সুদিন অত্যন্ত বিরক্তি এবং তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, যৌনসঙ্গম আবার কবে থেকে অশ্লীল হল?
.
০৩.
এসো।
আমাকে যে স্মরণ করেছ তাতে আমি ভারি খুশি হয়েছি। আসলে বলা উচিত ছিল, গর্ব অনুভব করেছি।
না আনন্দটাই বড়। কে কাকে কতখানি আনন্দ দিতে পারে বল।
তোমার কথাই সই। কিন্তু হঠাৎ তুমি এরকম লোনলি ফিল করলে কেন বলল তো? কলকাতার কোন ক্লাব, কোন পাটি, কোন শো থেকে তুমি প্রতিদিন নিমন্ত্রণ পাও না? অবারিত দ্বার একটা কথার কথা। তোমাকে তো সবাই লুফে নেয়। আর তুমি কি না লোনলি!
কিছুমাত্র ছলনা বা ভান না করে শিপ্রা বললে, কীর্তি, তোমার প্রাণরস অফুরন্ত, তোমার মতো অহরহ সজীব আমি খুবই কম দেখেছি। তাই তুমি সহজে বুঝবে না, জনতার মাঝখানে একটা মানুষ কতখানি নিঃসঙ্গ, বিচ্ছিন্ন, পরিত্যক্ত হতে পারে। আমার কথা বাদ দাও– এক্কেবারে পয়লা নম্বরিনীদের কথা চিন্তা করো তো : দিনের পর দিন তারা পার্টি পরব ফাঁকশনে যাচ্ছেন, তাঁদের চতুর্দিকে সমাজের সবচেয়ে উঁচু কাতারের পয়সাওলা, খ্যাতিমান শক্তিমান সবরকমের প্রভুরা। আর রয়েছে স্মার্ট সেন্টু। তারা স্মার্ট উইটি কথা বলে, টিপ্পনী কাটে আর সুন্দরী গরবিনীর স্মার্ট উত্তর দেন, যারা পারেন না তারা অন্তত মৃদু হাস্যের তারতম্য দিয়ে কোনটা ভালো কোনটা মাঝারি তার সার্টিফিকেট দেন। আচ্ছা, তুমি কি কখনও ভেবে দেখেছ, এই সমস্ত ব্যাপারটার উদ্দেশ্য কী, অর্থ কী?
না। তুমি ভালো করেই জানো, আমি খুব চিন্তাশীল প্রাণী নই।
শিপ্রা তার সুডৌল ঘাড়টি আরেকটু উঁচু করে কীর্তির চোখে চোখে তাকিয়ে বললে, ওটা আর কিছু না। ওটা বর্তমান সমাজের একটা প্যাটার্ন মাত্র। চলছে, চলবে হয়তো বহুদিন ধরে, কিন্তু যে কোনও মুহূর্তে আগাপাশতলা বদলে যেতে পারে।
মানে?
অতি সহজ। লন্ডনে এ প্যাটার্ন অনেকদিন ধরে গড়ে উঠেছিল। এবং তার গোড়াপত্তন করেছিল সে-দেশের খানদানি লোক। অথচ যেই লাগল লড়াই অমনি তার বড় ভাগটা হয়ে গেল উধাও। বাকিটুকুও ভোল পাল্টে নিল রাতারাতি। কোথায় গেল হাওয়ায় হাওয়ায় মিলে-যাওয়া সিল্কের বুক-কাটা, কোমর-হ্যাঁচা গাউন, অদৃশ্য সিল্কের ফ্রেশ কালার মোজা আর ত্রিভঙ্গ গোড়ালির জুতো! সবাই পরে নিল কাঠখোট্টা চামড়ার চেয়ে পুরু কাঁথার ইউনিফর্ম—প্রাইম মিনিস্টারের বেগম গিয়ে দাঁড়ালেন কিউয়ের ন্যাজে– রেশনশপের সামনে।
আর আমাদের এই কলকাতার প্যাটার্নটা
হঠাৎ থেমে গিয়ে শিপ্রাদেবী বললেন, ওহ! আই এম ফ্রাইটফুলি সরি। তুমি এখানে এসেছ বার ছেড়ে নাক বরাবর। আর তোমাকে একটা ড্রিংক অফার করিনি। কী খাবে বল।
কীর্তি আমতা আমতা করে বললে, না– তা–
শিপ্রা খিলখিল করে হেসে বলল, পষ্ট গন্ধ পাচ্ছি খেয়ে এসেছ ক্রেম দ্য মৎ– আরও কাছে এসে বসো দিকিনি। যে সোফাটাতে সে আধশোয়া অবস্থায় পা দু খানি গুটিয়ে রেখেছিল তারই একটুখানি একপাশে সরে গিয়ে একটান মেরে বসিয়ে বলল, ঠিক ধরেছি। তা এই অবেলায় ক্রেম দ্য মৎ কেন? জব্বর একটা ব্যানকুয়েট খাওয়ার পর ক্রেম দ্য মাৎ দিয়ে মুখশুদ্ধি করেছ বুঝি?
কীর্তি আকাশ থেকে পড়ে বললে, ব্যানকুয়েট! আজ আবার কিসের পরব যে ব্যানকুয়েট হবে। মান্থলি ডিনারও তো পরশুদিন। অবাক করলে বাছা তুমি।
কিসের পরব? আজ তো পরবস্য পরব। গ্রেট বেলি-ডাসের গ্রেটার ব্যানকুয়েট। বেলি-ডানস্ দেখবে বুঝি একাদশীর ফাঁকা পেট নিয়ে? বেলি-ডাস্ দেখতে হয় ফুল বেলি নিয়ে। লিকউইড সলিডে হাফাহাফি। তা সে যাক গে। এসো আমরা দুজনাতে সেলিব্রেট করি ওই মারাত্মক অমিশনটা। শ্যাম্পেন খাবে? বলতে গেলে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শ্যাম্পেন গোত্রের কয়েকজন আমার কাছে আছেন। তোমার জন্য বাকেটে বরফ দিয়ে রেখেছি। ওই সেই ঘরটায় পাবে।
শিপ্রার বেশভূষা, তার মোটরগাড়ি দেখলে যে কোনও লোক ভাববে এ মহিলার যা রুচি, প্রতিটি আইটেম এমনই মানানসই যে তার বাড়ি, ড্রইংরুম ড্রাইনিংরুম নিশ্চয়ই অতিশয় নিখুঁত কায়দায় সাজানো– কোনওপ্রকারে কোনও জায়গায় ছন্দপতন হওয়া অসম্ভব। অথচ প্রথম দর্শনে স্মার্ট সেটের যে কোনও ব্যক্তি বিস্মিত হবে। ঘরের একপ্রান্ত থেকে যে কালারস্কিম আরম্ভ হয়ে শেষ প্রান্ত অবধি ঢেউয়ে ঢেউয়ে বয়ে যাবে, আর আসবাবপত্র কার্পেট কার্টেন ছাত দেয়াল, মাথার উপরের এবং চারদিকের আলো সেই স্কিমের সঙ্গে মিল খাইয়ে যেন একটা হারমনি গড়ে তুলবে এখানে সে কম্পোজিশন একেবারে নেই সে-কথা বলা চলে না, আবার আছেও বলা চলে না। এ কথা তো শিপ্রা-দেবীর বুদোওয়ার না দেখেও বলা চলে সেখানে দৃষ্টিকটু কিছুই থাকতে পারে না কিন্তু সেই অনিন্দ্যসুন্দর সামঞ্জস্যটা তো চোখে পড়ে না।
কিন্তু দু-তিন দিন ধরে সে ঘরে বসলে, চা খেলে তখন বোঝা যায় শিপ্রা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ঘরটি গুছিয়েছে। উদ্দেশ্য দুটি : আরাম এবং একবার এক জায়গায় আসন নিলে যেন ফের উঠতে না হয়। কোচ সোফার হাতার ভিতর থেকে অ্যাশট্রে, ড্রিংকের গেলাস রাখার রিং ইত্যাদি ছোটখাটো জিনিস তো বেরুবেই, ছোটখাটো ব্রেকফাস্ট খাবার মতো ফোল্ড করা একটা ফ্রেমও ঠিক ফিট করে যায় যার উপর বেয়ারা খাবারের ট্রে চায়ের সরঞ্জাম অনায়াসে রেখে যেতে পারে। আর পাঁচটা অতিশয় ফ্যাশনেবল ড্রইংরুমে বেয়ারা স্ন্যাক্স নিয়ে ঢুকলেই যে কী তুলকালাম কাণ্ড আরম্ভ হয় ভুক্তভোগী মাত্রই সেটা জানেন। পেগ টেবিলে স্ন্যাক্স ধরছে না, সেন্টার টেবিলটা অনেক দূরে–লে আও আওর একটু টেবিল ইত্যাদির মহা ঝামেলা। তারই ধাক্কায় ইতোমধ্যে গালগল্প টুকরো টুকরো খান খান।