মার্ক চুপ করে থাকে।
ভিনসেন্ট হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে, দলকে সমবেত করে। দু তিনজনকে এক সঙ্গে কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলে, হাঁ, হলুদ শয়তানগুলোকে দ্যাখো।
তার আঙুল অনুসরণ করে দেখা যায়, একটা নাইট ক্লাবের সমুখে দশ বারোজন জাপানি। দেখে বোঝা যায়, পর্যটক ঠিক নয়, ব্যবসার কোনো কাজে এসেছে, অবসরে ফুর্তি করতে বেরিয়েছে। তাদের বিচিত্র কলরব শুনে দলের আমোদ হয়। এতক্ষণ উদ্দেশ্যহীন নিরবতা ছিল, তা হো হো হাসিতে তারা ছিঁড়ে ফ্যালে।
দুলকি চালে সবাই এগিয়ে যায়। ভিনসেন্ট এক জাপানিকে বলে, পয়সা কেন খরচ করিবে এখানে? চাও তো, আমার বালিকারা দেখাইবে। এইসব বালিকা উহাদের চেয়ে উত্তম।
জাপানিদের ভেতরে সবাই ইংরেজি বোঝে না। একজন বোঝে। হঠাৎ উৎকর্ণ হয়ে ওঠাতেই টের পাওয়া যায়। তাই সে একটু এগিয়েও আসে।
তখন পিটার জাপানিটির কাছে ঘেঁষে কোকোকে দেখিয়ে বলে, ইহাকে লইবে?
জাপানিটি লুদ্ধ দৃষ্টিপাত করে।
জো প্যামের চিবুক তুলে ধরে বলে, এবং ইহাকে?
ভিনসেন্ট বলে, তোমাদের মুখে ইহারা সুন্দর বিষ্ঠা ত্যাগ করিবে। হাঁ?
জাপানিটি ইংরেজি ভালো জানে না, তাই মর্মার্থ তার বোধগম্য হয় না।
ভিনসেন্টের রসিকতা শুনে দলের পেটে হাসি বুড়বুড় করছিল, জাপানিটি যখন হাতের আঙুল তুলে আন্তর্জাতিক নিরব ভাষায় জানতে চায় ঐ কাজের দরুন তারা পারিশ্রমিক কত চায়, তখন গোটা দল, এমনকি ইয়াসমিনও দমকা হাসিতে ফেটে পড়ে। হতবাক। জাপানিদের পেছনে ফেলে, হাসিতে ভেঙে পড়তে পড়তে তারা অন্য মজা সন্ধান করে।
এইভাবে বহুবার তারা চক্কর দেয় সুইস সেন্টার থেকে পিকাডেলির মোড় পর্যন্ত, যে পর্যন্ত গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ, পুরো পথটাই পথিকের।
মার্ক বলে, হাসিতেছ?
ইয়াসমিন থতমত খেয়ে যায়।
মার্ক আশ্বস্ত করে তাকে, হাসিবে না কেন? উহারাও নিঃসঙ্গ। সেই নিঃসঙ্গতা কাটাইবার জন্য হাসিবার উপকরণ খুঁজিতেছে।
ইয়াসমিন আবার হেসে ফেলে সত্যি। বিষ্ঠা ত্যাগের কথাটা যে জাপানিরা আদৌ বুঝতে পারে না, এখনো সুড়সুড়ি দেয় তাকে।
মধ্যপ্রাচ্যের দুই আরবকে দেখা যায়। দলের মেয়েগুলোর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তারা তাকিয়ে থাকে। যতবার সমুখ দিয়ে ওরা যায়, ওদের দৃষ্টি অনুসরণ করে।
ব্যাপারটা চোখে পড়েছিল জো-র। সে কিছুদূরে দাঁড়িয়ে দলকে থামিয়ে বলে, গরীব আরব দেখিবে?
হাঁ, হাঁ, কোথায়?
কলরব করে ওঠে সকলে।
ঐ দ্যাখো।
সেই আরব দুজন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে, এবার সকলের চোখে পড়ে।
কোকো জো-র গালে টোকা দিয়ে বলে, গরীব কী প্রকারে জানিলে?
নহিলে তোমাদের দিকে দৃষ্টিপাত করে?
কোকো একটু ক্ষুণ্ণ হয়। কিন্তু অন্যান্য সকলেই হেসে ওঠে। তাদের বিদ্রুপের হাসিতে আরব দুজন মুখ ফিরিয়ে নেয়।
ভিনসেন্ট তখন দলকে ঠেলে আরবদের পাশ দিয়ে নিয়ে যেতে যেতে, কাছে এলে ঘাড় ফিরিয়ে আরবদের উদ্দেশ্যে বলে, এখানে পাইবে না; মহারানীর প্রাসাদে যাও। সেখানে অশ্বাননা রাজকুমারী অ্যান রহিয়াছেন। ছুটিবে এবং ভালো ছোটাইবে।
বলেই হা হা করে হাসতে হাসতে সকলে তাদের, অতিক্রম করে যায়।
নাহ, ফিরিয়া যাইতে হয়। প্যাম দুহাত ওপরে তুলে আড়মোড়া ভেঙে শরীর বাঁকিয়ে বলে।
আমি শয্যায় যাইতে চাই।
কি, আরবদের শয্যায়?
পিটারের দুমুখ মন্তব্য শুনে প্যাম তাকে লাথি মারে পেছনে। বলে, আরবরা বালক পছন্দ করে। তুমি তাহাদের শয্যায় যাও।
সবাই আবার এক প্রস্থ হেসে ওঠে।
ফেরাই স্থির হয়। নীরবেই স্থির হয়ে যায়। তারা আর সুইসসেন্টারের দিকে ফেরে না। ধীরে ধীরে এলাকা ছেড়ে এগোয় তারা। হেঁটেই তারা যাবে। অলবানি স্ট্রীট মাইল দেড়েকের মতো। শনিবার রাতে এমন বহু দল দুটো তিনটের সময় দেখা যায় অলস পায়ে ফিরে যাচ্ছে রাস্তার সমস্ত দখলিসত্ত্ব নিয়ে।
সোহো স্কোয়ারের ভেতরেই অপেক্ষাকৃত নির্জন একটা রাস্তায় বাঁক নিতেই দেখা যায়, চীনা একটা রেস্তোরা, তারপরে গাড়ি ঢোকার মতো কাঠের চওড়া গেট, পাশে এক আলোকিত সৰু দরোজা। দরোজার দুপাশে উজ্জ্বল হলুদ রঙের পটভূমিতে, কাচের আড়ালে সাঁটা উলঙ্গ নৃত্যকরা রমণীদের ছবি। দরোজার মুখেই কাউন্টারে দুজন বসে আছে টিকিট বেচতে। আর দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরের দিকে ঘন ঘন ভীরু দৃষ্টিপাত করছে বাদামি এক লোক।
লোকটিকে অতিক্রম করে যাবার মুহূর্তেই ভিনসেন্টের বাসনাটি হয়। সে বলে, বাদামি শুকরটি নতুন আসিয়াছে।
পেছন ফিরে তাকায় দলের সবাই। লোকটির ভীরু ভাব এতদূর থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায়। তাদের সমবেত স্ফূর্তি হয়।
ভিনসেন্ট ইয়াসমিনকে কাঁধে ধরে বলে, উহাকে ডাকিয়া আন। ভিনসেন্ট তার পিঠে একটা মৃদু ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে দেয়।
ইয়াসমিন হেসে বলে, যদি আমাকে প্রস্তাব করে, বাঁচাইবে তো?
রগড় দেখবার জন্যে সাগ্রহে অপেক্ষা করে দলটি। ইয়াসমিন কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে লোকটিকে হাত দিয়ে কাছে আসতে ইশারা করে। লোকটি প্রথমে শংকিত হয়। পরে, ইয়াসমিনের বাদামি রঙ দেখে, চেহারা ভারতীয় বলে আশ্বস্ত হয়ে এগিয়ে আসে।
অন্ধকারের ভেতর আসতেই চারদিক থেকে দলটি ঘিরে ধরে লোকটিকে। এক মুহূর্ত সময় না দিয়ে তাকে ঘিরেই আরো নির্জন অন্ধকারের দিকে ঠেলে নিয়ে যায় তারা। লোকটি ইয়াসমিনকে আর দেখতে পায় না। তার চারদিকে শাদা মুখগুলো দেখে, গায়ের ঝাঝালো। গন্ধ পেয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় সে।