ইয়াসমিন উঠে বসে প্যামের দিকে হাত বাড়ায়— আমার শার্ট কোথায় রাখিয়াছ?
উহা এখন পরিতে পারিবে না। ভিন্ন পোশাক পরিতে হইবে।
আমি যে দ্বিতীয় বস্ত্র সঙ্গে আনি নাই। মাহজাবীনকে বলিয়া আসিয়াছি, সে যদি পারে আমার কিছু কাপড় ও জিনিস দিয়া যাইবে।
তবে এখনকার মতো আমার জীনস পরিয়া লও।
ইয়াসমিন কম্বল গায়ে উঠে দাঁড়ায়। পাশের ঘরে গিয়ে প্যামের হাত থেকে জীনস নেয়।
প্যাম বলে, তোমার জন্মগ্রহণ সুন্দর হইয়াছে।
অদ্ভুত মনে হইলেও অনুষ্ঠানটির সৌন্দর্য আছে।
ইহা ভিনসেন্টের উদ্ভাবনা। সে বলে, আচার অনুষ্ঠান ভিন্ন দলীয় সংহতি নাই, আত্মার বন্ধনও স্থাপিত হয় না।
আমার তো এখন মজাই লাগিতেছে। বাড়ি হইতে পালাইয়া বাচিয়াছি। নইলে আজই হয়তো আমার বিবাহ দিয়া দিত।
জীনস পরে ইয়াসমিন বলে, নগ্নবক্ষ হইয়া থাকিব নাকি? জামা দিবে না?
নগ্নই তো সুন্দর। তোমার বক্ষের গড়ন অপূর্ব। বলতে বলতে প্যাম একটা লেবু-হলুদ শার্ট ধার দেয়।
ভারি সুন্দর শার্ট। কোথা হইতে কিনিয়াছ?
পোর্টোবেলো মার্কেট হইতে চুরি করিয়াছি।
মাহজাবীন আমার পোশাকগুলি আনিতে পারিবে কিনা, কে জানে।
ইয়াসমিন যখন পাশের ঘরে ফিরে যায়, তাকে দেখেই পিটার শিস দিয়ে ওঠে। তার বান্ধবী কোকো সঙ্গে সঙ্গে আদরের কোমল চড় লাগিয়ে দেয় পিটারকে। শাসন করে–ভিন্ন ক্ষেতে ফসল বপন করিবে না।
পিটার চটপট উত্তর দেয়, শিস ক্ষেত দেখিয়া দিই নাই, ক্ষেতের গায়ে টাঙ্গানো নোটিশ দেখিয়া দিয়াছি।
পিটার আঙ্গুল দিয়ে ইয়াসমিনের পেছনটা দেখিয়ে দেয়। সেখানে, জীনসের ওপর সাটা স্টিকার। তাতে লেখা I’M A LUNATIK.
ভিনসেন্ট ইয়াসমিনকে কাছে ডাকে। তোমার সঙ্গে অর্থ কী পরিমাণ আছে?
গুনিয়া দেখি নাই। সামান্য আছে।
বৃদ্ধের কিঞ্চিত খসাইয়া আসা উচিত ছিল। উহারা পুঁজিবাদী। যে ভবিষ্যত আনবিক বোমার আতঙ্কে দ্বিখণ্ডিত, উহারা সেই ভবিষ্যতের জন্যে অর্থ সঞ্চয় করিয়া রাখে। অথচ কুসুমের সন্তানেরা ধ্যানের খোরাক পায় না। উচ্চমূল্যে ক্রয় করিতে হয়। ধরা পড়িলে কারাদণ্ড, তাও দীর্ঘমেয়াদী।
পাউণ্ড দশেকের মতো ছিল, ইয়াসমিন ভিনসেন্টের হাতে তুলে দেয়।
মাহজাবীন আসিলে বলিব, আমাকে কিছু অর্থ সংগ্রহ করিয়া দিবে।
ভিনসেন্ট উপদেশ করে, সরকারি আপিসে গিয়া বেকারভাতার জন্য নাম লিখাইয়া আসিবে। তুচ্ছ এই বাস্তব লইয়া কথা বলিতে আমার ভালো লাগে না। পিটার সিগারেট বানাইতেছে। তুমি আমার নিকটে থাক। আনন্দে তোমাকে দীক্ষা লইতে হইবে না?
গাঁজার অভ্যাস আমার আছে। পিটার জানে। গ্যাবি জানে। আজ প্রভাতেও গোটা তিনেক টান দিয়াছি।
ইয়াসমিনের বাহাদুরি নস্যাৎ করে দেয় ভিনসেন্ট। বলে, টানিলেই টানা হয় না। টানিবার মতো টানিতে হয়। নিজেকে প্রস্তুত করিতে হয়। তোমাকে দেখাইয়া দিলে বুঝিবে, পূর্বের অভিজ্ঞতা, অভিজ্ঞতাই নহে।
ইয়াসমিন হঠাৎ লক্ষ করে মার্ক গিটারে টুংটাং করতে করতে তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।
কী মার্ক?
মার্ক আপন মনে টুং টাং করে চলে। উত্তর দেয় না। দৃষ্টিও ফিরিয়ে নেয় না। তখন ইয়াসমিন তার গায়ে ঠেলা দিয়ে বলে, ড্যাবড্যাব করিয়া কী দেখিতেছ? তোমাকে তো ভালো মানুষ বলিয়াই জানিতাম।
মার্ক টুংটাং করতে করতেই প্রশ্ন করে, ইয়াসমিন, তুমি কি কাহারো সহিত নিদ্রা গিয়াছ?
না।
আমারও তাই বোধ হইতেছিল।
যখন আমার দেহ নগ্ন ছিল, তুমি বুঝি এই দেখিতেছিলে?
হাঁ, সত্য বলিলাম।
দেখিলে, তো বুঝিলে কী করিয়া আমি কুমারী? এত অভিজ্ঞতা কাহার কৃপায় লাভ করিয়াছ, মার্ক। বল, আমাকে সত্য করিয়া বল। আমার কাছে লুকাইবে না। আমি সব শুনিতে চাই। তুমি আমার সহিত নিদ্রা যাইবে?
ইয়াসমিন একটু চিন্তা করে বলে, প্রস্তাব করিতেছ, না ঠাট্টা করিতেছ? যদি ঠাট্টা হয়, তোমার মুখে জলত্যাগ করিব।
আর যদি প্রস্তাব হয়?
ভাবিয়া দেখিব, তোমার মতো অভিজ্ঞলোকের কাছে কুমারীত্ব বিসর্জন দিব, না কোনো অনিপুনকে বাছিয়া লইব। মার্ক ঠাট্টা রাখ। তুমি কি সত্যই এইসব ভাবিতেছিলে?
তুমি হয়তো জান না ইয়াসমিন, নারীর প্রতি আমার কোনো আকর্ষণ নাই। যদি চাহিতাম, গ্যাবির সহিত, কোকোর সহিত, প্যামের সহিত, এমনকি তোমার সহিত নিদ্রা দিতে পারিতাম। নিচের তলায় জিজ্ঞাসা করিয়া দেখিও, তিন বালিকা আমার সহিত সম্পর্ক করিতে খেপিয়া রহিয়াছে।
তবু, মুখ খারাপ করিলে কেন?
আমি যখন গান রচনা করি, ইয়াসমিন, তখন আমার চেতনার অভ্যন্তরে দুই শক্তি ক্রিয়া করে। এক, কাব্যশক্তি, দুই, দেহশক্তি। উভয়ই মূলত প্রজনন। রচনাকালে আমি নারী সঙ্গ কল্পনা না করিয়া পারি না। কখনো কখনো আমার স্বলনও হয়।
এখন?
এখনও পরাজিত নহি? তোমার জন্য এই মাত্র একটি গান রচনা করিতেছিলাম। যদি শুনিতে চাও, গাহিতে পারি।
আমি শুনিব। আমাকে লইয়া পূর্বে কেহ গান রচনা করে নাই।
ভিনসেন্ট এতক্ষণ ব্যস্ত ছিল পিটারের সঙ্গে বসে সিগারেট বানানোয়। ইয়াসমিনকে মার্কের সঙ্গে, যে মার্ক স্বভাবতই কম কথা বলে, কথা বলতে দেখে সে দূর থেকেই হলা দেয়।
ইয়াসমিন সাবধানে থাকিও, কোনো কোনো জন্তুর বাকশক্তি নাই, কামড় দিতে দড়।
মার্ক সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে গান ধরে, মৃদু গলায়, ফিরিয়া যাইবার জন্য আমার বাসায়। আসিও না। ভুলিবার জন্য কেহ ভালোবাসিও না। ইহার চেয়ে শূন্যতা অনেক ভালো। ইহার চেয়ে শূন্য চোখে দূরের কোনো জামার দিকে দৃষ্টি করা অনেক ভালো। ও ইয়াসমিন, আসিও না, ভালো বাসিও না।