বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

তুলনাহীনা – সৈয়দ মুজতবা আলী

Tulanahina By Sayed Mujtaba Ali

কে কান দেয় তখন আদমজির ফরেন টাকার দিকে আমাদের কীর্তিবাবু না জানেন পলিটিক্স, না বোঝেন ইকনমি। তবু তার কানে গেল শেষ কথাটা চৌধুরীর :

এবার কিন্তু সবকিছু আবার হয়তো ঢেলে সাজাতে হবে। আওয়ামী লীগ জিতেছে ইলেকশানে উইদ এ থান্ডারিং মেজরিটি। দরিয়ার বাকিটুকু ভালোয় ভালোয় পেরুতে পারলে লীগওয়ালা আদমজি ফাঁসির থাউজেন্ড পার্সেন্ট মুনাফা বরদাস্ত করবে না।

সুদিন বললে, সে তো শুধু কেচ্ছা। আখেরে হয়তো-বা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একদম কেটে পড়বে। কে জানে, হয়তো-বা পুরোপুরি স্বাধীন হয়ে যাবে।

অ্যাঁ? হঠাৎ যেন কীর্তির কানে জল গেল। ওই স্বাধীনতা শব্দটার সঙ্গে তার কিঞ্চিৎ পরিচয় আছে। ছেলেবেলা থেকেই সে যা খুশি তাই করেছে। কালেভদ্রে যখন নিতান্ত বাধ্য হয়ে অনিচ্ছায় কোনও কিছু সয়ে নিতে হয়েছে তখনই পেয়েছে দারুণ পীড়া।

একবার শিপ্রাকে কথায় কথায় বলেও ছিল, বিবেক নামক ভদ্রলোকটির সঙ্গে আমার পরিচয় বড়ই কম। কিন্তু তিনিও মাঝে মাঝে মোকা পেয়ে যখন চাপ দিয়ে আমাকে বাধ্য করেন অপ্রিয় সব কাজ করতে তখন আমার জানটা যেন ঠোঁটের কাছে এসে খাবি খেতে থাকে। বিবেকের চাপ কর্তব্য বাবুর চাপ বাপরে বাপ। এর ওপর আবার বাইরের চাপ। গোলামি!

সুদিন বললে, ওহে কীর্তিবাবু, চুপচাপ বসে বসে টুকুস ঢুকুস করছ যে বড়। অ্যাদ্দিন তুমিই তো, বাবা, ছিলে শিপ্রাদেবীর প্রতি পার্টিতে এডিকং! আজ সব ঝক্কি ওরই ওপর ছেড়ে দিলে কেন বল তো।

তা নয় সুদিনদা! আজ যাদের অনারে পার্টি ওদের ইয়ার-দোস্তও এসেছেন জনাকয়েক। ওঁরা তো নিত্যি নিত্যি এখানে আসেন না। আমার মতো পাকা নন–ওরা ঠিকে। আজ ওদের একটা চান্স্ দিতে হয়। দেখছ না, ম্যাডামকে হেল্প করার ছলে থার্ড ক্লাস বেয়ারার চেয়েও আনাড়ি সার্ভিস দিচ্ছে। কিন্তু শ্রীমতীর সঙ্গে দু এক দফে রসালাপ করার সুযোগ পাচ্ছে তো।

সার্ভিসের কথা তুলছ কেন? ওদের বাপ-ঠাকুরদা বাটলার ছিল না কি?

লন্ডনের ক্ল্যারিজে চিফ ওয়েটারও সার্ভিসে তোমার কাছে হার মানবে। তোমার ঠাকুর্দা তো ছিলেন কোম্পানির মুৎসুদ্দি। তবে–

চোক্কর ছোকরা।

ঘণ্টা দুই হয়ে গেল পার্টি আরম্ভ হয়েছিল। এখন একা, জোড়া জোড়া, একসঙ্গে জনা তিনা বিদায় নিতে আরম্ভ করলেন। কোন এক সংস্কৃতের কবি বলেছেন, যেন পরাজিত বাহিনীর সৈন্যরা এক্কা দুক্কা হয়ে এদিক-ওদিক ছিটকে পড়ে। আরেকটা ছোটখাটো দল চলল একসঙ্গে ওদের অন্য একটা পার্টিডিনারে নেমন্তন্ন। শিপ্রা আগের থেকেই মাফ চেয়ে নিয়েছিল। এ পার্টির দু একজন বানচাল হয়ে যাওয়াতে সুদিন আর কীর্তি তাদের যেন আদর করতে করতে ড্রাইভারদের জিম্মায় মোটরে তুলে দিল। দু একজন সুপ্ত এবং অর্ধসুপ্ত। তাদেরও তুলে দেওয়া হল তদ্বৎ।

সুদিন বলল, কীর্তি ভায়া, এবারে আরামসে একটা শেষ ড্রিংক খাই তোমার সঙ্গে। এসব পার্টিতে এতসব রকমারি চিড়িয়া আসে যে প্রাণখুলে কথা বলা যায় না, আর প্রাণ খুলে কথা কইতে না পারলে গলা খুলে রস পান করবে কী করে?

লনের সুদূরতম প্রান্তে দুজনাতে বসে চুপ করে রইল।

শিপ্রা শেষ গেস্টকে বিদায় দিয়ে ধীর পদক্ষেপে ওদের কাছে এসে দাঁড়াল।

সুদিন দাঁড়িয়ে উঠে বলল, বসুন।

এরা আপনজন। তাই শিপ্রা বলল, না, ভাই, আমি নাইতে চললুম।

ড্রিংক শেষ করে সুদিন উঠল। বললে, আমি ব্ল্যাক ক্যাট-এ যাচ্ছি। তুই আসবি, এখানকার কাজ শেষ হলে?

বেয়ারাদের বিদায় দেওয়া থেকে আরম্ভ করে আরও পাঁচটা কাজ রাউন্ড আপ করার ভার প্রতি পার্টিতেই পড়ে কীর্তির ঘাড়ে।

সুদিন বলল, তোর অনারারি নোকরিটাতে কি কোনওকালে প্রমোশন পাবিনে?

কীর্তি হেসে বলল, কড়া কনট্রাক্ট করা আছে, অনারারি– ঠিক হৈ। কিন্তু, দাদা, পার্মানেন্ট।

.

০৬.

কীর্তি

শিপ্রা?

হ্যাঁ। শোনো। বেড়াতে যাবে? মোটরে। পুরো দিনটা। ফিরতে রাত দশটাও হয়ে যেতে পারে। কোথায় যাব? সে তো তুমি ঠিক করবে। আমি মেয়েছেলে, একটা শখ জানালুম। তুমি পুরুষমানুষ। শেষ ডিসিশন তো তোমার হাতে। হ্যাঁ, একটা সুটকেস নিয়ে এসো— যদি ব্রেকডাউন-টাউন হয়ে যায়। আর সব আমি নিচ্ছি। শিগগির এসো!

কীর্তি ভাবল, হুঁ সে পুরুষমানুষ, কুল্লে ডিসিশন তার হাতে। দু রাত্তির যেতে না যেতেই যে শিপ্রাচক্রের প্রত্যন্ত প্রদেশে সে লিকলিক করত হঠাৎ হয়ে গেল সে চক্রের চক্রবর্তী। নিজেকে সাতিশয় মহিমান্বিত পদে উন্নীত দেখেও তার থেকে অবিমিশ্র আনন্দ আহরণ করতে পারল না। সে বহুদিন বার বার অনুভব করেছে, শিপ্রার কমন সেন্স, সাংসারিক বুদ্ধি তার চেয়ে ঢের ঢের বেশি। যাকে বলে কালচার সেখানে তো কোনও তুলনাই হয় না। সর্বোপরি কি স্ত্রীলোক কি পুরুষ কস্মিনকালেও কেউ কড়েআঙুলটি তক্‌ তুলে ইঙ্গিতমাত্র দেয়নি তার ব্যক্তিত্বে রয়েছে বিকট একটা পৌরুষ ভাব।

সে ড্যুক অব এডিনবরা হতে রাজি আছে সানন্দে। কিন্তু রানি এলিজাবেথের সিংহাসনে বসতে যাবে কোন দুঃখে?

ভরসাও অবশ্য আছে, শিপ্রা বুদ্ধিমতী মেয়ে। তাকে যে অযথা অকূল দরিয়ায় ডোবাবে সেটা একেবারেই অসম্ভব। যে মেয়ে কি না ইহজনে কোনও বেয়ারা-বয়কে ডিসমিস করেনি। কলকাতা শহরে রীতিমতো লজ্জাকর রেকর্ড।

তা সে যাকগে। অত ভেবে কী হবে? কিন্তু ভাবনাটা সুখ দিচ্ছে যে।

Page 9 of 75
Prev1...8910...75Next
Previous Post

টুনি মেম – সৈয়দ মুজতবা আলী

Next Post

দু-হারা – সৈয়দ মুজতবা আলী

Next Post

দু-হারা – সৈয়দ মুজতবা আলী

দেশে বিদেশে – সৈয়দ মুজতবা আলী

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In