মিথ্যে কথা।
সত্যি। তুমি নিজেই জান যে সত্যি।
মিথ্যুক।
একেবারে নিজের কাছে আমার করে তোমাকে চাই।
ভণ্ড।
কোনোদিন তোমাকে হারাতে চাই না।
আমি জানি।
জান?
জানি, জানি, তুমি কী চাও।
বাবর তাকে টেনে বুকের মধ্যে লুকিয়ে খাটো চুলের নিচে গোলাপি ঘাড়ের ওপর চুমো দিল। চুমোটা শুকনো লাগল। তখন মুখের ভেতরটা ভিজিয়ে সেই জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁট চাটল এবং আবার চুমো দিল। মনে হলো শিশির ভেজা একটা ছোট্ট পাতা ছাপ রেখে গোল লতিফার শরীরে।
লতিফা সেভাবেই পড়ে থেকে বলতে লাগল, তুমি যদি আমাকে ভালবাসতে তাহলে—তাহলে—তাহলে–
বাবর তাকে ছেড়ে দিল।
কী তাহলে, বল?
লতিফা মাথা ঝাঁকিয়ে চুলের রাশ বশে আনতে আনতে উত্তর দিল, তাহলে তুমি বাবার সঙ্গে বসে গহনার ডিজাইন পছন্দ করতে পারতে না।
বাবর নিঃশব্দে হাসল।
হ্যাঁ পারতে না। অমন দাঁত বের করে বাবাকে খোশামোদ করতে পারতে না।
বাবর আবার তেমনি হাসল।
আমার কাছে এসেছে কেন? যাও বাবার কাছে যাও।
বাবর বলল, আমি কোথায় এলাম, তুমিই তো এসেছ।
না, আসিনি। বলে চট করে উঠে দাঁড়াল লতিফা। তারপর কী ভেবে বলল, হ্যাঁ এসেছি। কেন এসেছি–একটা—একটা—
বলতে বলতে, হাঁপাতে হাঁপাতে লতিফা বাবরের গালে তীব্র একটা চড় বসিয়ে দিল।
লাফ দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বাবর চাপা গলায় চিৎকার করে উঠল, লতিফা! লতিফা, তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
তার মনে হলো লতিফাকে সে খুন করে ফেলে, দুহাতে গলা টিপে তার শেষ নিঃশ্বাস নিংড়ে বের করে নেয়। মনে হলো, লতিফাকে চড় মারতে মারতে অবসন্ন করে নিজের পায়ের নিচে নেতিয়ে ফেলে দেয়। কিন্তু তার বদলে বাবর লতিফাকে একটা নিষ্ঠুর চুমো দিল। চুমোটা উত্তেজনায় নাকের নিচে প্রোথিত হলো। তারপর তাকে ছুঁড়ে দিল বিছানায়। এবং নিজে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপর। এক হাতে পাজামার ইলাস্টিক ব্যাণ্ড আলগা করে টেনে নাবিয়ে আনল হাঁটু পর্যন্ত এবং একই সঙ্গে নিজের পাজামার সমুখের পথ ছিঁড়ে প্রসারিত করে বিদ্যুদ্বেগে প্রচণ্ড একটা চাপ দিল।
ভুল হলো। গন্তব্যে পৌঁছল না সে। হাঁপাতে লাগল। আর তার নিচে জাহাজের একটা মোটা কাছির মত অতিদ্রুত পাকাতে লাগল লতিফার শরীর। আবার লক্ষ্যস্থান সন্ধান করার জন্যে বাবর ধনুকের মত বাঁকা হতেই লতিফা তাকে ঝটিকা দিয়ে ফেলে দিল। অর্ধ উলঙ্গ বাবর দেখল। লতিফা ঘরের মাঝখানে দড়িয়ে হিসহিস করে বলছে, শয়তান, জোচ্চোর, পশু।
লতিফার হাঁটু পর্যন্ত নাবানো পাজামা। তাকে হঠাৎ এমন হাস্যকর মনে হলো বাবরের যেন একটা কার্টুন দেখছে সে। চলে যাবার জন্যে লতিফা এক পা ফেলতেই নিজের নাবানো পাজামায় বাধা পেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল, এক মুহুর্তে সামলে নিল, সরসর করে টেনে তুলল পাজামা। তখন আরো হাসি পেল বাবরের।
লতিফা চলে গেলে বাবর একা অন্ধকার ঘরে হাসল। বিছানার ওপর হিজ মাস্টারস ভয়েসের কুকুরের মত বসে থেকে হাসল বাবর।
০৩. উল্কার মত গাড়ি চালিয়ে
পরদিন উল্কার মত গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় ফিরল বাবর। পরদিন লতিফার সঙ্গে আর দেখা হয়নি তাঁর। ভোর রাতে ক্রমবর্ধমান অথচ অপূর্ণ, প্রতিহত সেই বাসনাকে নিজ হাতেই বইয়ে দিতে হয়েছে। সেই থেকে কোথায় যেন একা জ্বালা, একটা আক্রোশ, একটা প্ৰায় দৃশ্যমান স্তব্ধতা বড় হতে হতে জগৎ সংসার গ্রাস করবার উপক্রম করেছে।
ঢাকায় ফিরে ঘরের তালা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সে শুনতে পেল ভেতরে টেলিফোন বাজছে। অদ্ভুত যোগাযোগ তো! আর এক মিনিট পরে পৌঁছলেই টেলিফোনটা সে পেত না। কে হতে পারে?
হ্যালো। হ্যালো। কে?
চিনতে পারছেন না?
তারপর হাসির একটা তরঙ্গ।
বাবর ভেবে পেল না কে হতে পারে? মেয়েদের হাতের লেখার মত তাদের কণ্ঠস্বরও সবার কেমন এক মনে হয় বাবরের। চট করে ঠাহর করতে পারে না। কারো চিঠি এলে ওপরে ঠিকানা দেখেও এ রকম হয় তার। অনেক সময়, যখন মেজাজ খুব ভাল থাকে, নিজের সঙ্গেই বাজি ধরে সে-– যদি অমুক হয় তাহলে আজ আবার দেবব্ৰতের রেকর্ডটা বাজাব আর না হলে শাস্তি হিসেবে বাথরুমের বালবের দিকে তাকিয়ে থাকিব যতক্ষণ না চোখে পানি আসে।
টেলিফোনে বাবর সপ্রতিভ সুরে বলল, পারছি, নিশ্চয়ই চিনতে পারছি।
পারছেন?
হ্যাঁ। আপনার মুখে কিন্তু আপনার নাম ভারি সুন্দর শোনায়।
তাই নাকি?
ভদ্র মহিলা প্রীত হলেন। বললেন, আমি মিসেস নাফিস।
উচ্চারণটা শোনাল যেন–ইস্ ইস্ ইস। এবারে বাবর চিনতে পেরেছে।
আরে হ্যাঁ তাইতো! মিসেস নিফিসের গলাই তো।
সে বলল, কেমন আছেন?
ভাল। সকালে ঘরে ছিলেন না?
না। কেন, টেলিফোন করেছিলেন?
হ্যাঁ, একবার দুবার। কী ব্যাপার, দেখাই নেই?
বাবর মিথ্যে করে বলল, একটা জরুরি কাজে চিটাগাং যেতে হয়েছিল। ট্যাক্স বেশি ধরেছিল, সেইটে কমাতে।
আবার হঠাৎ আক্ৰোশটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল বাবরের ভেতরে। আর লতিফাকে যে কাল রাতে পায়নি তার জ্বালাও টগবগা করে উঠল সারা দেহে।
মিসেস নাফিস বললেন, বেশ আছেন, লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছেন।
আপনি কি ইনকাম ট্যাক্স অফিসে কাজ নিয়েছেন?
নিইনি। তবে যদি বলেন তো তাদের জানিয়ে দি।না, না, এত বড় শক্রতা আপনার করব না। নিশ্চিন্ত থাকবেন।
আপনাকে নিয়ে আমার ভয় নেই।
সত্যি?
হ্যাঁ সত্যি।
কিন্তু আমার মনে হয়, আপনি আমাকে ভয় করেন।
কেন বলুন তো?
নইলে আমাকে একবার দেখতে আসতেন।
কেন, কী হয়েছে। আপনার?
কিছু না হলে কি দেখতে আসতে নেই?