় ইয়াসমিনকে।
ভিনসেন্ট ঘোষণা করে— বালিকার জন্ম হইয়াছে। সে এখন শায়িত আছে। ক্ষণকাল পরে সে যৌবনপ্রাপ্ত হইবে এবং আমাদের আনন্দে অংশগ্রহণ করিবে।
ইয়াসমিন উপলব্ধি করে, মায়ের পেট থেকে বেরুবার অভিনয় সে এইবার করে উঠল।
গ্যাবি পা দিয়ে চেপে ধরায় অভিনয় যে জীবন্ত হয়, এতে সে আমোদ বোধ করে এখন। বন্ধুদের সঙ্গে নিবিড় আত্মীয়তা বোধ করে।
ভিনসেন্ট বলে, আজ আমরা দিবস ও রজনী আনন্দ করিব। ইয়াসমিন, উঠ, বস্ত্র পরিধান কর। তুমি এখন যথার্থই আমাদের হইলে।