খুঁজে পায় বাবর। একজন জাহেদার মুখ চেপে ধরে আছে, আরেকজন উলংগ হয়ে জাহেদার শরীরের মধ্যে ঢুকতে চাইছে। বাবর লাফিয়ে পড়ে তাদের ওপর। দু কনুয়ে সরিয়ে দেয় দুজনকে। আর জাহেদার হাত ধরে টানতে টানতে বলে, হা-সু, হা-সু, আয়।
কিন্তু ততক্ষণে পালটা আক্রমণ করে তাকে দুজন। আর ছুটে এসে যোগ দেয় তৃতীয় জন। বাবর চিৎকার করে বলতে থাকে, সরে যা, হাসু, পালিয়ে যা, পালা, পালা! হাসু, তোকে আমি বাঁচাব। ভয় নেই হাসু।
হঠাৎ মনে হয়। পিঠের ভেতর গরম আগুনের হালকা বয়ে গেল। বাবরের শরীর একমুহূর্তের জন্য শিথিল হয়ে আসে। অনেকটা মদ এক ঢোকে খেলে যেমন গা ঘুলিয়ে ওঠে ঝাঁকিয়ে ওঠে, তেমনি করে ওঠে শরীর।
জাহেদা বিস্ফারিত চোখে দেখে, বাবরের পিঠে ওরা ছুরি বসিয়ে দিয়েছে। সে চিৎকার করে পিছিয়ে যায় একবার, তারপর ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বাবরকে। ছুরিটা টেনে বের করে। আর লোক তিনটে দাঁড়িয়ে থাকে হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে।
বাবর জাহেদার হাত ধরে টানতে টানতে দৌড়ুতে দৌড়তে বলে, চল হাসু, চল, চল চলে আয়।
জাহেদা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তাকে মাটির ওপর হেঁচড়ে টেনে নিতে নিতে বাবর বলে, হাসনু আয়। হাসু আয়।
কিন্তু শরীরের সমস্ত শক্তি যেন ফুরিয়ে আসছে। জাহেদাকে আর টানতে পারছে না বাবর। সে তখন কোলে তুলে নেয় তাকে। মুখে চুমো দিয়ে টলতে টলতে ছুটতে ছুটতে বলে, ভয় নেই হাসু, আমি এসে গেছি। হাসু, আমি এসে গেছি।
গাড়ির কাছে এসে পৌঁছায় বাবর।
কোনো রকমে গাড়ির দরোজা খুলে জাহেদার অচেতন দেহটা ভেতরে ছুঁড়ে দিয়ে সে এঞ্জিনের চাবিতে হাত রাখে।
দৃষ্টি আচ্ছন্ন হয়ে আসছে।
চাবি ঘোরায় বাবর।
লাফিয়ে ওঠে এঞ্জিন। গর্জন করে ওঠে। ক্রুদ্ধ এক শ্বাপদের মত। তারপর ছুটে বেরিয়ে যায় সমুখের দিকে।
বাবার স্বপ্নাবিষ্টের মত বলে, হাসু, তোকে আমি ফিরিয়ে এনেছি। আর ভয় নেই। বাড়ি এসে গেছি।
গাড়ির আলোয় সামনে অন্ধকারে তীব্ৰ চলমান দুটি শুভ্ৰ স্রোতের মধ্যে কখন তার নিজের বাড়ি ঘূর্ণিপাকে নৌকার মত ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে আসবে তারই অধীর অপেক্ষায় গতি আরো বাড়িয়ে দেয় বাবর।
কৰ্ণ নদীর পুলের ওপর উঠতে মনে হয় আকাশের ঐ উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলোর উদ্দেশে সে ধাবিত।
হঠাৎ তার গাড়ি পুলের শেষ থামে ধাক্কা খেয়ে ডান দিকে ঘুরে যায় একবার। তারপর সেই নক্ষত্ৰ প্ৰতিফলিত নদীতে গড়িয়ে পড়ে জাহেদাকে নিয়ে, বাবরকে নিয়ে। আরো একজন ছিল, সে হাসনু।